মাওলানা ওলিপুরীর চিকিৎসা ও কতিপয় প্রশ্ন

লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ০৬:৩৮:০১ সকাল



সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী সাহেব অসুস্থ। মেরুদণ্ডের হাড় দীর্ঘদিন থেকেই বিগড়ে আছে তাঁর, এনিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। সময় ও অর্থের অভাবে চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছিল না। এবারে তাঁর এক ভক্তের সহায়তায় তিনি চিকিৎসায় সম্মত হন। তাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশেও দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছিল না। তাই সেখান থেকে উচ্চ মানের চিকিৎসার জন্য ভারতে গমন। ভারতের যেই হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন, তা একেবারে উঁচু মানের না হলেও নিম্ন মানের নয়; বলা যায়, তা মাঝারি মানের। আশা করা যায়, যথাযথভাবেই তার চিকিৎসাকর্ম সম্পাদিত হবে। সকল ভক্তদের সঙ্গে আমরাও কায়মনো বাক্যে তাঁর আশু রোগ মুক্তি কামনা করি।

মাওলানা ওলিপুরী বাংলাদেশে দেওবন্দি ধারার একজন সুপ্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব। শোনা যায়, ব্যক্তি জীবনে তিনি একান্ত নির্লোভ-নির্মোহ। দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত পর্যন্ত তার ভক্তশ্রোতার অভাব না থাকলেও তিনি এই জনপ্রিয়তাকে নিজের বিলাসিতায় ব্যবহার করেন নি। এতে তিনি অভ্যস্তও হন নি। সত্যি বর্তমান সময়ে এমন নিরাভরণ, সাধামাটা চাল-চলন আর হয় না। ভক্তদের কেউ কেউ তাঁকে বলেন, মুনাজিরে আাজম (মহান তার্কিক); কেউ বলেন, খতিবে-আজম (মহান বক্তা)। তবে কথার বয়নে ও উপস্থাপনায় তাঁর যে দক্ষতা আছে, তা দেশব্যাপী তাঁর শ্রোতার সংখ্যা ও আগ্রহ দেখলেই বোঝা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তাঁর শ্রোতা শুধু দেওবন্দি ঘরানার লোকজন। অর্থাৎ এতো যোগ্যতা আর দক্ষতা সত্ত্বেও তিনি সর্বজনগ্রাহ্য ও মান্য বক্তা হতে পারেন নি। আবার তাঁর বয়ান শোনে, ভিন্ন ঘরানার, অবোঝ হৃদয়ের কেউ হেদায়েত পেয়েছেন, এমন কথাও শোনা যায় নি। এ কথা ঠিক যে, ভক্ত-শ্রোতাদের বাহবা, মারহাবা ও উচ্চৈঃস্বরের শ্লোগানের মুহুর্মুহু ধ্বনিতে সমাবেশ-স্থল প্রকম্পিত হয়ে থাকে সব সময়ই। সে যাই হোক, এ বিষয়ে পরে অন্য কোনো লেখায় আলোচনা করা যাবে, আজ মাওলানার কঠির রোগের চিকিৎসা-সময়ে যে প্রশ্নগুলো মাথায় আসছে, তা উত্থাপন করা যাক।

মাওলানা ওলিপুরী যেহেতু অসুস্থ, তাই চিকিৎসা নেওয়ার অধিকার তাঁর আছেই এবং এ মুহূর্তে সুযোগও যেহেতু হাতে। রাসুল সা. নিজেও অসুস্থতার সময়ে চিকিৎসার আশ্রয় নিয়েছেন, যদিও অমুসলিমের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার কোনো উল্লেখ সীরাতে নেই। তবে ওলামায়ে কেরাম_ সালাফি-আলাপি, মাজহাবি-লা-মাজহাবি, শিয়া-সুন্নি, খারেজি-রাফেজি, দেওবন্দি-বেরেলবি, মওদুদি-আহলে হাদিস_ এ ব্যাপারে একমত যে, প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য অ-মুসলিমের দ্বারস্থ হওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্নটা হল, মাওলানা ওলিপুরী কোথায় চিকিৎসা নিতে গেলেন? যে ভারত সম্পর্কে তাঁর সু-ধারনা নেই; যাকে তাঁর মতে, দারুল হরব না হলেও, অন্তত মুশরিক-শাসিত দেশ বলা যায়; সেই দেশে তিনি চিকিৎসা নিতে গেলেন! অন্য আর দশজনের তুলনায় মাওলানা ওলিপুরীর পার্থক্য হল, তিনি প্রচলিত অনেক ভুল বা শতসিদ্ধ বিষয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন উত্থাপন করে তুলোধুনা করে ছাড়েন। সেখানে তিনি যদি বিনা বাক্যে ভারতীয় চিকিৎসা নিতে যান, তাহলে তা কেমন দেখায়?

আরো প্রশ্ন হলো, তিনি যার চিকিৎসাধীন, তিনি মুসলিম, না অ-মুসলিম? উক্ত হাসপাতালে যারা তাঁর সেবা-শুশ্রূষার দায়িত্বে থাকবেন, তারা কি মুসলিম, না অ-মুসলিম? তারা সবাই পুরুষ, না এতে নারীও আছে? তিনি যে চিন্তার অধিকারী ও যে চেতনার চর্চাকারী, তাতে মনে হয়, তিনি অ-মুসলিমের যে-কোনো কিছুকেই নির্দ্বিধায় গ্রহণ করার কথা না। তাহলে এখানে তিনি কীভাবে সম্মত হলেন? আমাদের দেশের প্রচলিত চিন্তায় সব ক্ষেত্রেই মুমিন-মুসলিমের আশ্রয়কেই নিরাপদ ভাবা হয়, তাহলে তিনি অন্তিম মুহূর্তে কেন অ-মুসলিম দেশের অ-মুসলিম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন? তিনি যে মেডান্টা হাসপাতালের আশ্রয় নিয়েছেন, তাতে ৯৯% চিকিৎসকই অ-মুসলিম। এমন তো নয় যে, মুসলিম দেশে ভালো চিকিৎসা হয় না। আমাদের বিএনপি-নেত্রী তো সৌদি আরবেই চিকিৎসা নেন। শোনা যায়, মালায়েশিয়ার কেপিজের চিকিৎসা-ব্যবস্থাও ভাল। বে-নজির ভুট্টুর মা দীর্ঘদিন দুবাইতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা-ক্ষেত্রে এতো মুসলিম দেশের নাম থাকতে তিনি কেন অ-মুসলিম দেশ বেছে নিলেন? তাও আবার কখন, যখন কি-না বিজেপির মতো হিন্দু ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী ক্ষমতায়। এই হিন্দুত্ববাদীর দলের প্রতি কি তাঁর কোনো সমর্থন বা দুর্বলতা আছে? তা হওয়ার তো কথা নয়। তাহলে তাকেই তিনি বেছে নিলেন কেন?

উত্তরে বলা যেতে পারে, বর্তমানে মুসলিমবিশ্বে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। কথাটা মিথ্যে নয়। কিন্তু ভক্তবৃন্দের মাঝে তিনি ঈমানের পাহারাদার হিসাবে পরিচিত! প্রশ্ন হল, তিনি কি বিবেকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল? অর্থাৎ ঈমানের সঙ্গে সঙ্গে বিবেকের পাহাদার হিসাবে কাজ করেছেন কি-না? তাহলে তিনি তাঁর মুসলিম প্রতিপক্ষকে যেভাবে কথায় কথায় ঘায়েল করেন, সেভাবে তিনি মুসলিম সমাজে, অন্তত তাঁর ভক্তবৃন্দের মাঝে এমন মানুষ তৈরির উদ্যোগ কেন নিলেন না, যারা চিকিৎসা সেবায় অতুলনীয়? যাদের কাছে তাঁর নিজের বা তাঁর ভক্তবৃন্দের আশ্রয় হতে পারে নির্দ্বিধায়? মুসলিমদের স্বকীয়তার কথা বলে সারা জীবন পার করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এসে এই যে অন্যের দ্বারস্থ হওয়া এবং এর কোনো বিকল্পও, বোধহয়, নেই। তা-কি তার বিবেকে কাজ করে নি? করছে না? এনিয়ে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে নি? আমার জানা নেই।

শোনা যায়, দেওবন্দি ধারার আরেক মরহুম মাওলানা মুফতি ফজলুল হক আমিনী সাহেব মৃত্যুর পূর্বে চিকিৎসার জন্য আজীবনের শত্রু জামায়াতে ইসলামি, বাংলাদেশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইবনে সিনায় চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর বেলায় চিকিৎসা-বাবৎ প্রদেয় অর্থের ছাড়ও ছিল অকল্পনীয়। ঘটনাটি মন্দ নয়। কিন্তু সারা জীবন একটি পার্টির বিরোধিতা করে মৃত্যুর পূর্বে এর সাহায্য নেওয়া, সে যে-কোনো বাবতেই হোক, তা কতটা যুক্তিযুক্ত? বিবেকের তুলাদ-ে তা কতটা শালীন? এ প্রশ্ন মুফতি আমিনীর মনে ছিল কি-না, আমার জানা নেই।

জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা আমির, মরহুম মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদিও শেষ জীবনে চিকিৎসার জন্য আমেরকিার দ্বারস্থ হয়েছিলেন, সেখঅনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এজন্য তিনি বেশ নিন্দার মুখে পড়েছিলেন নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। কেউ বলেছেন, তিনি যে ইসলাম-বিচ্যুত, আমেরিকায় চিকিৎসা-গ্রহণ ও মৃত্যুবরণ তার প্রমাণ! অন্যদিকে, জীবনের প্রতিটি পর্বে তিনি নিজেই আমেরিকার সমালোচনা করেছেন। তবে এনিয়ে তাঁর বিবেকে কোনো প্রশ্ন জেগেছে কি-না বা তাঁকে এ ব্যাপারে কেউ সতর্ক করেছেন কি-না, আমার জানা নেই। না, অ-মুসলিম প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য তাঁদের দোষারোপ করছি না। আমার প্রশ্ন হল, যার বিরোধিতা করা হবে, তার প্রতি শেষ পর্যন্ত সমর্পণ কেন, তা যে কোনো কারণেই হোক? সমালোচনার পূর্বে বা পরে আত্মমূল্যায়ন বা আত্ম-প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ আসে নি কি তাঁদের? এমন-কি যারা মুসলিম সমাজকে নানা পর্যায়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা নিয়ে আগে বাড়তে চেষ্টা করেছেন, তাদের কতটা প্রশ্রয় দিয়েছেন, সাহায্য করেছেন তাঁরা?

অথচ রসায়নে নোবেল-বিজয়ী পাকিস্তানের বিজ্ঞানী প্রফেসর আবদুস সালাম পারতপক্ষে হাসপাতালের দ্বারস্থ হতেন না। কারণ, পুরস্কার পাওয়ার পর এমনিতেই মানুষের শত্রু ও হিংসুকের সংখ্যা বেড়ে যায়। তাঁর বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয় নি। তিনি একবার চিকিৎসার নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর তাঁর পরিচিত এক ভদ্র লোক, বলা যায় তাঁর বন্ধু, তাঁকে প্রশ্ন করে বসেন, “আচ্ছা, আপন্ িমুসলিম হয়ে এই যে, এখানে চিকিৎসা নিতে এলেন, তাতে আপনার একটুও দ্বিধা-সংকোচ হয় না?” এ প্রশ্নে তিনি হতচকিয়ে যান। সেই ভদ্র লোক তখন আরো যোগ করে বলেন, “এই হাসপাতাল অ-মুসলিমদের, এর চিকিৎসা পদ্ধতি অমুসলিমদের, এতে ব্যবহৃত সকল ঔষধ অ-মুসলিমদের, আপনি একজন মুসলিম, তাও আবার বিজ্ঞানী, অন্যদের কাছে হাত পাততে আপনার লজ্জা হয় না?” না, আবদুস সালামের কোনো উত্তর ছিল না। তবে তিনি আজীবন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকে এড়িয়ে চলতেন, এই একটি মাত্র খুঁটার কারণে।

শোনা যায়, প্রফেসর আবদুস সালাম ছিলেন আহমাদিয়া জামাতের অনুসারী, আমাদের এই দেশের বৃহত্তর মুসলিমদের কাছে যারা অমুসলিম। ঢাকায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য শুরু করার সময়ে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করায় এ-দেশের সুশীল সমাজ বেশ বিব্রত হয়েছিলন। কারণ, তাদের বিশ্বাস মতে, বিজ্ঞানী তো তাদের মতোই নাস্তিক হবেন বা সংশয়বাদী, ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন; অন্ততপক্ষে ধর্মচর্চাটা আড়ালে করবেন। আবদুস সালাম তা করেন নি বলে সবার যে কী রূপ ধারন করেছিল, তা মরহুম কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের এক সাক্ষাৎকারে ফুটে উঠেছে। সে যাই হোক, তিনি হয়ত কিংবা নিশ্চিতভাবেই মুসলিম সমাজে বিতর্কিত ছিলেন, কিন্তু পাশ্চাত্যে পরিচিত ছিলেন একান্ত মুসলিম হিসাবে, তাই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে এভাবে নাকাল করতে কসুর করে নি। তিনিও জব্দ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দেশের কথার কারবারি, ন্যায্যতার একমাত্র দাবিদার এই সব মাওলানা-মৌলবীদের মনে কি এনিয়ে কোনো প্রশ্ন জাগে না? আমার জানা নেই।

মাওলানা ওলিপুরীর মনে এ-ধরনের প্রশ্ন জেগেছে কি-না, তা এখনো জানা হয় নি। তাই এ লেখা! তিনি যে-ধারার মানুষ সে-ধরনের প্রশ্ন মনে না জাগলে অবাক হতে হবে। জাগলে তার উত্তর কী? এ থেকে উত্তরণের উপায় কী, তিনি কী বলেন এবিষয়ে? তার ভক্তবৃন্দকে এর জন্য কী উপদেশ দেন? কী নির্দেশনা দেন? জানতে খুব ইচ্ছে করে। তাঁর মনে প্রশ্ন না জাগলে, তাঁর ভক্তবৃন্দের মাঝে কি কারো সাহসে হবে, মাওলানার সামনে এ প্রশ্নগুলো উত্থাপন করার? নাকি অন্ধ ভক্তির যূপকাষ্ঠে এভাবেই যুগে যুগে বলি হতে থাকবে সুস্থ বিবেক ও চেতনা? জানা নেই, সত্যি আমার জানা নেই।

সর্বশেষে উপসংহার হিসাবে ইসলামের অন্যতম ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদরিস আল-শাফেয়ি রহ-এর একটি বাণী তুলে দিচ্ছি, তাঁর উপলব্ধির গভীরতা ও ন্যায্যতা বোঝার জন্য। অথচ কালের ব্যবধানে তিনি কত এগিয়ে! তাঁর বাণীটি নিম্নরূপ:

أنه كان يتلهف على ما ضيع المسلمون من الطب ويقول : (( ضيعوا ثلث العلم ووكلوا إلى اليهود والنصارى )) [آداب الشافعي ومناقبه للرازي]

বর্তমানে তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত আরো একটি শব্দ যোগ করতেন, তা আমি এখানে আর বলছি না। আর এর অনুবাদও দিচ্ছি না। কারণ,

العاقل تكفيه الإشارة و الغبي لا تكفيه المنارة

বিষয়: বিবিধ

১৪১২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380292
৩০ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:৩৯
380293
৩০ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:৩৯
380294
৩০ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:৪২
380295
৩০ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:৪৩
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : মিথ্যাবাদি ওলিপুরী ইউটিউব দেখুন প্রমান সহ বললাম
380297
৩০ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৪
নেহায়েৎ লিখেছেন : আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিন। হেদায়াত দান করুন। তিনি মুসিলম উম্মাহকে গোমরাহীর দিকে ডাকেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File