আমি কলমের স্বাধীনতার কথা বলছি....

লিখেছেন লিখেছেন মিথ্যা জবানবন্দি ২৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:০৪:১৩ রাত



বড় অসহায় আমরা এই জাতি, ৪২ বছর পার হয়ে গেল স্বাধীনতা পেলাম কিন্তু আজো স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারিনি। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতালোভী স্বৈরশাসকের হিংস্র থাবার খপ্পরে পড়ে এদেশের নিরীহ মানুষ বঞ্চিত হয়েছে তাদের সেই রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার অমৃতশুধা পান করা থেকে। কেবল যে নিরীহরাই এই ক্ষমতা যন্ত্রের আক্রোসের শিকার এমনটি নয়। আজ রাষ্ট্রের প্রতিটি স্বাধীনবৃত্তে পরাধীনতার শৃঙ্খলে ডোরাকাটা হিংস্র বৃত্তে আবদ্ধ। তবু মোরা স্বাধীন! কি আশ্চর্য কি অদ্ভূত আমাদের স্বাধীনতা? জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে সত্যিই আমরা গর্বিত ও সভ্য জাতির দাবিদার। আমাদের গণতন্ত্র আজ এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে বন্দি, কলমের স্বাধীনতা লোহার শিকলে মোড়ানো, ব্যক্তি স্বাধীনতা আজ মানববন্ধন আর অনশনের হিমঘরে কিংবা রাষ্ট্রীয় পুলিশের রিমান্ড নামের প্যাজিওথ্যারাপির ইলেক্টিক শর্টে। তাতে কি হয়েছে তবু আমাদের বুকে প্রগতির সুশীলতার চেতনা লালিত আছে! বুক ছিড়ে তো আর প্রগতি কিংবা সুশীলতা আজো বের হয়ে যায়নি! কলম কেড়ে নিয়েছে শাসকগোষ্ঠী তবে কি হয়েছে কলমের তো ঠিকই স্বাধীনতা আছে তাদের কাছে! আর সে রকম স্বাধীন লেখক ও কলমের মুক্ত চেতনায় বিশ্বাসি কোনো একজন কলামসৈনিকও নেই যারা কলমের পরাধীনতায় শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিধ্বনি তুলবে! কলমের স্বাধীনতায় যাদের বিশ্বাস নেই তারা কি করে কলমের পরাধীনতার বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলতে চাইবে! বরং তার চেয়ে ভাল যখন যে শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় আসবে তখন সেই শাসকের হালুয়া রুটি খেয়ে দু’এক কলম লিখে মারছক্কা গতিতে ছুটে চলায় বুদ্ধিমান মিডিয়া ব্যক্তিত্বের কাজ। তাহলে আমি কেন বলছি কলমের স্বাধীনতার কথা? কারণ আমি মুক্ত কলামে বিশ্বাসী, স্বাধীন চেতনায় বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি অথবা জামায়াত নতুবা বাম প্রগতিশীল কারো হালুয়া রুটি খাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। দেশ কে ভালবাসি স্বাধীনতাকে লালন করি, কলমের শক্তিতে বিশ্বাসী। যদি তাই হয় তবে কেন লিখতে হবে আমাকে কেবল শাসকগোষ্ঠীর জয়োল্লাস। এটাই স্বাধীনতার নিয়ম? স্বাধীনতা তো আর মুখের কথা নয় যে কেউ চাইলে তাকে স্বাধীনতা দিয়ে দিব। ষোলকোটি মানুষ কে কারারুদ্ধ করে হলেও আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে? আর এটাই যদি হয় স্বাধীনতার মূল শক্তি তবে কেন থেমে থাকবে আপনার কলমের অপরাজেয় শক্তি? জেল জরিমানা হবে? প্রেসে সিলগালা লাগবে? হামলা মামলা কিংবা রিমান্ড যন্ত্রণায় আপনাকে কাতরাতে হবে? এর চেয়ে বেশি জীবন চলে যাবে তবু মরেও আপনি সফল, বীর হয়ে বেঁচে থাকবেন জনম জনম। জাতির এই ক্লন্তিলগ্নে আজ আমার বেশ মনে পড়ছে কবি সৈয়দ শামসুল হক’র ফিরে এসো বাংলাদেশ বইটিতে লেখা এই প্রবন্ধটি। ওনার এই লেখাটি পড়ে মনে হয়েছিল তিনি বিএনপি শাসক গোষ্ঠীর কলম কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে লিখেছেন। ধন্যবাদ কবিকে। কিন্তু চলমান শাসকগোষ্ঠীর কলমকণ্ঠেরোধের বিরুদ্ধে কথা বলার আর একজন সাংবাদিক কিংবা লেখক কি আজো বাংলাদেশে জন্মায়নি? তাই কবির সাথে সুর মিলিয়ে আমাকে বলতে হচ্ছে ‘ফিরে এসো বাংলাদেশ’

কবি সৈয়দ শামসুল হক

কবি সৈয়দ শামসুল হক ‘আমি লেখক। আমি লেখকের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। লেখকের কলম। আমি কলমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তরবারির চেয়ে শক্তিশালী কলম। তরবারির চেয়ে লক্ষগুণে ধারালোও বটে কলম, এই কথাটায় আমি বিশ্বাস করি। আমি সেই ধারযুক্ত, সেই শক্তিশালী, সেই স্বাধীন কলমে বিশ্বাস করি। চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, প্রকাশনার স্বাধীনতা থেকে শুরু করে ব্যক্তির স্বাধীনতা, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, প্রতিটি স্বাধীনতার অধিকারী যেই মানুষ মাত্রেই, আমি এই সত্য বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি কোনো স্বাধীনতাই শর্তহীন নয়। শর্তই স্বাধীনতাকে সত্য করে তোলে। শর্তই স্বাধীনতাকে শক্তি দেয়। শর্ত আছে বলেই স্বাধীনতা মানুষের পক্ষে প্রকৃত ও ব্যবহারযো্গ্য। শর্তহীন স্বাধীনতা যথেচ্ছাচার। গণতন্ত্রের বিষয়ে বলা হয়েছে, গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস, বাই দ্য পিপলস, ফর দ্য পিপলস: মানুষের সরকার, মানুষের দ্বারা সরকার, মানুষের জন্য সরকার, এটি গণতন্ত্রের সংজ্ঞার চেয়েও অধিক, এটি গণতন্ত্রের শর্ত। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা মানে পতাকা, প্রতীক ও এমনকি জাতীয় সঙ্গীত নয়। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা হচ্ছে একটি জনগোষ্ঠীর প্রতিটি ব্যক্তির সকল ধরনের স্বাধীনতার সমষ্টিগত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। ওই স্বাধীনতা মানবিক সকল অধিকারের শর্তযুক্ত। ব্যক্তি স্বাধীনতাও শর্তযুক্ত। ওই শর্ত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, মানবিক জীবন, সভ্যতা ও লিখিত বা অলিখিত সংবিধান ও আইনকানুন বিধি সকলের শর্তযুক্ত। এমনকি পোশাকের স্বাধীনতাও শর্তযুক্ত। উদ্ভট পোশাক পরে পার পাওয়া যাবে, কিন্তু পোশাকের স্বাধীনতার নামে উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে হৈ হাল্লা করে পার পাওয়া যাবে না। পুরুষ যদিবা শুধু নিম্নাঙ্গ ঢেকে পথে বেরুতে পারে, নারী শুধু নিম্নাঙ্গ ঢেকে এবং ঊর্ধ্বাঙ্গ উন্মুক্ত রেখে রাস্তায় বের হতে পারবে না পোশাকের স্বাধীনতার নামে।

লিখাটি পড়ে ভাল লাগলো তাই এক অর্ণব মামুন ভাইয়ের ফেসবুক থেকে লেখাটি সংগ্রহ করেছি। তাই লেখককের ক্ষমা দৃষ্টি প্রার্থনা।

বিষয়: বিবিধ

১৯১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File