ইসলাম–এর দাওয়াত, ইসলামী সমাজ।

লিখেছেন লিখেছেন স্বপন২ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:১৮:০০ বিকাল

আল্লাহ প্রদত্ত্ব কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম-এর প্রথম ও প্রধান মৌলিক বিষয় হচ্ছে- আল্লাহর প্রতি ঈমান। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে তাঁরই সর্বশেষ নাবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাওয়াত দিযেছিলেন এই ভাষায় যে, “আমিনু বিরাব্বিকুম-তোমরা তোমাদের রব’এর প্রতি ঈমান আনো”। ঈমানের এই দাওয়াত গ্রহণকারীদের ঈমান গ্রহণ সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে ফরমান- হে আমাদের রব! আমরা একজন আহ্বানকারীর আহ্বান শুনতে পেয়েছিলাম, যিনি ঈমানের দিকে আহ্বান করছিলেন (এ বলে) যে, তোমরা তোমাদের রব’এর প্রতি ঈমান আনো (রব‘কে মেনে নাও), আমরা ঈমান এনেছি-তাঁর দাওয়াত কবুল করেছি (সুরা আলে ইমরান:১৯৩)।

উক্ত আয়াতে বর্ণিত আহ্বানকারী হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আহ্বান-দাওয়াত কবুলকারীগণ হলেন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাহাবীগণ। আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাওয়াত প্রসংগে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আরও ফরমান- কি হলো তোমাদের? কেন তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনছোনা? অথচ রাসূল তোমাদের দাওয়াত দিচ্ছেন, যেন তোমরা তোমাদের রব-এর প্রতি ঈমান আনো। আল্লাহ তো পূর্বেই তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছেন, যদি তোমরা (এ অঙ্গীকারের কথায়) বিশ্বাসী হয়ে থাকো (সুরা হাদীদ:৮)।

উপরোক্ত দুটো আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে- আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিয়েছিলেন মূলতঃ আল্লাহরই সর্বোচ্চ গুনবাচক নাম রব দ্বারা। ঈমানের এই দাওয়াত কবুলকারীগণের ঘোষণা হলো রাব্বুনাল্লা-হ–আল্লাহই আমাদের একমাত্র রব, অন্য কেউ নয়। আল্লাহকে একমাত্র রব মানার দাওয়াতের মূল অর্থ ও তাৎপর্য ছিল সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাসহ মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকেই সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক, আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা মেনে নেয়ার আহ্বান। কেননা যে ক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বধীনতা দেননি সেক্ষেত্রে মানুষ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য। সুতরাং ব্যক্তি তার নিজ জান ও মাল ব্যবহারের ক্ষেত্রসহ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর মেনে নিলেই, আল্লাহর প্রতি ঐ ব্যক্তির ঈমান আনা হয়। আল্লাহর প্রতি ঈমানের পরিপূরক ঈমান হচ্ছে- আল্লাহর ফিরিস্তাগণের প্রতি ঈমান, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান, তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান, আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান, তাকদীরের ভাল ও মন্দের প্রতি ঈমান। ঈমানের ফলশ্রুতিই ইসলাম-ইবাদাত অর্থাৎ আল্লাহর দাসত্ব, তাঁরই আইনের আনুগত্য ও তাঁরই উপাসনা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাত করা প্রসংগে তিনি পবিত্র কুরআনে ফরমান- হে মানুষ সকল! তোমরা সেই রব’–এর ইবাদাত (দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা) করো, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন (সুরা আল বাকারা:২১)।

ইসলামের দাওয়াত মূলতঃ একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত।

সকল নাবী ও রাসূলগণ তাদের নিজ নিজ জাতির নিকট আল্লাহর ইবাদাতের যে দাওয়াত দিয়েছিলেন তা পবিত্র কুরআনের সুরা আরাফ:৫৯, ৬৫, ৭৩, ৮৫; সুরা হুদ:২৬, ৫০, ৬১, ৮৪ এবং আরও বিভিন্ন সুরায় বর্ণিত আছে। যেমন- হে আমার জাতি! তোমরা শুধু আল্লাহর দাসত্ব, তাঁরই আইনের আনুগত্য ও উপাসনা করো, তিনি ছাড়া তোমাদের দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী (ইলাহ) কেউ নেই (সুরা আরাফ:৫৯)।

আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দাওয়াত সম্পর্কে আলকুআনে বর্ণিত হয়েছে- সেই আল্লাহই তোমাদের রব-সার্বভৌমত্বের মালিক, সার্বভৌম আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা; তিনি ব্যতিত দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী (ইলাহ) কেউ নেই, তিনিই সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা; কাজেই তাঁরই দাসত্ব, তাঁরই আইনের আনুগত্য ও তাঁরই উপাসনা করো, এবং তিনি সকলের উপর একমাত্র কর্তৃত্বশীল (সুরা আনআম:১০২)।

আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবন সম্পর্কে বর্ণিত ইতিহাস থেকে জানা যায়- লোকদেরকে তিনি আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ (মা’বুদ) গ্রহণ করার দাওয়াত দিয়েছিলেন এ ভাষায় যে, ইয়া আইয়্যুহান্নাসু কূলু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু তুফলিহু– হে সকল মানুষ! তোমরা বলো-অঙ্গীকার করো, নেই কোন ইলাহ (মা‘বুদ)-দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী সত্ত্বা একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে-কল্যাণ লাভ করবে। ইসলামের দাওয়াত কবুলকারী ব্যক্তির অঙ্গীকার হচ্ছে- আশ্‌হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি (অঙ্গীকার করছি), নেই কোন ইলাহ-দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী সত্ত্বা, একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত।

হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুয়াত ও রিসালাত লাভের সময় থেকে কিয়ামাত পর্যন্ত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম বাস্তবায়নে শর্তহীন আনুগত্য (অনুসরণ ও অনুকরণ) একমাত্র আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর, অন্য কারো নয়। সুতরাং ইসলাম বাস্তবায়নে শর্তহীন আনুগত্য-অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর, তিনি ব্যতিত অন্য কারো আনুগত্য শর্তহীন করা যাবে না। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মনোনীত সকল নাবী ও রাসূলগণের ইসলাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দাওয়াত ছিল- ফাত্তাকুল্লাহা ওয়া আত্বীয়ূনি-তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো (সুরা আলে ইমরান:৫০)।

ইসলামবাস্তবায়নের লক্ষ্যে আল্লাহর সর্বশেষ নাবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শর্তহীন আনুগত্যের (অনুসরণ ও অনুকরণের) দাওয়াত কবুলকারী ব্যক্তির অঙ্গীকার হচ্ছে- আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি (অঙ্গীকার করছি) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল-শর্তহীন আনুগত্য (অনুসরণ ও অনুকরণ) পাওয়ার অধিকারী একমাত্র নেতা, অন্য কেউ নয়।

বিষয়: বিবিধ

৯৬২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378024
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:৪৭
রাশেদ বিন জাফর লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খায়রান,,,,,,,,,,,,,
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:১৪
313341
স্বপন২ লিখেছেন : Thanks, to read this article

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File