হিমালয়ের দেশে (ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী, পর্ব-২)

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তারিক ৩০ মার্চ, ২০১৩, ০৯:০২:৩১ রাত

ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ

ট্যুরিজম মেলার আজ দ্বিতীয় দিন। কাল শেষ। ২৫% ছাড়-এর সুবিধা নিতে হলে কালকের মধ্যেই টিকেট কাটতে হবে। টিকেট কাটব, কিন্তু হাতে তো টাকা নেই। ‘কুচ বাত নিহি’ আছে ক্রেডিট কার্ড। ‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’ কোন্ মহা মনীষী বলেছিলেন ব্যাংকের ডেবিট ক্রেডিটের সাদা আর নীল ভাউচারের ঘষাঘষিতে সে কথা বহু আগেই ভুলে বসে আছি। তবে মনে আছে তার মহান শ্লোকটি। শ্লোকের আগের লাইনটিও কিন্তু বেশ মনে আছে। পাঠকের আগ্রহ থাকলে অর্থসহ শ্লোকটি শিখে নিতে পারেন:

যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ

ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ।

(অর্থাৎ, যতদিন বেঁচে আছ সুখে বাঁচার চেষ্টা কর, ধার করেও ঘি খাবার ব্যবস্থা কর)। ক্রেডিট কার্ড আমাদেরকে ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া'নোর মহান (?) কর্মটি বেশ ভালভাবেই করছে। ভোগবাদী পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার পেছনে সুদভিত্তিক এই ক্রেডিট কার্ডও এক বড় নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেছে। বল্গাহীন ভোগের মাঝে অর্থ যেন কোন বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ওরা আবিষ্কার করেছে ক্রেডিট কার্ড নামক এক মহা ধন্বন্তরী। না আপনাকে কোন পরিশ্রম করতে হবে না। ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির চকচকে সু আর স্যুট-টাই পড়া কেতাদূরস্ত কিন্তু অতি বিনয়ী মার্কেটিং অফিসার পৌছে যাবে আপনার দোর গোড়ায়। আপনার আগ্রহ কম থাকলেও অসীম ধৈর্য নিয়ে আপনেক বুঝাবে কিভাবে একটি ক্রেডিট কার্ড আপনার জরুরি প্রয়োজনে ত্রাণকর্তার ভুমিকা পালন করবে। নগদ টাকা দরকার? মোড়ে মোড়ে বসানো আছে এটিএম মেশিন। শুধু প্রয়োজন সাড়ে তিন ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে পাতলা যাদুকরি কার্ডটি। মেশিনে ঢুকিয়ে পাসওয়ার্ড তারপর আপনার লিমিট অনুযায়ী পরিমাণ লিখে দেয়া মাত্রই বেরিয়ে আসবে কড়কড়ে ডলার, পাউন্ড, টাকা। মাস শেষে পেমেন্ট-এর চিন্তা? ‘কুচ পরোয়া নেই’। এক কোম্পানির কার্ডের পেমেন্ট দেয়ার জন্য একটু বেশি লিমিট নিয়ে আরেকটি কোম্পানির কার্ড নিয়ে নিলেই হল। এর পর সেই কার্ডের পেমেন্টের সময় হলে আরেক কার্ড কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার আপনার দুয়ারে ‘মুসকিলে আসান’ হিসেবে উপস্থিত। এভাবেই একটার পর একটা কার্ডে মানি ব্যাগ পূর্ণ হতে থাকে আর ভোগের দরজা থাকে অবারিত। সম্ভবত ড. এমাজউদ্দিনের একটি লেখায় পড়েছিলাম, ২০০৮ সালের এক জরিপমতে, একেকজন আমেরিকানের জিম্মায় গড়ে ১৩ টি করে ক্রেডিট কার্ড ছিল। উচ্চ সুদের হারে এসব ক্রেডিট কার্ড (Overdraft) এর ব্যাপক ছড়াছড়ি কার্ডহোল্ডারকে গভীর দেনার মধ্যে নিমজ্জিত করে। ফলে অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয় মন্দা। যাই হোক, ক্রেডিট কার্ডের গুনে টিকেট কাটা হয়ে গেল। ঢাকা টু কাঠমুন্ডু। ভ্রমণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত হল ১ জুন থেকে ৮ জুন ২০১২।

ন’টার ট্রেন ক‘টায় ছাড়ে

‘ন‘টার ট্রেন ক’টায় ছাড়ে’- বাংলা প্রবাদটি বাংলাদেশের ট্রেনের কপালে এক কলঙ্কের দাসখত একে দিয়েছে। ‘কালো বিড়াল’ এর সন্ধান করতে এসে নিজেই কালো বিড়ালের থাবায় আক্রান্ত হয়ে মসনদচ্যুত মন্ত্রী মহোদয় এ কলঙ্কের কতটা মোচন করতে পেরেছেন সে মূল্যায়নের উপযুক্ত জায়গা এটা নয়। তবে একদিন নাকি ন‘টার ট্রেইন ঠিক ন‘টায়ই ছেড়ে গেল। লোকেরা বলাবলি করছে যে, করপক্ষে একদিন হলেও তো ট্রেন যথাসময়ে ছাড়ল। পরে একজন জানাল যে এত খুশী হওয়ার কিছু নেই, এটা গতকাল ৯ টার ট্রেন। যা হোক, হতে পারে এটা নিছক গল্প। তবে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষেত্রে বোধ হয় শীঘ্রই কথাটা চালু হবে ‘ন‘টার বিমান ক‘টায় ছাড়ে’। কারণ নেপালে দীর্ঘ ২০ বছর যাবত বাস করছেন এমন একজন আমাদের জানিয়েছেন গত ২০ বছরে ঢাকা টু কাঠমুন্ডু কিংবা কাঠমুন্ডু টু ঢাকার পথে চলাচলকারী বাংলাদেশ বিমানের কোন ফ্লাইটই যথাসময়ে চলাচল করেছে বলে তার জানা নেই।



নিয়মানুযায়ী বিমান ছাড়ার ২ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করতে হয়। আমাদের নির্ধারিত সকাল ৮.৫০ এর ফ্লাইট ধরার জন্য আমরা ২ ঘন্টারও বেশি আগে এয়ারপোর্টে পৌছেছি। পৌছেই ডিসপ্লেতে দেখা গেল ঢাকা-কাঠমুন্ডু ফ্লাইটের সময় লেখা আছে ১০.৩০ মিনিট। অর্থাৎ প্রায় পৌনে ২ ঘন্টা লেট। কি আর করা। এয়ারপোর্টে হাঁটাহাঁটি আর বসে বসে পত্রিকার পাতা উল্টানো আর আর রং-বেরঙ্গের মানুষ দেখা ছাড়া হাতে আর কোন কাজ রইল না। (চলবে)

পর্ব-১ পড়ুন: মনে বাজে হিমালয়, এভারেস্ট

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File