সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চলমান গণহত্যার নিরপেক্ষ বিশ্লেষণঃ

লিখেছেন লিখেছেন শামশুদ্দিন মানিক ০৬ মার্চ, ২০১৩, ০১:১৫:৪৫ রাত



প্রথম প্রশ্ন হল গণহত্যা কাকে বলে? অথবা কি পরিমাণ মানুষ হত্যা করলে তাকে গণহত্যা বলা হবে? বিভিন্ন অভিধানে এভাবেই গণহত্যাকে সংজ্ঞায়িত করেছে- Genocide is "the deliberate and systematic destruction of, in whole or in part, of an ethnic, racial, religious, or national group". এই সংজ্ঞা অনুসারে গত একমাস ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নিপীড়নের মাধ্যমে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের নামে যেভাবে হত্যাকাণ্ড চলতেছে তাকে নিঃসন্দেহে গণহত্যা রুপে আখ্যায়িত করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন নাস্তিক্যবাদ মদদপুস্ট সরকারের নীতিনির্ধারকরা কিছুতেই এটাকে গণহত্যা বলতে রাজী না, এমনকি কিছু সু!শীল ব্যক্তিরাও তাদের সাথে সুর মিলিয়ে বলতেছে এটা গণহত্যা না। বাংলাদেশের মানুষকে তারা এতই বেকুব পেয়েছে যে পেয়ারাকে আম বলে চালিয়ে দিলে সানন্দে তারা তা গ্রহণ করে নিবে। এই ডিজিটাল যুগে সেই ঘুম পাড়ানি গান দিয়ে মানুষকে ঘুম পাড়ানো যাবে না। বর্তমান সময়ে দেশের সকল মিডিয়াকে কুক্ষিগত করে রাখলেও দেশের বাইরের মিডিয়াগুলোতে হস্তক্ষেপ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব না। তাই সরকারের অনেককেই বলতে শুনা যাচ্ছে জামায়াত ইসলাম দেশের বাইরের সকল মিডিয়াতে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। সবার কাছে এটা হাস্যকর লাগে যে, জামায়াত ইসলাম যদি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে (CNN, BBC, Al-Jajira) টাকার বিনিময়ে ক্রয় করতে পারলে দেশের অভ্যন্তরের অখ্যাত চ্যানেল গুলোকে কেন ক্রয় করতে পারল না। যাইহোক এই সকল চ্যানেল এবং অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের সচেতন নাগরিক জানতে সক্ষম হয়েছে চলমান হত্যাকাণ্ড গণহত্যা কিনা। এবার আসা যাক আসল কথায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া এমন কোন সহিংস ঘটনা ঘটে নাই, যেখানে একসাথে একদিনে ৮০ এর অধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। স্বৈরশাসক এরশাদের সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ ১৪জনকে হত্যা করা হয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। আমি আশ্চর্য হয়ে যাই বর্তমানে এতবড় হত্যাকাণ্ডের পরেও সরকার কিভাবে টিকে আছে। এর কারণ হিসেবে দুটি বিষয়ে বিশ্লেষণ করা যায়। সাধারণত কোন দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে দুটি জনগুষ্টি এগিয়ে আসে, একটি হল দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ এবং আরেকটি হল সেনাবাহিনী। প্রথমে বুদ্ধিজীবী সমাজের বিশ্লেষণ করা যাক। বর্তমানে দেশে অবস্থানরত বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী নাস্তিক এবং প্রচণ্ড ইসলাম বিদ্বেষী হওয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের(সঃ) অবমাননার প্রতিবাদে লক্ষ লক্ষ ধর্মভীরু জনতা রাস্তায় নেমে আসলে তারা তাদের বিপক্ষে অবস্থান নেই। আর যেহেতু ইসলাম বিদ্বেষী সেহেতু সরকার হাজারো গণহত্যা চালালেও ইসলাম পন্থী জামায়াত ইসলাম বা তাদের আন্দোলনকে কোন অবস্থাতেই সমর্থন দিতে পারে না। যেখানে একজন সংখ্যালগু ব্যক্তিও যদি গুপ্তহত্যার শিকার হয় সেখানে ডঃ মিযানুর রহমান, সুলতানা কামাল গংদের জ্বালায় দেশে থাকা দায় হয়ে যায়। আর শত শত মুসলিম তৌহীদী জনতা রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে অন্যায় শিকার হলে তাদের দেশে চিরুনি দিয়েও খুজে পাওয়া যায় না। এই হল বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মানবাধিকার চিত্র। আর মাহমুদুর রহমানের মত সাহসী বীর এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এমনকি গ্রেফতার, হত্যা, গুমের হুমকি দেওয়া হয়। আমি আল্লাহর কাছে অশ্রুভেজা নয়নে এই ব্যক্তিটির জন্য দোয়া চাই আল্লাহ যেন উনার হায়াতকে বাড়িয়ে দেন। এবার আসি চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গী কি? এই হত্যাযজ্ঞ অবলোকন করার পরও কেন সেনাবাহিনী কোন প্রতিক্রিয়া দেখাল না? সাধারণত কোন দেশে যখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয় তখন জনসাধারণের কথা চিন্তা করে সেনাবাহিনী মাঠে নেমে আসে। স্বাভাবিক অবস্থায় জনগণ কখনো সেনাশাসন মেনে নেই না। কিন্তু যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় গিয়ে দাড়ায় যেখানে সর্বোচ্চ অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে তখন জনগণ মন থেকে চায় সেনাবাহিনী ভূমিকা রাখুক। যেটা কয়েকদিন আগে বগুড়াতে প্রমাণিত হয়েছে। আল্লামা দেলোয়ার হুসাইন সাইদীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে নেমে আসা জনতার ঢলের আটজনকে হত্যার পরে যখন জনগণ পুলিশ বিজিবির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠল তখন আইএসপিআর দুই প্লাটুন সেনা মোতায়েন করে যাদেরকে বগুড়ার জনগণ করতালি দিয়ে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। এই থেকে বুঝা যায় বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনার ভূমিকা রাখা সময়ের দাবী ছিল। কিন্তু তাদের কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি। এর একটাই মাত্র কারণ তা হল বর্তমান সরকার অনেক আগেই সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড সুচারুরূপে ভেঙ্গে দিয়েছে। যা সাধারন জনগনের মাঝে বিডিআর বিদ্রুহ নামে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে পরিচিত। এই বিডিআর বিদ্রুহ ছিল সরকারের আরেকটি পরিকল্পিত গণহত্যা। যেটার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে যে সকল অফিসাররা জনগনের নিরাপত্তার খাতিরে পাশে এসে দাঁড়াত সেই সকল অফিসারকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, এমনকি ক্যু ঘটাতে পারে এমন সন্দেহে শত শত অফিসারকে চাকরি থেকে বাধ্যতামুলক অবসর দেয়া হয়েছে। যার সত্যতা আমাদের কাছে হয়ত কোন দিনই উন্মুচিত হবেনা। সেনাবাহিনীর এহেন নাজুক পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে আপনারাই বলুন। যায়হোক এতকিছুর পরেও আমরা কখনো সেনাশাসন চাইনা। উপরে উল্লেখিত সকল ঘটনার উপসংহারে উপনীত হয়ে এটাই প্রমাণিত হয় যে বর্তমানে দেশে সৃষ্ট অরাজনৈতিক পরিস্থিতি সরকারের পূর্বপরিকল্পনারই ফসল।।।

বিষয়: রাজনীতি

১২৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File