শেখ হাসিনাকে আরেক দফা ক্ষমতায় বসানোর কৌশল চূড়ান্ত করেছে ভারত(কপি এবং পেষ্ট)

লিখেছেন লিখেছেন মোরশেদ সরকার ১৩ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৫৩:১৩ বিকাল

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আউটলুক ইন্ডিয়ার অনলাইনে ‘বাংলাদেশ: জামায়াতে ইসলামী: দ্য মনস্টার ব্রিথস এয়ার’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের টিভি চ্যানেল ‘টাইমস নাউ’-এর রাজনৈতিক বিশ্লেষক, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়া, সানডে, সাউথ চায়না মরনিং পোস্ট (হংকং) ও খালিজ টাইমস (দুবাই)-এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারি প্রখ্যাত সাংবাদিক এস এন এম আবদি তার নিবন্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ে তার বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রির অধিকারী আবদি ব্যক্তিজীবনে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদারের স্বামী। তাঁর নিবন্ধের অনুবাদ

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাল দিকটি হলো তারা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কোন হিন্দুকে হত্যা করে না। সততার সঙ্গে বলতে হয়, ভারতে হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠনের হাতে যেভাবে মুসলমানরা নিয়মিত টার্গেটে পরিণত হচ্ছে সেখানে জামায়াত নিষ্ক্রিয়ই। এ দলটি সম্পর্কে এটিই সরল সোজা সত্য কথা। অবশ্যই ভারত ও পশ্চিমা মিডিয়া এসব বিষয়ে রিপোর্ট ছাপছে না। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা, যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচার, শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলন এবং জামায়াতের নয়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৃশংসতার অভিযোগে ফাঁসির আদেশ- এ সব কিছুতেই ভারতীয় ও পশ্চিমা মিডিয়া জামায়াতকে বেপরোয়া দৈত্যের সঙ্গে তুলনা করছে। বাংলাদেশের সর্বশেষ এ রাজনৈতিক উন্মাতাল পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে কমপক্ষে ৮৪ জন নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই জামায়াতের সমর্থক। তাদের হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

বাংলাদেশ যখন সহিংসতায় সর্বতোভাবে জ্বলছে তখন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ঢাকা সফর করেন। তাকে বহনকারী বোয়িং-৭৪৭ বিমানে সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিল ‘আউটলুক’-এর সাংবাদিক। জাম্বো জেটে করে ‘বিগ ব্রাদার’ যখন বিমানবন্দরে অবতরণ করলেন তখন টারমাকে অবস্থানকারী ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। এ বিষয়ে ফার্স্ট সেক্রেটারি স্পষ্টতই বললেন, যা-ই বলুন বিমানটির আকার কিন্তু একটি ব্যাপার। স্বাগতিকদের কাছে এর ক্ষমতা সম্পর্কে একটি সঠিক বার্তা পৌঁছে দেয়া গেছে। কিন্তু রাজধানী ঢাকার পরিস্থিতি তখন এতটাই ভীতিবিহ্বল যে, ভারতীয় রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে যখন তোপধ্বনি করা হয় তখন তার সফরসঙ্গীদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়েছিলেন পুলিশ গুলি করছে কিনা।

ঢাকার শাহবাগে ধর্মনিরপক্ষ মধ্যপন্থিদের জামায়াতবিরোধী আন্দোলন ও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে বিশ্ব মিডিয়ার সামনে নিয়ে এসেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ দলের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার পর তারা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর নির্বাচনী মিত্র এ জামায়াত। বিএনপিকে বলা হয় ভারতবিরোধী। অন্যদিকে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে ব্যাপকভাবে ভারতপন্থি মনে করা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল। যদি তারা নিরপেক্ষ অর্ন্তবর্তী সরকারের বিষয়ে একমত হতে পারেন তাহলে আগামী বছর যে জাতীয় নির্বাচন হবে তাতে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এ দু’টি পক্ষ। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু’দলেরই রয়েছে জোটের সমর্থন।

এখন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের বিপক্ষে যে অবস্থান নিয়েছে তাতে কি এটা পরিষ্কার করে বলা যায়, জামায়াত ভারতের প্রতি হুমকি হবে? মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে জামায়াতিদের পরিষ্কার বোঝা যায়। তাদের বেশির ভাগেরই মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি। কিন্তু ইসলামী লেবাস পরলেই কি তারা ভারত বা হিন্দুদের বিরুদ্ধে শপথ নেয়া শত্রুতে পরিণত হবে? বাংলাদেশে হিন্দুরা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ। জামায়াত কি ভারত বিরোধী, হিন্দুদের বিরোধী অথবা দু’পক্ষেরই বিরোধী?

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কোন কূটনীতিক অথবা হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন নেতা মনে করতে পারলেন না সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু ধর্মীয় কারণে কোন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের হাতে হিন্দুরা নিহত হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। শুধু হিন্দু হওয়ার কারণে নয়, তাদের টার্গেট করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার কারণে। এ বিষয়টিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই (এম) ও তৃণমূলের মধ্যে নিত্য সংঘর্ষে রাজনৈতিক কর্মীদের প্রাণহানি হচ্ছে। নিহতদের অনেকেই মুসলমান এবং তারা দুই প্রতিপক্ষ দলেরই সদস্য।

হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের এক মুখপাত্র ‘আউটলুক’কে বলেছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই চট্টগ্রামের কাছে বাঁশখালীতে একটি মন্দিরের বয়োবৃদ্ধ এক পুরোহিতকে প্রহার করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা জোর দিয়েই বলেন, এ মৃত্যুর সঙ্গে রাজনৈতিক কোন ব্যাপার জড়িত নেই। মজার ব্যাপার হলো- ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক সংঘর্ষের সময় কুপিয়ে হত্যা করে হিন্দু সমপ্রদায়ের যুবক বিশ্বজিৎ দাসকে। ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিতে দেখা যায় ২৪ বছর বয়সী এ যুবক আর্তনাদ করে বলছিলেন তিনি রাজনীতি করেন না- তিনি একজন হিন্দু। বিশ্বজিৎকে জঘন্যভাবে ও ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিতে এক গভীর কলঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৩২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File