ব্লগারদের ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণায় আলেমদের ক্ষোভ : নাস্তিকদের প্রতিরোধে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা -আহমাদুল্লাহ আশরাফ

লিখেছেন লিখেছেন সোনামণি ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:১০:১৪ সকাল



মহান আল্লাহ, পবিত্র ইসলাম ধর্ম, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ ইসলামী বিভিন্ন বিধান এবং মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.) সম্পর্কে শাহবাগের নাস্তিক ব্লগারদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও কটূক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে আলেম সমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। ইসলাম ধর্ম ও শেষ নবী (স.) এর অবমাননাকারী নাস্তিক মোরতাদদের সর্বাত্মক প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে তারা বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এসব নাস্তিক ব্লগার অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে তাদের ইসলামবিদ্বেষী অপকর্ম পরিচালনা করে চলেছে। ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় নাস্তিক্যবাদের ধারক এ সরকারের মন্ত্রীদেরও ফেরাউন-নমরুদের ভাগ্য বরণ করতে হবে। নাস্তিক মোরতাদরা ইসলামের বিরুদ্ধে মরণকামড় দিয়েছে। তারা বলেন, সরকার শাহবাগে তরুণ-তরুণীদের জড়ো করে তাদের মধ্যে খাবার-দাবার ও বিনোদন উপকরণ বিতরণ করে ইসলামের অস্তিত্ব নির্মূলের পথে নামিয়েছে। ইসলাম ও মানবতার শত্রু এসব নাস্তিকের প্রতিরোধে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে সর্বস্তরের মানুষকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান তারা।

প্রসঙ্গত, শাহবাগ আন্দোলনের উদ্যোক্তা রাজীবসহ অন্য ব্লগাররা তাদের অনুসারীদের উদ্বুদ্ধ করতে পবিত্র ইসলাম ও ইসলামী বিধি-বিধান নিয়ে নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে চলেছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তা প্রকাশ করেছে। শেষ নবী (স.) সম্পর্কে ব্লগার রাজীব লিখেছে, ‘মোহাম্মদ আর আহাম্মক মিলে হয়েছে মোহাম্মক। মোহাম্মকের নিজের মনগড়া বানানো ধর্মই হচ্ছে মোহাম্মকী ধর্ম।’ এমনিভাবে জাতির কলঙ্ক এ কুলাঙ্গার রাজীব নবী (স.) এর নবুওত সম্পর্কে আরও লিখেছে, ‘বিবি খাদিজার পায়ের জুতার বাড়ি মোহাম্মকের পিঠে ক্ষত তৈরি করে। এই ক্ষত চিহ্নই পরবর্তীতে মোহাম্মক তার বোকা অনুসারীদের নবুওতের মোহর হিসেবে প্রচার করে’। (নাউজুবিল্লাহ)। এমনিভাবে রাজীব নবী (স.) সম্পর্কে তার কুরুচিপূর্ণ মনগড়া বক্তব্য তুলে ধরে।

শাহবাগের ব্লগারদের এমন ঔদ্ধত্যের বিষয়ে ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা জুলকার নাঈন আল-মাদানী বলেন, সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় নাস্তিক মোরতাদরা ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব সম্পর্কে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা একটি মন্তব্য করায় সরকার সর্বশক্তি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে রাজাকার হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ শাহবাগের ব্লগাররা মহান আল্লাহ, পবিত্র ইসলাম ও দেড়শ’ কোটি মুসলমানের প্রাণ শেষ নবী (স.) সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করার পরও আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থন দিয়ে উত্সাহিত করে চলেছে। ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু আওয়ামী লীগ নাস্তিক মোরতাদদের দিয়ে মুসলমানদের দমন করতে চায়। এদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এক যুক্ত বিবৃতিতে ব্লগারদের ন্যক্কারজনক ইসলামবিদ্বেষী নোংরা মন্তব্যের তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, সরকার যদি অনতিবিলম্বে এহেন নাস্তিক-মুরতাদ ধর্মদ্রোহীদের কর্মকাণ্ড বন্ধ না করে তবে সারাদেশে ক্ষোভের যে দাবানল জ্বলে উঠবে তাতে নাস্তিক-মুরতাদদের সঙ্গে সরকারও পুড়ে মরবে। শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতার স্বার্থে নাস্তিক-মুরতাদদের সঙ্গে নিয়ে যে খেলা শুরু করেছেন তার পরিণাম শুভ হবে না। মনে রাখা উচিত আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে অতীতেও কেউ রক্ষা পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। খোদাদ্রোহী ফেরাউন, নমরুদের মতো ক্ষমতাশালীদের যে দশা হয়েছিল সে ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বর্তমান শাসকরাও ভুল করবেন। তারা বলেন ব্লগার রাজীবের আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলামের বিরুদ্ধে নোংরা লেখা প্রকাশ হওয়ার পর এখন শাহবাগ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাওহীদি জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ শুরু হলে রাম-বাম নাস্তিক-মুরতাদরা পালানোর পথ পাবে না।

ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী এক বিবৃতিতে বলেন, শাহবাগের ব্লগাররা ইসলাম, নবী (সা.) ও বিভিন্ন ইসলামী বিষয় সম্পর্কে যেসব অশ্লীল, অশ্রাব্য ও কুরুচিপূর্ণ কথা লিখেছে, যা পড়ে আমরা স্তম্ভিত, বাকরুদ্ধ এবং ঘৃণায়, লজ্জায় আমাদের বিবেক নিথর ও পাথর হয়ে গেছে। এর প্রতি নিন্দা, ঘৃণা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। ইতিহাসে এ পর্যন্ত যারা ইসলাম ও মহানবীর (সা.) অবমাননায় লেখালেখি করেছে, তাদের কেউই রাজীবের মতো এত নিচু, নিকৃষ্ট ও নষ্ট-ভ্রষ্ট মানসিকতার পরিচয় দিতে পারেনি।

তিনি বলেন, শাহবাগ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাম্প্রতিক রায়ের আগে জামায়াতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকারের কথিত গোপন আঁতাতের গুজবকে কেন্দ্র করে। কাজেই স্বাভাবিকভাবে এই আন্দোলন হওয়া উচিত ছিল ক্ষমতালোভীদের দ্বিমুখী চরিত্রের বিরুদ্ধে। কিন্তু ইসলামবিদ্বেষী বামপন্থী মহল ও সরকারি দল সুকৌশলে এর নিয়ন্ত্রণ করে তরুণদের দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। যার প্রতিক্রিয়ায় আজকে রাস্তাঘাটে দাড়ি-টুপিধারী লোকদের নাজেহাল করা হচ্ছে এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আবদার করা হচ্ছে। মূলত তারা ইসলামকে টার্গেট করেছে। টাকা-পয়সা, বিরিয়ানির প্যাকেট, আমোদ-ফুর্তির উপকরণ সরবরাহ করে তরুণদের রাতদিন রাস্তায় রেখে দেয়ার যে খেলায় মেতেছেন, তার পরিণতি আপনাদের নিজেদের জন্যই ভয়াবহ হতে পারে।

ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা বলেছেন, কল্পনা করতে কষ্ট হয়, শাহ জালাল, শাহ পরান পীর মাশায়েখ ও মুফতি আমিনীদের এই প্রিয় বাংলাদেশে আমাদের নবীর বিরুদ্ধে এমন ধৃষ্টতা প্রদর্শনের পরও তারা বহাল তবিয়তে আছে। কোথায় হারিয়ে গেল বাংলার তাওহিদপ্রিয় তরুণদের সেই উত্তাল তরঙ্গ। মুসলমানদের ঈমানি জজবার ন্যূনতম বহিঃপ্রকাশ কি হবে না? মুফতি আমিনীর উত্তরসূরি একজন আলেম কি বেঁচে নেই? ঈমানি পরীক্ষার এই কঠিন দুঃসময়ে মুসলমানদের ঈমান ও দ্বীন বাঁচাতে মুফতি আমিনীর (রহ.) সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। তারা বলেন, শাহবাগের এই আন্দোলন বাংলাদেশের আবহমান কালের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ইসলামী ধ্যান-ধারণাকে সমূলে উত্পাটন করার পরিকল্পনা নিয়েই সংগঠিত করা হয়েছে। গুটিকয়েক নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারের বিনোদন আয়োজন, চিহ্নিত কিছু মিডিয়ার অসত্য ও বিরামহীন প্রচারণা এবং আপন স্বার্থ হাসিলে সরকারের সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতার ফসল শাহবাগের এই সাময়িক উত্তেজনা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করে না কিছুতেই। নাস্তিক মুরতাদদের এই দৌরাত্ম্য বাংলাদেশের জমিনে মেনে নেয়া যায় না। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আইন বাহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু যারা ব্লগার রাজীবকে হিরো বা নায়ক বানানোর চেষ্টা করছেন তারা আর যাই হোক মুসলমান পরিচয় দিতে পারে না। কোনো নাস্তিককে বা তার কাজকে সমর্থন করে কেউ মুসলমান থাকতে পারে না। আমরা অবিলম্বে বাংলাদেশে এসব ব্লগ নিষিদ্ধ ও ব্লগারদের ফাঁসি দাবি করছি। অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদে ব্লাসফেমি আইন করে নাস্তিক মুরতাদদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় মুসলমানদের ঈমান রক্ষার আন্দোলনের সামনে শাহবাগের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আয়োজন শুধু বালির বাঁধের মতো ভেসেই যাবে না, নাস্তিক মুরতাদদের দোসর বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে ছাড়বে। গতকাল দলের কার্যালয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের এক জরুরি সভায় নেতারা এসব কথা বলেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যেব, মাওলানা যুবায়ের আহমদ, মাওলানা জসিমুদ্দীন, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আবুল কাশেম প্রমুখ।

এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামা ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের জনগণের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উপেক্ষা করে দেশের ভেতরে বসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থেকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ব্লগার রাজীব ব্লগের পোস্টে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.), মা খাদিজা, মা আয়েশা,সাহাবি হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.), কোরআন, ইসলাম, মুসলমান, নামাজ, রোজা, তাহাজ্জুদ নামাজ, ঈদ সম্পর্কে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নোংরা ভাষায় যে ধরনের মিথ্যা ও জঘন্য অপবাদ দিয়েছে তা এ পর্যন্ত দেয়া সব অপবাদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম। এছাড়া ধর্মীয় বিধিবিধান প্রবর্তনের যে মনগড়া জঘন্য কাহিনী লিখেছে তা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভব বলে বিশ্বসযোগ্য নয়। এসব মগজ বিকৃত কল্পকাহিনী রচনা ও প্রচার প্রকাশ কোনো প্রকারের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না। এসব বিকৃত বক্তব্য সমর্থনকারীরা ইসলামের শত্রু। নাস্তিক, মুরতাদ ও কাফির।

বিবৃতিতে শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামারা বলেন, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন যে কারণেই সংগঠিত এবং চলমান থাক না কেন এর উদ্যোক্তারা যদি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ও ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে হজরত শাহজালাল ইয়ামেনীসহ (রহ.) অসংখ্য পীর আউলিয়ার এ দেশ থেকে ইসলাম নির্মূলের হীন উদ্দেশ্য নিয়ে করে থাকেন তা হলে এর চেয়ে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি সমাবেশের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মোহাম্মদ (সা.) এর উম্মত মুসলমানেরা জীবনের বিনিময়ে তা প্রতিহত করবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন, দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী, কারীমপুরের পীর সাহেব আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, মাসিক আল ফুরকস্ফান সম্পাদক এম. আতিকুল হক, মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক মুফতি আবুল হাসান শামসাবাদী, মাসিক মদীনার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান সম্পাদক মোস্তফা মঈনু্দ্দীন খান, মাসিক সংস্কার সম্পাদক অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন, মাসিক আল হক সম্পাদক এমএম ফুরকানুল্লাহ খলিল, মাসিক মদীনার পয়গাম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কবির।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী বলেন, কুলাঙ্গার ব্লগাররা ফেসবুকের মাধ্যমে মহানবী (সা.) সম্পর্কে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করেছে তা কোনো মুসলমান মেনে নিতে পারেন না। এ ধৃষ্টতার কারণে সে মুসলমান থাকতে পারে না। তাই কাপাসিয়াবাসীদের প্রতি আমার আহ্বান, কুলাঙ্গার রাজীবের লাশ মুসলমানদের কবরস্থান থেকে সরিয়ে ফেলুন।

জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ মো. শাহজালাল ও প্রধান সম্পাদক আবদুল কাদির এক বিবৃতিতে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে ইসলাম ও প্রিয় নবীর (সা.) এর ব্যাপারে যে কটূক্তি করেছে ঈমান থাকতে কোনো মুসলমান তা মেনে নিতে পারেন না। মহানবী মুসলমানদের আদর্শের প্রতীক। আর এই রাসুলকে (সা.) নিয়ে কটাক্ষ করা হবে আর আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখরা বসে আঙুল চুষবে তা হতে পারে না। জীবনের এক ফোটা রক্ত থাকতে তা হতে দেয়া হবে না। জাতীয় তাফসির ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল আখির ও মহাসচিব মাওলানা আবু দাউদ মুহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশের বুকে বসে জাহান্নামী নাস্তিক ব্লগার রাজীবের মতো আরও অনেক ব্লগার তাদের ব্লগে ইসলাম মুসলমান ও ধর্মবিশ্বাসের ওপর প্রতিনিয়ত এমন চরম ব্যঙ্গাত্মক আঘাত করছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে দীন বিরোধী সব অপকর্মকে ছাড়িয়ে গেছে। দেশে অনেক বাংলা ব্লগ রয়েছে যেগুলোতে প্রতিনিয়ত ইসলাম মুসলমান ও ধর্মবিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত হানা হচ্ছে। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা তাদের নীতিকে কেউ কটাক্ষ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরা হয়, শাস্তি দেয়া হয়। অথচ সারা জাহানের অধিপতি ও মালিক আল্লাহতাআলা এবং সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম পবিত্র মানুষ হজরত মোহাম্মদকে (সা.) ভয়ঙ্করতম বিশ্রী গালাগাল দিচ্ছে, কটাক্ষ করছে একদল জাহান্নামের কীট, এদের দেশের সরকার, প্রশাসন, গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিরোধ না করে উল্টো উত্সাহিত করছে।

খেলাফত আন্দোলনের বিক্ষোভ : ব্লগে ইসলামবিরোধী প্রচারণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল বিক্ষোভ করেছে খেলাফত আন্দোলন। বিকালে কামরঙ্গীরচর মাদরাসায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হলে পুলিশ ও র্যাবের বাধায় সেখানেই শেষ করা হয়। সমাবেশে খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমিরে শরিয়ত মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ বলেন, ব্লগার আহমাদ রাজীব হায়দার তার ব্লগে মহান আল্লাহ তায়ালা, হজরত মুহাম্মদ (সা.), ইসলাম, ঈদ, সিজদা, নামাজ ও নবুওয়াত নিয়ে যে কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা এবং মনগড়া লেখা পোস্ট করেছে তা কুখ্যাত মুরতাদ সালমান রুশদির চেয়েও জঘন্য। এটা তার মানসিক ভারসাম্যহীনতার বহিঃপ্রকাশ। তার এসব ব্লগ পড়ার পর কোনো সুস্থ-বিবেকসম্পন্ন মানুষ এবং ভিন্নধর্মের মানুষও সহ্য করতে পারবে না।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আবুল কাসেম কাসেমী, ফিরোজ আশরাফী, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলন : ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, অলি-আউলিয়াদের পদভারে ধন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে নাস্তিক ও আল্লাহর নবীর দুশমনদের ঠাঁই দেয়া হবে না। বিশেষ করে ইন্টারনেটভিত্তিক নাস্তিক্যবাদীদের ইসলাম ও নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপপ্রচার যেভাবে চলছে এ অবস্থা কোনো মুসলমান সহ্য করতে পারে না। গতকাল দলের মজলিশে আমেলার জরুরি বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে মুফতি ফয়জুল করীম এ আহ্বান জানান। সভায় আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোখতার হোসাইন, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ও নগর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।

২০ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ওলামা-জনতা বিক্ষোভ : ২০ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পীর মাশায়েখ, ওলামা-জনতার মঞ্চ। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা বলেন, দেশ থেকে ইসলাম বিদায় করার জন্য নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামের চিরদুশমনরা চতুর্মুখী চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের ছত্রছায়ায় ইসলামের এ চিরদুশমনদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। শাহবাগ চত্বরে সব শ্রেণীর ইসলাম বিদ্বেষীরা মহান আল্লাহ, মহানবী (সা.) ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। ওইসব নরপশু মহান আল্লাহ তায়ালার ফাঁসি দেয়ার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। এ অবস্থায় কোনোক্রমেই যে কোনো ঈমানদার মুসলমানের পক্ষে চুপ করে বসে থাকার সুযোগ নেই। ২০ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে সর্বদলীয় গণবিক্ষোভ পালন করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন মারেফাতে হুজুর আল্লামা মুশতাক ফয়েজী, মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা লুত্ফুর রহমান লক্ষ্মীপুরী, মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মাদ মুছা, মাওলানা মুনিরুল ইসলাম, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

১০ হাজার উলামায়ে কেরাম : দেশের ১০ হাজার উলামায়ে কেরাম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, শাহবাগ চত্বরে আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল ও ইসলাম সম্পর্কে যে কটূক্তি করা হচ্ছে তাদের শাস্তি ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ২০ ফেব্রুয়ারি গণবিক্ষোভে শামিল হওয়া সবার ঈমানের দাবি। অনতিবিলম্বে নাস্তিক, মুরতাদদের ইসলামবিরোধী সব অপতত্পরতা এদেশে বন্ধ করতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন মুফতি মাওলানা লুত্ফর রহমান, মুফতি মিজানুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ মুয়াজ্জেম হুসাইন, মাওলানা আবু মুহাম্মদ বজলুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ সাঈদুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ মাহতাব উদ্দিন, মাওলানা মুহাম্মদ ছালমান, মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ মহিব্বুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল আমিন, মাওলানা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

আজ জমিয়তে উলামার বিক্ষোভ : আজ বিকালে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। গতকাল দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত মহানগর কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় নেতারা বলেন, সম্প্রতি যেসব কুলাঙ্গার ব্লগে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.) এবং এবাদত-বন্দেগি নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কটূক্তি করছে জীবন দিয়ে হলেও তাদের প্রতিহত করা হবে। জমিয়তের ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা গোলাম মহিউদ্দীন ইকরামের সভাপতিত্বে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ : আজ বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে (সুরমা টাওয়ার) বাদ আসর বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী। সব রাসুলপ্রেমিক ও ঈমানদার ভাইকে নিজেদের ঈমানি দাবি আদায়ে ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন দলের মহানগর সভাপতি মাওলানা এনামুল হক নূর ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা।

ছাত্রমজলিস : ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আবুল কাশেম ও সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হাফিজ খসরু এক যুক্ত বিবৃতিতে শাহবাগ চত্বর বা প্রজন্ম চত্বর বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা চত্বর বা শহীদ রাজীব চত্বর নামে যে ইসলামীবিরোধী অপকর্ম করছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিষয়: বিবিধ

১৪২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File