কুকুরের সিন্নি খাওয়া ও হাজার কোটি টাকা হ্যাকিং

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৬ মার্চ, ২০১৬, ০৪:০৫:১৭ রাত



বাঙ্গালী জাতি অতি চালাক বলেই যে কোন গল্প বিশ্বাস করে। আর দুর্বোধ্য কিছু বলতে পারলে তো কথাই নেই। হ্যাকিং যে কি জিনিস সেটা শতকরা ১০ জন মানুষ ভালোভাবে জানে না। মানুষ জানে যে সেটা ইন্টারনেট বা কম্পিউটার বিষয়ক বেআইনি কিছু। কিন্তু জিনিসটা আসলে কি, কিভাবে হয়, কার করে, এসব বেশীরভাগ মানুষই সঠিক জানে না। এই না জানা মানুষগুলোই আজকে হ্যাকিং এর গল্প শুনে ও বলে প্রতিস্টিত করে ফেলেছে।

হ্যাকিং বিষয়টি যারা চেনেন তারা অনেকে উচ্চ-বাচ্য করছেন কিন্তু তাদের কন্ঠস্বর মানুষের কাছে পৌছে না। যাদের কন্ঠস্বর মানুষের কাছে পৌছাতে পারে, তারা সবাই নীরব। দেশে আন্তঃজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবি, প্রযুক্তিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন। তারা সবাই এই হ্যাকিং এর গল্প শুনে মুখে কুলুপ এটে বসে রয়েছেন। অন্য যে কোন ইস্যুতে তাদের মুখে অনর্গল কথা ও তাদের কলমের বাহাদুরী দেখা যায়। কিন্তু এই হ্যাকিং এর গল্প শুনে তারা কেউই একেবারে টু শব্দও করছেন না। দেশের কোন রাজনৈতিক দলও কোন প্রকারের প্রতিবাদ করেনি। হ্যাকিং বুঝুক আর না বুঝুক, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তত এটা বুঝতে পারছে যে সরকারী কোষাগারের টাকা চুরি হয়ে গেছে। কাজেই দায়ীত্বশীলেরা দায়ীত্ব পালনে ব্যার্থ। ভোট দেওয়ার ইস্যুতে, ক্ষমতায় যাওয়ার ইস্যুতে তারা আন্দোলন করলেও, এই হাজার কোটি টাকা চুরির ইস্যুতে তারা চুপ। ওদিকে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদত্যাগ করেছেন। ব্যার্থতার দায়ভার থেকে পদত্যাগ করার অনুশীলনটা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। সেই হিসাবে, পদত্যাগ করার জন্য উনাকে সাধুবাদ দেওয়া যেতো। কিন্তু বাধ সাধলেন তিনি নিজেই। তিনি বলেছেন, এই হ্যাকিং নাকি ছিল সাইবার এটাক। বিষয়টা কিছুটা অনলাইনে জঙ্গী হামলার মতন। এমন জিনিস প্রাথমিকভাবে সহজে বুঝে ওঠা যায়নি। অর্থাৎ তিনিও ওই হ্যাকিং এর গল্পের সুরেই কথা বলছেন। বরং খানিকটা বাড়িয়ে বলে জিনিসটা বিশ্বাসযোগ্য করতে চাইছেন।

হ্যাকিং কিঃ সহজ বাংলায় বলতে গেলে, হ্যাকিং হল আসল চাবি ছাড়া তালা খোলা। নকল চাবি বানানো যেতে পারে অথবা তালাটাই ভেঙ্গে ফেলা যেতে পারে। কিন্তু আপনার কাছে যদি আসল চাবি থাকে এবং সেটি ব্যাবহার করে যদি আপনি তালা খোলেন সেটা হ্যাকিং নয়। কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এই চাবিটি হল পাসওয়ার্ড। যারা হ্যাকিং করে তারা অনেক চেস্টা করে, ভুল পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করে, বিভিন্ন কায়দায়, পাসওয়ার্ড উদ্ধার করে নতুবা বদলে দেয়। আপনার ফেসবুক একাউন্টে যদি কোন হ্যাকার এভাবে ঢুকে পড়ে সেটি হবে নকল চাবি বানানো। আর যদি মুল ফেসবুক জিনিসটাকে কেউ নস্ট করে দেয় যেন যে কোন পাসওয়ার্ড এ আপনার একাউন্ট খোলে, সেটি হবে তালা ভাঙ্গা। এই তালা ভাঙ্গা কাজটি খুবই কঠিন, বলা চলে অসম্ভব। তবে আপনি যদি নিজেই আপনার পাসওয়ার্ড কাউকে জানিয়ে দেন তাহলে সে নির্বিঘ্নে আপনার ফেসবুক একাউন্ট খুলতে পারবে। এটা কোন হ্যাকিং নয়। এমনকি আপনার পাসওয়ার্ড, আপনার অজান্তে কেউ জেনে ফেললে সেটাও হ্যাকিং নয়। সেটা হল পাসওয়ার্ড চুরি।

হ্যাকিং কারা করেঃ এই জিনিসটা নিয়ে অনেকেরই একটা ভুল ধারনা আছে। অনেকেই মনে করেন, হ্যাকিং যারা করে তারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ইত্যাদি বিষয়ে খুব পারদর্শী হয়। হয়ত তাদের এই বিষয়ে বড় ডিগ্রী থাকে। কিন্তু মজার বিষয় হ্যাকারদের মধ্যে শতকরা একজনকেও খুজে পাবেন না যার কম্পিউটার এর উপরে লেখাপড়া বা ডিগ্রী রয়েছে। যে লোকটি তালা চাবির প্রযুক্তি নিয়ে লেখাপড়া করে তার জন্য আসল চাবি ছাড়া অন্যের বানানো তালা খুলতে শেখাটা কস্টসাধ্য।

হ্যাকিং করে সাধারনত গোপন কোন তথ্য নেওয়া হয়। হ্যাকিং করে টাকা নেওয়া হোত ১৫-২০ বছর আগে। এখন এটা বিলুপ্তির পথে। কারন এই যুগে ব্যঙ্কের টাকা হ্যাকিং করে খাওয়াই যাবে না, হজম তো অনেক পরের কথা। ব্যাঙ্কের ওয়েব সাইটে টাকা থাকে না, থাকে হিসাব। আপনি যত বড় হ্যাকারই হোন না কেন, আপনি সেই হিসাবটা নিতে পারবেন টাকাটা নয়। টাকাটা আপনাকে তুলতে হবে ব্যাঙ্ক বা অন্য কোথাও গিয়ে, অন্তত দুই দিন পরে। হ্যাকিং করে টাকা ট্রান্সফার করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে টাকা তুলে আনলেন, এমন নয়। এই ২-৩ দিন সময়ে ব্যাঙ্ক চেক করে দেখে আসলেই সেই ট্রান্সফার ঠিক আছে কিনা। বড় অঙ্কের টাকা হলে তো কথাই নেই, অণুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে চেক করতে বসে। কাজেই আপনি হ্যাকিং করে হয়ত কোন একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন কিন্তু সেই টাকাটা তুলতে পারবেন না। বড় অঙ্কের টাকা হলে তো আরো অসম্ভব।

ব্যাঙ্কের কার্যপ্রনালী ইদানিং খুব বেশী সতর্ক। আমার কথা বিশ্বাস না হলে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন (যদি আপনি কোন উন্নত দেশে থাকেন)। আপনার নিজের এটিএম কার্ডটি একটি এটিএম মেশিনে ঢুকিয়ে, ইচ্ছে করে ভুল পিন নম্বর দিন। এর পরে কার্ডটি বের করে ফেলুন। কিছুক্ষন পরে, কিছুদুর গিয়ে আরেকটি এটিএম মেশিনে একই কাজ করুন। এভাবে ২-৩ মেশিনে ভুল নম্বর দিয়ে, এর পরে সঠিক পিন নম্বর দিয়ে কয়েক হাজার ডলার তুলুন। সম্ভবত, ৫ মিনিটের মধ্যেই আপনার মোবাইলে ব্যাঙ্ক থেকে ফোন আসবে “আপনি নিজে টাকা তুলেছেন কিনা” এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে। যেখানে হাজার টাকার জন্যই এতটা সতর্কতা সেখানে কোটি টাকার জন্য সতর্কতা আরো বেশী হয়।

আচ্ছা, কুকুরের সিন্নি খাওয়ার কথাটা তো বলা হল না। আমাদের দেশে মাইকে গান বাজনা বাজিয়ে ওরশ হয়। এমনই এক ওরশে হাজার লোকে এসেছে, গান বাজনা চলছে। পীরের কবরে উপরে লাল চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া। আশে পাশে কিছু লোক নাচ গান করছে, নেশা করছে। আগত অতিথীরা দান বাক্সে হাত খুলে দান করছে। ওদিকে সবার জন্য সিন্নি (পায়েস) রান্না হচ্ছে। এই ধরনের ধর্মীয় (!) খাবারকে “তবারক” বলে। সে এক আনন্দঘন উতসবময় পরিবেশ। এমনই এক পরিস্থিতিতে হটাত রাস্তার এক কুকুর কিভাবে যেন সিন্নিতে মুখ লাগিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। একেবারে উন্মুক্ত, এই দৃশ্য সবাই দেখছে। জলদি করে কুকুরকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। কিন্তু সমস্যা হল, এত মানুষ যে খাবার খাবে সেটাতে তো কুকুর মুখ লাগিয়েছে। এখন কি উপায়? সমস্যা সমাধান করতে গুরু তার শিশ্যদেরকে গান ধরতে বললেন

কায়া বদলাইছে রে, বাবা কায়া বদলাইছে

কুত্তা হইয়া সিন্নি খাইয়া তবারক বানাইছে।


অর্থাৎ, বাবা (মৃত পীর) কুকুরের বেশ ধরে এসে সেন্নি খেয়ে সেটিকে উপযুক্ত “তাবারক” বানিয়ে দিয়ে গেছে। ব্যাস, আগত অতিথীরা সেই তালে নাচতে লাগল। সবাই খুশি মনে সেই কুকুরের মুখ দেওয়া সিন্নি খেতে লাগল।

বলছিলাম হ্যাকিং করে হাজার কোটি টাকা চুরির কথা। হ্যাকিং করে লাখ টাকাই চুরি করা যায় না, হাজার কোটি তো অনেক পরে। যে টাকাটা চুরি হয়েছে সেটা কোন হ্যাকিং হয়নি। হয় কেউ ইচ্ছে করে চাবিটি দিয়ে চুরির সহযোগীতা করেছে, নতুবা কেউ চাবিটি চুরি করেছে। যেটাই হোক না কেন, কোন নকল চাবি নয়, একেবারে আসল চাবি দিয়ে তালা খুলে, বীরদর্পে সিন্দুক খালি করে দিয়েছে। এর পরে হ্যাকিং এর সুর তুলে দিয়েছে। আমরাও খুশিমনে এত বড় চুরিকে হ্যাকিং বলে, সেই তালে নাচছি।

সদিচ্ছা থাকলে, তদন্ত করে দোষীদের ধরা খুবই সহজ। এমনকি চেনামুখ কয়েকজনকে রিমান্ডে নিতে পারলে সব রহস্য উদ্ঘাটন হয়ে যেত। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়, উনারা ধরা ছোয়ার অনেক উর্ধে। এমনকি উনাদের নাম বললে আমাকেই রিমান্ডে নেওয়া হবে।

আমার ফেসবুক ---------- এখানে



বিষয়: বিবিধ

১৩৬০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

362601
১৬ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৫:৫৮
শেখের পোলা লিখেছেন : সিন্নী খাওয়ার চমৎকার গল্প৷
গৌরী সেনের অনেক টাকা,
না হয় কিছু নিয়েছি,
দেশটাকে তো মুক্ত করে,
তোদের হাতেই দিয়েছি৷
ধন্যবাদ৷
১৬ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৫
300530
এলিট লিখেছেন : হ্যা, দেশটাকে স্বাধীন করে ওদের হাতে দেওয়া হয়েছে। এখন ওরা তো এমন করবেই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
362622
১৬ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:৫৬
ছালসাবিল লিখেছেন : Sad Sad Sad রাজার রাজকোষ দেখিনি Sad Hypnotisedভাইইইইয়া তবে বাংলাদেশ ব্যাংক Whew! দেখেচি Big Grin Big Grin Big Grin Big Grin Big Grin Day Dreaming Day Dreaming Unlucky
১৬ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৬
300531
এলিট লিখেছেন : আমিও হ্যাকিং দেখিনি তবে সাগর চুরি দেখছি। আপনাকে ধন্যবাদ।
362642
১৬ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০৩:৩৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : একেবারে আসল চাবি দিয়ে তালা খুলে, বীরদর্পে সিন্দুক খালি করে দিয়েছে। এর পরে হ্যাকিং এর সুর তুলে দিয়েছে। এটা কোন চোট কাট চোরের কাজ নয়।রাষ্টের বড় ডাকাতদেরই কাজ। ধন্যবাদ আপনাকে
১৬ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৭
300532
এলিট লিখেছেন : হ্যা, অনেক বড় চোর। ভালো খরিদ্দার পেলে দেশটাই বেচে দিবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
362653
১৬ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:৪০
হতভাগা লিখেছেন : ফেডারেল ব্যাংক বলেছে যে বাংলাদেশ থেকে কমান্ড আসার পরই নাকি তারা টাকা রিলিজ করিয়েছে
১৬ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৮
300533
এলিট লিখেছেন : হ্যা, ভাই। এটাই তো আসল চাবি দিয়ে তালা খোলা। আপনাকে ধন্যবাদ।
362664
১৬ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দেশটাই হ্যাকড!
362700
১৬ মার্চ ২০১৬ রাত ১১:১৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : যথার্থ বলেছেন, অনেক অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File