হরতালের প্রকারভেদ – দেশে বিদেশে

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৭ জুলাই, ২০১৪, ১২:৫১:৫৭ রাত



বাংলাদেশে “হরতাল”শব্দটি জানে না এমন লোক খুজে পাওয়া যাবে না। হরতালের যাতাকলে পিস্ট জনগনের কথা নাইবা বললাম। হরতালের সমার্থক ইংরেজি শব্দ strike এর সাথে হরতালের রয়েছে বিস্তর ব্যাবধান।

ক্ষমতায় থাকলে আমাদের নেতারা বলেন, হরতাল দেশের ক্ষতি করে। যারা হরতাল করে তারা গনতন্ত্রের শত্রু। আবার বিরোধী দলে থাকলে তারাই বলেন, হরতাল আমাদে গনতান্ত্রিক অধিকার। এসব শুনে আমরা বিভ্রান্ত হই ঠিকই। কিন্তু একটা কথা আমাদের দেশের মানুষ বিশ্বাস করে। সেটা হল – হরতালের সময় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অবশ্যই দোষের। কিন্তু সন্ত্রাস বাদ দিয়ে , শান্তি পুর্ন হরতাল পালন করার অধিকার হল গনতান্ত্রিক অধিকার। এটা দোষের কিছু নয়। আসুন একে একে দেখে নেই, হরতাল কি, গনতন্ত্র কি এবং গনতন্ত্র আমাদেরকে হরতাল করার অধিকার নেয় কিনা।

হরতালঃ এক কথায় হরতাল হল কাজ বন্ধ করে দাবী আদায়ের এক পদ্ধতি। যতদুর জানা যায়, হরতাল একটি গুজরাটি (ভারত) শব্দ । এই শব্দটি হিন্দি সমার্থক শব্দ “বন্ধ” বাংলা “ধর্মঘট”। ইংরেজী সমার্থক শব্দ strike সাধারনত কোন কল কারখানা, নির্দিস্ট পেশার লোক, কোন নির্দিস্ট কোম্পানী, বা নির্দিস্ট সরকারি কার্যালয়ে হয়ে থাকে। যেমন, অমুক কারখানার শ্রমিকদের ধর্মঘট, ডাক্তারদের ধর্মধট , ট্রেন শ্রমিক ধর্মঘট, ডাক বিভাগের কর্মচারীদের হরতাল - ইত্যাদি । এগুলো হল আসল strike বা ধর্মধট। কিন্তু আমাদের চীরচেনা হরতালটি কিন্তু আলাদা একটা জনিস। হরতাল বলতে আমরা যেটা চিনি, তা হল সারা দেশের প্রায় সব কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা। সরকারের বিরুদ্ধে এই ধরনের আন্দোলনকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন মহত্মা গান্ধি। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে হরতাল পালন করেছিলেন। সেই শিক্ষা ভারত উপমহাদেশের মানুষ এখনো ধরে রেখেছে। এখনো হরতালের ব্যাপারে ওস্তাদ হল ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। এদের মধ্যে বাংলাদেশ, আরো একধাপ এগিয়ে। হরতাল করে সারা দেশ বন্ধ রাখার পদ্ধতি বিশ্বে আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। আর হরতালের সময় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, জান মালের ক্ষতি – ইত্যাদি তো আছেই। একটা নির্দিস্ট পেশার মানুষের কাজ বন্ধের আন্দোলনটা এখন দেশ বন্ধের আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য হয়ত মহত্মা গান্ধীর হরতাল ঠিক ছিল। কিন্তু এই যুগে সেটার কোন দরকার নেই।

গনতন্ত্রঃ হাসবেন না ভাই। আমরা আসলেই জানিনা গনতন্ত্র কাকে বলে। আমরা মনে করি ভোট দেওয়াটা হল গনতন্ত্র। আসলে গনতন্ত্র হল দেশের মালিক জনগন। রাজতন্ত্রে যেমন রাজামশাই নিজে দেশের মালিক। পুরো দেশটা তার বাপের সম্পত্তি হিসাবে উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছেন। রাজা নিজেও সম্পত্তির মতন দেশটিকে নিজের ছেলেকে দিয়ে যাবেন। রাজতন্ত্রে দেশের মালিক হল রাজা। ওদিকে গনতন্ত্রে দেশের মালিক হল জনগন। আপনি আমি সবাই একসাথে দেশের মালিক। সবাই মিলে তো আর একসাথে দেশ শাশন করা যায় না। এজন্যই দেশ চালানোর জন্য আমাদের মধ্য থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করি। এই প্রতিনিধি নির্বাচন করার পদ্ধতি হল ভোট। গনতন্ত্র মানে ভোট নয়। গনতন্ত্র হল দেশের মালিক জনগন। যেহেতু জনগন মালিক, সেহেতু বেশিরভাগ লোক যেটা চায়, সেটাই হয়।

গনতন্ত্রে হরতালের অধিকার আছে কিনাঃ

এই বিষয়টি নিয়ে বাকপটু বুদ্ধিজীবিরা বড় বড় বক্তব্য দিয়ে হরতালকে গনতন্ত্রিক অধিকার বানিয়ে ফেলতে পারেন। হরতাল কেন পালন করা হয়? কারন একদিন সারা দেশ বন্ধ করে দেশের সরকারের উপরে একটা চাপ দেবার চেস্টা করে। যাতে তাদের দাবী আদায় সহজ হয়। কিন্তু যারা দেশ চালাচ্ছেন, তাদের উপর কি বিন্দুমাত্র চাপ পড়ে? আমার তো মনে হয় না । বরং চাপ পড়ে দেশে জনগনের উপরে। সেই জনগন নাকি আবার দেশের মালিক। দাবী আদায়ের জন্য জনপ্রতিনিধিকে চাপের মুখে রাখতে গিয়ে যেই চাপ দেওয়া হচ্ছে জনগনের উপরে। এটা মোটেও গনতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে দাবী আদায়ের জন্য জনগনকে চাপ দেওয়ার অধিকার গনতন্ত্র দেয় না। তাই দেশব্যাপি হরতাল কোন গনতান্ত্রিক অধিকার নয়।

উন্নত বিশ্বে হরতালঃ

উন্নত বিশ্বের হরতালকে ধর্মঘট বলাটাই যুক্তিযুক্ত। সারা দেশ বন্ধ হয় না। ধর্মঘট একটা নির্দিস্ট গোন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন একটি কোম্পানীতে ধর্মঘট। পুরো দেশব্যাপী যে হরতাল হয় সেটাও হয় নির্দিস্ট একটা পেশার ক্ষেত্রে। যেমন সাংবাদিকের ধর্মঘট। ডাক্তারদের ধর্মঘট, পরিবহন ধর্মঘট ইত্যাদি। যে কোন ধরনের ধর্মঘটই হোক না কেন – সেটা কখনোই জনগনের সামান্যতম কোন সমস্যা তৈরি করে না। এমনই পরিবহন (রেলওয়ে কর্মচারীর) ধর্মঘট দেখার সুযোগ দু-একবার আমার হয়েছিল। প্রথম যেদিন এই ঘটনা আমি দেখি সেদিন যে ট্রেন ধর্মঘট, সেটা আমি আগে জানতাম না। ট্রেনে ওঠার আগে টিকিট নিতে কাউন্টারের সামনে দাড়ালাম। কাউন্টারের বসা লোকটি আমাকে টিকিট দিল আর বলল আজকে টিকিট ফ্রী, টাকা দিতে হবে না। বিষয়টা বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছিল। যাই হোক, এর পরে ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে পৌছালাম। দেখলাম যে ট্রেনের কর্মচারীরা সবাই স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। টিকিট কাউন্টারে টিকিট দিচ্ছে, টিকিট চেকার টিকিট চেক করছে, ড্রাইভার ট্রেন চালাচ্ছে, অন্যান্যরা তাদের কাজ করছে। এভাবে সবাই সবার কাজ ঠিকই করছে। কাজ বন্ধ করেনি। ট্রেন বন্ধ করেনি। কারন ট্রেন বন্ধ করলে তো জনগনের অসুবিধা। গনতান্ত্রিক দেশে জনগনের অসুবিধা করা যাবে না। তাহলে এটা ধর্মঘট কিভাবে? হ্যা, এটাই হল সঠিক ধর্মঘট। ট্রেন চালাছে, নিজেরা কাজ করছে ঠিকই। কিন্তু ওই দিন ট্রেনের সব যাত্রীকে ফ্রী টিকিট দিয়ে মোটা অংকের আয় থেকে সরকারকে বঞ্চিত করেছে। ধর্মঘটের উদ্দেশ্য হল সরকারের উপরে চাপ দেওয়া, জনগনের উপরে নয়। কাজেই ওরা সেটাই করে। এর পরে এমন ধর্মঘট দু-একবার চোখে পড়েছে। একবার তো ফ্রী ভ্রমনের সুযোগ পেয়ে, তিন বন্ধু মিলে পাশের অন্য একটি শহর থেকে ঘুরেও এসেছি। এখানে লক্ষনীয় যে ধর্মঘট জনগনের অসুবিধা করা তো দুরের কথা বরং সুবিধাই করে দেয়। ওসব দেশে আমাদের মতন উত্তাল আন্দোলনের (মিছিল মিটিং) হরতাল যে একেবারেই হয় না তা নয়। তবে সেটা হয় একটা নির্দিষ্ট গোন্ডীর ভেতরে যেমন নির্মান শ্রমিকদের হরতাল, ছাত্রদের হরতাল ইত্যাদি। তাও সেটা হয় একটি শহর কেন্দ্রিক, পুরো দেশব্যাপী নয়।

ওদিকে আমাদের হরতাল, সারাদেশের মানুষকে শুধু ভুগিয়েই ক্ষান্ত হয় না। নিরাপত্তাও ব্যাহত করে। বাংলাদেশে হরতালের কারনে আহত বা নিহত হবার অনেক নজির রয়েছে। এটা মোটেই গনতান্ত্রিক অধিকার নয়। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার আরো অনেক পথ রয়েছে। হরতাল হল নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার মতন একটা বিষয়। ক্ষতি নিজেরই বেশী হয়।

এস এম এলিট - www.eliteweb.tk

-

বিষয়: বিবিধ

১২৬২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

248604
২৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:২৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
248606
২৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:২৫
এবেলা ওবেলা লিখেছেন : আমি এতদিন আপনাকে আপু ভাবতাম -- এই ছবিটা কি আপনার--

248679
২৭ জুলাই ২০১৪ সকাল ১০:২৮
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম। পিজ পড়ে দেখুন ।মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের ভয়াবহ ধ্বংস থেকে বাচার উপায়ঃ
Click this link
248687
২৭ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৩৩
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : পড়ে ভালা লাইগ্যি। আন্নেরে ধন্যুবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File