প্রেম যেন এমনই হয়-২২

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:৩২:২১ রাত



রতন সঞ্চিতাদের বাসায় অনেক লাজুক ভঙ্গিতে ক্ষেতে বসল। কিন্তু খাওয়া শেষে আজ সে বাইরে বের হয়ে কানতে কানতে ফিরল। রাস্তায় হোন্ডা থামিয়ে ধানমন্ডি লেকে অনেকক্ষণ বসে ছিল সে। ভাবছিল এ কোন ধরনের কাহিনী যা সে কোনদিন কল্পনাই করতে পারে নি। পৃথিবীতে এমন কিছু কাজ হয় যা সবার অগোচরে থেকে যায়। তেমনি এক অসাধারণ ঘটনা আজ কাঁদাল রতনকে।

সঞ্চিতাদের বাসায় তাদের হবু জামাই হিসেবে রতন যথেষ্ট আদর পেয়েছে। তার পরও টল টল চোখ নিয়ে সে ফিরেছে কারণটা অন্য জায়গায়। রতন বা সঞ্চিতা কেউই জানতনা দুজনেরই বাবা-মা অনেক আগেই তাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। রতন সঞ্চিতার বাবার কাছ থেকে শুনে অবাক হল তার বাবা-মা দুজনেই এসে সঞ্চিতার বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছে। প্রথমে জাফর চৌধুরী ইতস্তত বোধ করলেও পরে যখন তিনি সঞ্চিতার চিঠিটা পড়েছিলেন তখন রাজি হয়েছিলেন।

রতনের বাবা মা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, তারা যদিও আর্থিক দিক থেকে সঞ্চিতাদের সমকক্ষ নন। তারপরও দুটি প্রাণকে মিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সন্তানদের সুখী করার মধ্য দিয়েই তাদের সুখ নিহিত। আর ছেলে-মেয়েরা যদি সবার অমতে কিছু করেও বসে তাহলে তাদের কারও কিছুই করার থাকবে না। রতনকে জাফর সাহেব যা বলেছেন তা রতনকে বিস্মিত করেছে। ‘বাবা তোমার আব্বু আম্মুকে দেখলাম পরস্পর পরস্পরকে অনেক বেশি ভালবাসে। আমাদের সামনে ঊনাদের পারস্পরিক আচরণ সত্যিই আমাকে ও সাদিয়াকে ( সঞ্চিতার আম্মু ) মুগ্ধ করেছে। আমরা এখন ঊনাদের মত হওয়ার চেষ্টা করছি। তুমি পারবে না বাবা তোমার আব্বু যেমন করে তোমার আম্মুকে ভালবাসে সে রকম করে আমার একমাত্র মেয়েটাকে ভালবাসতে ?’ বলেছিলেন সঞ্চিতার বাবা।

রতন তখন লজ্জায় যতনা বেশি লাল হয়েছিল তার চেয়ে বেশি বাবা-মায়ের কারণে গর্বিত হয়েছিল। কিন্তু তার কান্নার কারণ অন্য জায়গায়। সে এবং সঞ্চিতা দুজনেই পরস্পরকে আপন করার জন্য নির্বিঘেœ নিজেদের বাবা মাকে ত্যাগ করতেও দ্বিধা করত না। সে জায়গায় সন্তানদের চিরন্তন মঙ্গলকামী বাবা-মা যা করেছে বা বরাবরই যা করে তাকে তারা কোন পাল্লায় পরিমাপ করবে। এ তার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের কল্পনা শক্তিকে অতিক্রম করার মত প্রশ্ন।

বাসায় ফিরে রতন সরাসরি তার রুমে গেল। সাথে সাথেই ছুটে এল রিদিতা। তার অসীম আগ্রহ কি হল সঞ্চিতাদের ওখানে তা শোনার জন্য। রতন বোনকে কাছে পেয়ে কানল অনেকক্ষণ। সব শুনে রিদিতাও আবেগ আপ্লুত হল। সেও জানত না বাবা-মা এমন সুন্দর একটা কাজ এভাবে কাউকে না জানিয়েই করে রেখেছে। সে রতনকে বলল, ‘ভাই আমার তুই আর মন খারাপ করিস না। এটা তো আমাদের গর্বের বিষয় আমরা এত ভাল বাবা-মা পেয়েছি।’ রতন বলল, তুই যা আমি একটু একা থাকি। রিদিতা কিছু না বলে চলে গেল।



চলবে......

বিষয়: সাহিত্য

১২৭২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

300463
১৭ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৩:৩০
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : মা-বাবার ভালোবাসার ঋন কোনকিছু দিয়ে পরিশোধিত হয়না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File