জুনায়েদ বাবু নগরীর স্বীকারোক্তি

লিখেছেন লিখেছেন লাল সবুজ পতাকা ১০ মে, ২০১৩, ০২:২১:৫২ দুপুর

সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটভুক্ত চারটি দল হেফাজতের সঙ্গে রয়েছে। এ দলগুলোরই কয়েক নেতা, বিএনপি ও জামায়াতের পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হেফাজতের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা মতিঝিলে টানা অবস্থানে রাজি ছিলেন না।'আমাকে মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়'

মতিঝিলে টানা অবস্থান নেওয়ার শর্তে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোরও প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, খেলাফতে ইসলামী- এ চারটি রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক। এ চারটি দলসহ হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রুহির চাপেই টানা অবস্থানের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। তারা ১৮ দলের কট্টর সমর্থক বলেও পরিচিত।

জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা বাবুনগরী পুলিশকে জানান, ওই অংশের কয়েক নেতা এবং বিএনপি ও জামায়াতের পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত তারা নেন। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় তাকে মন্ত্রি বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরও রাজি না হলে সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ওই অংশটি। এর পরই শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। তবে বাবুনগরী সব সত্য বলছেন কিনা- তা পরে যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'মাওলানা বাবুনগরী তাদের জানিয়েছেন, তারা মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে দোয়া পড়ে সন্ধ্যার আগেই চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার পর সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ আর তার হাতে ছিল না। ১৮ দলীয় জোটভুক্ত হেফাজতের নেতারা সমাবেশের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। মোবাইল ফোনের নির্দেশেই চলতে থাকে সব কর্মকাণ্ড। তাই ওই অংশটি সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরে অবস্থানের প্রস্তুতি নেয়।'

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, সমাবেশের দিন হেফাজত নেতারা কোন কোন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন- সে তথ্য ও প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। মাওলানা বাবুনগরীর দেওয়া তথ্য ও গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। বাবুনগরীকে কে মন্ত্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন- তাও খতিয়ে দেখা হবে।

জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা মাওলানা বাবুনগরীর কাছে জানতে চান, সমাবেশে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তাদের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে জানানো হয়েছিল কি-না। এ বিষয়ে বাবুনগরী পুলিশকে জানান, বড় হুজুর (আল্লামা শফী) চোখে ভালো দেখতে পান না। এ জন্য তিনি পত্রিকা পড়েন না এবং টেলিভিশনও দেখেন না। ফলে দিনভর সমাবেশের নামে কী হয়েছে, তা বড় হুজুর অবগত ছিলেন না। এ সুযোগে হেফাজতের একটি অংশ তাকে ভুল বুঝিয়েছে। এ জন্য তিনি ইচ্ছে থাকার পরও সমাবেশে যেতে পারেননি।

গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে হেফাজতের মহাসচিব বলেন, তাদের অনেক নেতা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। নানা কারণে বেশির ভাগ নেতাও চাইছিলেন সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরে অবস্থান নিতে। এ জন্য ১৮ দলীয় জোটে থাকা হেফাজতের নেতাদের কয়েকজন সব সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগও রেখেছিলেন। ওই দুটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে শাপলা চত্বরে তাদের দীর্ঘ অবস্থানে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়। ক্ষমতায় গেলে তাকেসহ হেফাজত নেতাদের মন্ত্রী বানানো হবে বলেও প্রস্তাব আসে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান মাওলানা বাবুনগরী।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা মাওলানা বাবুনগরীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম- ক্ষমতায় গিয়ে মন্ত্রী হওয়ার জন্যই কি তারা এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন?' এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুনগরী কোনো জবাব দেননি, শুধু কেঁদেছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, মাওলানা বাবুনগরী বলেছেন, মন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি ইসলামের খেদমতে নামেননি। রোববারের ঘটনায় তার কিছুই করার ছিল না। তিনি দাবি করেন, রাজনীতি করেন এমন কয়েকজন হেফাজত নেতার তৈরি করা ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন।হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা বাবুনগরীর কাছে ভাংচুর, লুটপাট, পুলিশের ওপর হামলা ও অগি্নসংযোগ সম্পর্কেও জানতে চান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এতে বাবুনগরী বলেছেন, এ ধরনের কাজ তিনি সমর্থন করেন না। হেফাজতের নামে এমন কর্মকাণ্ড করেছে জামায়াত-শিবির।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, মাওলানা বাবুনগরী জিজ্ঞাসাবাদে সব দায় ইসলামী ঐক্যজোটের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। তবে তিনি হেফাজতের মূল নেতা হিসেবে রোববারের এমন নাশকতার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। সরকার 'উৎখাতে' তাদের আর কী ধরনের পরিকল্পনা হয়েছিলো- তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা অব্যাহত থাকবে। হেফাজতের মূল পরিকল্পনা, অর্থের জোগানদাতা, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস সম্পর্কেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

হেফাজতে ইসলামের প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহালুল্লাহ ওয়াসেল রোববার রাতেও সমকালকে জানিয়েছিলেন, তাদের টানা অবস্থানের পরিকল্পনা ছিল না। আকস্মিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সমাবেশ চলাকালেই বেশির ভাগ নেতা আসরের নামাজের বিরতির পর মঞ্চ ছাড়েন। তারা আর ফিরে আসেননি। (সূত্র দৈনিক সমকাল)

বিষয়: বিবিধ

১৮৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File