বাঁশ---

লিখেছেন লিখেছেন পিন পয়েন্ট ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৪৩:২৫ রাত



ঐতিহাসিক ভাবেই বাঁশ এ জাতির কাছে অতি প্রিয়। যুগ যুগান্তরে বাঁশ দিয়ে তৈরী হয়েছে অনেক পন্য, পদ্য-গদ্য এবং কল্প-কাহিনী।

বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই? বিখ্যাত এ কবিতাটি মুখস্ত করেন নাই এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। কবি যতীন্দ্র .মোহন বাগচির আবেগ ভরা এই কবিতায়-ই বুঝা যায় আমাদের ব্যবহারিক জীবনে বাঁশের কদর কত তাৎপর্য পূর্ন!

বাঁশ নিয়ে শুধু কবিতা-ই হয়নি, বাঁশের ব্যাবহার পাওয়া যায় গনিতেও। একটি তৈলাক্ত বাঁশে ল্যাঞ্জা বিশিষ্ট একটি বাঁদর প্রথম মিনিটে যত উপরে উঠে দ্বিতীয় মিনিটে তার চেয়ে ১ ফুট নিচে নেমে আসে, এভাবে ঐ বাঁদরটি উঠা-নামা করতে করতে কত সময়ে বাঁশের মাথায় উঠতে পারবে সে অংক না করে কেউ মেট্রিক পাশ দিয়েছেন বলে ইহো জনমে শুনিনাই।

আহ হা রে, এই বাঁশের অংক না পারলে বিএসসি স্যারের বেত্রাঘাতের কথা আজও ভুলিনা। মনে আছে সেই গিট ওয়ালা বেতখানাও তৈরী হয়েছিল বাঁশের বাই প্রোডাক্ট দিয়ে, যাহাকে ‘কঞ্চি’ বলে অনেকেই চিনেন!

তাই বাঁশের কথা মনে হলে আজও পিলে চমকে উঠে...!

গ্রামাঞ্চলে যারা কৃষি কাজ করে থাকেন তাদের মধ্যে যারা গরু দিয়ে হাল-চাষ করেন তাদেরকে বলা হতো ‘হালুয়া’। গরুকে শায়েস্তা করার জন্য সেই হালুয়ার কাছে প্রধানত যে অস্ত্র থাকে তার নাম ‘হালুয়া পান্টি’। জমিতে মই চাষ দেয়ার সময় ‘হালুয়া পান্টির’ ব্যাবহার না করিলে গরু একদম কথাই শুনতে চায় না।

শুধু কী এই গরুকেই সাইজ করার জন্য ঐ যুগে ‘হালুয়া পান্টির’ ব্যাবহার হতো, তা নয়! মাঝে মাঝে এই হালুয়া পান্টির সৎ ব্যাবহার করতেন আমাদের দাদারা, দাদীর উপর উত্তম মধ্যম বসিয়ে...।

আজীবন সেই বাঁশ দিয়ে দাদাজান তেল তেলে ‘হালুয়া পান্টি’ তৈরী করতেন আর দাদীজান সুযোগ বুঝে লাকড়ি ভেবে পুড়িয়ে ফেলতেন। সন্ধ্যে বেলায় লাকড়ি পোড়ানো নিয়ে দাদা-দাদীর ঝগড়া বাতি জ্বালিয়ে উপভোগ করতাম, সেই স্মৃতি আজো ভুলতে পারিনা...

হায়রে বাঁশ!

আদি কাল থেকেই, সুযোগ পেলে এই বাঙালি তার প্রতি পক্ষকে বাঁশ দিতে ভুল করেন না। সেই বাঁশ যদি আইক্ক্যা ওয়ালা হয় তাহলে তো কথাই নাই, আ-রা-ম আর আ-রা-ম!

সেই বিটিশ আমলও শাষকদের কাছে ‘বাঁশ’ অতি প্রিয় ছিল। আমাদের পূর্ব পুরুষদের পাছায় ‘বাঁশ’ দিয়েই ঐ বৃটিশরা প্রায় দু’ শ বছর এই ভারত বর্ষ শাষন করেছে। আবার সুযোগ বুঝে সেই ‘বাঁশ’ দিয়েই এ অঞ্চলের দূর্বল প্রজারা বৃটিশ কে তাড়িয়েছেন। ইতিহাস হয়ে আছে শহিদ তিতুমীরের সেই ‘বাঁশের কেল্লা’।

হাল জামানার ‘রাজনিতীতে’ এই বাঁশের ব্যাবহার এবং প্রসপেক্ট খুব বেড়েছে। টক-শো গুলোতে এই বাঁশ ‘দেয়া-নেয়া’ না হলে তো জমেই-না! শ্রতারা টক-শো শোনার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় ‘দোস্ত, নেতা তো অমুক আপারে ব্যাপক বাঁশ দিল...’ বন্ধুরা খুশি হয়ে সেই স্ট্যাটাসে লাইক মারতেই থাকেন..., আমিও দেই সময়-সুযোগ পেলে।

সরকারি দল বিরোধী দলকে রীতিমতো বাঁশ দিয়ে চলেছেন। কী সংসদে কী রাজপথে...! আবার বিরোধী দলও সুযোগ পেলে বাঁশ দিতে ভুল করছেন না এক মুহুর্তও।

সেদিন ফটিকছড়িতে একদল আরেক দল কে বাঁশ দিয়েছেন বলে শোনা যায়। আগামিতে এই বাঁশের ব্যাবহার উত্তরোত্তোর বৃদ্ধি পাবে বলে হুমকি দিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা সাবেক এক মন্ত্রী!

তথ্য মন্ত্রী মহোদয় এই ‘বাঁশ’ নিয়ে আছেন মহা ফ্যাসাদে!

‘বাঁশের কেল্লা’ নামক এক ফেসবুক গ্রুপ থেকে সারাক্ষন বর্তমান সরকার কে আইক্ক্যা ওয়ালা বাঁশ দিয়ে যাচ্ছে যা মন্ত্রী মহোদয় কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না বলে শোনা যায়। তা নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে মৃদূ ঝাড়িও খেতে হয়েছিল এক কালের এই তূখোড় বামকে।

বাঁশের ব্যাবহার শুধু বাংলাদেশেই তা নয়! ইদানিং আন্তর্জাতিক ভাবে এই বাঁশের চর্চা শুরু হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক নামক আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের কাছে ‘এই তো সেদিন’ শিখলো কিভাবে ‘বাঁশ’ দিতে হয়! তারা শেখার পরে প্রথম এপ্লিকেশান টা করেছে আমাদের উপরেই!

হায়রে নিমক হারাম, আমাদের কাছে শিখে আমাদের পাছায় ‘বাঁশ’...!

যাক, বিশ্ব ব্যাংকের সেই আইক্ক্যা ওয়ালা ‘বাঁশ’ নিয়ে সরকার নাকি চিন্তা ভাবনা শুরু করেছেন পদ্মা সেতু না বানিয়ে একটি পদ্মা ‘সাকো’ তৈরি করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখলে মন্দ কী!

হায় রে বাঁশ... তুই ঝাড়ে কেন?

বিষয়: বিবিধ

৪৪১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File