নাস্তিকতা যেমন একটি ফ্যাশন, ইসলামিষ্ট হওয়ার প্রতিযোগিতাও একটি ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে।

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ২৩ মে, ২০১৫, ০৬:৫৮:০৯ সন্ধ্যা

নাস্তিকতা যেমন একটি ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে দুঃখের বিষয় হলো ইসলামিষ্ট হওয়ার প্রতিযোগিতাও একটি ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে অনেকের মধ্যে ইসলামের প্রতি বাহ্যিক ভালোবাসা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিক সেভাবে তার ভেতরে ইসলামের গ্রোথ সেভাবে হয়নি। ইসলাম যেমন সবার জন্য সহজ তেমনি ভালো মুমিন, মুসলিম হওয়া তেমন সহজ। একজন ভালো মুসলিম হতে হলে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষনের ব্যাপার। এজন্যই ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে তাযকিয়া, তারবিয়া হতো বেশি বেশি। রমজান আসলে রাসুল (সাঃ) নাকি ইবাদত কে ভাগ ভাগ করে দিতেন, দিতেন বেলা তাযকিয়া, তারবিয়া এবং সাহাবাদের সাথে নানারকম শলা পরামর্শে কাটাতেন আর রাতের বেলা মহান প্রভুর সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিতেন। এটি করতেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ)। উনার সাহাবাগন ও ছিলেন উনার যোগ্য সাথী।

এমন অনেক সাহাবা আছে রাসুল (সাঃ) বললেন যে সে জান্নাতি। আর এক সাহাবা তার সাথী ভাইয়ের পিছু নিলেন যে সে কি এমন ইবাদত করে যে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এমন কথা বললেন। এরকম ছিলো তাদের ইবাদতের বেশির ভাগই ঘটত লোকচক্ষুর অন্তরালে। আবার ইসলামের কোন কিছু বিষয়ে কেউই নিজস্ব কোন ফতোয়া দিতেন না। রাসুল (সাঃ) এর কথার উল্লেখ করে বলতেন রাসুল (সাঃ) কে এভাবে বলতে শুনেছি। মুসলিমদের মধ্যে সম্পর্ক ছিলো অনেক মধুর। যখন ইসলামের বিষয়ে একত্রিত হত তখন তারা দুনিয়ার স্বার্থ ভূলে গিয়ে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় কাজ করত, একই লক্ষ্যপানে জীবন বাজী রেখে লড়াই করত। তখন ইগো, দুনিয়াবী স্বার্থ কোন কিছুই তাদের সামনে বাধা হয়ে দাড়াতে পারতো না। কোন বিষয়ে মতামতের বিরোধ দেখা দিলে তারা পরষ্পরকে সংশোধন করত উত্তম নছিহতের মাধ্যমে। তারা এরূপ করতে সক্ষম হয়েছিলেন শুধুমাত্র দুটি কারনে, প্রথমত, তাদের লক্ষ্য ছিলো আল্লাহ সন্তুষ্টি, দ্বিতীয়ত, তাদের ইসলামী জীবন, সাংগাঠিনক জীবন অতিবাহিত হয়েছিলো সার্বক্ষনিক তাযকিয়া ও তারবিয়ার মাধ্যমে।

দুঃখ হলেও সত্য যে, আমরা দুরাকাত নামায পড়েই ফতোয়া দেয়া শুরু করি, ইসলামের সীপাহসালার বনে যাই। ইসলামের কঠোর অনুশীলন, এবং সাংগাঠনিক বা সামষ্টিক জীবনের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন না থাকায় আমরা সাংগাঠনিক জীবন শুরু করেই নিজেদের আমীর/ শেখ ভাবা শুরু করে দেই। অথচ অনেকেই আছে কুরআন শরীফই পড়তে পারিনা। প্রশ্ন হলো যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে যানে না, তার ফতোয়া দেয়ার যোগ্যতা কতটুকু?? কুরআনের প্রথম শব্দ "পড়" সেই আল্লাহর কিতাবের প্রতি যে অন্ধ সে কিভাবে ইসলামের সীপাহসালার হবে??

ছোট এই জীবনে যতটুকু শিখেছি, ইসলাম শুধু নামাজ পড়া, বা বিশাল এক জুব্বা পড়ে বেড়ানো না, ইসলাম হলো একটি সংষ্কৃতি, ইসলাম হলো একটি জীবন বিধান। সেনাবাহিনীর একজন সদস্যকে যুদ্ধের ময়দানে জীবন বাচাতে হলে যেমন নানারকম কৌশল আয়ত্ত করতে হয়, তার প্রশিক্ষন নিতে হয় ঠিক তেমনি একজন মুসলিম হতে হলে, একজন ভালো মুমিন বা তাক্বয়াবান হতে হলে নিজের ঈমান বাচানোর নানারকম কসরত শিখতে হয়। সাথী ভাইদের সাথের আচরন, অন্যভাইদের সাথে আচরন, ইসলামী নীতির মধ্যে সাংগঠন পরিচালনার পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন নিতে হয়। যারা এসব প্রশিক্ষনের মধ্যে দিয়ে যায় না তাদের মধ্যে সমস্যা তৈরী, ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে বসে। সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক যদি স্টেনগান ঠিকমত চালানো না জানে বাংলা রাইফেল শিখে যদি স্টেনগান হাতে নেয় তাহলে সবার জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। আবার একজন অস্ত্রধারী সৈনিকের যদি ক্রোধ দমনের জন্য প্রশিক্ষন না থাকে তাহলে সেটিও অন্যর ক্ষতির কারন হতে পারে।

আবেগ দিয়ে হয়ত উপরের ভালোভালা প্রকাশ করা যায়। বাস্তব ভালোবাসা প্রকাশ করতে দরকার হয় ত্যাগ। ইসলামের জন্য ত্যাগ, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ। এই ত্যাগ অনেক রকম হতে পারে। সময়ের ত্যাগ হতে পারে, কষ্ট করে কুরআন শিখাটাও একটা ত্যাগ হতে পারে।

তবে যে যাই করি, দিন শেষে, জীবনের শেষে ব্যক্তিমানুষকে একাকীই তার সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জীবনের হিসেব পেশ করতে হবে। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের কতটুকু সমর্পিত করেছি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেটিই দেখবেন।

আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন, (আমীন)

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

322057
২৩ মে ২০১৫ রাত ০৮:০২
মিরু লিখেছেন : ভাল লাগলো।আমিন
৩১ মে ২০১৫ রাত ১১:৪১
265139
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ
322073
২৩ মে ২০১৫ রাত ০৯:৪৪
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন, (আমীন)
৩১ মে ২০১৫ রাত ১১:৪১
265140
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : আমীন!
322077
২৩ মে ২০১৫ রাত ১০:০৮
পললব লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
৩১ মে ২০১৫ রাত ১১:৪১
265141
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : ধন্যবাদ
322093
২৪ মে ২০১৫ রাত ১২:৩৬
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন :
দুঃখ হলেও সত্য যে, আমরা দুরাকাত নামায পড়েই ফতোয়া দেয়া শুরু করি, ইসলামের সীপাহসালার বনে যাই। ইসলামের কঠোর অনুশীলন, এবং সাংগাঠনিক বা সামষ্টিক জীবনের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন না থাকায় আমরা সাংগাঠনিক জীবন শুরু করেই নিজেদের আমীর/ শেখ ভাবা শুরু করে দেই। অথচ অনেকেই আছে কুরআন শরীফই পড়তে পারিনা।


আপনি যথার্থই বলেছেন, ভেতরের কথাগুলো তুলে এনেছেন। সত্যকথাগুলোই বলেছেন।

জাযাকাল্লহু খাইর।

৩১ মে ২০১৫ রাত ১১:৪১
265142
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : বারাকাল্লাহ
322103
২৪ মে ২০১৫ রাত ০১:১৬
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। এককথায় অসাধারণ ও চমৎকার একটি লেখা। অনুভূতি নাড়া দেয়ার মত কথাগুলো।
৩১ মে ২০১৫ রাত ১১:৪২
265143
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : ধন্যবাদ
322130
২৪ মে ২০১৫ রাত ০৩:২৩
এলিট লিখেছেন : ডিগ্রী না থাকলে ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে কথা বলার সাহস কেউ পায় না। ওদিকে ইসলামের কথা বলতে কোন ডিগ্রী লাগছে না। যে কেউ ইচ্ছে হলেই বলতে পারছে। আমাদের উচিত সঠিক জ্ঞান অর্জন করে এর পরে ইসলাম নিয়ে কথা বলা। - আপনার এই ভাবনাটি পুরোপুরি সত্য।
আপনি নাস্তিকদেরকে কতখানি দেখেছেন বা চিনেছেন আমি জানি না। আমি ওদেরকে খুব ভালোভাবে চিনি। ওদের একতা খুব বেশী। ব্লগে লেখালেখি করে এমন নাস্তিক ২০ জনের বেশী নেই। ওরাই হাজার মুসলমান ব্লগারের সাথে লড়ছে। মুসলমানেরা আপনার ওই সত্যা ভাবনাটির জন্য হাত ও মুখ বন্ধ করে বসে আছে। কবে জ্ঞানী হবে, এর পরে কথা বলবে। এই পর্যন্ত বাচব কিনা সন্দেহ।
যে কয়েকজন মুসলমান ব্লগার নিজের সীমিত জ্ঞানের মধ্যা দিয়ে নাস্তিকদেরকে যুতসই উত্তর দেয়, তাদেরকে দয়া করে নিরুতসাহিত করবেন না। বরং তাদেরকে একত্রিত হতে সহায়তা করুন। পারলে ওদের পাশে দাড়ান।
সবাই ইসলামিস্ট হয়ে যাক, এটাই কামনা করি। একজন ইসলামিস্টের যত ভুলই থাকুক না কেন সে নাস্তিক হতে উত্তম। দয়া করে নিরুতসাহিত করবেন না।
৩১ মে ২০১৫ রাত ১১:৪৩
265144
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : ভাই আমি নিরুতসাহিত করার জন্য লিখিনা। কম শিখে বেশি প্রকাশ না করতে নিরুতাসাহিত করার চেষ্টা করেছি, যেটা করলে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হয়। ধন্যবাদ
323587
৩১ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : ভালো লিখেছেন পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ
আপনি একটু কষ্ট করে মন্তব্যকারিদের জবাব দিন। জবাব দেওয়াটা লেখকের ভদ্রতা। বিনিত
৩১ মে ২০১৫ রাত ১১:৪৫
265146
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। জবাব দিলাম। পোষ্ট দিয়ে চলে চাই Happy তাই কমেন্ট করা হয় না। দেখেছেন পোষ্টগুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ফিলিংস টাইপের মানসম্মত ব্লগ লিখার সময় একটি কম। এরপর থেকে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। জাযাকাল্লাহ ভাই
০১ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:২২
265322
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : পরামর্শ শুনেছেন ভাল লেগেছে। আপনি লিখতে পারেন এটাই আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বড় গুন, এই মেধা সবার হয়না। মান তালাশ না করে যখন মাতায় যা আসে সৎ নিয়তে লিখে যান। জাযাকাল্লাহ খায়ের

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File