হুজুর, মোনাজাত দিবেন না ?

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ১১ জুন, ২০১৩, ০৯:৪২:০৫ রাত

ব্যাবসার কাজে এলাকা থেকে দুরে গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে মাগরিবের আযান দিয়ে দিলে গাড়ি থামিয়ে কাছেই একটি মাদ্রাসার মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম। গিয়ে দেখি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্র আর কয়েকজন এলাকাবাসী ছাড়া বয়স্ক কোন আলেম নেই। আমি জানতে চাইলাম যে, হুজুররা কোথায়। ছাত্ররা জববা দিলো যে, পাশের বাড়ির এক নেতার ঘরে মিলাদ আছে। তারা সেখানে গেছেন। খোজ নিয়ে জানা গেল তিনি আবার সেই এলাকার আওয়ামী নেতা। তার বাড়ির দাওয়াত বলে... কথা। কি জায়েজ আর কি নাজায়েজ। হেফাজতের চরম বিরোধীতা করেছে এমন একজনের ঘরে কয়েকজন কওমী চরমোনাই পন্থী আলেম কে দেখলাম দোয়ায় শরিক হচেছ। যদিও তারা সেখানে মিলাদ পড়েণি। আমি পড়ে তাদের একজন কে প্রশ্ন করলাম , যে লোকটা চরমভাবে হেফাজতের আলেমদের কে গালাগাল করে নাস্তিকদের পক্ষাবলম্বন করলো, তার ঘরে দাওয়াত খেতে তোমাদের বিবেক আর ঈমন কি বাধা দিলো না। তারা জবাব দিলো যে, সব নেতাই যে নাস্তিক তার কি প্রমান আছে। আমি বললাম যে, যিনি নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে আলেমদের গালি দেয় তাকে কি এফিটডেবিট করে দিতে হবে যে, আমি কাফের। কেবল মাত্র জামায়াত বিরোধীতা করে বলেই তোমাদের সাথে এদের এত সখ্যতা কিন্তু ভালো নয়। মনে রেখো এরা নিজেদের প্রয়োজনে তোমাদের সাথেও একই আচরন করতে পারে। হয়তো তখন সময়টা পালেট যাবে আর কি। তারা এর কোন জবাব দিতে পারেনি।

মাদ্রাসার আলেমদের কর্মকান্ড দেখে আমি তো অবাক হয়ে গেলাম যে, তারা দাওয়াত খেতে গেছেন বলে কাউকে কি নামাজের দায়িত্ব্য দিয়ে যাবেন না। ভাবলাম অপেক্ষা করি। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর বুঝতে পারলাম যে, হুজুরদের অপেক্ষা করলে মাগরিব কাজা হয়ে যাবে। অন্যদিকে এলাকার কিছু লোকজনও ছিলেন যারা অপেক্ষা করতে চাচ্ছিলেন না। আমি ছাত্রদের কে প্রশ্ন করলাম যে, তোমাদের কেউ নামাজ পড়াবে কিনা। তাদের মধ্যে কেউই রাজি হলো না। অগত্য আমাকে নামাজ পড়াতে হলো। নামাজের মধ্যে আমার রুক পরবর্তি দোয়ার সময় টুকো তে এবং দুই সিজদার মধ্যখানের বিলম্বের কারনে অনেক মুসল্লির নামাজ ফাসেদ হয়ে গেছে বলে আমার মনে হলো। যথারিতী সালাম ফিরিয়ে আমি আমার ব্যক্তিগত আমলের দিকে মনোযোগ দিলাম। সালাম ফিরানোর পরে আমি নিয়মিত কিছু আমল করি। এর মধ্যে দুরুদ শরিফ দশবার এবং আয়াতুল কুরছি অবশ্যই। যদিও তাড়াহুরার কারনে অনেক সময় দুরদ পড়া হয় না কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ ফরজ নামাজের পড়ে আয়াতুল কুরছি পড়তে আমার দেরি হয় না। এটা কখনো ছুটে যায়নি। তাছাড়া কিছু দোয়া কালাম আমি নিয়মিত করি।

নামাজ শেষ করে আমি আমার ব্যক্তিগত আমল করে সুন্নাতের জন্য নিজের জায়গা বদল করতে উঠে দাড়িয়ে দেখি সকল মুসল্লিরা বসে আছেন মুনাজাতের আশায়। তাদের মধ্যে একজন বয়স্ক লোক বললেন যে, হুজুর মুনাজাত দেবেন না। আমি তাকে বললাম যে, আমরা এতক্ষন কি করলাম, এতক্ষন তো মুনাজাতেই ছিলাম। নামাজ একটি উত্তম মুনাজাত এটা কি আপনারা জানেন না। আপনি কি খেয়াল করেননি যে, সালামের আগের বৈঠকে আমি দীর্ঘ সময় নিয়েছি। তিনি বললেন, হ্যা, আমি ভাবছিলাম যে, আপনি হয়তো সালামের কথা ভুলেই গেছেন। মনে মনে বলছিলাম যে, লোকমা দেই। কিন্তু সাহস করিনি। আমি বললাম যে, নামাজের শেষ বৈঠক হচ্ছে দোয়ার উত্তম জায়গা। আমি একটি বড় দোয়া পড়েছি। আমি আমার দোয়াটির অনুবাদ তাদের কে শুনালাম এবং বললাম যে, এবার বলুন তো নবীর (স) পঠিত এই দোয়ার ভাষা এবং আন্তরিকতা কত উত্তম মানের অথচ আমরা এসব বাদ দিয়ে সুরেলা বেদয়াতের নিকট চলে যাই। নামাজের পড়ে সম্মলিত ভাবে দু হাত তুলে মুনাজাত করার একটি সহিহ হাদিসও যদি আমাদের আলেমরা দেখাতে পারতেন তবুও না হয় একে বৈধ বলে মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু তারাও স্বিকার করেন যে এগুলো বেদয়াত কিন্তু ছাড়তে পারেন না মানুষের ভয়ে। অথচ তারাই আবার আল্লাহকে ভয় করার জন্য ওয়াজ করেন। কিন্তু নিজেরা আমল করেন না। কোন কোন অবস্থায় এরকমও হয় যে তারা সিলসিলাগত হয়েই মুনাজাত দিতে পছন্দ করেন। একটু সাহস করে মুসল্লিদের কে বোঝালে সবাই মেনে নিতেন এবং ব্যক্তিগত ভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করার মজাটা উপলদ্ধি করতে পারতেন। অথচ আমরা ফেতনার ভয়ে এসব বেদয়াত কে লালন করে চলছি দিনে পর দিন।

উপস্থিত মুসল্লিরা বললেন যে, মুনাজাত যদি বেদয়াত হয় তাহলে আমাদের আলেমরা আমাদের কে জানান না কেন। আমরা তো তাদের দেখা দেখি এসব করি। আপনার কথা শুনে তো মনে হলো আপনি ভুল কিছু বলছেন। ইতিমধ্যে মাদ্রাসার কিছু আলেম এসে হাজির হয়ে গেলেন। মসজিদের মুসল্লিরা সবাই তাদের কাছে জানতে চাইলো যে, আমি নামাজের পড়ে মুনাজাত দেওয়া কে বেদয়াত বলেছি, এটা ঠিক কিনা ? তারা বললো, কোন কোন অবস্থায় ঠিক, আবার কোন কোন অবস্থায় ভুল। আমি জানতে চাইলাম কোন কোন অবস্থায় ঠিক আর ভুল বলে মনে করেন। তারা বলল ফেতনা সুষ্টির সুযোগ থাকলে মুনাজাত দেওয়াই ভালো। আর মুসল্লিরা যদি জ্ঞানী হন তাহলে তাদের কে বুঝিয়ে দিয়ে মুনাজাত না দেয়াই ভালো। উপস্থিত মুসল্লিারা বললো যে, ্আপনারা যদি মুনাজাত না দেন তাহলে বাধা দেয় কে ? আমাদের কে কখনো বলেছেন যে, মুনাজাত খারাপ জিনিস। এভাবে সেদিন থেকে মুসল্লিরা মুনাজাত দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে মাওলানা সাহবেরা বললেন, ঠিক আছে আপনারা রাজি থাকলে আমরা মুনাজাত দেবো না। ঘটনাক্রমে আমি অন্য একদিন সেই মসজিদে নামাজের পড়ে দেখলাম যে, যথারিতী মুনাজাত দিয়ে নামাজ শেষ করা হচ্ছে। আমি কোন প্রতিবাদ করার প্রয়োজন বোধ করিনি। আসলে আমাদের আলেমরা বহু বড় বড় বেদযাত কে কেবল মাত্র নিজেদের স্বার্থ্যে লালন করেছেন। চাকুরী হাড়ানোর ভয়ে তারা শিরক আর বেদয়াতের লালন কারীদের ঘরে মিলাদে অংশ নিয়ে কান্নার রোল উঠিয়ে দেন। কিন্ত যখন বয়ানের জন্য মিম্বরে বসেন তখন আল্লাহর ভয় আর তার প্রতি তায়াক্কুলে ফুলছড়ি ছড়াতে থাকেন। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় এসব ভন্ডামীর কি কোন শেষ নেই। অন্যদিকে গরিবেরা নিজেদের সন্তান জন্ম দিয়ে সুন্নাত আযানের জন্য মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন কে দাওয়াত দিলে তারা অনিহা প্রকাশ করেন। সাধারন গরিব কেউ যদি বলেন যে, আমার মা অসুস্থ্য তার জন্য নামাজের পড়ে একটু দেযা করেন। ইমাম সাহেব বলেন ঠিক আছে করবো। অন্যদিকে সমাজের প্রভাবশালী কোন ফাসেক নেতা যদি অসুস্থ্য হয়ে ইমাম সাহেবের কাছে দোয়া চান, অমনি তিনি মসজিদে ঘোষনা দিয়ে দেন যে, অমুকের ছেলে অমুকে অসুস্থ্য তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। এর পরে শুরু হয় দোয়ার নামে চামচামী আর দালালীর নমুনা। এসব ভন্ডামী দেখলে মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়তে ইচ্ছে হয় না। কিন্ত আল্লাহর রাসুলের নির্দেশ বিধায় এখনো এই জাতিয় ইমামদের পিছনে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে।

ইদানিং আবার আরো একটি ফেতনা হাজির হযেছে। মাগরিবের পড়ে বিশেষ একটি দিনে মসজিদে মাইক লাগিয়ে সম্মলিত ভাবে জিকিরের হালকা করা হচ্ছে। সেদিন আমাদের এলাকার মুজাহিদ ভাইরা এই কান্ডটি করলে লোকজন বিরক্ত হয়ে তাদের কে জানায় যে, ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা চলছে, মাইকটি বন্দ করে জিজির করেন। এসব ভন্ডামী দেখলে গা জ্বলে যায়। এসব যারা করছে তাদের সাথে কোর্তা পড়া কয়েকজন আলেমকে দেখেই সাধারন মানুষও এই বেদযাতের সাথে শরীক হচ্ছে। অথচ তাদের জিকির পুর্ববর্তি বয়ান শুনলে মনে হবে জিকির করার জন্য বুঝি আল্লাহ পাক আমাদের কে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। জিকিরের ফাযায়েলের নামে পীর সাহেবে কল্পিত কাহিনী ভরপুর আলোচনার বেশির ভাগ অংশ জুড়ে থাকে মিথ্যা হাদিসের ছড়াছড়ি আর শিরকি কাহিনী। আল্লাহ পাক আমাদের কে এসব থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File