The Science of Male-Female Relation

লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:২৯:০৮ সকাল



সাধারনত পুরুষ নারীর প্রতি ও নারী পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর কারন কি?? এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আশা রাখি ইনশাআল্লাহ।

বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে এ আকৃষ্ট হবার প্রবনতা বৃদ্ধি পায় বস্তন্তকালে। গ্রীষ্মের মৌসুমেও এ আসক্তির ঘটনা ঘটে, তবে স্থায়িত্ব কম হয়। বসন্তের মত এত গভীর আসক্তি তখন সৃষ্টি হয়না। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, কারো প্রেমে পড়তে ৯০ সেকেন্ড থেকে চার মিনেটের মত সময় লাগে।

এবং এর প্রকাশ পায়-

৫৫% বডি ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে

৩৮% গলার স্বর ও কথার ধরনের মাধ্যমে এবং

সরাসরি তাকে ভালোবাসার কথা বলার মাধ্যমে মাত্র ৭%।

অর্থাৎ, কেউ আপনাকে বললো- সে আপনাকে ভালোবাসে। তাহলে আপনি যদি তার এ কথার সত্যতা প্রমান করতে চান, তাহলে এ কথার মাত্র ৭% প্রমান হবে সে যা বলেছে তার দ্বারা। এর পূর্ন সত্যতা জানতে হলে আপনাকে ফলো করতে হবে তার বডি ল্যাংগুয়েজ, গলার স্বর ও কথার ধরনকে।

এবার আসুন, আমরা দেখি কিভাবে কেউ কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়- সাধারনত এর তিনটা স্টেজ আছে-

১- আকাংখা

২-আকর্ষন

৩- Attachment

উল্ল্যেখ্য প্রথম স্টেজটা স্বাভাবিক। একে নিজ থেকে কন্ট্রোল করা যায়, যদিও এটা মারাত্মক কঠিন। আর তাই ইসলামে এর পুরষ্কারও অত্যাধিক। এ আকাংখাকে ছেড়ে দিলে খুব সহজে তৃতীয় স্টেজে পৌঁছা যায়, আবার এ আকাংখাকে দমন করে রাখতে পারলে এটা আর দ্বিতীয় স্টেজেও যায়না।

আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় এ বিষয়টির উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর মানুষের ধর্মকে তিনভাগে ভাগ করা যায়-

-এক শ্রেনীর লোক এ আকাংখাকে সম্পূর্ন দমন করে রাখতে চায়। তাদের মতে এ আকাংখাটাই খারাপ। আমরা পরবর্তীতে ইনশাআল্লাহ দেখবো এ আকাংখাটা প্রাকৃতিক প্রকৃয়া। সৃষ্টিগতভাবেই বিশেষ হরমোন এ আকাংখা সৃষ্টি করে। এ শ্রেনীর লোক কোণ ক্রমেই এ আকাংখাকে সামনে বিস্তৃত হতে দেয়াকে ধর্ম বিরুদ্ধ মনে করে। তাই তারা কোন ক্রমেই ২ ও ৩ নং স্টেজে যাওয়াকে প্রচন্ড খারাপ মনে করে।

- এক শ্রেনীর লোক এ আকাংখাকে একেবারে ফ্রি করে দেয়। তাই তাদের কাছে ২য় ও ৩য় স্টেজও একেবারে ফ্রি।

- আর অপর শ্রেনীর লোক হচ্ছে ইসলামের অনুসারী। এদের কাছে বৈধ ভাবে এ আকাংখাকে ৩য় স্টেজ পর্যন্ত নেয়া যাবে। কিন্তু অবৈধভাবে আকাংখাকে আকাঙ্ক্ষার মাঝেই কবর দিতে হবে। অবৈধভাবে ২য় স্টেজেও যাতে না যায় সে ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী যেমন উচ্চারন করা হয়েছে তেমনি বৈধভাবে তৃতীয় স্টেজে যাবার ব্যাপারেও উৎসাহিত করা হয়েছে।

যাই হোক, মূল কথায় ৮০।

এ আকাংখাটা সৃষ্টি হয় ছেলেদের বেলায় টেস্টোস্টেরন ও মেয়েদের বেলায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে। বয়ঃসন্ধিকালে এ হরমোনগুলোর নিঃসরন বেড়ে যায়। ফলে এ সময় এ আকাংখা বেড়ে যায়।

২য় স্টেজ হচ্ছে আকর্ষন। এতে বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার কাজ করে। যেমন- এড্রেনালীন, ডোপামিন ও সেরোটনিন।

আকাংখাকে যখন কেউ আকর্ষনের দিকে নিতে চায়, অর্থাৎ কেউ যখন কারো প্রেমে পড়ে, তখন নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটনিন রিলিজ হয়। ফলশ্রুতিতে প্রেমিক/প্রেমিকার কথাই শুধু বারবার মনে হয়। উঠতে, বসতে, শুতে শুধু তার কথাই মনে পড়ে।

একটা রোগ আছে, যার নাম Obsessive-compulsive disorder। এ রোগ হলে মানুষ সন্দেহের বশবর্তি হয়ে অযথা বহু কাজ করে। এক কাজ বারবার করে। যেমন দেখবেন কিছু লোক দরজায় তালা লাগালেও সন্দেহ মনে করে বারবার চেক করে। গেইট দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে আবার ভেতর ঢুকে তালা ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য। এক গবেষনায় দেখা গেছে যারা নতুন কারো প্রেমে পড়ে তাদের রক্তে এ সেরোটনিনের মাত্রা Obsessive-compulsive disorder রোগীদের প্রায় সমান। ফলে নতুন প্রেমে পড়া ছেলেমেয়েরাও অনেক সময় আক্রান্ত হয় Obsessive-compulsive disorder এর মত সমস্যায়।

আকাংখা সৃষ্টির ফলে যখন কারো দিকে নজর দেয়া হয় এবং ঐ আকাঙ্ক্ষার কথা চিন্তা করা হয়, তখন কিছু নিউরোট্রান্সমিটার নিসৃত হয়। এ নিউরোট্রান্সমিটারগুলো এক নিউরন থেকে অপর নিউরনে উদ্দীপনা প্রেরন করে এবং এভাবে ব্রেনে নিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ঐ উদ্দীপনা ব্রেন কর্তৃক গৃহীত হয় এবং প্রানী সে ফিলিংস ফিল করে। এমনই একটি নিউরোট্রান্সমিটার হলো- ডোপামিন। এটা টেস্টোস্টেরনের নিঃসরন বাড়ায়। এটা জনন অংগ, ঘাম গ্রন্থি প্রভৃতিকেও উত্তেজিত করে। ফলে শরীরে ঘামেরও সৃষ্টি হয়। ডোপামিন খানিকটা Aggressive টাইপের মনোভাব সৃষ্টি করে।

আরেকটি নিউরোট্রান্সমিটার নরইপিনেপরিন। এটি মানুষকে ঐ কাজের প্রতি সজাগ করে তোলে। ফলে চোখে ঘুম থাকলেও তা দূর হয়ে যায় এবং সংগী সম্পর্কে গভীর মনযোগী করে তোলে এ নিউরোট্রান্সমিটার। একই সাথে আরেকটি নিউরোট্রান্সমিটার ফিনাইলইথাইলামিন নিঃসৃত হয়। একে সংক্ষেপে PFA বলে। এটি ক্ষুধা নষ্ট করে দেয়। ফলে প্রচন্ড ক্ষুধা থাকলেও তখন আর খাবারের ইচ্ছা জাগেনা।

এ অবস্থায় পৌছার পর যদি ব্রেক আপ হয়, তখন PFA এর উচ্চ লেভেল হঠাত ফল করে; ফলে ডিপ্রেশান সৃষ্টি হয়। আর তখন-ই মন থেকেই বেরিয়ে আসে কিছু গান-

চোখের-ই জ্বলে লেখা কত যে কবিতা, মনে পড়ে প্রতিদিন তোমার-ই নামে-----------!!

বুকের জমানো ব্যাথা, কান্নার লোনা জ্বলে------ও প্রিয়া তুমি কোথায়------------!!

প্রেমের নাম বেদনা, একথাটি বুঝিনি আগে------------!!

এ মন আমার পাথর তো নয়, সব ব্যাথা সয়ে যাবে নীরবে--------!!

কিছু কিছু মানুষের জীবনে, ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল। ------কিছু কিছু মানুষের হৃদয়ে কোন দিন ফুটেনা ফুল-----!!

যাই হোক মূল পয়েন্টে ৮০।

এ সময় আরেকটি নিউরোট্রান্সমিটার এড্রেনালিন নিঃসৃত হয়। এড্রেনালিন শরীরে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। খুব বেশি ফর্শা হলে এবং চামড়া পাতলা হলে (বিশেষ করে মেয়েদের) তখন শরীরে এ রক্তপ্রবাহের কারণে লালচে ভাব পরিলক্ষিত হয়। এ বাড়তি রক্ত প্রবাহের ফলে অর্থাৎ এড্রেনালীনের নিঃসরনের ফলে শরীর ঘামতে থাকে, হার্ট বিট বেড়ে যায় এবং মুখ শুকিয়ে যায়।

এসব নিউরোট্রান্সমিটার রিলিজের পর শরীরের ভেতরে ও বাহিরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। তখন পরবর্তী স্টেজের দিকে অগ্রসর হয়।বিজ্ঞানীদের মতে তৃতীয় স্টেজে দুইটি প্রধান হরমোন সবচেয়ে বেশি কাজ করে- অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রেসিন।

শেষ কথাঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট- বিপরীত লিংগের প্রতি আকাংখা মানুষের স্বভাবজাত। এ আকাংখাকে এখানেই সীমাবদ্ধ রাখা যায়, আবার এ আকাংখাকে ৩য় স্টেজ পর্যন্তও নিয়ে যাওয়া যায়। মানুষের শরীর এ উভয়ের জন্যই অনুকূল। অবশ্য আকাংখাকে আকাঙ্ক্ষার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। পৃথিবীর কিছু ধর্ম এ কষ্টসাধ্য ব্যাপারটিকেই নিজেদের ধর্মীয় লেভেলের সর্বোচ্চ সীমায় উঠার সিঁড়ি বানিয়েছে। আবার বহু লোক এ আকাংখাকে ৩য় স্টেজ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াকে একেবারে ফ্রি করে দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! আমি যে জীবন ব্যবস্থাকে নিজ জীবনে অনুসরনের চেষ্টা করি, সে জীবন ব্যবস্থায় অর্থাৎ ইসলামে এ উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা হয়েছে। ইসলামে বৈধতার সীমার মধ্যে ৩য় স্টেজে যাবার ব্যাপারে যেমন উতসাহিত করা হয়েছে, তেমনি অবৈধভাবে ৩য় স্টেজ তো দূরের কথা, ২য় স্টেজে যাবার ব্যাপারেও কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারন করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-

“তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ ও অসৎ পন্থা।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২)

“কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না, তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।” (সূরা আল-আনআম: ১৫১)

আকাংখাটা সৃষ্টগতভাবেই তৈরী হয়। এটা কেউ শেখাতে হয়না। টেস্টোস্টেরন বা ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরনের প্রভাবে এ আকাংখা আপনা আপনিই তৈরী হয়। তবে আকাংখা থেকে আকর্ষনের পর্যায়ে যাবার জন্য নিজ থেকে উদ্যোগ নিতে হয়। আর এ উদ্যোগের শুরুটাই হয় দৃষ্টির মাধ্যমে। ইসলামে তাই দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রনের জন্য কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে-

“মুমিন পুরুষদের বল, তারা যেনো নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাযত করে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। আর মু’মিনা নারীদের বল, তারাও যেনো নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাযত করে” (সূরা নূর, আয়াত-৩০,৩১)

অনিচ্ছাকৃত নজর পড়ে গেলে তার জন্য কোন গুনাহ নাই, তবে শর্ত হলো দ্বিতীয়বার আর সেদিকে তাকানো যাবেনা। (আহমদ, আবু দাঊদ, তিরমিযী, হাকেম, সহীহুল জামে’ ৭৯৫৩ নং)

আমি উল্লেখ করেছি, ইসলামে বৈধভাবে তৃতীয় স্টেজে যাবার ব্যাপারে উতসাহ প্রদান করা হয়েছে। আর তাই কেউ যখন বৈধভাবে ৩য় স্টেজে যেতে চায়, তখন তার জন্য দৃষ্টির এ কঠোর নির্দেশনা শিথিল করে দেয়া হয়।

‘যখন তোমাদের কেউ কোনো মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে, তখন তাকে দেখতে কোনো গুনাহ হবে না। তবে কেবল বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই দেখতে হবে, যদিও মেয়ে জানতে না পারে।’ (মুসনাদ আহমাদ হা/২৩৬৫০)।

মুগীরা ইবনু শু’বা (রা.) বলেন, ‘আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। রাসূল (সা.) আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কারণ এই দর্শন তোমাদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা সঞ্চার করবে।’ (আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/৩১০৭)।

আকাংখার সাথে দর্শন বা ছোঁয়া যোগ না করলে তা আকর্ষনের পর্যায়ে যায়না। আর আকর্ষনের পর্যায়ে না গেলে তা কখনো তৃতীয় স্টেজে যেতে পারেনা। সেজন্য যখনি তৃতীয় স্টেজে যাবার সম্ভাবনা, কেবল তখনই আকাঙ্ক্ষার সাথে দর্শনকে যোগ করার পারমিসান দেয়া হয়েছে আমি যে জীবন ব্যবস্থা অনুসরনের চেষ্টা করি, সে জীবন ব্যবস্থায়; অর্থাৎ ইসলামে।

বিষয়: বিবিধ

১৬০১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343800
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:১২
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জানা হলো অনেক কিছু। ধন্যবাদ।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩১
285222
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ, ভাই।
343806
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫৯
হতভাগা লিখেছেন : পাড়ার মেট্রিক ফেল রোমিওর প্রতি আকর্ষন আর শাহরুখের প্রতি আকর্ষন কি সমান হবে ?
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০০
285223
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : চিন্তার বিষয় :Thinking
343814
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আখাঙ্খা অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং একে দমন করার চেষ্টা মানসিক ক্ষতির কারন। যেটা প্রয়োজন আখাঙ্খা কে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠতে না দেওয়া। আনিয়ন্ত্রিত হলে অপরাধ এর সৃষ্টি করে অার চেপে রাখা সৃষ্টি করে মানবিক বোধের বিপর্যয়। ইসলাম এই আখাঙ্খা কে স্বিকৃিতি দেয়। পশু কে ফেরেস্তা বানাতে চায় না। মানুষ বানাতে চায়।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০১
285226
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : সুন্দর বলেছেন, ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File