ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অপরিহার্য ১৪টি মূলনীতি

লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ২৮ আগস্ট, ২০১৩, ১২:১৭:৩৪ রাত

১)একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা।

সূরা বনী ইসরাঈল-২২

আল্লাহর সাথে দ্বিতীয় কাউকে মাবুদে পরিণত করো না। অন্যথায় নিন্দিত ও অসহায়-বান্ধব হারা হয়ে পড়বে।

সূরা বনী ইসরাইল-২৩

তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ তোমরা কারোর ইবাদাত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো।

সূরা বনী ইসরাইল- ৩৯

আর দেখো, আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদ স্থির করে নিও না, অন্যথায় তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে নিন্দিত এবং সব রকমের কল্যান থেকে বঞ্চিত অবস্থায়।

সূরা লোকমান- ১৩

আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না, নিশ্চয়ই শিরক সবচাইতে বড় জুলুম।

সূরা আন’আম-১৫১

আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না।

২) পিতামাতার সাথে সদাচরণ করা

সূরা আন’আম-১৫১

পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।

সূরা বনী ইসরাইল- ২৩,২৪

পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোন একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে ‘উহ’ পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো। যেমনিভাবে শৈশবে ওরা আমাকে লালন পালন করেছিল।

সূরা লোকমান- ১৪

আর প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি। তার মা দূর্বলতার পর দূর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারন করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে। আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাদের (সকলকে) ফিরে আসতে হবে।

লোকমান- ১৫

কিন্তু যদি তারা তোমার প্রতি আমার সাথে এমন কাউকে শরীক করার জন্য চাপ দেয় যাকে তুমি জানো না, তাহলে তুমি তাদের কথা কখনোই মেনে নিও না। দুনিয়ায় তাদের সাথে সদাচার করতে থাকো কিন্তু মেনে চলো সে ব্যক্তির পথ যে আমার দিকে ফিরে এসেছে। তারপর তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে আমারই দিকে। সে সময় তোমরা কেমন কাজ করছিলে তা আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো।

সূরা আনকাবূত-৮

আমি মানুষকে নিজের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু যদি তারা তোমার উপর চাপ দেয় যে, তুমি এমন কোন (মা’বুদকে) আমার সাথে শরীক করো যাকে তুমি (আমার শরীক হিসেবে) জানো না, তাহলে তাদের আনুগত্য করো না। আমার দিকেই তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের জানাবো তোমরা কি করছিলে।

সূরা বাকারা-৮৩

পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে।

৩) আত্মীয় স্বজন, মিসকিন ও সম্বলহীন পথিককে তাদের অধিকার প্রদান করা।

সূরা বনী ইসরাইল- ২৬

আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও।

৪) অপব্যয়, অপচয় না করা।

সূরা বনী ইসরাইল- ২৭

বাজে খরচ করো না। যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ।

সূরা আরাফ-৩১

হে বনী আদম, প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত হও। আর খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যেয়ো না, আল্লাহ্‌ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

৫) হকদারদের হক আদায় করতে অক্ষম হলে তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলা।

সূরা বনী ইসরাইল- ২৮

যদি তাদের থেকে (অর্থাৎ অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকিন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এ জন্য যে, এখনো তুমি আল্লাহর প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও।

৬) কৃপণতা না করা এবং অতিরিক্ত খরচও না করা, খরচের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা।

সূরা বনী ইসরাইল- ২৯

নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিও না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে।

সূরা ফুরকান-৬৭

তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পন্যও করে না বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।

৭) অভাবের কারনে সন্তান হত্যা না করা।

সূরা বনী ইসরাইল- ৩১

দারিদ্রের আশঙ্কায় নিজেদের সন্তান হত্যা করো না। আমি তাদেরকেও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও। আসলে তাদেরকে হত্যা করা একটি মহাপাপ।

সূরা আন’আম-১৫১

দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো।

৮) প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীলতা বা জ্বিনার কাছেও না যাওয়া।

সূরা বনী ইসরাইল- ৩২

যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং জঘন্য পথ।

সূরা আন’আম- ১৫১

প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারে কাছেও যাবে না।

সূরা ফুরকান- ৬৮

ব্যভিচার করো না। এসব যেই করবে সে তার গুনাহের শাস্তি ভোগ করবে।

৯) বিধান ব্যতিত কোন মানুষকে হত্যা না করা।

সূরা বনী ইসরাইল- ৩৩

আল্লাহ্‌ যাকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, সত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না।

সূরা আন’আম-১৫১

আল্লাহ্‌ যে প্রানকে মর্যাদা দান করেছেন ন্যায়সংগতভাবে ছাড়া তাকে ধ্বংস করো না। তিনি তোমাদের এ বিষয়গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করবে।

সূরা ফুরকান-৬৮

আল্লাহ্‌ যে প্রান হত্যা হারাম করেছেন কোন সংগত কারন ছাড়া তাকে হত্যা করো না।

১০) ইয়াতীমের ধন-সম্পদের কাছেও না যাওয়া।

সূরা বনী ইসরাইল- ৩৪

এতিমের সম্পত্তির ধারে কাছেও যেয়োনা, তবে হ্যাঁ সদুপায়ে, যে পর্যন্ত না সে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে যায়।

সূরা আন’আম-১৫২

আর তোমরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এতিমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না, তবে উত্তম পদ্ধতিতে যেতে পারো।

১১) ওয়াদা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলা।

সূরা আন’আম-১৫২

আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ন কর। এ বিষয়গুলোর নির্দেশ তোমাদের দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা নসীহত গ্রহন করবে।

সূরা বনী ইসরাইল- ৩৪

প্রতিশ্রুতি পালন করো, অবশ্যই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

সূরা মুমিনুন-৮

(মুমিনরা) নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।

সূরা মা’আরিজ-৩২

(জান্নাতী তারা) যারা আমানত রক্ষা করে ও প্রতিশ্রুতি পালন করে।

১২) মাপে এবং ওজনে কম না দেওয়া।

সূরা বনী ইসরাইল- ৩৫

কোন কিছু পরিমাপ করার সময় মাপ কিন্তু পুরোপুরিই করবে, আর দাঁড়িপাল্লা সোজা করে ধরবে। (লেনদেনের ব্যাপারে) এই হচ্ছে উত্তম পন্থা এবং পরিনামে (-র দিক থেকে) এটাই হচ্ছে উৎকৃষ্ট।

সূরা আন’আম- ১৫২

ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো।

১৩) যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে তৎপরতা না করা

সূরা বনী ইসরাইল- ৩৬

এমন কোন জিনিসের পেছনে লেগে যেয়ো না যে সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই। নিশ্চিতভাবেই চোখ, কান ও দিল সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

১৪) আল্লাহর যমিনে অহংকার করে চলাফেরা না করা

সূরা বনী ইসরাইল- ৩৭

যমীনে দম্ভভরে চলো না। তুমি না জমিনকে চিরে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারবে।

সূরা ফুরকান-৬৩

রহমানের (আসল) বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, তোমাদের সালাম।

বিষয়: বিবিধ

২৩৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File