রাতারগুল, বিছানাকান্দি (সিলেট ভ্রমণ ২০১৫) (শেষ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০২:২৩:১২ দুপুর

গত পর্বের লিংকঃ রাতারগুল, বিছানাকান্দি (সিলেট ভ্রমণ ২০১৫) (পর্ব ১)

রাতারগুল শেষ করে এবার বিছানাকান্দিতে যাওয়ার পালা। একটি কথা বলে রাখা ভালো, রাতারগুল যে সিএনজি নিয়ে যাবেন সেটা ছেড়ে দিলে বিপদ। ফেরার পথে রাতারগুল হতে সিএনজি পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। আমাদের সিএনজিকে আমরা থাকতে বলেছি। কয়েক ঘন্টায় রাতারগুল ঘুরে ফিরে সিএনজিতে উঠে পড়লাম। সিএনজি আমাদের একটি বাজারে নামিয়ে দিল যেখান হতে বিছানাকান্দির হাদারপাড় যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। সে বাজার বা স্থানটির নাম এখন আর মনে পড়ছে না।

সে যাই হোক, সিএনজি রিজার্ভ করে হাদারপাড় চলে এলাম। লক্কর ঝক্কর এবড়ো থেবড়ো ভাঙ্গা রাস্তায় সিএনজিতে করে আসতে আসতে পুরো শরীর ব্যথা হয়ে গেল। রাস্তাটি যথেষ্ট খারাপ।

রাস্তার ঝাঁকুনিতে আমার প্যান্টের পকেটে থাকা মোবাইল পিন নাম্বারের অপশনে চলে যায় এবং বারবার ভুল পিন নাম্বার এন্টার হয়েছে। ফলশ্রুতিতে পরে সিম একটিভ করার জন্য পাক নাম্বার চাওয়া হয়। সাত বছর ধরে ব্যবহার করা সিমকার্ডটি আর উদ্ধার করা যায় নি।

হাদারপাড় হতে বিছানাকান্দি যেতে ১২-১৫ মিনিটের মেঠোপথ হাঁটতে হয়। এরপর নৌকাভাড়া করে মূল পয়েন্ট মানে পাহাড়ের কোলে যেতে হয়। এখান হতে নদীর পাড় ঘেঁষে হেঁটেও যাওয়া যায় , ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগতে পারে। কিন্তু স্ত্রী আর ছেলে সাথে থাকায় সেদিকে যাই নি।

নৌকা ভাড়া করতে গিয়ে বিড়ম্বনা। সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া চাইলো। আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বললাম, রাজি হলো না। একটু এগিয়েই দেখলাম একটি নৌকাতে ডাকছে, জনপ্রতি আপডাউন ২০০ টাকা করে। সেখানে আরো পর্যটক হুড়মুড় করে উঠছে, আমরাও উঠে পড়লাম। মানে আপডাউন খরচ হলো আমাদের মাত্র ৬০০ টাকা, ছেলের বয়স কম হওয়ায় ফ্রী।

বিছানাকান্দি আর জাফলং এ দু’টির তুলনা আমি করি এভাবে। জাফলং বড় বোন আর বিছানাকান্দি তার ছোট বোন যে বড়বোন এর চেয়েও সুন্দরী।

বিছানাকান্দির আরো একটি বিশেষত্ব হলো, এখানে সাতটি পাহাড় এসে আশ্চর্যজনকভাবে মিলিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

ছবিটি বেশ দূর হতে তোলা। বর্ষাকালে এখানে বেশ পানি থাকে।





বিছানাকান্দিতে বর্ষাকাল ছাড়া বছরের বাকি সময় সাধারণত হাঁটু হতে কোমড় সমান পরিমাণ পানি থাকে। তবে কিছু কিছু স্থানে বেশ গভীর পানিও আছে। এখানকার পাহাড়, পাথর আর পানির সৌন্দর্য সবই আপনার কাছে জাফলংয়ের চেয়ে বেশি কিছু মনে হবে।

এমন সুন্দর পানি! গোসল করার ইচ্ছে দমানো খুব কঠিন।











আপাত শান্ত পানির নীচে তীব্র স্রোত। অনেক স্থানে গভীরতাও বেশি। সাবধানতা জরুরী। সাঁতার না জানলে হাঁটুপানির বেশি যাওয়া উচিত নয়।



সন্ধ্যা হয় হয়, আমরা বিছানাকান্দি হতে ফিরছি নৌকায় করে। বিছানাকান্দি হতে নৌকা দিয়ে ফেরার সময় পিয়াইন নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলাম। যাওয়ার সময় এরূপটি খেয়াল করি নি। ছোট নদী পাড়ি দিয়ে গরু মহিষ পার করছে স্থানীয়রা। ঘরমুখো মানুষরা হাঁটু পানি পাড়ি দিয়ে নদী পার হচ্ছে সওদাপাতি নিয়ে।





রবি ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতাটি এখানে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। নৌকায় অনেকেই দেখি বিড়বিড় করে আওড়াচ্ছে-

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে,

বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।

পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,

দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,

একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।

কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,

রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।

তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাহিবার কালে

গামছায় জল ভরে গায়ে তারা ঢালে।

সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে

আঁচলে ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।

আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর

মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।

দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,

বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।

বিদায় বিছানাকান্দি।

আবার আসিব ফিরে তোমার তীরে।

তোমার সৌন্দর্যের টানে বারেবার আমি ফিরে আসতে চাই। নগরের যান্ত্রিক জীবনের একগেঁয়েমি দূর করতে তোমার সৌন্দর্যে অবগাহন করে দুদন্ড সুখ পেতে যখনই সুযোগ মিলবে আবারো ছুটে আসবো।

নদীতীরে পৌছে আবারো ১৫ মিনিট হেঁটে হাদারপাড়। সেখান হতে সিএনজি করে সরাসরি সিলেট। দাপ্তরিক কাজে এরপর আরো ২ দিন ছিলাম সিলেট। এরপর আবার ফিরে এলাম ঢাকার ব্যস্ত জীবনে।

বিষয়: সাহিত্য

১৭০৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377987
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:৪৩
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : বিশ্বের উন্নত দেশে পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তাঘাট অনেক সুন্দর করে উপযোগী করা হয় আর আমাদের দেশে পাত্তাই দেওয়া হয়না।
ধন্যবাদ ভাই ভ্রমণ কাহিনী লিখার জন্য, চালিয়ে যান
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:০০
313297
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। পর্যটনশিল্পে সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।
377996
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ চমৎকার ছবিগুলির জন্য। বিছানাকান্দি গিয়েছি ২০১১ সালে শেষ বার।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:১৫
313327
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : মাশাল্লাহ। আপনি যখন গিয়েছিলেন তখন বিছানাকান্দি পর্যটন স্পট হিসেবে এতটা পরিচিত ছিল না। তখন নিশ্চয়ই আরো ন্যাচারাল টাচ পেয়েছিলেন।
378008
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১২:১৩
আফরা লিখেছেন : যেতে তো চেয়েছিলাম কিন্ত রাস্তার যা বর্ননা দিলেন তাতে মন খারাপ হয়ে গেল ।ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে ভাইয়া।

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:১৬
313328
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে ডাক্তার আপু।
তবে এ সৌন্দর্যের কাছে কষ্টটা আসলে কিছু না।

অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
378028
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:০৮
রাশেদ বিন জাফর লিখেছেন : ধন্যবাদ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:১৩
313326
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আপনাকেও।
378116
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:৪০
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : বর্ণনা এবং ছবি সবই চমৎকার হয়েছে। পোস্টের জন্য ধন্যবাদ Happy
০১ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১১:১৩
313421
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ দীর্ঘদিন পর ব্লগে উপস্থিতির জন্য। নিয়মিত আসুন ব্লগে। ব্লগারদের সরব উপস্থিতি আগের মতো নেই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File