যদি গাঙচিল হতাম

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৮ মার্চ, ২০১৪, ০২:৩১:৫৭ দুপুর

নুসাবা সবে ক্লাস এইট পেরিয়ে নাইনে ওঠেছে। যেমন মেধাবী, তেমন সুন্দরী। সায়েন্স এ পড়ে, ক্লাসের পজিশন এক। মা-বাবা স্বপ্ন দেখেন মেয়ে ডাক্তার হবে। মেয়ে ও পড়াশোনায় খুবই সিরিয়াস। দুই ভাই-বোনের মধ্যে নুসাবা বড়। ছোট ভাইটি মাত্র থ্রিতে পড়ে। সে ও ভাল ছাত্র। মফস্বলের এই শহরে বাবার চাকরি সূত্রে তাদের বসবাস দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে। বাবা একটি বিদেশী এনজিও এর ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার।



নুসাবাকে ওর বাবাই বাসায় পড়াশোনা দেখিয়ে দেন। কিন্তু এবার আর পারছেননা। উচ্চতর গণিত এর জন্য একজন শিক্ষক না হলেই নয়। গৃহশিক্ষক এর কথা ভাবলেন। কিন্তু নুসাবার মা মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে নাকচ করে দিলেন। শেষে সিদ্ধান্ত হল, স্কুলে ব্যাচে প্রাইভেট পড়বে শরীফ বিএসসি স্যার এর কাছে। সেই থেকে নুসাবা বিএসসি স্যারের কাছেই পড়ছিল। শরীফ বিএসসি খুবই দক্ষ শিক্ষক। পড়ান ও অনেক আন্তরিকতা দিয়ে। তিনি এ স্কুলে জয়েন করেছেন প্রায় ৯ মাস আগে। এই স্বল্প সময়ে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এর মূল কারণ হচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শিক্ষকসূলভ আচরণ ও শিক্ষকতায় অসাধারণ দক্ষতার জন্য। গণিত ও বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সহজ করে তুলেন দক্ষ উপস্থাপনার মাধ্যমে।

স্কুলে দুইজন বিএসসি শিক্ষক। অন্যজন মাহবুব বিএসসি। তিনি এ স্কুলে আছেন প্রায় ৮ বছর। স্বভাবে একেবারে শরীফ স্যারের বিপরীত। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন। কেউ তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে তাকে ফেল করিয়ে দিতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেন, কারণে - অকারণে ক্লাসে মারধোর করেন। আর যারা প্রাইভেট পড়ে, তাদের পরীক্ষার আগে প্রশ্ন সরবরাহ করেন। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়ত। যারা প্রাইভেট পড়তে আসে, তাদেরকে তিনি একটি সমাধান বই দেন আর তারা সেখান থেকেই খাতায় তুলে নেয়। তিনি কিছু বুঝিয়ে দেয়ার ও প্রয়োজন মনে করেননা। তরুণ শরীফ স্যার জয়েন করার পর মাহবুব বিএসসি এর প্রাইভেট ব্যবসায় ধস নামে। দলে দলে ছাত্র-ছাত্রী মাহবুব স্যারকে বাদ দিয়ে শরীফ স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে আসে। শরীফ ও ছাত্র-ছাত্রীদের খুবই আন্তরিকতা দিয়ে পড়ান । স্কুলের অনেক দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীকে তিনি কোন টাকা-পয়সা ছাড়াই পড়ান।

মাহবুব বিএসসি প্রমাদ গুণলেন। শরীফকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় সেটা ভাবতে লাগলেন। শরীফ বলতেন, একটি অংক একাধিক নিয়মে সমাধান করা যায় এবং যুক্তিসংগত যেকোন নিয়মই গ্রহণযোগ্য। ক্লাসে মাহবুব বিএসসি তাঁর সমাধান বই এর নিয়মে অংক না করলে সেটা কেটে দিতে লাগলেন এবং বলতে শুরু করলেন যে, শরীফ বিএসসি ভুল পড়াচ্ছে। বিষয়টি প্রধানশিক্ষক পর্যন্ত গড়ালো। প্রধানশিক্ষক দক্ষহাতে ব্যাপারটি সুরাহা করলেন। ঐ শহরের আরো দুটি নামী স্কুলের তিনজন জনপ্রিয় বিএসসি শিক্ষককে ডাকলেন। তাঁরা শরীফ বিএসসির পক্ষেই মত দিলেন। এবার মাহবুব সাহেব এ পথ হতে সরে আসলেন অর্থাৎ শরীফ বিএসসি এর নিয়মে করা অংক আর কাটাকাটিতে গেলেননা। শরীফকে শায়েস্তা করার জন্য অন্য উপায় খুঁজতে লাগলেন এবং সুযোগের অপেক্ষায় রইলেন।

স্থানীয় কয়েকজন মাস্তানকে হাত করলেন মাহবুব বিএসসি। শরীফ অবিবাহিত। স্কুল লাগোয়া ব্যাচেলর কোয়ার্টারেই থাকতেন এবং সেখানেই প্রাইভেট পড়াতেন। বলছিলাম নুসাবার কথা। সামনেই স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা। সেদিন ও নুসাবা অন্যান্য দিনের মত প্রাইভেট পড়তে এসেছিল প্রিয় শরীফ স্যারের কাছে। সময় সকাল ৭ টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি। ৭ টা হতেই স্যার পড়ান। ব্যাচের অন্যরা তখনো কেউ আসেনি। হয়তো এসে পরবে ১০ মিনিটের মধ্যে। মাস্তানরা ও তক্কে তক্কে ছিল। নুসাবা স্যারের রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই তারা বাহির হতে দরজায় তালা লাগিয়ে দিল এবং হৈচৈ শুরু করে দিল। মুহুর্তেই অনেক লোক জমে গেল।

সেদিনই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির জরুরি মিটিং বসল। সাক্ষীর অভাব হলনা। স্থানীয় মাস্তানরা শরীফকে নুসাবার সাথে একই বিছানায় আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছে বলে মিথ্যা সাক্ষী দিল। শরীফের প্রতিবাদ হালে পানি পেলনা। শরীফকে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে চাকরিচ্যুত করা হল।

আর নুসাবা! ঘটনার আকস্মিকতায় সে লজ্জায়, ঘৃণায় একেবারে ভেঙে পরল। স্কুলে যাওয়ার কথা সে আর চিন্তাই করতে পারছেনা। এই অপবাদ নিয়ে সে কিভাবে সহপাঠীদের মুখ দেখাবে! কেউতো বিশ্বাস করবেনা এটা সাজানো কাহিনী। সবাইতো দুয়ে দুয়ে চার মিলাবে। নুসাবা সুন্দরী আর শরীফ ও অবিবাহিত। এদিকে পরীক্ষা ও শেষ হয়ে গেল। অনেক বুঝিয়েও নুসাবাকে ওর বাবা মা আর স্কুলে পাঠাতে পারলেননা। লজ্জায় সে আর স্কুলে গেলনা এবং পরীক্ষাও মিস করল। নিঃশব্দে কেঁদে চলে দিনরাত। উদাস চেয়ে থাকে জানালার ধারে। দূরে দেখা যায় নদী। একঝাঁক গাঙচিল উড়ে যায়।

নুসাবা ভাবেঃ ইস! যদি গাঙচিল হতাম! উড়ে যেতাম-দূরে, বহুদূরে লোকালয় ছাড়িয়ে। যেখানে কাউকে দেখাতে হবেনা এমুখ।

http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/1980/ohidul/40913#.UygGC863TDd





বিষয়: সাহিত্য

১৬৯৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

194034
১৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৩৯
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৪৬
144621
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আপনাকে রেডিমেড স্বাগতম।Happy Happy Good Luck
194035
১৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৪০
নেহায়েৎ লিখেছেন : বাস্তবেও এরকম ঘটনার কথা শুনেছি। তবে আপনার গল্প যেন শেষ হয়েও হইল না শেষ! কোথায় যেন রয়ে গেল রেশ!!!
১৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৪৩
144620
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : পাঠক ভাবনায় কিছু জিনিস রেখে দিতে হয়। Happy Happy
আপনাকে ধন্যবাদ।
194038
১৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৪৭
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : শেষটা সুন্দর তবে গল্পটা বাস্তবধর্মী। অনেক ধন্যবাদ।
১৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৫৭
144623
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ টিপু ভাই।Good Luck Good Luck
194060
১৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
নীল জোছনা লিখেছেন : লজ্জায় সে আর স্কুলে গেলনা এবং পরীক্ষাও মিস করল। নিঃশব্দে কেঁদে চলে দিনরাত। উদাস চেয়ে থাকে জানালার ধারে। দূরে দেখা যায় নদী। একঝাঁক গাঙচিল উড়ে যায়।

চরম সুন্দর লাগলো পড়ে ভাই। অসাধারণ
১৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
144634
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে পরিচিত কেউ বলে মালুম হচ্ছে। Good Luck Good Luck Good Luck
194138
১৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:১৬
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আমাদের দেশ থেকে যতদিন প্রতিহিংসা যাবে না এবং ইসলামী অনুশাসন মানবে না ততদিন এগুলো থাকবেই।
১৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০২
145044
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : সহমত।
194163
১৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৪
ইকুইকবাল লিখেছেন : আবেগধর্মী একটি গল্প। আপনি এখন নিয়মিত গল্প লিখছেন দেখি। ভালই লাগছে। চলুক
১৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০০
145043
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : শিক্ষকতার মত মহান পেশায় আজ নীতিহীনদের জয় জয়কার।
194395
১৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:০৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কি অদ্বুত গল্প!!!
তবে সত্য সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। এই ধরনের ব্যবসায়ি শিক্ষকে এখন এই দেশটা ভরে গিয়েছে। আমার বাসার কাছেই অন্যতম বিখ্যাত ও প্রাচিন কলেজিয়েট স্কুল। আর চারদিকে এই স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট স্কুল! জানিনা এইভাবে কত নুসাবার জীবন নষ্ট হচ্ছে তথাকথিত কম্পিটিশন এর যুগে।
১৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০০
145042
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : শিক্ষকতার মত মহান পেশায় আজ নীতিহীনদের জয় জয়কার।
194860
১৯ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫০
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : খণ্ড খণ্ড অংশ মিলেই আমাদের জীবন অখণ্ড ভাবমূর্তিতে প্রবাহিত হয়। অনেক দারুন একটি ছোট গল্প। ছোটগল্প সম্পর্কে যতটুকু পড়ছি, আপনার এই লেখাটাকে অবশ্যই আদর্শ ছোটগল্প বলা চলে।
কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়, আমার হৃদয় আকাশে যে কে একজন রূপসী গাংচিলহয়ে উড়ছে..পড়ার আমন্ত্রণ আপনাকে
২০ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৩৫
145467
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অসাধারণ কাব্যিক অনুভূতি!
Happy Happy
একটি রূপসী গাঙচিল সুনীল আকাশে ডানা মেলে খুঁজে ফিরে তার প্রিয়কে। সে কি খুঁজে পাবে তার কাঙ্খিত প্রিয়কে?
195714
২১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৫৯
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : ঘটনাটা শুণে খুব খারাপ লাগল। মেয়েটার চেয়ে তার হিংস্র শিক্ষকের কর্ম দেখে। ...শেষ কথাগুলো অনুভতিতে পুর্ন। ধন্যবাদ।
২২ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:১৭
146157
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : প্রাইভেট পড়ানোর নামে কিছু শিক্ষক নামের কীট এমন কিছু কর্ম করেন যা মনুষত্বের পর্যায়ে পড়েনা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File