শবে বরাতের রাতে চ্যনেল আই ও মাই টিভির মহত! আয়োজন

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২৬ জুন, ২০১৩, ০৫:৪৭:৫৩ বিকাল

এক) নিসফ মিন শা'বান না শবে বরাত -

শবে বরাত না নিসফ মিন শা'বান এ নিয়ে স্পষ্ট বিভেদ রয়েছে আমাদের সমাজে। যারা শবে বরাত বলে নানান আয়োজন করে রাতটি পালন করেন,তারা কোরআন হাদীসের দলীল পেশ করে থাকেন সেগুলো সবই নিসফ মিন শা'বান বা শাবান মাসের অর্ধেক এই বরাতের দলীল গুলোই পেশ করে থাকেন। কোরআনের সূরা দুখানের যে আয়াতটিকে শবে বরাতের বলে চালিয়ে দিতে চান তাদের পক্ষে যে তাফসীর গ্রন্থের রেফারেন্স রয়েছে সেই তাফসীর গুলো বলা যায় সোর্স তাফসীর। যেমন তাফসীর তাবারী,তাফসীর খাজেন। এগুলো লিখিত প্রায় হাজার বছরের পূর্বে। সাহাবী এবং তাবেয়ীদের মধ্যে শুধুমাত্র ইকরামা নিসফ মিন শা'বান এর পক্ষে। ইকরামা ছাড়া আর কোন ইসলামী স্কলার সূরা দু'খানের এই আয়াতের সাথে ১৫ শা'বানের রাতকে ব্যাখ্যা করেননি।

হাদীসের ভান্ডার থেকে মাত্র একটি হাদীস যা সহীহ হিসাবে পাওয়া যায়। বাকি প্রায় ২২টির মত হাদীস যা সহীহ নয়, বরং কোনটা জয়ীফ (দুর্বল) আবার কোনটা মওদু (বানানো)। ২২ টি হাদীসের মধ্যে একটি সহীহ আর মাত্র দুটি হাদীসকে 'হাসান গরীব' (হাদীসের একটি প্রকার) বলে কেউ স্বীকার করেছেন। তাই এটা সত্য এবং প্রমানিত যে ১৪ তারিখ দিবগত রাতে রাসূল (সঃ) নিজে ব্যক্তিগত আ'মাল করেছেন।

যে হাদীসটি সহীহ, সেই হাদীসটির বর্ননাকারী হলেন আমাদের মা আয়শা (রাঃ)। এই সহীহ হাদীসটি আমাদেরকে ১৪ দিবাগত রাতে ব্যক্তিগত সালাত আদায়,আপন আত্মীয়স্বজনের জন্য দোয়া করা এবং নিজের মধ্যে পরকালের ভয় জাগ্রত করতে কবরস্থানগুলোর যিয়ারত করতে উৎসাহিত করে। এতে কোন বিদআত বা বাড়াবাড়ির কিছু নেই। বরং এই রাতের একটা মর্যাদা আছে। আ'মাল করার জন্য একটি হাদীস ই যথেষ্ট।যদি না এর বিপরীত কোন হাদীস না থাকে। আমাদের বিবেচনায় এরকম কোন হাদীস নেই যা মা জননী আয়শা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটিকে রিজেক্ট (বাতিল) করে। তবে শবে বরাত নামে যা কিছু বানিয়ে আনুষ্ঠানিকতা করা হয় তার সাথে কোরআন হাদিসের কোন সম্পর্ক নেই।

দুই মিডিয়াতে শবেবরাতের আলোচনা -

মিডিয়া বলতে এখানে টেলিভিশন বা চ্যনেল মিডিয়ার আলোচনা।তুলনা মূলক পর্যালোচনার জন্য সব কয়টি চ্যনেল দেখার সুযোগ হয় নাই।যে কয়টির অনুষ্ঠান দেখেছি সেগুলোর আলোচনা।

বাংলাদেশে চ্যনেলগুলোর মধ্যে তিনটি ধারা।একটি ধারা হল স্যেকুলার + বাঙ্গালী চেতনা বা নতুন ৭১ এর চেতনা।২য় ধারা হল খিচুড়ি মার্কা,জাতিয়তাবাদী + বাঙ্গালী চেতনা,আবার সাথে এক চিমটি ৭১ এর চেতনা।তৃতীয় ধারা হল সঠিক বাংলাদেশী চেতনা,বৃহত জনগোষ্ঠীর মন ও মননের চেতনা সমৃদ্ধ।

তৃতীয় ধারাটির টিভি চ্যনেলগুলো এখন বাঙ্গালী চেতনার আঘাতে কুপোকাত। ডিজিটাল সরকার আর শাহবাগী চেতনায় এই ধারার মিডিয়াকে গলাটিপে ধরেছে। যে কয়েকটি চ্যনেল বাঙ্গালী চেতনার বিপরীত শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছিল তাদের সবগুলোর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।


প্রথম ও দ্বিতীয় ধারার টিভিগুলো প্রমোট করে মাজারী,ভান্ডারী,আটরশী,আর কড়া সুন্নি নামক সরকার সমর্থক গ্রুপকে।ইসলামকে বিকৃত,বাড়াবাড়ি,এবং বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনকে গালাগালি করে যারা বক্ত্বব্য রাখতে পারেন সেই দরবারী,প্রতিষ্ঠিত তাগুতপন্থী আলেমদের দিয়ে অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়।

আবার যে কয়জন আলেমে দ্বীন সঠিক ইসলামের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তারা নিজেদের অবস্থানে এতই কঠোর এবং বিষয় ভিত্তিক প্রান্তিক বক্তব্য রেখে থাকেন।শিক্ষিত সমাজে তাদের গ্রহনযোগ্যতা থাকলেও তারা একেবারে নতুন আনকোরা টাইপের স্কলার হিসাবে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। এই পক্ষের মধ্যে দেশের সামাজিক অবস্থা,দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ইসলামের নামে রসম রেওয়াজগুলোর ইতিবাচক আলোচনার পরিবর্তে নেতিবাচক আলোচনায়ই বেশী করেন। তাই এই পক্ষ নিজেরাই একটি পক্ষ হয়ে গেছেন।তাগুত পন্থী দরবারী আলেমরা সহজে ই এই শ্রেনীর প্রাজ্ঞ আলেমদেরকে ওহাবী,আহলে হাদীস পন্থী হিসাবে চিত্রিত করে ফেলে। আর স্যেকুলার বা বাঙ্গালী চেতনা সমৃদ্ধ মিডিয়া এই সব অসত্য প্রচারণাকে উৎসাহিত করে।

অথচ ইসলামের যেমন সার্বজনীন একটি রুপ রয়েছে তেমন এর গ্রহনযোগ্য আলোচনা ও হওয়া উচিত ছিল সবক্ষেত্রে।কিন্তু সব জায়গায় তা হচ্ছেনা। অবশ্য এর ব্যতিক্রম আছেন কিছু ইসলামী মিডিয়া ব্যক্ত্বিত্ব।কিন্তু তাদেরকে প্রমোট করা হয় না সেভাবে।

ডঃ মনজুরে ইলাহি,প্রফেসার জাহাঙ্গীর সাহেবরা মোটামোটি আমাদের সমাজ,ধারাবাহিক ইসলামী চেতনাকে সম্মান করেই আলোচনা করেন। কিন্তু বিপরীত আছেন মুফতি ইব্রাহিম সাহেব।ডক্টর মোহাম্মদ সাইফূল সাহেব। যে আলবানী মধ্যপ্রাচ্যে সমান গ্রহনযোগ্য নন। তাকে রেফারেন্স দেয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকুন যুক্তিযুক্ত তা চিন্তা করা প্রয়োজন।আলবানী (রঃ) হাদীস বাছাইর ক্ষেত্রে বিরাট কাজ করেছেন।কিন্তু তিনি একমাত্র গ্রহনযোগ্য নন। এটা করে নতুন আরেকটি মাযহাবের জন্ম দেয়া হয়েছে। সাউদি আরবের মশহুর আল্লামা ইবনে ওসামিইন (রঃ) নিজে অনেক বিষয়ে একমত ছিলেন না আলবানীর সাথে। বেশ কিছু বিষয়ে ইবনে ওসামিন বাড়াবাড়ির জবাব ও দিয়েছেন। বাংলাদেশে আলবানী (রঃ) কে লা মাযহাবী হিসাবে জানে। এখন সমস্যা হল পৃথিবীর প্রায় ৭৭% মুসলমান ইমাম আবু হানিফার ফিকহী মতামতের উপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ যার শরয়ী বক্তব্যকে অনুসরণ করে থাকে সেই দেশে একেবারে বিপরীত অবস্থান গ্রহন করা কতটুকু হেকমতের বিষয় তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। অত্যান্ত প্রাজ্ঞ আলেম অথচ মুফতি ইব্রাহিম সাহেবের কিছু প্রান্তিক বক্ত্বব্য যা ইতিমধ্যে দেশে এবং প্রবাসেও চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।এই সুযোগ গ্রহন করেছে বেদআত পন্থী দরাবারী আলেমরা।

আমরা চারটি প্রতিষ্ঠিত মাযহাবকে (মতামত) বাদ দিতে গিয়ে নতুন আরেকটি নতুন মাযহাবের জন্ম দিয়ে ফেলেছি।

তিন চ্যনেল আই ও মাই টিভি -

চ্যনেল আই বরাবরের মতই শবে বরাতের রাতে জনাব ফারুকী সাহেবকে দিয়ে জলসার আয়োজন করে।দেশে বিদেশে মাওলানা ফারুকী সাহেবকে চ্যনেল আইর মাওলানা বলে জনগনের কাছে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি গোটা অনুষ্ঠান জুড়ে যে ভাষায় আক্রমন করলেন তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের মহান জাতীয় সংসদের মাছের বাজারের আড়তদারদের ভাষা ফারুকি সাহেব রপ্ত করেছেন সঠিকভাবেই। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদেরকে জালিম বানিয়ে দিলেন। অসত্য দলীল পেশ করা,আলেমদের প্রতি অবমাননাকর শব্দ চয়ন,সর্বপরি ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মাতিয়ে রাখলেন পুরাটা সময়।

শবেবরাত পালিত হয় পবিত্র হারামেও এমন দাবী করলেন চ্যনেল আই র ঐ ইসলামী অনুষ্ঠানে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, দেশের প্রতিষ্টিত চ্যনেলগুলো কিভাবে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরীতে সক্ষম তার উজ্জল দৃষ্টান্ত হল চ্যনেল আই এবং মাই টিভির অনুষ্ঠানদ্বয়। দেশ টিভিতে এসেছিলেন আরেক দরবারী আলেম যিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর গৃহ শিক্ষক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অসত্য উচ্ছারণে পারদর্শী ঠিক তেমন তার প্রিয় আবরীর শিক্ষক মহদয় ও শবেবরাত নিয়ে বেশ সুন্দর করে আলোচনা করেছেন।

সব মিলিয়ে আমাদের রাষ্ট্র যন্ত্র যেভাবে জাতিকে বিভক্ত করে ইসলামের বারোটা বাজিয়েছেন ঠিক তেমনি তাগুতপন্থী দরবারী আলেমরা ও জাতিতে শিরক আর বেদাআতের সহীহ শিক্ষা দিচ্ছেন প্রাইভেট চ্যনেল গুলোর সুবিধা নিয়ে। চ্যনেল আই খ্যাত আলেম জনাব ফারুকী সাহেব একবার বলেছিলেন এই সরকার মাজার পন্থী,পীর পন্থী তাই আমাদেরকে এই সরকারের পক্ষে থেকে মওদুদী পন্থীদেরকে খতম করতে হবে।

আমাদের তথকথিত গণমাধ্যমগুলোতে ফারুকী সাহেবদের কদর আদর একটু বেশী মূলত এই কারনেই। কেননা তারা প্রতিষ্ঠিত তাগুতের দালালী করতে পারেন মুন্সিয়ানার সাথে। বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলন ও তার নেতৃত্বকে কষে গালি দিতে পারেন মিডিয়াতে।


বিষয়: বিবিধ

১৬১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File