শবে বরাত পালন করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৯ মে, ২০১৫, ০৯:৩৪:১১ রাত



শবে বারাআত কি?

“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরাআত এটি আরবী শব্দ। মূলত হল-براءتযার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বারাআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত (برات) মানে হল বিয়ের রাত।

আমরা বাংলাদেশি বলে শুদ্ধভাভে বরাআত উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে অমনোযোগি বা লেখার ক্ষেত্রে বরাত কথাটাই লেখে থাকি । এটা আমাদের দীর্ঘ দিনের অনুশীলন ও অভ্যাস মাত্র ।

সুতরাং আমরা বলব-শবে বারাআত( شب براءت)

শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”(ليلة النصف من شعبان) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত। কেউ কেউ “শবে বরাআত” নামে হাদিসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বিকার করার মত বোকামী সূলভ যুক্তি দিয়ে থাকেন। তাদেরকে আমি বলি-আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক বলি কুরআন হাদিসে বর্ণিত নির্দেশের কারণে। কিন্তু কুরআন হাদিসের কোথাও কি নামাযের কথা আছে? নামায শব্দটা কুরআন হাদিসের মাঝে খুঁজতে যাওয়া যেমন বোকামী তেমন শবে বারাআত শব্দটা কুরআন হাদিসে খুঁজতে যাওয়াও তেমন বোকামী। আমরা যাকে নামায বলি সেই অর্থবোধক কুরআন হাদিসের উদৃত শব্দ “সালাত”ই হল নামায। তেমনি আমরা যাকে “শবে বারাআত” বলি তথা শাবানের পনের তারিখের রাত এই অর্থবোধক শব্দ হাদিসে পাওয়া গেলে তা’ই হবে শবে বারাআত। আর এই অর্থবোধক হাদিসে বর্ণিত শব্দ হল “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”। সুতরাং তাই হল শবে বারাআত।

হাদিসে শবে বারাআত

কুরআনে শবে বারাআতের কোন উল্লেখ নাই। কুরআনে কেবল “লাইলাতুল কদর” তথা “শবে কদর” এর কথা উল্লেখ আছে। পবিত্র কুরআনের পঁচিশ নাম্বার পাড়ার সূরায়ে দুখানের ২ ও ৩ নং আয়াতে বর্ণিত মুবারক রজনী দ্বারা লাইলাতুল কদর তথা শবে কদর উদ্দেশ্য। শবে বারাআত নয়। এটাই বিশুদ্ধ বলেছেন গ্রহণযোগ্য মুফাসসিরীনে কেরাম। যার পক্ষে যুক্তিও শক্তিশালী। বিস্তারিত জানতে দেখুন-

১. আদ দুররুল মানসুর-৭/৪০১-৪০৭

২. তাফসীরে কাশশাফ-৪/২৭২

৩. তাফসীরে ইবনে কাসীর-৭/২৪৬

৪. তাফসীরে বাগাভী-৭/২২৭-২২৮

বিভিন্ন হাদিসে শবে বারাআতের বর্ণনা এসেছে। নিম্নে একটি হাদিস উদ্ধৃত করে এ ব্যাপারে কথিত আহলে হাদিসদের ইমাম শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী এর বিখ্যাত গ্রন্থ “আস সিলসিলাতুস সাহিহাহ আল মুজাল্লাদাতুল কামিলাহ” গ্রন্থে ৩ নং খন্ডে ১১৪৪ নং অধ্যায়ে ২১৮ নাম্বার পৃষ্ঠায় শবে বরাআত সম্পর্কে হাদিস এনে যে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন তার বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হল-

হাদিস-“মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের নিকট আবির্ভূত হন, তারপর সকল সৃষ্টিকে মাফ করে দেন মুশরিক ও ঝগড়াকারী ছাড়া।

আলবানী তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন। “এই হাদিসটি সহীহ” এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন # মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ # আবু সা’লাবা রাঃ # আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ # আবু মুসা আশয়ারী রাঃ # আবু হুরায়রা রাঃ # আবু বকর সিদ্দীক রাঃ # আউফ বিন মালিক রাঃ # আয়েশা রাঃ প্রমুখ সাহাবাগণ।

উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-

و جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منها

عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث ، فما نقله

الشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في ” إصلاح المساجد ” ( ص 107 ) عن أهل التعديل

و التجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح ، فليس مما ينبغي

الاعتماد عليه ، و لئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل

التسرع و عدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك . و الله تعالى هو الموفق

অর্থাৎ সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত “ইসলাহুল মাসাজিদ” গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, “শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে” সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া(ঘারতেড়া) স্বভাবের, আর তার ব্যাক্ষা বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম।

আল্লামা শায়েখ আলবানী রহঃ এর বিশ্লেষণ থেকে একথা নির্ধিদ্ধায় আমরা বলতে পারি হাদিস দ্বারা শবে বারাআত প্রমাণিত।

এ রাতে করণীয়

এ মহামান্বিত রাতে করার মত নির্দিষ্ট কোন আমল নেই। সবাই কোথাও একত্র হয়ে সম্মিলিত কোন আমলও নেই। তবে যাদের বাসা-বাড়িতে ইবাদতের কোন পরিবেশ নেই তারা মসজিদে এসে একাকি আমল করতে পারে। অন্য রাতের নফল ইবাদতের মত ইবাদত করবে। যেমন-নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার, দু’আ ইত্যাদী ।

এ রাতে বর্জনীয়

১. হালুয়া রুটির মত আনন্দ উল্লাসের আয়োজন। আল্লাহর কাছ থেকে মাফ পেতে হলে তার ইবাদত করতে হবে, খাওয়া দাওয়ার মধ্য দিয়ে ফুর্তি করার মাধ্যমে নয়।

২. আতশবাজি করা, রং ছিটানো।

৩. সম্মিলিত কোন আমলকে এই রাতে আবশ্যকীয় মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত।

শবে বরাত পালন করা জায়েজ কি?

শবে বরাত পালন বলতে আতশবাজি করা, হালুয়ারুটির আয়োজন করা, বিশেষ পদ্ধতির নামায পড়াকে জরুরী মনে করা। এ রাতে গোসল করা ফযীলতপূর্ণ মনে করা, এ রাতে মসজিদে গিয়েই ইবাদত করাটা বাধ্যতামূলক মনে করা শরীয়ত গর্হিত আক্বিদা ও কাজ।

তবে শবে বরায়াতে রাতে বেশি বেশি ইস্তিগফার করা, আল্লাহর কাছে স্বীয় গোনাহের মাফীর জন্য কান্নাকাটি করা, দুআ করা, কুরআন তিলাওয়াত করা। অনির্ধারিতভাবে নফল নামায পড়া, জিকির করা ইত্যাদী ইবাদত করা উত্তম ও ফযীলতপূর্ণ। এসবই নফল ইবাদত। করলে সাওয়াব হবে না করলে কোন গোনাহ নেই।

শবে বরাত কেন গুরুত্বপূর্ণ?

শবে বরাত ফযীলতপূর্ণ নয় বা এই রাতে গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা বেদআত এ মর্মে কোন হাদীস বিদ্যমান নেই। এমন কোন হাদীস রাসূল সাঃ থেকে নেই যে, শবে বরাতের রাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা যাবে না।

বরং রাসূল সাঃ থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত আছে শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে। যদিও কিছু কিছু হাদীসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কিরাম কালাম করেছেন। তবে যেহেতু এ মতের বিপরীত কোন হাদীসই বিদ্যমান নেই। তাই শবে বরাতকে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরও বিদআত বলাটা হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। আর জেনে এমনটি বলে থাকলে রাসূল সাঃ এর হাদীস অস্বিকারের মত মারাত্মক অপরাধে অপরাধী সে ব্যক্তি। রাসূল সাঃ এর হাদীসের প্রতি বিদ্বেষী হওয়া ছাড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ ফযীলতপূর্ণ রাতকে কেউ অস্বিকার করতে পারে না।

নিম্নে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল-

عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )

হযরত আলী বিন আবু তালীব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। {সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২, }

عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب

অনুবাদ-হযরত আয়শা রাঃ বলেন-এক রাতে রাসূল সাঃ কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রাঃ বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সাঃ তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯}

عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن

অনুবাদ-হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে]আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪}

গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের ইমাম শায়েখ আলবানী রহঃ তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন। “এই হাদিসটি সহীহ” এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন # মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ # আবু সা’লাবা রাঃ # আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ # আবু মুসা আশয়ারী রাঃ # আবু হুরায়রা রাঃ # আবু বকর সিদ্দীক রাঃ # আউফ বিন মালিক রাঃ # আয়েশা রাঃ প্রমুখ সাহাবাগণ।

উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-

و جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منها

عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث ، فما نقله

الشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في ” إصلاح المساجد ” ( ص 107 ) عن أهل التعديل

و التجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح ، فليس مما ينبغي

الاعتماد عليه ، و لئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل

التسرع و عدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك . و الله تعالى هو الموفق

অর্থাৎ সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত “ইসলাহুল মাসাজিদ” গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, “শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে” সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া(ঘারতেড়া) স্বভাবের, আর তার ব্যাক্ষা বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম।

আল্লামা শায়েখ আলবানী রহঃ এর বিশ্লেষণ থেকে একথা নির্ধিদ্ধায় আমরা বলতে পারি হাদিস দ্বারা শবে বারাআত প্রমাণিত।

শবে বরাতে নির্ধারিত আমল কি?

উপরোক্ত শবে বরাতের হাদীস দ্বারা আমরা শবে বরাতে আমল পাই-

১-ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা।

২-আড়ম্বরপূর্ণ না হলে স্বাভাবিকভাবে হলে কবর যিয়ারত করা।

৩-অনির্ধারিতভাবে নফল ইবাদত করা।

৪-পরদিন রোযা রাখা।

শবে বরাতে বর্জনীয় কাজ

১-হালুয়া রুটির আয়োজন।

২-আলোকসজ্জা।

৩-আতশবাজি।

৪-দলবদ্ধ ইবাদতকে আবশ্যক মনে করে মসজিদে বা কোথাও একত্র হওয়া। তবে এটাকে এ রাতের বিশেষ আমল মনে না করে এমনিতে একত্র হতে সমস্যা নেই।



শবে বরাতের উৎপত্তি কবে থেকে?


রাসূল সাঃ শবে বরাতের ফযীলত বলে নিজে আমল করেই এ রাতে আমলের ফযীলত জারি করে গেছেন। তাই শবে বরাতের উৎপত্তি রাসূল সাঃ থেকে শুরু হয়েছে।

শবে মেরাজ কেন ইবাদতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাত নয়?

কারণ শবে মেরাজ ইবাদতের বিশেষ ফযীলতের ব্যাপারে কোন হাদীস বিদ্যমান নেই। তাই শবে মেরাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ আমল ইসলামী শরীয়তে নেই।

রজব মাসের ১ম তারিখ ও ১ম শুক্রবার, ১০ ও ১৫ এবং ২৭ তারিখ শবে মেরাজে রোযা রাখা, সালাতুর রাগায়েব নামক বিশেষ প্রকৃতির নামায পড়া সংক্রান্ত সকল হাদীসই জাল ও বানোয়াট।

فلم يصح في شهر رجب صلاة مخصوصة تختص به و الأحاديث المروية في فضل صلاة الرغائب في أول ليلة جمعة من شهر رجب كذب و باطل لا تصح و هذه الصلاة بدعة عند جمهور العلماء و من ذكر ذلك من أعيان العلماء المتأخرين من الحفاظ أبو إسماعيل الأنصاري و أبو بكر بن السمعاني و أبو الفضل بن ناصر و أبو الفرج بن الجوزي و غيرهم إنما لم يذكرها المتقدمون لأنها أحدثت بعدهم و أول ما ظهرت بعد الأربعمائة فلذلك لم يعرفها المتقدمون و لم يتكلموا فيها و أما الصيام فلم يصح في فضل صوم رجب بخصوصه شيء عن النبي صلى الله عليه و سلم و لا عن أصحابه (لطائف المعارف، ذكر ما يتعلق برجب من أحكام-131)

অনুবাদ-মাহে রজবে বিশেষ কোন নামায প্রমাণসিদ্ধ নয়, রজবের প্রথম শুক্রবারে সালাতুর রাগায়েবের ফযীলত সম্পর্কীয় হাদীসসমূহ বাতিল, মিথ্যা ও বানোয়াট। বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরামের মতে এটি একটি নব আবিস্কৃত নামায। পরবর্তী যুগের অগাধ জ্ঞানের অধিকারী বিদগ্ধ ওলামায়ে কিরাম যারা এটি বিদআত আখ্যা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু ইসমাঈল আনসারী, আবু বকর ইবনে সামআনী, আবুল ফযল ইবনে নাসের ও আবুল ফারায বিন জাওযী রহঃ প্রমূখ।

পূর্ববর্তীরা এ নিয়ে আলোচনা করননি। কেননা তাদের [ইন্তেকালের বেশ] পরে তা আবিস্কৃত হয়েছে। চারশত হিজরীরও পরে এটির প্রকাশ ঘটে। তাই পূর্ববর্তীদের নিকট এটি পরিচয় ঘটেনি এবং তারা এ ব্যাপারে কিছু বলে যাননি।

আর রোযা! রজব মাসের রোযার বিশেষ ফযীলতের কথা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়, সাহাবীদের থেকেও নয়। (লাতায়েফুল মাআরিফ-১৩১)

আল্লামা ইমাম নববী রহঃ রজব মাসের সালাতুর রাগায়েব ও শবে বরাতের রাতে বিশেষ পদ্ধতির নামাযকে বিদআত আখ্যা দেওয়ার পর বলেন-

ولا يغتر بذكرهما فى كتاب قوت القلوب، وإحياء عليوم الدين، ولا بالحديث المذكور فيهما فإن كل ذلك باطل، (المجموع شرح المهذب-3/549

অনুবাদ-আবু তালেব মক্কী রহঃ কুতূল কুলূব এ এবং ইমাম গাজ্জালী রহঃ ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন গ্রন্থে এ নামায দু’টি এবং সাথে এ সংক্রান্ত হাদীস উল্লেখ করার কারণে ধোঁকায় পড়বেন না। কেননা এ সবগুলোই বাতিল ও ভিত্তিহীন।{আাল মাজমাউ শরহুল মুহাযযাব-৩/৫৪৯)

রজব মাস এবং শবে মেরাজের নামায-রোযা সম্পর্কে জাল বর্ণনাসূহের অসারতা আরো বিস্তারিত জানার জন্যে দেখা যেতে পারে-

তাবয়ীনুল আজব-

মাসাবাতা বিস সুন্নাহ ফী আয়্যামিস সানা্হ

আল মওযূয়াত-২/৪৬-৪৯

আল মানারুল মুনীফ-৯৫-৯৭

তাখরীজে ইহইয়া ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন-১/২৯৬

আল লাআলিল মাসনূআ-২/৫৫-৫৯

তানযীহুশ শরীয়া-২/৮৯-৯০

ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন-৩/৪২২-৪২৫

আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআ-১/৭৩-৭৫

আল আসারুল মারফূআ-৫৮-৭০

তবে রজব মাস সম্পর্কিত নিম্নের হাদীসটি দুর্বল হলেও জাল তথা বানোয়াট নয়।

عن أنس قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل رجب قال اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রজব মাস আসলে পড়তেন-আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদ্বান। {মু’জামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-৩০৯, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৪৯৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৫৩৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩৪৬}

শবে মেরাজে কোন আমল নেই কেন?

রাসূল সাঃ শবে মেরাজে বিশেষ কোন আমল করেন নি, তাই শবে মেরাজে বিশেষ আমল নেই। রাসূল সাঃ যা করেন নি, সেটাকে দ্বীন মনে করার নামই হল বিদআত। আর বিদআত পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করে।



শবে বরাতঃ সীমালঙ্ঘণ ও সীমা সংকোচনমুক্ত মানসিকতা রাখা উচিত

আল্লামা আব্দুল মালিক দা.বা.

এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবী হল ইসলামে শবে বরাতের কোন ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযু বা যয়ীফ। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোন ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোটখাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরী করে মানুষের মধ্যে বিলি করে।

বাস্তব কথা হল, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীনএবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তকতা মুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে। শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোর রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

এখানে শবে বরাতের (পনের শাবানের রাত) ফযীলত ও করণীয় বিষয়ক কিছু হাদীস যথাযথ উদ্ধৃতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণ সহ উল্লেখ করা হল।

১ম হাদীসঃ

عن مالك من يخامر , عن معاذ بن جبل, عن النبى (, قال : يطلع الله الى خلقه فى ليلة النصف من شعبان, فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ]رواه ابن حبان وغيره, ورجاله ثقات, وإسناده متصل غلى مذهب مسلم الذى هو مذهب الحمهورفى المعنعن, ولم يحزم الذهبى بأن مكحولالم يلق مالك بن يخامر كما زعم, وإنما قاله على سبيل الحسان, راجع ,سبر أعلام النبلاء [

মুআয ইবনে জাবাল বলেন, নবী করীম স. ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বারা ব্যপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকি কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে। যখন কোন বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তাঞ্চআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত ঘোষণা হয়, তখন তার অর্থ এই হয় যে, এই সময় এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় এবং ঐ সব গুণাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত থেকে বঞ্চিত হয়।

যেহেতু উপরোক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসে অর্ধ-শাবানের রাতে ব্যাপক মাগফেরাতের গোষণা এসেছে, তাই এ রাতটি অনেক পূর্ব থেকেই শবে বরাত তথা মুক্তির রজনী নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। কেননা, এ রাতে গুনাহসমূহ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং পাপের অশুভ পরিণাম থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

যদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসটিই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। অথচ হাদীসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এ বিষয়ক আরো একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

হাদীসটির সনদ বিষয়ক আলোচনা

উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার জ্ঞকিতাবুস সহীহঞ্চ এ (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮১ এ) এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদীস। এ ছাড়া ইমাম বাইহাকী (রহঃ) জ্ঞশুআবুল ঈমানঞ্চ এ (৩/৩৮২, হাদীস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানী জ্ঞআলজ্ঞমুজামুল কাবীরঞ্চ ও জ্ঞআলজ্ঞমুজামুল আওসাতঞ্চ এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদীসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে জ্ঞকিতাবুস সহীহঞ্চ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীন সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।

ইমাম মনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্‌তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯. লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১।

বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) সিলসিলাতুল আহাদসিস্‌ সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেনঃ

وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث .

এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়।ঞ্চ তারপর আলবানী (রহঃ) ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন যারা কোন ধরণের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।

ইদানিং আমাদের কতক সালাফী বা গাইরে মুকাল্লিদ; বন্ধুকে দেখা যায়, তারা নানা ধরণের লিফলেট বিলি করেন। তাতে লেখা থাকে যে, শবে বরাত (লাইলাতুল নিস্‌ফি মিন শাবান) এর কোন ফযীলতই হাদীস শরীফে প্রমাণিত নেই। ওই সব বন্ধুরা শায়খ আলবানী (রহঃ) এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। কেননা, তাদেরকে আলবানী (রহঃ) এর বড় ভক্ত মনে হয় এবং তার কিতাবাদি অনুবাদ করে প্রচার করতে দেখা যায়। আমি ওই সব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শায়খ ইবনে বাযের অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্‌কীক মতো এই রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদীসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফযীলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরণের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে? এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার উর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন? এতে তো কোন সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?

আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃ. ৭২৮ হিঃ] এর ইক্‌তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহঃ) [মৃ. ৭৯৫] এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শায়খ ইবনে বায (রহঃ) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত? যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোন বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

এই রাতের আমল

উল্লেখিত হাদীস শরীফে এ রাতের কী কী আমলের নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। নিম্নে এ বিষয়ে আরেকটি হাদীস পেশ করছি।

হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ক্ষ) রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, জ্ঞহে আয়েশাঞ্চ অথবা বলেছেন, জ্ঞও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন?ঞ্চ আমি উত্তরে বললাম, জ্ঞনা, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা।ঞ্চ নবীজী জিঞ্চেস করলেন, জ্ঞতুমি কি জান এটা কোন রাত?ঞ্চ আমি বললাম, জ্ঞআল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন।ঞ্চ রাসূলুল্লাহ (ক্ষ) তখন ইরশাদ করলেন,

هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على

عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين

ويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم

‘এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।‘ [শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮]

ইমাম বাইহাকী (রহঃ) এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন,

هذا مرسل جيد

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওয়ীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে – এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইস্‌তেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।

পরদিন রোযা রাখা

সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে ঃ

عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله (() : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر

হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জ্ঞপনের শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। এভাবে সুব্‌হে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাঞ্চআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।ঞ্চ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪]

এই বর্ণনাটির সনদ যয়ীফ। কিন্তু মহাদ্দিসীন কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

এলা বাহুল্য, পনের শাবানের দিনটি শাবান মাসেরই একটি দিন এবং তা আয়্যামে বীযের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য ফিক্‌হের একাধিক কিতাবেই এদিনে রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন লেখা হয়েছে। আবার অনেকে বিশেষভাবে এ দিনের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী (দাঃবাঃ) তার ইসলাহী খুতুবাতে বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে শবে বরাতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনের তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসুলের বিশাল ভান্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, জ্ঞশবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ।‘ সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত।’

তবে হ্যাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ (() নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, জ্ঞরমযানের দুঞ্চএকদিন পূর্বে রোযা রেখো না।ঞ্চ যাতে রমযানের পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।

একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, শাবানের এই ১৫ তারিখটি তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের জ্ঞআইয়ামে বীযঞ্চ এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এই দুটি কারণকে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা জ্ঞআইয়ামে বীযঞ্চ এর অন্তর্ভূক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে প্রতিদান লাভ করবে। তবে শুধু ১৫ মাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নাত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও আইয়ামে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যে কোন দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে তরে ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এ মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনের পৃথক কোন বৈশিষ্ট নেই।

এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত

এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরয নামাযতো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। [ইক্‌তিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯]

অবে কোন আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।

কোন কোন জায়গায় এই ওেয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা ইশার পর থেকেই ওয়াজ-নসীহত আরম্ভ হয়। আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। কোথাও তো সারা রাত খতমে-শবীনা হতে থাকে। উপরন্তু এসব কিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেওয়া হয়।

মনে রাখতে হবে, এসব কিছুই ভুল রেওযাজ। শবে বরাতের ফাযায়েল ও মাসায়েল আগেই আলোচনা করা যায়। এ রাতে মাইক ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতা-ওয়াজের আয়োজন করা ঠিক না। এতে না ইবাদতে আগ্রহী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা সম্ভব হয়, আর না মসজিদে। অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় আরামেরও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। আল্লাহ আমাদের এসব ভুল কাজকর্ম পরিহার করার তাওফীক দিন।

এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবী হল ইসলামে শবে বরাতের কোন ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযু বা যয়ীফ। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোন ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোটখাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরী করে মানুষের মধ্যে বিলি করে।

বাস্তব কথা হল, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীনএবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তকতা মুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে। শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোর রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিটি দিবসের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

কৃতজ্ঞতা :

১। মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স , মুফতি দিলওয়ার হোসেন

২। জামেয়াতুল আসাদ , মুফতি লুৎফর রহমান ফরাজী

৩। মাওলানা আব্দুল মোমেন , খতিব : শাহ আলী রহ মসজিদ

৪। জামেয়া হোসেনিয়া আজরাবাদ , মিরপুর, ঢাকা ।

বিষয়: বিবিধ

৩৯১৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

323331
২৯ মে ২০১৫ রাত ১০:১৫
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে উত্তম বিশ্লেষণের মাধ্যমে পবিত্র এই মাসটির গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য। বাংলাদেশে এখন অনেক কিছুই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে। অনেকের আবার ধর্ম সঠিকভাবে পালনের চেয়ে বিদাত, হারাম এর প্রতি অতি আগ্রহ ধর্ম থেকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছে । এগিয়ে আসা উচিত সবারই

পোস্টকে গীবত,পরনিন্দা এবং ক্যাচাল মুক্ত রাখার জন্য আবারও ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck
২৯ মে ২০১৫ রাত ১০:৩০
264701
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর ।

আমি শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেছি এবং যথাযথভাবে ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে পালন করার কথা তুলে ধরেছি ।

অনেকে শবে বরাত- শবে মেরাজ - আখেরি চাহার সোম্বা - ফাতেহা ই ইয়াজদোহম- আশুরা - ইসলামী নববর্ষ পালন করাকে অগ্রহণযোগ্য , বিদাত ও গুনাহের কাজ বলে থাকেন এবং যারা এসব পালন করে থাকে তাদের সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করে থাকেন । তাদের এমন কাজ হতে বিরত থাকা উচিত ।

যদি তারা বিরত না থাকেন, তাহলে কিছু লোক অবশ্যই প্রতিবাদ করবে - এটাই সাভাবিক ।

323334
২৯ মে ২০১৫ রাত ১০:৩৪
ছালসাবিল লিখেছেন : এই তাহক্কীক মানি কেমন করে Time Out আলবানী তো একজন ওহাবী Time Out আপনি কবে থেকে ওহাবী হলেন ভাইয়া Surprised
Smug মাইনাচ - Smug
২৯ মে ২০১৫ রাত ১০:৪৬
264703
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : আপনাকে প্লাস । অনেক অনেক শুভেচ্ছ ।
জাজাকাল্লাহ খাইর ।


ওহাবীরা যাতে বুঝতে পারে - এজন্য ওহাবীদের নেতাদের দলীল দেওয়া হয়েছে ।

হিন্দুরা যাতে বুঝতে পারে - এজন্য সহজপন্হা হলো হিন্দুদের বই থেকে দলীল দেওয়া । এই কাজ জাকির নায়েক ও আহমদ দিদাত করে থাকেন । কারণ আল্লাহ বলেছেন :
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
আপনি পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উত্তমরূপে উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে পছন্দনীয় পন্থায় বিতর্ক করুন ( সুরা নহল : ১২৫ )

আমি মুসলিম । আমি ওহাবী মতবাদে দীক্ষিত হইনি । যে বা যারা এই মতবাদে দীক্ষা নেয় বা ওহাবীদের মতো আচরণ করে তাদের ওহাবী বলা হয় । আমি এই মতবাদে দীক্ষিত হইনি আর ওহাবীদের মতো আচরণ করি না । সুতরাং আপনার ধারণা অমুলক ।
২৯ মে ২০১৫ রাত ১০:৫০
264705
ছালসাবিল লিখেছেন : আবার দেওবান্দি হুজুরের ফাতাওয়া দিয়েছেন Surprised আপনি না ব্রেলভি Smug Crying দেওবান্দের এই ফাতাওয়া মানলে অন্যগুলো মানবেন না কেনো Smug Broken Heart
ওভাইয়া কেমন যেন ২মুখ নিতী Smug Worried Crying
২৯ মে ২০১৫ রাত ১১:১৪
264712
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : আমি দেওবন্দি-আমি ব্রেলভি-আমি ওহাবী ইত্যাদি কোন কথা আমি আমার কোন লেখায় বলি নাই । আমি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেই । আপনি আমার এই লেখাটা দেখতে পারেন, এতে আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছি :


বাংলাদেশে ওহাবী মতবাদের আগমন বেশি দিনের নয় । ওহাবী যাদের বলা হয়, তাদের সংখ্যা ভীষণ কম । ইদানিং তাদের তৎপড়তা বেড়েছে । কারণ তাদের সৌদি আরব ভীষণভাবে সাহায্য সহায়তা করে থাকে ।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদ ও মাদ্রাসা দেওবন্দ আন্দোলনের লোকরা পরিচালনা করেন আর তাদের মাদ্রাসাগুলোতে বর্তমানে ছাত্র আছে ১৫ লাখ ।

বাংলাদেশের সামান্য কিছু মুসলিম ছাড়া মুসলিমদের সবাই হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে । উপরন্তু তাবলীগ জামায়াত নামক বড় ইসলাম প্রচারক দলটাও হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ইসলামের ইবাদতগুলো পরিচালনা করে থাকে ।

দেওবন্দ আন্দোলনের লোকরাও হানাফি মাযহাব অনুসরণ করেন ও তাদের পাঠ্যসুচীও সেভাবে বিন্যস্ত ।

সুতরাং আমার লেখায় তাদের রেফারেন্স থাকবে - এটাই সাভাবিক ।
২৯ মে ২০১৫ রাত ১১:১৮
264714
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : আপনি আমার এই লেখাটা দেখতে পারেন, এতে আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছি : “ আমার লেখা ও দৃষ্টিভঙ্গি “ http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/3466
323335
২৯ মে ২০১৫ রাত ১০:৪০
স্বপন২ লিখেছেন : পৃথিবীর কোথায় ও সবেবারাত পালন হয় না।
সবেকদর পালিত হয়।
২৯ মে ২০১৫ রাত ১১:০৪
264706
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : আপনার কথা সঠিক নয় ।

সারা বিশ্বে শবে বরাত পালন হয় । তবে শবে বরাত বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত । যেমন :



ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শা'বান।

আরবী ভাষাভাষীর বলে নিসফ্ শা'বান।

মালয় ভাষাভাষীর বলে নিসফু শা'বান।

তুর্কি ভাষাভাষীর বলে বিরাত কান্দিলি।

বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-নেপাল-শ্রীলংকা-মায়ানমার-এ বলা হয় শবে বরাত।
কিছু দেশে বলা হয় লাইলাতুল বরাত।
কিছু দেশে বলা হয় লাইলাতুল দোয়া।

Şeva Beratê ও Berat Kandili বলা হয় তুরস্ক ও তুর্কি ভাষার দেশগুলোতে ।


বিভিন্ন দেশে শবে বরাত পালনের ভিডিও দেওয়া হল -
মালয়েশিয়া



https://www.youtube.com/watch?v=KcBSE7CoW28




https://www.youtube.com/watch?v=VV3ITCyg_aE

ইন্দোনেশিয়া




https://www.youtube.com/watch?v=Ah7sz4AEXeI

তুরস্ক



https://www.youtube.com/watch?v=Kr58C7eXcWA





https://www.youtube.com/watch?v=sMGVtldz3Lc

বসনিয়া




https://www.youtube.com/watch?v=yjzibjFnuyA




https://www.youtube.com/watch?v=s3aBUNQJnds





https://www.youtube.com/watch?v=JjZ5jbDAkj8

সিঙ্গাপুর


https://www.youtube.com/watch?v=VKAR0TuNAjc

ভারত



https://www.youtube.com/watch?v=_gQVZayut0Q





সৌদি আরব-সহ অল্প কয়েকটা দেশ তাদের নিজস্ব মতবাদের কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করে না ।
323353
৩০ মে ২০১৫ রাত ১২:০৩
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ডাঃ জাকির নায়েক সম্পর্কে আপনার ধারণা কি? তিনি ওহাবী? নাকি হানাফী? না অন্য?
৩০ মে ২০১৫ রাত ১২:১৪
264738
সরল মন লিখেছেন : ডাঃ জাকীর ফির্কায়ে আহলে হাদীস মতাদর্শে বিশ্বাসী । কথিত আহলে হাদীসরা ওয়াহাবীর চেয়ে জগন্য।
৩০ মে ২০১৫ রাত ১২:৩০
264742
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আপনার কাছে জবাব কে চেয়েছে? @সরল মন
৩০ মে ২০১৫ রাত ১২:৩২
264743
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : ডাঃ জাকির নায়েক ২০০৫ সাল পর্যন্ত অমুসলিমদের বই হতে উদৃতি দিয়ে ওয়াজ করে অমুসলিমদের মুসলিম বানানোর মতো সোয়াবের কাজ করতো । এটা অনেক বড় সোয়াবের কাজ যা সাধারণ লোকদের পক্ষে করা সম্ভব নয় ।

কিন্তু তিনি সৌদি আরব হতে একটা পুরস্কার পাওয়ার পর ও পিস টিভি বানানোর পর পিস টিভির কিছু আলেম ও তিনি নিজে সৌদি আরবের কিছু আলেমদের কথা প্রচার করে যাচ্ছেন । এর ফলে মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ।

ডা: জাকির নায়েক ভারতের কেরালার অধিবাসী । এই এলাকায় শাফেয়ী মাযহাবের লোক বেশী । সুতরাং তিনি হানাফী মাযহাব অনুসরণকারী নন বলেই মনে হচ্ছে ।

তিনি পিচ টিভি বানানোর পর তার ওয়াজে ওহাবী মতবাদ নির্ভর কথা লক্ষ্য করা যাচ্ছেই না, পিচ টিভির হুজুরদের বেশীর ভাগই ওহাবী মতবাদ নির্ভর কথা বলে যাচ্ছেন ।

যেমন :
আল্লাহর আকার আছে , হাত-পা-চোখ-কান আছে (মতিউর রহমান মাদানী) ।
এই কথা সুরা ইখলাস ও আয়াতুল কুরসীবিরোধী । মুলত এই সুরা ও আয়াতুল কুরসী দ্বারা আল্লাহ কেমন তা আমাদেরকে ছোট কাল হতে বোঝানো হতো ।
৩০ মে ২০১৫ রাত ০১:২২
264751
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : মতিউর রহমান মাদানীর এমন কথা থাকলে অবশ্যই নিন্দাবাদ। আপনার কাছে ওনার ভিডিও অথবা তথ্য থাকলে দিলে উপকৃত হব।


০১ জুন ২০১৫ রাত ১০:১৯
265477
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : নুর আয়শা আব্দুর রহিম : ইউটিউবে মতিউর রহমান মাদানীর ওয়াজের ভিডিও আছে । আপনি সেখানে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন ।

আমি ইউটিউবে দেখেছি । পিস টিভিতে দেখেছি । আপনিও পেয়ে যাবেন ।
০২ জুন ২০১৫ রাত ১২:৩৪
265593
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আমি পাইনি! লিংক দিলে ভালো হতো..!!!!!!
323356
৩০ মে ২০১৫ রাত ১২:১৬
সরল মন লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ সময়োপযোগী লেখা পোস্ট করার জন্য । প্রিয়তে নিলাম।
৩০ মে ২০১৫ রাত ১২:২৪
264741
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর ।

এই বিষয়ে এই কয় দিন বেশ কয়েকটা লেখা দিবো ,ইনশাআল্লাহ ।

আল্লাহ চাহেত সেগুলোও পড়বেন এবং সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করবেন ।

ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগুল মুবীন ।
323405
৩০ মে ২০১৫ সকাল ১০:৩৫
হতভাগা লিখেছেন : লাইলাতুল ক্বদর (শবে ক্বদর)এর কথা পবিত্র ক্বুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন সূরা -ক্বদরে ।

লাইলাতুল বরাত (শবে বরাত)নিয়ে কোন সূরা আছে কি ?
০১ জুন ২০১৫ রাত ১০:১৭
265475
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : আমার মতে, শবে বরাত নিয়ে কুরআনে কোন আয়াত নেই ।
অনেকে সুরা দুখান হতে আয়াত উপস্হাপন করেন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File