মিউজিকঃ কোয়েশ্চেন অফ ফেইথ অর দাওয়াহ? -- ইউসুফ ইসলাম [পর্ব এক]
লিখেছেন লিখেছেন অনুরণন ১৮ জুন, ২০১৪, ০৭:৩১:২৮ সন্ধ্যা
ইউসুফ ইসলাম যুক্তরাজ্যের একজন রিভার্ট মুসলিম। ৭০র দশকের সাড়া জাগানো পপ গায়ক। ৭৮ সালে ইসলাম গ্রহনের পর প্রায় ২০ বছর আর তেমন কোন নতুন গান রেকর্ড করেননি। আত্ননিয়োগ করেছিলেন দ্বীন শেখার পেছনে, গড়ে তুলেছেন ইসলমিক রিলিফ নামের দাতব্য প্রতিষ্ঠান, যেটি বিশ্বজুড়ে এতিম এবং বঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করছে। আফ্রিকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্যও কাজ করছে কয়েক বছর ধরে।
২০০৯ সালে উনার সাথে কথা বলার এবং শোনার সুযোগ হয়েছিল বার্মিংহ্যামে মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেইনের বার্ষিক সম্মেলনে। অসম্ভব বিনয়ী একজন দা'য়ী।
সম্ভবতঃ বসনিয়ার যুদ্ধের পরে কয়েকটি কন্সার্ট করেন যুদ্ধবিদ্ধ্বস্ত সারায়েভোতে ১৯৯৭ সালে। মুলতঃ এসময়েই তিনি মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রিতে ফিরে আসার কথা ভাবা শুরু করেন। ২০০০ সালের দিকে তিনি আবার ধীরে ধীরে ফিরে এসেছেন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু এই ফিরে আসা অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়, এমনকি কয়েকজন কট্টরপন্থী আলিম উনাকে বিভ্রান্ত আখ্যা দেন। উনি উনার অবস্থান ব্যক্ষা করে একটি আর্টিক্যাল লেখেন। বেশ পুরাতন হলেও আমার কাছে এটি এখনো প্রাসঙ্গিক মনে হয়। তাই অনুবাদ করার চেষ্টা করছি কয়েক পর্বে। মুল আর্টিক্যালটি পাওয়া যাবে এখানে
মিউজিকঃ ইমানের প্রশ্ন নাকি দাওয়াহর মাধ্যম?
ইউসুফ ইসলাম (ক্যাট স্টিভেন্স)
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রাসুল।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রেকর্ডিং কোম্পানির আমার পুরোন কিছু গান ও এলবাম পুনঃ প্রকাশ ও তার বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। আমাকে ঘিরে এখন যে বিতর্কগুলি হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলির থেকে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের মুসলিম কমিউনিটির কয়েকজনের সমালোচনায় আমি বেশি কষ্ট পেয়েছি। তারা বিষয়টিকে এমন ভাবে তুলে ধরছেন যেন এটি আমার ঈমানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে তারা এ সংক্রান্ত কিছু মৌলিক সত্য বুঝে উঠতে পারেন নি। তাই আমি এ ব্যাপারে আমার প্রতিক্রিয়া জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করছি যেন তিনি এ বিষয়টি সকলের কাছে পরিষ্কার করতে সহয়তা করেন।
আমি ১৯৭৭ সালে যখন ইসলাম গ্রহন করি, তখনো গান রেকর্ডিং এবং পারফরমেন্স চালিয়ে যাচ্ছিলাম। লন্ডনের কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রধান ইমাম[১], ডঃ সাইয়েদ মুতাওয়াল্লী আল দারশ আমাকে রেকর্ডিং এবং কম্পোজিং পেশা বজায় রাখতে উৎসাহিত করেছিলেন। আমাকে কখনোই এরকম কোন চরম কথা বলা হয়নি যে আমাকে মিউজিক অথবা ইসলাম- এই দুইয়ের যে কোন একটি গ্রহন করতে হবে। তথাপিও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কিছু ছিল যেটা ইসলামী জীবন পদ্ধতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমি যেহেতু নতুন বিশ্বাসী হয়েছি, তাই আমি একান্তই নিজে এই মিউজিক ব্যাবসা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই সিদ্ধান্ত আমাকে ইসলাম, এর পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভ সম্পর্কে শেখা এবং মানার ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ দিতে এবং সর্বোপরি জ্ঞান ও প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাধনায় সাহায্য করেছিল।
এখানে একটা সাক্ষাতকারের কথা আগ্রোহদ্দীপক হতে পারে। মুসলিম ম্যাগাজিন কে ১৯৮০ সালে আমি একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। মিউজিক সম্পর্কে আমার মতামত জানতে চাইলে আমি বলেছিলাম, "আমি মিউজিক সংক্রান্ত কাজ বন্ধ করেছি একারনে যে হয়ত এটা আমাকে আমার সঠিক পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আমার এমন গোঁড়ামী নাই যে আমি আমি আর কখনোই আর মিউজিক করব না। আপনি এইটা ইনশাআল্লাহ ছাড়া বলতে পারেন না।[২] "
যারা ইসলামের প্রাথমিক বিষয়গুলো জানেন না, তাদের জন্য বলছি, যে বিষয়গুলো একজন ব্যাক্তিকে মুসলিম করে, সেগুলো শুরু হয় এক আল্লাহ এবং তাঁর নবীর উপর দৃঢ় বিশ্বাস দিয়ে। এরপর একজন মুসলিমকে দিনে পাঁচবার সালাত আদায় করতে হবে। তারপর প্রতি বছর সম্পদের নির্দিষ্ট একটা অংশ গরীব মানুষকে দিতে হবে, রমযানে রোজা রাখতে হবে আর সবশেষে তাকে অবশ্যই একবার হজ্জ করার চেষ্টা করতে হবে।
আরো একটা কথা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমি কোন মুসলিম দাঈর মাধ্যমে প্রথমে ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারিনি বরং আল্লাহর অসীম অনুগ্রহেই জেনেছি - আলহামদুলিল্লাহ, যখন আমার ভাই ১৯৭৬ সালে আমাকে কুরআন উপহার দিয়েছিল, যদিও তখন সে নিজেই মুসলিম ছিলনা। আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, কুরআনই হচ্ছে সেই সত্য যা আমি এতদিন খুঁজছিলাম।
[১] Dr Sayed Mutawalli Al Darsh (Rahmatullah ‘alayhi)
[২] The Muslim, May - June 1980
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৪৯০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সমাজকে দেওয়া যায়। অসুবিধা কি? গান
চলতে পারে। আমরা ময়দানে না থাকলেও অন্যরা ওখানে আছে। মন্দের ভাল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন