মূল্যস্ফীতির চাপে দেশ

লিখেছেন লিখেছেন নুর হুসাইন ১৬ মে, ২০১৮, ০১:০০:৫৫ দুপুর

মূল্যস্ফীতির চাপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, ধাতব পদার্থ ও কৃষিপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিবেশী দেশ চীন ও ভারতসহ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।

পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে বন্যাজনিত ফসলহানির প্রভাব পড়ে খাদ্যমূল্যে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে মূল্যস্ফীতির ওপর। এ কারণে অর্থবছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করলেও সেখানে থাকতে পারছে না সরকার।

শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকবে গরিব মানুষ। কারণ তাদের আয় বাড়বে না। কিন্তু ব্যয় বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি মোটামুটি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

বর্তমানে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এটি মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। পাশাপাশি ভারত ও চীনসহ কয়েকটি দেশের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। এসব দেশ থেকে বেশি পণ্য আমদানি করছে বাংলাদেশ। এতে আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির চাপটা বাড়ছে।

সূত্র মতে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে মূল্যস্ফীতির সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ধাতব পদার্থ ও কৃষিপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি ভারত-চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশের মূল্যস্ফীতির তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে চলতি অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির হার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ফলে সংশোধিত মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সরকার এ বছর প্রথম মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে, যা এর আগে কখনও ঘটেনি। তবে সবদিক বিবেচনা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।

মূল্যস্ফীতির একটি বড় উপকরণ হচ্ছে জ্বালানি তেল। এর মূল্য বাড়লে পণ্য উৎপাদন থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছতে সর্বক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ে। এতে শেষ পর্যন্ত পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়, যা মূল্যস্ফীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

সম্প্রতি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৭ সালে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় মূল্য ছিল ৫৩ মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে গড়ে ৬৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় পূর্বাভাস দিয়েছে।

তবে সর্বশেষ হিসাব মতে, পূর্বাভাসে দেয়া মূল্য অনেক আগেই অতিক্রম করেছে। ব্লুমবার্গের ১২ মের হিসাব মতে, প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৭০ থেকে ৭৭ মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালেও এর মূল্য কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এছাড়া বিশ্ববাজারে চলতি অর্থবছরে ধাতব পণ্যের মূল্য ৯ শতাংশ বাড়বে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়। পাশাপাশি কৃষিপণ্যের একটি বড় অংশ আমদানি করে বাংলাদেশ। বিগত ৩ বছর এ পণ্যের মূল্য বিশ্ববাজারে স্থিতিশীল ছিল। তবে চলতি অর্থবছরে কৃষিপণ্যের মূল্য ২ শতাংশ বাড়বে বলে অভাস দেয়া হয়েছে। যার প্রভাব পড়বে দেশের মূল্যস্ফীতির ওপর।

এদিকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করছে ভারত ও চীন থেকে। বর্তমানে এ দুটি দেশের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী বিরাজ করছে। ভারতে ২০১৮ সালের মূল্যস্ফীতির হারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭ সালে ভারতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে ১ দমমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। পাশাপাশি ২০১৮ সালের জন্য চীন তাদের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ এক বছর আগে ২০১৭ সালে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এই এক বছরে দশমিক ৯০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভারত ও চীনের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। কারণ তাদের মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বাংলাদেশকে বেশি দাম দিয়েই পণ্য আমদানি করতে হবে।

জানা গেছে, ভারত ও চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতিও ঊর্ধ্বমুখী আছে। ২০১৮ সালে দেশটির মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে এ হার ছিল ২ দশমিক ১ শতাংশ। ইউরোপীয় অঞ্চলগুলোয় ২০১৮ সালের জন্য মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ শতাংশ, যদিও ২০১৭ সালে এসব অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে বড় ধরনের বন্যা হয়। এতে খাদ্যশস্যের বড় ঘাটতি সৃষ্টি হয়। যে কারণে চালের মূল্য প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে চলে যায়। যদিও বর্তমানে চালের মূল্য অনেকটা কমে আসছে। তবুও বন্যার প্রভাব পড়ছে

বিষয়: বিবিধ

৫৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File