স্বাধীন বাংলাদেশে শিবিরের অবদান

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মাদ মিনহাজ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:৫২:৪১ রাত



সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরীর ভিশন এবং আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূ সা. প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন’ করার লক্ষ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রী জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে এশিয়ার বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির’

যেখানে বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি মানেই আতঙ্ক, খুনাখুনি, টেন্ডারবাজী, হল দখল, ক্যাম্পাস বন্ধ সহ নানা অরাজকতার নাম সেখানে ছাত্র শিবির বাংলাদেশের জনগনের কাছে এক সুশৃংখল, দেশ প্রেমিক ও প্রকৃত পক্ষেই ছাত্রদের সংগঠন হিসেবে সমহিমায় বিরাজমান। শত বাধার পাহাড় অত্যাচার নির্যাতন, মিডিয়া সন্ত্রাস জেল-জুলামেরে পরেও শিবির ছাত্রদের মধ্যে ইসলামের আহবান প্যেছানো, সংঘবদ্ধ জীবন যাপন, জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ইসলামী জ্ঞান প্রদান ও চরিত্রবান রূপ পড়ে তোলা, ছাত্রদের সমস্যা সমাধান ও ইসলামী সমাজ বিনিমৃানের মত পাচ দফা কর্মসূছি বাস্তবায়নের জন্য বদ্ধ পরিকর। স্বাধীন বাংলাদেশে শিবিরের অবদান কি তা লিখে শেষ করা যাবে না। তারপরেও এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

কারণ এটি একটি দ্বীনি ও আধ্যাত্বিক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন।

উন্নত মুসলিম তৈরিঃ বাংলাদেশ সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিমের দেশ। কিন্তু ব্যাপক সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও ইলাম বিমুখ শিক্ষানীতির কারনে এদেশের তরুন সমাজ ইসলাম চর্চা থেকে দুরে সরে গিয়েছে। ইসলামী ছাত্র শিবির নিয়মিত বৈঠকাদির মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে নামায সহ ইলামের মৌলিক ইবাদতের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলে । নিয়মিত কুরান ক্লাস, কুরান তালিম, ইত্যাদির মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করে। রিপোটিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে ছাত্রদরে প্রতিদিনের কুরান, হাদিস, ইসলাম সাহিত্য অধ্যয়ন, জামায়াতে নামাযের ব্যাপারে জবাবদিহিতা একজন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালরে ছাত্রদেরকে উন্নত মুসলিম রুপে গড়ে তুলছে।

কুরান, হাদিস চর্চা ও সাহাবীদের জীবন চরিত্র নিয়মিত অধ্যয়ওনর মাধ্যমে সাহাবীদের মত এক ঝাক মুক্তাকি তৈরি চেষ্টা করছে ছাত্র শিবির।

দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি ঃ ছাত্রশিবির তার প্রত্যেক জনশক্তিকে দেশ প্রেমিক রুপে গড়ে তুলে । নিয়মিত দেশের ইতিহাস মুসলিমদের ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে তাদের মধ্যে দেশ প্রেমের চেতনা জাগ্রত করে।

ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ঃ ছাত্র শিবির বরাবরই ছাত্রদরে অধিকাার আদায়ে সোচ্চার। ভ্যাট বিরুধী আন্দোলন, বেতন বৃদ্ধি সহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে শিবির সব সময় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

শিক্ষানীতির প্রশ্নে সোচ্চার শিবির ঃ এদেশের অধিকাংশ ছাত্র মুসলিম হলেও তাদের উপর নাস্তিকবাদী শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে ধর্মীয় শিক্ষা, শিবির এই বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে যাচ্ছে। নিয়মিত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ইসলামী শিক্ষা দিবস ১৫ আগাষ্ট ।

দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি ঃ ছাত্র শিবির দেশের প্রশাসন পরিচালনার জন্য এক ঝাক দক্ষ কর্মবীর তৈরি করে। ছাত্র জীবনে শিবিরে সংগঠন পরিচালনা, নেতৃত্ব দান, আয় ব্যয়ের হিসাব, অডিটি, রিপোর্টিং, জনশক্তি পরিচালনার অভিজ্ঞতা একজন ছাত্রকে কর্মজীবনে অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে সাহায্য করে।

নৈতিকতা সম্পন্ন ও দুর্নিতিমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গিকার ঃ ছাত্রশিবির তাদের জন্যশক্তিকে উন্ন নৈতিকতা ও মুত্তাকি রুপে তৈরি করে, যাদের মনে আল্লাহর ভয় থাকে তারা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে কোন প্রকার দুর্নিতির আশ্রয় নেয় না। ছাত্রশিবিরের তৈরি করা জনশক্তিরা যে দুর্ণিতি মুক্ত প্রশাসন উপপহার দিয়েছে তা সারা বিশ্বে প্রকৃত পক্ষেই দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

মাদক মুক্ত জনশক্তি এবং মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস ও ইভটিজিং মুক্ত ক্যাম্পাস তৈরি ঃ

ছাত্রশিবিরের ১০০% জনশক্তি মাদকমুক্ত। শিবির সংখ্যা গরিষ্ঠ ক্যাম্পাস গুলোও মাদকমুক্ত, যেখানে আমাদের বন্ধ সংগঠন গুলো ধর্ষনে সেঞ্চুরী করে প্রেমের প্রস্তাব ফিরিযে দেওয়ায় কালেজ ছাত্রীকে কুপানোর রেকর্ড করে সেই জায়গায় ছাত্রশিবির মা-বোনদের ইজ্জতের হেফাজতকারী।

বৃক্ষরোপন কর্মসূচিঃ দেশকে সবুজে সুবজে ভরিয়ে দেয়ার জন্য শিবির প্রতি বছর বৃক্ষরোপন অভিযান পরিচালনা করে, এ বছর মিভির সারা দেশে ১০ লাক্ষ গাছ লাগানোর লক্ষ মাত্রা হাতে নিয়েছে।

স্বাক্ষরতা অভিযান ঃ বাংলাদেশকে শতভাগ নিরক্ষর মুক্ত করতে শিবির প্রতিবছর স্বাক্ষরতা অভিযান পরিচালনা করে।

শতভাগ নামাযী জনশক্তি ঃ বাংলাদেশে ছাত্রশিবিরই এক অনন্য রাজনৈতিক চাত্র সংগঠন যাদের প্রত্যেক সাথী, সদস্য পাচ ওয়াক্ত নামায নির্দিষ্ট সময়েই আদায় করে। নামায কাযা করলে কেউ শিবিরের সাথী বা সদস্য থাকতে পারে না।

অভ্যন্তরীন সাংগঠনিক পরিবেশ ঃ শিবিরের অভ্যন্তরীন পরিবশ জান্নাতি পরিবশে। কর্মীদের রযেছে পারস্পরি আস্থা বিশ্বাস, ভাতৃত্ব ও ভালবাসা। নির্বাচন পদ্ধতি , ভারসাম্যপূর্ণ সংবিধান, গঠনমূলক সমালোচনা, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চেতনা, চেইন ও লিডারশিপ, পরামর্শ পদ্ধতি, রাজনৈতিক লেজুর বৃত্তিতা মুক্ত। তাওবা করা, সর্বোপরি আত্মসমালোচনা করা প্রতিটি ছাত্র প্রতিদিনই নিজেই নিজের সমালোচনা করে।

সামাজিক কর্মসূচী ঃ শিবির মেধাবী ছাত্রদরে জন্য বৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, শীত বস্ত্র বিতরণ, প্রাকৃতিক দূর্যোগে ত্রান সহায়তা সহ রক্তদান কর্মসূচীসহ নানান ধরনের সামাজিক কার্যক্রম আন্তরিকতার সাথে পালন করে থাকে।

সাহিত্য প্রকাশনা ঃ শিবির বাংলাদেশের একমাত্র ছাত্র সংগঠন যার নিয়মিত দাওয়াতি কাগজপত্র পরিচিতি ইত্যাদির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে পত্রিকা প্রকাশ করে।

দেশীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে সরব উপস্থিতি ঃ ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, গনতন্ত্র পুনুরুদ্ধার আন্দোলন, কেয়ারটেকার সরকারের আন্দোলন, ৯৬ থেকে ২০০১ আওয়ামী দু:শাসন বিরোধী আন্দোলন সহ প্রতিটি আন্দোলনে শিবির ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।

আন্তর্জাতিক মুসলিম স্বার্থে সরব ঃ শিবির সকল আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সোচ্চার ভূমিকা রেখে আসছে। আফগানিস্তানে রুশ সা¤্রাজ্যবাদের আগ্রাসন, আমেরিকা কর্তৃক War Aginst terrorism এর নামে মুসলিম দুনিয়ায় আঘাত, ফিলিস্তিন গুজরাট, চেচনিয়া, বসনিয়া, মিন্দানাও, আরাকান প্রভৃতি এলাকায় মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে মিবির বরাবরই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে।

ইতিহাস চর্চাঃ ছাত্রশিবির বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস সহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আলোচনা, শহীদদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠান ইত্যাদি পালন করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সচেতন করে তুলছে এবং তাদের কাছে সঠিক ইতিহাস পৌছে দিচ্ছে।

সাংস্কৃতিক আন্দোলন ঃ শিবিরের রয়েছে ব্যাপক সাংস্কৃতিক প্রয়াস, সারা দেশে শিবির কর্তৃক সংগঠিত সাহিত্য ও সংস্কৃতিক কার্যক্রম রযেছে । শিবির হচ্ছে অপসংস্কৃতির কবলে নিমজ্জমান বাংলাদেশের মানুষের ইমান ও সংস্কৃতি সংরক্ষনের একমাত্র সংগঠন।

ইসলামি গান, কবিতা, নাটক ইত্যাদির ক্যাসেট, ভিসিডি, ইত্যাদি প্রকাশ করে শিবির জনগনের মাঝে ইসলামি মূল্যবোধ সৃষ্টি করছে।

মেধা, মনন ও শারিরিক যোগ্যতার সমন্বয় ঃ অবসর সময় বাজে আড্ডা না দিয়ে সুস্থ মন-মানসিকতা ও সবল জাতি গঠনের জন্য ছাত্র শিবির ছাত্রদরে মাঝে নিয়মিত ক্রিড়া সামগ্রী বিতরণ, ক্রিড়া প্রতিযোগীতার আয়োজন করে থাকে। তাছাড়া ছাত্র সমাজের মেধা বিকাশ ও চ্যালিংঞ্জিং বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যোগ্য করে তুলতে নিয়মিত সাধারন জ্ঞান, কুইজ, বিতর্ক, সীরাত পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত, কুরান-হাদিস মুখস্থ করণ ইত্যাদি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষনার অনুপ্রেরণাঃ ছাত্র শিবির নিয়মিত বিজ্ঞান পত্রিকা, ইংরেজি গবেষনা পত্রিকা ইত্যাদি ছাপানোর মাধ্যমে তরুন গবেষকদের পৃষ্টপোষকতা করে আসছে।

আলেম ওলামা, ও ইসলামিক চিন্তাবিদ তৈরি ঃ তরুন আলোচ বক্তা ও ইসলামিক চিন্তাবিদদের পৃষ্টপোষকতা করার মাধ্যমে শিবির দেশের জন্র আরেম ও ওলামা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।

উদ্দোক্তা তৈরি ঃ ছাত্রশিবির প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদ মীর কাশেম আলী রহ. বাংলাদেশের অন্যতম একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। তার হাতে গড়া অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। শিবির ছাত্রদের চাকুরির পাশাপাশি নিজেরাই উদ্যোক্ত হতে উৎসাহিত করে।

রাসূল ও ইসলামের অপমানে প্রতিবাদ মুখর ঃ বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলামানের দেশ হলেও নাস্তিক্যবাদি ও ব্রাক্ষ্্রন্য বাদী অপশক্তি বিভিন্ন সময় ইলাম ও রাসূল সা. শানে বেয়াদবী করার সাহস দেখিয়েছে। ইসলামী ছাত্রমিবির এসবের প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষনাৎ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।

শাহাদাতের নাজরানা ঃ ছাত্রশিবির বাংলার সবুজ ভূ-খন্ডে খাব্বাব, খোবাইব, হামজার উত্তরসূরী, দেশের ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে নিজের বুকের তাজা খুন ঢেলে দিয়ে শাহাদাত বরন করেছেন অসংখ্য ভাই। তবুও কবির ভাষায় বলতে চাই

নহে সমাপ্ত কর্ম মোদের

অবসর কোথা বিশ্রামের

উজ্জল হয়ে ফোটেনি আজও

সুবিমল জ্যোতি তাওহিদের


আল্লাহ ছাত্র শিবিরের এই সকল ত্যাগ ও কর্মকান্ড কবুল করুন। এবং বাংলাদেশকে একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ ইসলামিক আদর্শে পরিচালিত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১২১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File