দুনিয়া ও আখিরাত বিস্তৃতি ও গুরুত্ব লিখেছেন আবু আয়শা ২৯ নভেম্বর, ২০১৩,

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ সাইফুল ইসলাম ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৪:১৬:৫৮ বিকাল

দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতের গুরুত্ব ও বিস্তৃতি কত বেশি তা বর্ননা করার উপায় নাই। কারন পৃথিবী একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কারও মায়ের পেটেই শেষ, কারও জন্য মিনিট, ঘন্টা, দিন বা বেশি হলে কয়েক বছর। আর আখিরাত অনন্ত। সেখানে সুর্যোদয় সুর্যাস্তের তাড়া নাই। সময় সেখানে মূল্যহীন অফুরন্ত। কিভাবে স্থায়ী অসীমের সাথে ক্ষনস্থায়ী সসীমের তুলনা চলে! মহান আল্লাহ বলেন,

مَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُّسَمًّى

নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। [৪৬-৩]

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا

আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। [৩-১৪৫]

وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ [٨٧:١٧]

অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। [৮৭-১৭]

পৃথিবীর গুরুত্ব কেবল পরীক্ষার স্থান হিসেবে, অন্য কিছুতে নয়। আল্লাহর কাছে পৃথিবী মশার পাখার ন্যায় গুরুত্ব রাখে না। এটার গুরুত্ব এমন ক্রীড়ার মত যাতে লাভক্ষতির কোন হিসাব নাই কেবল উপভোগের উপকরণ ব্যতিত।

وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ ۖ وَلَلدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ [٦:٣٢]

পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না ? [৬-৩২]

وَمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ ۚ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ [٢٩:٦٤]

এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক বৈ তো কিছুই নয়। পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত।[২৯-৬৪]

يَا قَوْمِ إِنَّمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ [٤٠:٣٩]

হে আমার কওম, পার্থিব এ জীবন তো কেবল উপভোগের বস্তু, আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের গৃহ।[৪০-৩৯]

إِنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ ۚ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا يُؤْتِكُمْ أُجُورَكُمْ وَلَا يَسْأَلْكُمْ أَمْوَالَكُمْ [٤٧:٣٦]

পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও এবং সংযম অবলম্বন কর, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিদান দেবেন এবং তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ চাইবেন না। [৪৭-৩৬]

অথচ আমরা দুনিয়ার জীবনকে নিয়ে এত ব্যস্ত যে ঠিক কতটুকু হলে এখানে প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায় তার পরিমাপ নিয়েই রাত দিন কেটে যায়। যারা প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠা লাভের উদ্দেশ্যে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেয় তাদের জন্য নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয় খুব সুন্দর উপমা।

إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّىٰ إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ [١٠:٢٤]

পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমনি, যেমনি আমি আসমান থেকে পানি বর্ষন করলাম, পরে তা মিলিত সংমিশ্রিত হয়ে তা থেকে যমীনের শ্যামল উদ্ভিদ বেরিয়ে এল যা মানুষ ও জীব-জন্তুরা খেয়ে থাকে। এমনকি যমীন যখন সৌন্দর্য সুষমায় ভরে উঠলো আর যমীনের অধিকর্তারা ভাবতে লাগল, এগুলো আমাদের হাতে আসবে, হঠাৎ করে তার উপর আমার নির্দেশ এল রাত্রে কিংবা দিনে, তখন সেগুলোকে কেটে স্তুপাকার করে দিল যেন কাল ও এখানে কোন আবাদ ছিল না। এমনিভাবে আমি খোলাখুলি বর্ণনা করে থাকি নিদর্শণসমূহ সে সমস্ত লোকদের জন্য যারা লক্ষ্য করে। [১০-২৪]

وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا [١٨:٤٥]

তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।[১৮-৪৫]

اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا ۖ وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ ۚ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ [٥٧:٢٠]

তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়। [৫৭-২০]

মুস্তাওরেদ ইবনে শাদ্দাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলূ্ল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম! আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত কেবল এতটুকু-ই যেমন, তোমাদের কেউ নিজেদের আঙ্গুল সাগরে চুবিয়ে দিল । এবার সে দেখুক, এ আঙ্গুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরে আসে । [মুসলিম]

হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল (সাঃ) একটি কানহীন মৃত ছাগলছানার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেটা রাস্তায় মৃত অবস্হায় পড়া ছিলো । তিনি তার সাথীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে এ ছাগল ছানাটি কেবল এক দেরহামের বিনিময়ে ক্রয় করা পছন্দ করবে? তারা উত্তরে বলল, আমরা তো এটা কোন মূল্যের বিনিময়েই কিনতে রাজী নই । এবার হুযুর (সাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের নিকট এ ছাগল ছানাটি যত তূচ্ছ ও মূল্যহীন, আল্লাহতায়ালার নিকট দুনিয়াটা এর চেয়েও অধিক তূচ্ছ ও মূল্যহীন । [মুসলিম]

হযরত সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলূ্ল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহতায়ালার কাছে যদি দুনিয়ার মূল্য একটি মশার ডানার সমানও হতো, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে এখান থেকে এক চুমুক পানিও পান করতে দিতেন না । [মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযি]

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, একদিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খেজুর পাতার বিছানা শুয়ে থাকতে দেখি। খেজুর পাতার বিছানার উপর আর কিছুই বিছানো ছিল না, তার মাথার নিচে একটি চামড়ার বালিশ ছিল। পায়ের দিক দিয়ে একটি উন্মুক্ত তলোয়ার আর মাথার পার্শ্বে খাবারের একটি পোটলা। আমি তার মুবারক দেহে বিছানার দাগ দেখে কাঁদতে আরম্ভ করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করে বললেন, তুমি কি কারণে কাঁদছ? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! রোম ও পারস্যের রাজা-বাদশাহরা দুনিয়ার কত শান শওকত নিয়ে থাকে, আর আপনি আল্লাহর রাসূল; উভয় জাহানের বাদশাহ হয়ে একটি খেজুরের পাতার বিছানায় শুয়ে আছেন। আমার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের জন্য দুনিয়া, আমাদের জন্য আখিরাত হওয়াতে তুমি কি সন্তুষ্ট নও [বুখারি ৪৯১৩]

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দুনিয়ার সবকিছু তুলে ধরা হল এবং তাকে দুনিয়াদারি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হল। কিন্তু তিনি দুনিয়াকে গ্রহণ না করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। দু‍’হাত দিয়ে দুনিয়াকে না করেন এবং দুনিয়ার প্রস্তাবকে প্রতিহত করে দুনিয়াকে পিছনে ফেলে দেন। তারপর তার সাহাবীদের কাছে দুনিয়াকে তুলে ধরা হল এবং তাদের নিকটও দুনিয়া পেশ করা হল। তাদের কেউ কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পথ অবলম্বন করল এবং দুনিয়াকে প্রত্যাখ্যান করল; তবে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আবার তাদের মধ্যে কতক আছে যাদের নিকট দুনিয়াকে পেশ করা হলে তারা বলে, হে দুনিয়া! তুমি বল, তোমার মধ্যে কি কি রয়েছে? তখন বলা হল, হালাল, হারাম, মাকরুহ ও সংশয়যুক্ত বিষয়ের সমন্বয়েই দুনিয়া। তখন তারা বলল, দুনিয়া থেকে যা হালাল তা আমাদের দাও, এছাড়া অন্য গুলোতে আমাদের কোন আগ্রহ নেই। তারা দুনিয়ার হালাল বস্তুকে অবলম্বন করল আর হারাম, মাকরূহ ইত্যাদি প্রত্যাখ্যান করল। তারপর তাদের পরবর্তীদের জন্য দুনিয়াকে পেশ করা হলে, তারা বলল, দুনিয়ার হালাল বস্তুসমূহকে আমাদের জন্য রেখে যাও। তাদের জন্য হালাল বস্তুসমূহ তালাশ করে পাওয়া গেল না। তখন তারা মকরুহ ও সংশয়যুক্ত বস্তুসমূহ তালাশ করলে, দুনিয়া তাদের জানিয়ে দিল, তা তো তোমাদের পূর্বের লোকেরা গ্রহণ করে ফেলছে। তখন তারা বলল, তাহলে তুমি আমাদেরকে তোমার হারাম বস্তুসমূহ দাও, তখন তাদের হারাম বস্তুসমূহ দেয়া হলে তারা তা গ্রহণ করল। তারপর তাদের পরবর্তীরা দুনিয়া তালাশ করলে তাদের দুনিয়া জানিয়ে দেয় যে, দুনিয়া অত্যাচারীদের কবজায় চলে গেছে। তারা দুনিয়া বিষয়ে তোমাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করছে। তখন তারা দুনিয়া হাসিলের জন্য অতি উৎসাহী হয়ে বিভিন্ন কলা, কৌশল ও তাল-বাহানা অবলম্বন করে। তখন অবস্থা এত নাজুক হবে যে, কোনো অপরাধী হারাম বস্তুর দিক হাত বাড়ালে দেখতে পাবে, তার চেয়ে আরও অধিক খারাপ ও শক্তিশালী অপরাধী তার প্রতি তার পূর্বেই হাত বাড়িয়ে আছে। অথচ একটি কথা মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে আমরা সবাই মেহমান, আমাদের হাতে যেসব ধন-সম্পদ আছে, তা সবই আমাদের নিকট আমানত। যেমনটি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “দুনিয়াতে সবাই মেহমান, আর তার ধন-সম্পদ হল আমানত, মেহমান অবশ্যই বিদায় নেবে, আর আমানতকে প্রকৃত মালিকের নিকট আদায় করা হবে”।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীরা দুনিয়ার প্রতি কখনোই লোভী ছিলেন না। তারা ছিলেন রাসূল সা. এর আদর্শে অনুপ্রাণিত ও তার শিক্ষা-দীক্ষার অগ্রপথিক। তাই তারাও ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত দুনিয়া বিমুখ এবং আখিরাত অভিমুখী। সাহাবীরা কখনো ভোগ-বিলাসের জীবন যাপন করেননি। তারাও সাদা সিদা জীবন-যাপন করতেন। তারা ছিলেন কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির আদর্শ। সাহাবীগণ সবসময় আখিরাতকে দুনিয়ার জীবনের উপর প্রাধান্য দিতেন।

খলিফাতুল মুসলিমীন ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু অনেক ভালো ভালো ও সু-স্বাদু খাওয়ার খাওয়া এবং পানীয় পান করা হতে বিরত থাকতেন এবং অভিজাত ও দামি খাওয়া ও পানীয় হতে নিজেকে দূরে রাখতেন। আর তিনি বলতেন, আমি আশংকা করি আমি যেন তাদের মত না হই, যাদের বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে বলেন, আর যেদিন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সামনে পেশ করা হবে (তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমরা তোমাদের দুনিয়ার জীবনে তোমাদের সুখ সামগ্রীগুলো নিঃশেষ করেছ এবং সেগুলো ভোগ করেছ। তোমরা যেহেতু অন্যায়ভাবে জমিনে অহংকার করতে এবং তোমরা যেহেতু নাফরমানী করতে, সেহেতু তার প্রতিফলস্বরূপ আজ তোমাদেরকে অপমানজনক আযাব প্রদান করা হবে’। [সূরা আহকাফ, আয়াত: ২০] আবু মিজলায বলেন, কতক সম্প্রদায় এমন আছে, যারা দুনিয়ার অনেক কল্যাণ যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তা তারা হারাবে, তখন তাদের বলা হবে, ‘তোমরা তোমাদের দুনিয়ার জীবনে তোমাদের সুখ সামগ্রীগুলো নিঃশেষ করেছ এবং সেগুলো ভোগ করেছ। [সূরা আহকাফ, আয়াত: ২০]

আল্লামা ইবনে জারির রহ. বলেন, আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন ইবন হুমাইদ, আর তিনি বলেন, আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন, ইয়াহিয়া ইবন ওয়াজিহ, তিনি বলেন, আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন, আবু হামযা আর তিনি আতা হতে এবং আতা আরফাযা ইবন আস্-সাকাফী হতে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, আমরা আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে সূরা আলা- سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى -র তিলাওয়াত শুনতে চাইলে, তিনি আমাদের সূরাটির তিলাওয়াত শোনান। তারপর তিলাওয়াত করতে করতে যখন আয়াত "বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও, অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী” পর্যন্ত পৌঁছল, তখন তিনি তিলাওয়াত বন্ধ করে দেন এবং সাহাবীদের দিকে অগ্রসর হয়ে বলেন, আমরা কি আখিরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দেইনা? তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে সাহাবীরা চুপ করে বসে থাকেন। তারপর তিনি আবারো বললেন, আমরা কি দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি? কারণ, আমরা দুনিয়ার সৌন্দর্য, নারী, বাড়ী, গাড়ী ও ভালো ভালো খাদ্য-পানীয় অবলোকন করি আর আখিরাত থেকে আমরা অনেক দূরে থাকি। তাই আমরা নগদ অর্থাৎ দুনিয়াকে গ্রহণ করি, বাকী অর্থাৎ আখিরাতের প্রতি আমাদের কোন আগ্রহ নাই। কথাগুলো আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বিনয় অবলম্বন ও নিজেকে ছোট করে স্বীয় মর্তবা থেকে নিচে নেমে এসে বলেন, অন্যথায় তার মত এমন একজন ছাহাবী দুনিয়াকে প্রাধান্য দিবেন, তা কখনো চিন্তাই করা যায় না। অথবা তিনি কথাগুলো দ্বারা মানবজাতির অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে জানিয়ে দেন। আল্লাহই ভালো জানেন। [তাফসির ইবনে কাসির]

আখনফ ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারপর আমরা মদিনায় ফিরে এলাম এবং কুরাইশের লোকদের একটি মজলিশে উপস্থিত হলাম। তখন মোটা কাপড় পরিহিত, সুঠাম দেহের অধিকারী ও বিবর্ণ চেহারার একলোক এসে তাদের মধ্যে উপস্থিত হল। তারপর সে তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বলল, তোমরা যারা ধন-সম্পদ একত্র করে- যাকাত আদায় করে না তাদের সু-সংবাদ দাও আগুনের তখতির; যাকে জাহান্নামের আগুনের উপর গরম করা হবে। অত:পর তা তাদের স্তনের বোটার উপর রাখা হলে তা তাদের দুই কাঁধের পার্শ্ব দিয়ে নির্গত হবে। আর তার দুই কাঁধের উপর রাখা হলে তা তার দুই স্তনের বোটা দিয়ে বের হয়ে আসবে। তার কথা শোনে সমবেত লোকেরা সবাই মাথা নিচু করে রাখল কেউ তার কথার কোন প্রকার জবাব দিল না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর লোকটি চলে গেলে আমি তার পিছু নিলাম এবং দেখতে পেলাম লোকটি একটি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসল। আমি তাকে বললাম, তুমি তাদের যা বললে তারা তা অপছন্দই করল। তিনি বললেন, ঐ সব লোকেরা কিছুই বুঝে না। আমার বন্ধু আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলে আমি তার ডাকে সাড়া দিলে তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি কাউকে দেখতে পাচ্ছ? আমি তাকিয়ে দেখলাম সূর্য ছাড়া আর কিছুই আমি দেখতে পেলাম না। আমি ধারণা করছিলাম তিনি হয়তো আমাকে কোথাও কোন কাজে পাঠাবেন। আমার নিকট যদি সূর্যের সমপরিমাণ স্বর্ণ থাকত, আর আমি তা তিনটি দিনার ছাড়া সবই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর রাহে ব্যয় করাতে তেমন কোন আনন্দ অনুভব করি না। অর্থাৎ তিনটি দিনারও একত্র করা বা জমা রাখা তার নিকট অ-পছন্দনীয় ছিল। তারা আসলে কিছুই বুঝে না এ কারণে তারা দুনিয়ার ধন-সম্পদ একত্র করতে ব্যস্ত। আমি তাকে বললাম, তোমার ও তোমার কুরাইশ ভাইদের কি হল, তাদের তুমি একত্র করছ না এবং তাদের থেকে তুমি আক্রান্ত হচ্ছ না। সে বলল, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর শপথ করে বলছি, আমি আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকট দুনিয়া রবিষয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন করব না এবং দ্বীনের বিষয়ে কোন কিছু জানতে চাইব না।

ওয়াবরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করল, আমি হজের ইহরাম বেঁধেছি বায়তুল্লাহর তওয়াফ করব কি? তিনি বললেন, তাতে তোমাকে কে বাধা দেয়? তিনি বললেন, আমি অমুকের ছেলেকে দেখেছি, সে তা অপছন্দ করে আর তুমি আমার নিকট তার চেয়ে অধিক উত্তম, তাকে আমি দুনিয়ার ফিতনায় নিপতিত হতে দেখছি। তিনি বললেন, আমাদের বা তোমাদের মধ্যে কে আছে? যাকে দুনিয়ার ফেতনায় আক্রমণ করেনি। [মুসলিম]

সাহাবীদের যুগেই মানুষকে দুনিয়ার মহব্বত আক্রান্ত করে ফেলেছে। তাহলে বর্তমান যুগে আমাদের অবস্থাতো আরও অনেক নাজুক। বর্তমানে খুব কম লোকই পাওয়া যাবে যাদের দুনিয়ার মহব্বত আক্রমণ করেনি। মানুষ দুনিয়ার উপার্জনের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। কিন্তু আখিরাত লাভের জন্য সামান্য সময়ও ব্যয় করতে রাজি হয় না।

আমর ইবন কাইস রহ. হতে বর্ণিত, এক লোক তার নিকট মুয়ায বিন যাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল, তখন সে বলল, হে মৃত্যু তোমাকে ধন্যবাদ! তুমি একজন দূরের মেহমান। তুমি আমার বন্ধু আমার অভাবের সময় তুমি এসেছ। হে মৃত্যু! আমি তোমাকে ভয় করতাম, কিন্তু আজ আমি তোমার হিতাকাংখি। হে মৃত্যু! তুমি জান আমার দুনিয়াকে মহব্বত ও দুনিয়াতে দীর্ঘদিন থাকাকে মহব্বত করা দুনিয়ার সৌন্দর্য, নদ-নদী ও গাছ-পালা ইত্যাদি অবলোকন করার জন্য নয়। আমি দুনিয়াতে থাকতে চাই তৃষ্ণার্তদের পিপাসা নিবারণ করতে, দু:সময়ের বন্ধু হতে ও আলেমগণের জিকিরের অনুষ্ঠানে ভিড় জমাতে।

এত কিছু জানার পরও কেন আমরা সঠিক লক্ষে স্থির হতে পারি না? কারন প্রাচুর্যের লালসা আমাদের গাফেল করে ফেলেছে, কবরে পৌছা পর্যন্ত তা খেয়াল করার সময় নাই! নেশা গ্রস্থদের ন্যায় আমরা উদ্ভ্রান্ত পথিক আখিরাতকে ভুলে বসে আছি। মহান আল্লাহ আমাদের অবস্থা বর্ননা করেন,

(২) حَتَّىٰ زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ (১) أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ

প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে, এমনকি, তোমরা কবরস্থানে পৌছে যাও। [১০২;১-২]

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ [٣:١٤]

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়। [৩-১৪]

আল্লাহর রাসুল (স) ও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করেছেন,

আবদুল্লাহ্‌ (রহঃ)…… উক্‌বা ইব্‌ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃ) একদিন বের হলেন এবং উহুদে পৌঁছে মৃতের জন্য যেরূপ (জানাযার) সালাত (নামায) আদায় করা হয় উহুদের শহীদানের জন্য অনুরূপ সালাত (নামায) আদায় করলেন। এরপর ফিরে এসে মিম্বারে তাশরীফ রেখে বললেন : আমি হবো তোমাদের জন্য অগ্রে প্রেরিত এবং আমি তোমাদের জন্য সাক্ষী। আল্লাহর কসম! এ মুহূর্তে আমি অবশ্যই আমার হাউয (হাউয-ই-কাউসার) দেখছি। আর অবশ্যই আমাকে পৃথিবীর ভান্ডারসমূহের চাবিগুচ্ছ প্রদান করা হয়েছে। অথবা (রাবী বলেছেন) পৃথিবীর চাবিগুচ্ছ আর আল্লাহর কসম! তোমরা আমার পরে শিরক করবে এ আশংকা আমি করি না। তবে তোমাদের ব্যপারে আমার আশংকা যে, তেমরা পার্থিব সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে।

অন্য এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (স) বলেন, তোমরা জমি-জায়গা,বাড়ি-বাগান ও শিল্প-ব্যবসায়ে বিভোর হয়ে পড়ো না,কেননা তাহলে তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।[তিরমিজী ২৩৩৫,আহমাদ ৬৪৬৬,আবু দাউদ ৫২৩৫]

কিছু মানুষতো এমন আছে যারা সমস্ত লাভ লোকসানের হিসাব দুনিয়াতেই কষে নেয়। আখিরাত তাদের কাছে দুরের ব্যাপার। আখিরাতে প্রাপ্তির বিষয়টাই তারা ভুলে বসে আছে। তাই কি হালাল কি হারাম বাছ বিচারের ধৈর্য তাদের হয় না। আল্লাহ তায়লা তাদের কিছু দিয়ে থাকেন তবে আখিরাতে তাদের কোন অংশ নাই।

مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ [١١:١٥]

যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, হয় আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। [১১-১৫]

إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُونَ [١٠:٧]

অবশ্যই যেসব লোক আমার সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করেছে এবং যারা আমার নির্দশনসমূহ সম্পর্কে বেখবর। [১০-৭]

وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الْآخِرَةِ نُؤْتِهِ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِي الشَّاكِرِينَ [٣:١٤٥]

বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো [৩-১৪৫]

الَّذِينَ يَسْتَحِبُّونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْآخِرَةِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا ۚ أُولَٰئِكَ فِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ [١٤:٣]

যারা পরকালের চাইতে পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে; আল্লাহর পথে বাধা দান করে এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করে, তারা পথ ভুলে দূরে পড়ে আছে। [১৪-৩]

কিন্তু মুমিনগন যারা আখিরাতে প্রাপ্তির দিকে চেয়ে আছে তারা ওদের পার্থিব লাভের দিকে নযর দেয় না। তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত সুখের জান্নাত। আর পাপিষ্ঠদের এই প্রাপ্তিতে অবাক হওয়ার কিছু নাই, ওগুলো তো স্রেফ পরীক্ষার মাধ্যম। মালের হিসাব তাদের পেরেশান করে রাখে দিন রাত।

لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ [١٥:٨٨]

আপনি চক্ষু তুলে ঐ বস্তুর প্রতি দেখবেন না, যা আমি তাদের মধ্যে কয়েক প্রকার লোককে ভোগ করার জন্যে দিয়েছি, তাদের জন্যে চিন্তিত হবেন না আর ঈমানদারদের জন্যে স্বীয় বাহু নত করুন। [১৫-৮৮]

فَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ [٩:٥٥]

সুতরাং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আপনাকে বিস্মিত না করে। আল্লাহর ইচ্ছা হল এগুলো দ্বারা দুনিয়ার জীবনে তাদের আযাবে নিপতিত রাখা এবং প্রাণবিয়োগ হওয়া কুফরী অবস্থায়। [৯-৫৫]

زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُونَ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا ۘ وَالَّذِينَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ [٢:٢١٢]

পার্থিব জীবনের উপর কাফেরদিগকে উম্মত্ত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুযী দান করেন।[২-২১২]

সাহাবাগন (রা) যারা আমাদের রোল মডেল তাদের কাছে দুনিয়ার মর্যাদা কেমন ছিল? ইবনে রজব আল হানবলী বলেন, “তাদের (সাহাবাদের) অন্তরে দুনিয়ার উপস্থিতি ছিলো শূণ্য এবং তাতে আখিরাত ছিলো পরিপূর্ণ।” [দি জার্নি টু আল্লাহ - ইবনে রজব আল হানবলী, পৃ ৪৬-৪৭]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দুনিয়া মুমিনদের জন্য জেলখানা আর কাফেরদের জন্য জান্নাত” [মুসলিম]

একজন মুমিন ইচ্ছা করলে দুনিয়াতে যা ইচ্ছা তা করতে পারে না। তাকে একটি নিয়ম কানুন এবং বিধি-বিধান মেনে চলতে হয়। পক্ষান্তরে একজন কাফেরকে কোন বিধি-বিধান কিংবা নিয়ম কানুনের পাবন্দি করতে হয় না, সে যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এ কারণেই হাদিসে দুনিয়াকে মুমিনদের জন্য জেলখানা বলা আর কাফেরদের জন্য জান্নাত বলা হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

১০৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File