ডাঃ মরিস বুকাইলি যেভাবে মুসলিম হলেন?

লিখেছেন লিখেছেন awlad ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:২৮:৪৬ সকাল

ডাঃ মরিস বুকাইলি যেভাবে মুসলিম হলেন?

ফ্রাঁসো মিতেরাঁ ১৯৮১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেণ্ট ছিলেন। তিনি আশির দশকের শেষের দিকে ফিরাউনের মমিকে নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য মিসরের কাছে অনুরোধ জানালেন। মিসরের সরকার তাতে রাজি হলে কায়রো থেকে ফিরাউনের লাশ প্লেনে করে প্যারিসে নিয়ে আসা হল।

ফিরাউনের লাশকে ফ্রান্সের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্রের একটা বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সার্জনরা রয়েছে আর তারা ফিরাউনের মমির ময়নাতদন্ত করে সেটা স্টাডি করবে ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন করবে।

মমি গবেষণার প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর ড. মরিস বুকাইলি। থেরাপিস্ট যারা ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন অর্থাৎ ক্ষত অংশগুলো ঠিক করতে চাচ্ছিল, আর ড.মরিস বুকাইলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন যে, কীভাবে ফেরাউন মারা গিয়েছিল! আর কয়েক হাজার বছর ধরে কীভাবে লাশটা অক্ষত রইল। পরিশেষে তিনি ও তাঁর সহযোগিরা সারারাত ধরে লাশ গবেষণা ও পরীক্ষায় আত্মনিয়োগ

করলেন। রাতের শেষের দিকে পরীক্ষাগারের রিপোর্ট আসলো। যাতে বলা হয়েছে তার শরীরে লবণের অংশ আছে আর ইহাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে, সে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল আর মৃত্যু বরণের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র (লোহিত সাগর) থেকে তোলা হয়েছিল তারপর লাশ দ্রুত মমি করা হয়েছিল। এখানে ফিরাউনের মমিটি প্রফেসর মরিসকে অবাক করে দিল, যে কিভাবে এই মমি অন্য মমিদের তুলনায় সুরক্ষিত অবস্থায় থাকল, যা এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে। কারণ ভিজা পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে আর প্রতিটি আদ্র বা ভেজা বস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করে দিয়ে থাকে।

ড.মরিস ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করলেন, যাতে তিনি বললেন: এটা পৃথিবীবাসীদের

জন্য বিজ্ঞানের একটা মহা আবিষ্কার। এরপর তিনি ফেরাউনের লাশের তথ্য উদঘাটনে নেমে পড়লেন। একজন ব্যক্তি তাকে বলল যে,

মুসলমানদের কুরআনে নাকি ফিরাউনের ডুবে যাওয়া ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা আছে। এই ঘটনা শুনে ডা. মরিস বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন, এটা কিভাবে সম্ভব? এই মমি পাওয়া গিয়েছে ১৮৮১ সালে, আর কুরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে! আর প্রাচীন আরবেরা তো মমি করার পদ্ধতিই জানতো না, মাত্র কয়েক দশক আগে তা আমাদের হাতে আবিস্কৃত হয়। ড.বুকাইলি ফিরাউনের লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীরভাবে ভাবছিলেন যে, মুসলিমদের কুরআনে কিভাবে ফিরাউনের লাশ সংরক্ষণের কথা এসেছে?

তিনি বাইবেলে ফেরাউনের লাশ সম্পর্কে

জানতে চাইলেন।তিনি দেখলেন,

বাইবেলে ফিরাউন কর্তৃক মুসার পিছু নেয়ার কথা বলা আছে কিন্তু ফিরাউনের লাশের পরিনতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা নাই। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন আর ভাবতে ছিলেন যে, এটা কিভাবে ধারণা করা যায় যে, এই মমি যার সে মুসার (আ.)-এর পিছু নিয়েছিল? আর এটা কেমন করে সম্ভব যে, মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগেই এটা সম্পর্কে জানতেন?

ডা. মরিস সেই রাতে ঘুমাতে পারলেন না, তিনি তোরাহ (তাওরাত) আনালেন এবং সেটা পড়লেন। তোরাহতে বলা আছে, পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল, যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের কেউই বাঁচতে পারল না। ড.বুকাইলি আশ্চর্য হয়ে দেখলেন যে, তাওরাতে লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

অতপর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন ও আলোচনা করবেন। তিনি তথায় পৌছে ফিরাউনের লাশ ডুবে যাওয়া পরবর্তী সংরক্ষণের যে রেজাল্ট পেয়েছেন তা নিয়ে আলেচনা করেন, তখন একজন মুসলিম বিশেষজ্ঞ পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ড. বুকাইলিকে শুনালেন যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেন,

"অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।"আল-কুরআন; সুরা:১০,আয়াত-৯২

তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত ও অভিভূত হয়ে যান এবং কয়েক বছর ধরে আরবি ভাষা,আরবি সাহিত্য ও কুরআনের অনুবাদ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধান

কাজ চালিয়ে যান। তিনি কুরআন গবেষণা করে দেখেন যে, আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বের কুরআন আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে

পুরো সঙ্গতিপূর্ণ।কী আশ্চর্য,কী অবাক করা

কথা! কুরআন মহাসত্য। আসমানী কিতাব!

তিনি উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করলেন যে, আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং আমি এই কুরআনে বিশ্বাসী। সুবহানাল্লাহ!

ইসলাম গ্রহনের পর তিনি একটি মহামূল্যবান বই লেখেন যার নাম

"বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান" যা পৃথিবীর

৫০টি নামকরা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং

সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। যা পশ্চিমা

বিজ্ঞানীদের অবাক করে দেয়।

(বাংলা ভাষায়ও বইটি পাওয়া যায় আপনারা পড়তে পারেন।)

ডা. মরিস বুকাইলি ফ্রান্স ফিরে গেলেন এক ভিন্ন অবস্থায়। ফ্রান্সে ১০ বছর তিনি আর কোন ডাক্তারি প্রাকটিস করেন নি বরং এই সময়ে তিনি পবিত্র কুরআন নিয়ে গবেষনা করেছেন। সব শেষে তিনি পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারলেন যাতে বলা আছে,

"এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।" সুরা-৪১, আয়াত-৪২

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এভাবেই হেদায়াত দান করেন। আল্লাহ আমাদেরকেও কোরআন বোঝার ও তদানুযায়ি জীবন গড়ার তাওফিক দান করুণ। আমিন।

-রুহুল আমিন

১৭-০৪-২০১৬ খ্রিঃ

তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট,গুগল সার্চ।

বিষয়: বিবিধ

১৯০৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366804
২৩ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০৩:২৭
366822
২৩ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৯
আফরা লিখেছেন : জী উনার বইটা আমি পড়েছি ।
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এভাবেই হেদায়াত দান করেন। আল্লাহ আমাদেরকেও কোরআন বোঝার ও তদানুযায়ি জীবন গড়ার তাওফিক দান করুণ। আমিন।
366850
২৩ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৯:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
367305
২৭ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৪
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File