ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২৫ জুলাই, ২০১৭, ০৭:১২:৫৫ সন্ধ্যা



ইসলাম আমাদের জন্যে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারিত করে দিয়েছে উহা অর্জন করার পন্থা কি? স্বীকার করি যে, ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন পদ্ধতি এবং আমাদের ঐতিহাসকি ভৌগলিক এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানের প্রতি লক্ষ্য করে ইসলামই আমাদের মুসলমানদের সম্মান, নেতৃত্ব এবং সামাজিক সুবিচার লাভের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, যখন সমগ্র দুনিয়াই এত ঘোর বিরোধী এবং খোদ মুসলিম দেশসমূহের উপর এমন স্বৈরাচারী শাসকবৃন্দ চেয়ে বসেছিল যারা অন্যদের চেয়েও অধিকতর শক্তি প্রয়োগ করে একে দমন করার চেষ্টা করেছেন তখন কেমন করে আমরা এর অনুসরণ করতে পারি?

ঈমান ও ইয়াকিনের পথ

উপরোক্ত পরিস্থিতিতে আমাদের কর্মপন্থা কি হওয়া উচিত। আমাদের কর্তব্য কি? এর একমাত্র উত্তর হলো: ইসলামী লক্ষ্য অর্জনের পথ একমাত্র উহাই যা মানবেতিহাসের প্রতি আন্দোলনকেই অপরিহার্য রূপে গ্রহণ করতে হয়েছে। আর এই পথটি হলো ঈমান ও ইয়াকিনের পথ।

মহান ঐতিহাসিক অলৌকিক ঘটনা

এই ঈমানই ছিল ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানদের শক্তির একমাত্র উৎস। এ যুগের মুসলমানদের মুক্তির রহস্যও এর মধ্যে নিহিত। মুসলমান হিসেবে আমরা আজ যে সকল সমস্যার সম্মুখীন উহা প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের সমস্যা থেকে মোটেই ভিন্নতর নয়। তারা ছিলেন মুষ্টিমেয় লোক। কিন্তু তৎকালনি দুই বৃহৎ শক্তি-রোম ও ইরানের বিরুদ্ধে তারা লাভ করেছিল অভাবনীয় বিজয়। অথচ এই শক্তিদ্বয় কি জনবল, কি ধন বল, কি সাজ-সরঞ্জাম, কি রণ কৌশল, কি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা-সকল দিক থেকে ছিল মুসলমানদের চেয়ে বহুগুণে অগ্রসর। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাত্র ৫০ বছরের মধ্যেই তারা কায়সার ও কিসরা (সিজার ও খসরু) উভয়ের অহংকারকেই ধূলায় মিশিয়ে দেয়। এবং লোহিত সাগর থেকে শুরু করে রোম সাগর পর্যন্ত সমস্ত এলাকই অধিকার করে নেয়। তাদের এই সাফল্য ছিল ইতিহাসের এক মহা অলৌকিক ঘটনা।

ইতিহাসের কোন বস্তুগত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা ইতিহাসের এই মহান অলৌকিক ঘটনার পর্যালোচনা করা সম্ভবপর নয়। একমাত্র ঈমান ও ইয়াকীনের হাতেই এই দায়িত্ব অর্পণ করা চলে। এই ঈমানী প্রেরণার কারণেই মুসরিম মুহাজিদ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র বাহিনীর সম্মুখীন হয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠতো:

(আরবী***********)

“আমার এবং জান্নাতের মধ্যে শুধু এতটুকু ব্যবধান যে, আমি এই ব্যক্তিকে (কাফিরকে) হত্যা করব সে আমাকে হত্যা করবে।”

এরপর কোন বর যেমন বাসর ঘরে অভাবনীয় আনন্দের সাথে প্রবেশ করে ঠিক তেমনিভাবে তারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়ত। এই ঈমানী শক্তির কারণেই তারা শত্রু বাহিনী দেখা মাত্র অজ্ঞাতসারেই বলে উঠতো:

(আরবী***********)

“তোমরা আমাদের ব্যাপারে দু’টি উত্তম জিনিসের মধ্যে যে কোন একটির জন্যেই কি অপেক্ষামান? (অর্থাৎ বিজয় কিংবা শাহাদাত।)”

বস্তুত এই পথ অবলম্বন করেই আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারি। এই পথ বর্জন করলে কোন আহ্বানই সাফল্যমণ্ডিত হতে পারে না।

অস্ত্র–শস্ত্রের প্রয়োজন আছে কি?

যুদ্ধের অস্ত্র-শস্ত্র সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয় এবং বলা হয় যে, এখন আমাদের কাছে না আছে অস্ত্র-শস্ত্র, না আছে অন্যান্য সাজ-সরঞ্জাম। এছাড়া ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার যুদ্ধে জয়লাভ করা কেমন করে সম্ভবপর? যারা এ ধরনের কথা বলেন তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুখলেস ও আন্তরিক এবং কিছু সংখ্যক রয়েছে হীনমন্যতা এবং পরাভূত মানসিকতার শিকার। অস্ত্র-শস্ত্র ও সাজ সরঞ্জামের অবশ্যই প্রয়োজন, এতে কারুর সন্দেহ নেই। আর একথাও সত্য যে, বর্তমানে আমাদের কাছে উহার কিছুই নেই। তবে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, আমাদের সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন তা অস্ত্র-শস্ত্র নয়; শুধু অস্ত্রের জোরে আজ পর্যন্ত কোন জাতিই কোন অলৌকিক ঘটনা দেখাতে পারেনি। প্রথম ‍বিশ্বযুদ্ধে ইটালীর সেনাবাহিনীর অস্ত্র-শস্ত্রই ছিল সর্বাধুনিক; কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা যুদ্ধে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। দেখা গেছে তাদের সৈন্যরা ছিল যারপরনাই ভীরু, অনেক সৈন্যই পালিয়ে গেছে ‍যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে এবং আত্মসমর্পণের সময়ে সমস্ত অস্ত্র-শস্ত্রই তারা ফেলে গেছে শত্রুদের জন্যে। তাদের অস্ত্র-শস্ত্রের অভাব ছিল না, বরং অভাব ছিল বিশ্বাস ও সাহসিকতার।

অস্ত্র–শস্ত্র ও ঈমান

উপরোক্ত অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা আমরা দেখতে পাই যখন ঈমানী চেনায় বলীয়ান ক্ষুদ্র একদল লোক [লেখক সম্ভবত: তারাবলসের যুদ্ধে যোগদানকারী মুজাহিদ বাহিনীর কথা বলেছেন।] যাদের সংখ্যা একশ’র অধিক কিছুতেই ছিল না-সেই ‘বৃহৎ’ কিন্তু অন্তসারশূন্য ইটালীর শাসকদেরকে অতি অল্পকালের মধ্যেই এতদূর ভীতসন্ত্রস্ত্র করে তুলেছিল যে, তারা দেশটিছেড়ে গিয়েই প্রাণে বাঁচার কথা ভাবতে বাধ্য হয়েছিল। ঈমানদারদের এই দলটির কাছে মারাত্মক কোন অস্ত্র-শস্ত্র ছিল না। না তাদের কাছে তোপখানা ছিল। না ছিল কোন জেট ফাইটার। না ছিল ভারী কোন হাতিয়ার। বাহ্যত তারা কেবল মামুলী পিস্তল ও রাইফেল দ্বারাই লড়াই করেছি। এবং জয়লাভ করতেও সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তাদের নিকট প্রকৃত পক্ষে যে অস্ত্র ছিল তা ছিল দুশমনদের হাতিয়ারের চেয়ে শত সহস্রগুণ ভীতিকর ও মারাত্মক। এই হাতিয়ার ছিল তাদের ঈমানী চেতনা। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের ন্যায় আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার সময়ে তারা তাদের ঈমানী চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল এবং এরূপ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিল যে, হয় তারা আল্লাহর দুশমনদের হত্যা করবে, নতুবা তাদরে হাতে শাহাদাত লাভ করবে। চরম বিপদ ও প্রতিকূল পরিবেশে তাদের সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি ছিল তাদের এই ঈমানী শক্তি এবং অপরাজেয় সংকল্প্

সত্যের পথ–শাহাদাতের আকাংখা

আমরা ভালোরূপেই অবগত আছি যে, আমরা যে পথ অবলম্বন করেছি উহা কুসমাস্তির্ণ নয়। বরং শক্তিপ্রয়োগে, রক্ত ও অশ্রুর ভেতর দিয়েই সে পথ অতিক্রম করতে হয়। এর জন্যে কুরবানীর আত্মত্যাগ ছাড়া উপায় নেই। আমাদের মহান ও পবিত্র লক্ষ্য-অর্থাৎ আমাদের ইজ্জত সম্ভ্রম, শ্রদ্ধা, মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার এই পথেই অর্জন করতে পারি। আর একথা সুস্পষ্ট যে, এ সওদা কখনো সস্তা নয়।

ত্যাগ ও কুরবানী অপরিহার্য

এটা একান্তই বাস্তব যে, ঘৃণা, লাঞ্ছনা, দারিদ্রতা, দুর্বলতা, নৈরাজ্য ও বৈষম্যের কারণে আমরা যে দুঃখ-দুর্দশার ভেতর দিয়ে কালাতিপাত করছি উহা ইসলাম অনুসরণ করার জন্যে যে দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় তার চেয়ে বহুগুণ অধিক। বিগত মহাযুদ্ধে আরব জাহানের লক্ষ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। হাজার হাজার লোক বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। অসংখ্য মানুষ বিত্ত-সম্পদ হারিয়ে পথে বসেছে। অগণিত লোক ধরা পড়ে বন্দী হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক নিরপরাধ ও নিষ্টাপ মানুষকে রিজক ও জীবিকা অর্জনের উপায়-অবলম্বন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও আমরা মিঃ চার্চিলকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। তিনি যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সংগে সংগেই আমাদের লক্ষ্য করে বললেন: “আমরা তোমাদেরকে রক্ষা করেছি, এখন উহার মুল্য দেয়ার জন্যে তোমরা প্রস্তুত হয়ে যাও।”

পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের স্বভাব

এখন সকলের বক্তব্য হলো: যখন পাশ্চাত্যের শক্তিগুলো আরব জাহানের লোকদেরকে এ যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে একত্র করার জন্যে তৎপর হয়ে উঠে তখন তাদের দাবী ছিল: এরূপে কমপক্ষে পঞ্চাশ লাখ আরবকে তাদের সশস্ত্র সেনাবাহিনীতে ভর্তি করে তাদের উপরই তাদের মরণাস্ত্রসমূহের পরীক্ষা চালাবে যাতে করে শ্বেতাংগ আমেরিকাবাসী ও ইংরেজরা ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু যখন দেখা গেল যে, আরবরা খুব সহজে এই চুক্তিতে সাড়া দিচ্ছে না তখন তারা গায়ের জোরে আরব জাহানের সমস্ত উপায়-উপাদানের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করে। আরব জনসাধারণের উপর লাঞ্ছনা ও অত্যাচারের স্টীম রোলার চালিয়ে তাদেরকে পর্যদুস্ত করে দিল। এরপরেও যখন তাদেরকে কাবু করতে পারলো না তখন তাদের সম্পাদিত চুক্ত বাতিল করতে বাধ্য হলো। মৃত্যু একটি অমোঘ সত্য; কোন প্রাণীই এর হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারে না। সুতরাং বিপদ-আপদ ও দুঃখ-যন্ত্রণায় অস্থির হওয়া সম্পূর্ণরূপেই অর্থহীন। বহু লোকই এমন ছিল যারা অপমান ও লাঞ্ছনার সাথে মৃত্যুবরণ করেছে। অনুমান করা হয় যে, মহাযুদ্ধে মিত্র শক্তির কমপক্ষেপাঁচ লাখ লোক নিহত হয়েছে। তাহলে ইসলামের উদ্দেশ্যে –শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন ও সত্য নিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জীবন দিতে আমরা কুণ্ঠিত হবো কেন? আজ যদি ইসলামের উদ্দেশ্রে বাঁচা-মরার জন্যে পাঁচ লাখ লেখক প্রস্তুত থাকে তাহলে পরিপূর্ণ নিশ্চয়তার সাথেই বলা যায় যে, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্পূর্ণরূপেই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। তখন না থাকবে কোন ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরাচারী শাসকের দাপট, আর না থাকবে কোন খৃস্টান বা অখৃস্টান সাম্রাজ্যবাদের কোন অস্তিত্ব। এখনো কি বলা প্রয়োজন যে, ইসলামী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করার পন্থা কি?

সমাজতন্ত্রের উন্নতি ও ইসলাম

কিছু সংখ্যক লোক এমন রয়েছে যারা বর্তমান যুগে সমাজতন্ত্রের উন্নতি দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। অথচ তাতে করে অস্থির হওয়ার কোন যুক্তিসংগত কারণই নেই। কেননা সমাজতন্ত্রের আবির্ভাবের পর সারা বিশ্বে ইসলামের বিন্দুমাত্রও ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়নি। বর্তমান সময়ে যে দেশগুলো সমাজতন্ত্রের আওতাভুক্ত ঐগুলো যখন বৃহত্তর খৃস্টান জগতের অংশ ছিল তখন উক্ত এলাকা এখনকার মতই ইসলামের বিরুদ্ধে একইরূপ শত্রুতা পোষণ করতো। বস্তুত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বহু পূর্বেও রুশ সরকার মুসলমান দেশসমূহে ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টির জন্যে তাদের এজেন্ট নিয়োগ করতো। তারা তখনও মুসলমানদের কল্যাণ কামনা করতো না এবং এখনো করে না।

ইউরোপের অবস্থাও একই রূপ। ইউরেপ এক সময়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডের যুদ্ধ পরিচালনা করতো এবং এখনো পর্যন্ত সেই ধরনের ‘পবিত্র’ যুদ্ধে তারা অংশগ্রহণ করছে। মোটকথা, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ায় দুশমনদের যে ভূমিকা অতীতে চালূ ছিল বর্তমানকালেও সেই অবস্থার আদৌ কোন পরিবর্তন হয়নি।

আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?

সারা বিশ্বের এই প্রেক্ষাপটে মুসলমান হিসেবে আমরা আজ ঠিক সেই স্থানেই দাঁড়িয়ে আছি যেখানে দাঁড়ানো ছিলেন আমাদের প্রাথমিক যুগের মুসলমান। তারা তখন ডানে-বামে উভয় দিকেই দু’টি বৃহত্তর বিরোধী শক্তির-ইরান ও রেমা রাজ্যের দ্বরা পরিবেষ্টিত ছিলেন। আমাদের অবর্থাও আজ সেই রূপ। তবে যে সকল জালেম ও স্বৈরাচারী শাসকবৃন্দ ইসলামী দেশগুলোর উপর চেপে আছে তাদের ব্যাপারে আমাদের কি করা উচিত? তাদের সম্বন্ধে আমাদের এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, তাদের পতন খুব দূরে নয়। কেননা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, এই ধরনের জারেম, স্বৈরাচারী ও অন্তসারশূন্য সরকার কখনো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।

ইসলামী চেতনার দাবী

বর্তমানে যে ভাস্বর ইসলামী চেতনা মুসলিম বিশ্বে ক্রমবিকাশে লাভ করছে তা ইসলামের নিয়ম-নীতির আলোকে সামাজিক ইনসাফ ও ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর এ উদ্দেশ্রে উহা প্রাচ্যের সমালোচনা বা অহেতুক তর্ক-বিতর্কের যেমন পরোয়া করে না। তেমনি পাশ্চাত্যের মোড়লিপনা বা ছিদ্রান্বেষণের কোন গুরুত্বও স্বীকার করে না।

সৃষ্টি হচ্ছে নতুন জগত

বড়ই আনন্দের বিষয় এই যে, কঠিনতম ও ঘোর প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও বিশ্বের সর্বত্রই ইসলামী আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হয়ে উঠছে। উহার শক্তি দিন দিন বেড়ে চলেছে এবং উহার গুরুত্বও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান অবস্থা দেখে পরিষ্কার বুঝা যায়, ইসলামের পুনর্জাগরণ অনিবার্য এবং একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে পুনরায় একবার সেই গৌরবময় ও ভাস্বর ইতিহাস আমাদের সামনে আসছে যার ঝলকানি একবার সমগ্র বিশ্ব দেখতে পেয়েছিল আজ থেকে সাড়ে তেরশ’ বছর পূর্বে।

বর্তমান বিশ্বের মুক্তির পথ

আজকের বিশ্ব একদিকে জড়বাদের দাসত্ব এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের দ্বিমুখী অভিশাপে ভীষণভাবে জর্জরিত। ইসলাম গোটা বিশ্বকে এ দু’টির হাত থেকে মুক্তি দেয় এবং তাকে এমন একটি জীবনব্যবস্থা প্রদান করে যাতে করে জড় এবং রূহ উভয়টিই বর্তমান এবং উভয়ের দাবীকেই একই সময়ে পূরণ করে। জড়বাদের (Materialism) অভিশাপ মানুষের রূহ এবং কলব উভয়ের শান্তি ও নিশ্চিন্ততাকে কেড়ে নিয়েছে এবং তাদের দুনিয়াকে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের এক আখড়ায় পরিণত করেছে। আধুনিক বিশ্বের এই সকল ব্যধির চিকিৎসা একমাত্র ইসলামের মাধ্যমেই সম্ভবপর। কেননা উহা বস্তুকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে রূহকে কখনো জবাই করে না এবং রূহকে মূল্য দিতে গিয়ে এতদূল বাড়াবাড়িও করে না যাতে করে বস্তুকে পুরোপুরিই উপেক্ষা করা হয়। উহা এই দু’টির মাঝামাঝি একটি ভারসাম্যপূর্ণ পথকেই অনুসরণ করে এবং উহাদের চাহিদাসমূহের মধ্যেও একটি সুষ্ঠু সামঞ্জস্য স্থাপন করে। আমরা আশা করি শীঘ্রই হোক অথবা বিলম্বে হোক, সমগ্র বিশ্ববাসীই একদিন ইসলামের প্রকৃত মূল্য হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হবে। নিজেদেরই দ্বীন হিসেবে গ্রহণ না করলেও তারা যে উহার উপস্থাপিত জীবন দর্শনকে কোন না কোন রূপে অধিককাল পর্যন্ত উপেক্ষা করে চলতে পাবে না তাতে কোন সন্দেহ নেই। অবশ্য উহাকে কবুল করার ভেতরেই তাদের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তি নিহিত।

ইসলামী আন্দোলনের আমরা কর্মীরা অবশ্যই অবগত আছি যে, আমরা যে পথ অবলম্বন করেছি তা কোন শান্তিপূর্ণ পথ নয়। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের মতই আমাদেরও (ঈমানের) পরীক্ষা, ত্যাগ, সহানুভূতি ও অন্যকে অধিকতর অগ্রাধিকার দেয়ার কঠিন ও প্রাণন্তকর মঞ্জিলসমূহ অতিক্রম করতে হবে। তাহলেই আমরা বিশ্ববাসীকে ইসলামের সত্যনিষ্ঠ এবং সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত করতে সমর্থ হবো। কেননা এই পথে যে কোন প্রচেষ্টা ও ত্যাগ দেখানো তেহাক না কেন উহাকে নিষ্ফল হয় না। আসমান ও জমিন উভয়ই এর সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়: (আরবী***********)

“যে আল্লাহর সাহায্য করে আল্লাহও অবশ্যই তার সাহায্য করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান শক্তিধর ও মহা পরাক্রমশালী।”

আর এটা সুনিশ্চিত যে, মহান আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি সত্য।

সমাপ্ত

বিষয়: বিবিধ

৬১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File