ক্রুসেড ৮০০ বছর আগে ও পরে

লিখেছেন লিখেছেন উদাসিন পথিকের মনের কথা ১৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:০৮:৩০ রাত

১৫ জুলাই, ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ…… ১ম

ক্রুসেডে কতিপয় মুসলিম

আমিরের বিশ্বাসঘাতকতার

ফলে পরাজয় বরন করল মুসলিম

বাহিনী। হাজার হাজার

মুসলিমের লাশের উপর দিয়ে

মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল

মুকাদ্দাসে প্রবেশ করল

সম্মিলিত খ্রিস্টান ক্রুসেডার

বাহিনী। ক্রুসেডারদের এই

বিজয়ে সর্বত্র খ্রিস্টান

দেশগুলতে শুরু হয়ে গেল বিজয়ের

উৎসব। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ উৎসব

হল বাইতুল মুকাদ্দাসে। বিজয়ী

ক্রুসেডার বাহিনী বেপরোয়া

লুটপাট শুরু করল প্রতিটি মুসলিম

ঘরে। কোন ঘরে কোন পুরুষ মানু্ষ,

হোক সে বৃদ্ধ বা দুগ্ধ পোষ্য শিশু,

কাউকেই জীবিত রাখলো না।

জীবিত ছিল শুধু যুবতী মেয়েরা,

যারা হয়েছিল পশুদের লালসার

খোরাক। বহু সংখ্যক মুসলিম

নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় অবস্থান

নিয়েছিল মসজিদুল আকসা সহ

বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে।

ইউরপীয় ঐতিহাসিকদের মতে এই

শরণার্থীদের সংখ্যা ছিল ৭০

হাজারেরও অধিক। এই বিপুল

সংখ্যক মুসলিম মনে করেছিল

খ্রিস্টানরা মসজিদের মত পবিত্র

স্থানে আক্রমণ করবেনা। কিন্তু

বিজয়ের উল্লাশে মত্ত

ক্রুসেডার বাহিনী হিংস্র পশুর

মত ঝাপিয়ে পড়ল মুসলিমদের উপর।

মসজিদুল আকসা সহ অন্যান্য

মসজিদগুলো লাশে ঠাঁসাঠাসি

হয়ে গেল। মসজিদগুলো থেকে

রক্ত প্রবাহিত হয়ে পড়তে লাগল

রাস্তায়। ঐতিহাসিকগণ

লিখেছেন, ‘রাস্তায় এত রক্ত

জমা হল যে খ্রিস্টান

অশ্বারোহীদের ঘোড়াগুলোর

পা পর্যন্ত সেই রক্তে ডুবে যেত।‘

শুধুমাত্র এইটুকুতেই তারা থেমে

থাকেনি। মসজিদুল আকসা সহ

বিভিন্ন মসজিদ সমূহকে তারা

বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা শুরু

করে দিল। কিছু মসজিদ ভেঙ্গে

ফেলল, কিছু মসজিদকে ঘোড়ার

আস্তাবল হিসেবে ব্যবহার করা

শুরু করল আর কিছু মসজিদ কে

পতিতালয় বানিয়ে আল্লাহর

ঘরের চরম অবমাননা করল। এভাবেই

মুসলিম আমির ওমরাহদের

বিলাসিতা ও গাদ্দারীর ফল

দীর্ঘদিন ধরে মুসলমানদের ভোগ

করতে হল। ৮৮ বছর পর…… ৬ অক্টোবর

১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬ই

রজব ৫৮৩ হিজরিতে সম্মিলিত

ক্রুসেডার বাহিনীকে পরাজিত

করে বাইতুল মুকাদ্দাসে বিজয়ীর

বেশে প্রবেশ করলেন সুলতান

সালাহউদ্দিন আইয়ুবী। যে রজব

মাসের ২৭ তারিখ রাতে রাসুল

সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়াসাল্লাম বাইতুল মুকাদ্দাস

থেকে মেরাজে

গিয়েছিলেন, আল্লাহপাকের

অপার মহিমায় সে রজব মাসেই

মুসলমানরা বাইতুল মুকাদ্দাসে

প্রবেশ করার সুযোগ লাভ করলেন।

মুসলিম বাহিনী শহরে প্রবেশ

করার সাথে সাথেই মুসলমানদের

মাঝে এক অভাবনীয়

পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ

দিনের বন্দিত্ব আর সীমাহীন

অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়ে

আনন্দ বেদনার এক বিচিত্র

অনুভূতিতে ভরে উঠে তাদের

হৃদয়গুলো। অপর দিকে শহরের

খ্রিস্টান অধিবাসীদের মনের

অবস্থা ছিল শোচনীয়। তারা

ভাবছিল ৮৮ বছর আগে মুসলিমদের

উপর যেভাবে ভয়াবহ নির্যাতন

চালানো হয়েছে তার

পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম

বাহিনীও প্রতিশোধ নেয়া শুরু

করবে। কিন্তু ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ

উল্টো। ইউরোপিয়ান

ঐতিহাসিকদের কাছ থেকে

যানা যায় সুলতান সালাহউদ্দিন

আইয়ুবী এই ব্যাপারে উদার

মনোভাব ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয়

দেন। তিনি তার সেনাপতি ও

কমান্ডারদের শহরে শান্তি ও

নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার

করতে কঠোর নির্দেশ দেন

যাতে করে কোন প্রকার অন্যায়

অত্যাচার না হয়। খ্রিস্টান

ঐতিহাসিকরা সুলতান

সালাহউদ্দিনের এই মহানুভবতার

অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন তাদের

গ্রন্থে। এই মহানুভবতা থেকে

যেমন বঞ্ছিত হয়নি কোন সম্রাট,

তেমনি বঞ্ছিত হয়নি কোন

সাধারণ সৈনিক, খ্রিস্টান

জনসাধারণ, নারী, শিশু কিংবা

তরতাজা যুবক। বাইতুল মুকাদ্দাসে

খ্রিস্টানদের মহা বিপর্যয়ের

ফলে মুসলিমদের শাসন পুনরায়

সুপ্রতিষ্ঠিত হবার পর ইউরোপে

খ্রিস্টান রাজ্যগুলোতে ব্যপক

অস্থিরতা শুরু হল। পোপ ২য়

আরবানুসের আহবানে সুলতান

আইয়ুবীর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হল

সমগ্র খ্রিস্টান শক্তি।

ইংল্যান্ডের রিচার্ড দি

লায়নহার্ট, ফ্রান্সের ফিলিপ

অগাস্টাস আর জার্মানির

ফ্রেডরিকের নেতৃত্বে প্রায় ৬

লাখ সৈন্যের বিশাল বাহিনী

নিয়ে খ্রিস্টানদের পবিত্র

স্থান আক্রায় মুসলমানদের

অবরোধ করা হয়। ১১৮৯

খ্রিস্টাব্দের ১৩ই আগস্ট থেকে

১১৯২ খ্রিস্টাব্দের ৩রা

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন বছর

মেয়াদী ৬ লাখ সৈন্যের এই

বিশাল অবরোধ সুলতান

সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মাত্র

২০/৩০ হাজার সৈন্য দিয়ে

প্রতিরোধ করেন। অবশেষে ১১৯২

খ্রিস্টাব্দের ৯ই অক্টোবর

খ্রিস্টান বাহিনী অবরোধ তুলে

নিয়ে নিজদেশে ফিরে

যেতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে

শতশত বছর কোন খ্রিস্টান সম্রাট শত

চেষ্টা করেও বাইতুল মুকাদ্দাস

আর দখল করতে পারেনি। ১০ জুন,

১৯৬৭ সাল…… সুলতান আইয়ুবী কর্তৃক

বাইতুল মুকাদ্দাস নিয়ন্ত্রণে

নেবার প্রায় ৮০০ বছর পর এবং

ইসলামী খিলাফাত ধ্বংসের ৪৩

বছর পর মুসলিম বিশ্ব আবার প্রত্যক্ষ

করল এক বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক

ঘটনা। মুসলিম বিশ্বের

পারস্পরিক অনৈক্য ও দুর্বলতার

ফলে পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস আর

মসজিদুল আকসা আবার চলে গেল

কাফেরদের হাতে।

খ্রিস্টানদের মদদে তার কর্তৃত্ব

নিল অভিশপ্ত ইহুদী জাতি। ৮০০

বছর আগের ইতিহাসের

পুনরাবৃত্তি ঘটল পবিত্র মাটিতে।

মুসলমানদের রক্তে নতুন করে

ভিজতে শুরু করল ফিলিস্তিনের

মাটি। ইতিহাস আগের মতই

থাকল। ইহুদি খ্রিস্টানরা

একজোট হয়ে শুরু করল বিংশ

শতাব্দীর ক্রুসেড। আগের মতই শুরু

হল মুসলিম জাতিসত্তার বিনাশ

সাধন। ৮০০ বছর আগে খ্রিস্টানরা

মুসলিমদের মাঝে ভৌগলিক

জাতীয়তাবাদের বিকাশ

ঘটাতে খুব একটা সফল না হলেও

১৯২৪ সালে ইসলামী খিলাফাত

ধ্বংসের মাধ্যমে এখন তারা

অনেকাংশেই সফল। মুসলিম

যুবকদের চরিত্র ধ্বংসের জন্য,

মুসলমানদের ইমান ক্রয় করার জন্য,

তাদের গাদ্দার বানাবার জন্য

আজও ব্যবহ্রত হচ্ছে নারীর মোহ,

ক্ষমতার লোভ, গদির মায়া,

সম্পদের আকর্ষণ ও মদের নেশার মত

ভয়াবহ অস্ত্র। মুসলিম

জাতিসত্তার বিনাস সাধনের

মাধ্যমে ভাত্রিঘাতি যুদ্ধের

উস্কানি দিয়ে মুসলমানদের ঐক্য

নষ্ট করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে

জাতীয়তাবাদের বিষ ঢুকিয়ে

দেয়া হচ্ছে। মুসলমানদের কাছে

পর্যাপ্ত পরিমাণ সামর্থ্য থাকা

সত্ত্বেও ঐক্যের অভাবে, যোগ্য

নেতৃতের অভাবে ও ঈমানের

দুর্বলতার কারনে ক্রমাগত মার

খেয়েই চলেছে। অথচ ইসলামী

খিলাফাতের শেষ পর্যায়ে যখন

এর ভঙ্গুর অবস্থা তখন ও ইহুদী

খ্রিস্টান চক্র সাহস করেনি

বাইতুল মুকাদ্দাসে হাত দিতে।

খিলাফতের দূর্বলতম অর্থ্যাৎ

সর্বশেষ খলিফা আব্দুল হামিদকে

যখন জায়নবাদী ইহুদীরা অর্থের

বিনিময়ে ফিলিস্তিন দেয়ার

কথা বলেছিল তখন খলিফা

বলেছিলেন খিলাফত যতদিন

আছে ততদিন কোন কিছুর

বিনিময়ে ইহুদীরা ফিলিস্তিন

দখল করতে পারবে না। তারা

পারেও নি। খিলাফতের দূর্বলতম

অবস্থা-ই তা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে

বিশ্বের একটি পরাশক্তি

হিসেবে অংশগ্রহন করেছিল।

খিলাফতের নাম মাত্র অবস্থার

সময়েও সেটা মুসলমানদের স্বার্থ

রক্ষায় যতটা কার্যকর ছিল

আজকের এতো শক্তিশালী

গনতন্ত্র, রাজতন্ত্র, ইসলামী

রিপাবলিক, ও আই সি, আরব লীগ

কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা, কোন

সংস্থা-ই সেটার ধারে কাছে

আসে না। আজ শুধু ফিলিস্তিন নয়

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের

মানবাত্মা ক্রন্দন করছে একজন

সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর জন্য।

কিন্তু সেই নেতা তখনই আসবেন

যখন মুসলিমরা একতাব্ধ হবে।

ঈমানের আলোয় আলোকিত

হবেন রাসুল প্রেমিকরা।

তাইতো আবার জনরব উঠেছে

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

খিলাফাতের পক্ষে উচ্চকিত

হচ্ছে হাজারও কণ্ঠ। একদিন নিশ্চই

এই জনরবেই হারিয়ে যাবে

আমাদের আত্মার ক্রন্দন।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১১৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File