বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৯ম পর্ব ( পুরনো শত্রু নতুন রূপে)

লিখেছেন লিখেছেন তট রেখা ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:১৭:২৩ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

يُرِيدُونَ لِيُطْفِؤُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ

অর্থঃ তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। ( সুরা সফঃ আয়াত-৮)

৮ম পর্ব

৮ম পর্বের পর----

ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং আমেরিকা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিনিধিত্ব কারী পাঁচ স্থায়ী সদস্যের অন্তর্ভুক্ত, অন্য সদস্যরা হলো রাশিয়া এবং চীন। এর অর্থ হলো এদের নিরাপত্তা পরিষদে যে কোনো প্রস্তাবনার বিরূদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করার অধিকার আছে। ১৯৯২ সালে ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় পরিষদের সভাপতি ঘোষনা দেন যে, জাতিসংঘকে অবশ্যই একটি কার্যকরী বিশ্বসংসদ হিসাবে কাজ করতে হবে, তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘের নিজস্ব ইন্টালিজেন্স সার্ভিস থাকতে হবে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে সামরিক শক্তি অর্জন করেছে। এর নিজস্ব সেনাবাহিনী আছে, যে বাহিনী বসনিয়া ও সার্বিয়ায় হাজার হাজার মুসলমানের নিধন দেখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলো। এর পরিবর্তে তারা অস্ত্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে ব্যাস্ত ছিলো, যা মুসলমানদের আত্মরক্ষার কোনো রকম উপায় থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৯৩ সালে জুন থেকে অক্টোবরে যখন জাতিসংঘ সৈন্যদের সোমালিয়ায় জেনারেল মুহাম্মাদ ফারাহ আইদীদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়, তখন আমেরিকান হেলিকপ্টার হাসপাতাল, সিভিলিয়ানদের বাড়িঘর এবং জানাকীর্ন এলাকায় আক্রমণ করে ৭১ জন মারা যায়। জাতিসঙ্ঘ মিশনের প্রধান এডমিরাল জোনাথন হাওয়ার্ড বলেন, “আমরা জানতাম যে, আমরা পরিকল্পণা অনুসারেই আঘাত হানছি”। এটা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পস্ট লংঘন ছিলো, কিন্তু যখন ইউ এস মিলিটারী এটর্নীকে এই প্রশ্ন করা হয়, তিনি তখন বলেন, জাতিসঙ্ঘ বাহিনীর জন্য জেনেভা কনভেনশন মুলতঃ প্রযোজ্য নয়, কেননা, জাতিসঙ্ঘ এই কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী পক্ষ নয়। অন্য কথায় জাতিসঙ্ঘ বাহিনী চায়লে যে কোনো ধরনের যুদ্ধাপরাধ বা নৈরাজ্য করার অধিকার রাখে, তারা আইনের উর্দ্ধে। প্রকৃত পক্ষে কোনো ভুখন্ডে জাতিসঙ্ঘ শান্তি আনয়ন করার যে দাবী করে, তা থেকে তারা অনেক দুরে, বরং তারা যেখানেই যায় সেখানে নৈরাজ্য ও বিশৃংখলা তৈরী করে এবং মৃত্যুর মিছিল ও ধংসস্তুপ রেখে আসে। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম আছে, যা বৃহৎ শক্তি গুলোর আকাংখার সাথেই সামঞ্জস্যশীল।

যতদিন পর্যন্ত শীতল যুদ্ধ চলছিলো এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব ছিলো, ততদিন পর্যন্ত ফ্রী-মেসন্সরা বৈশ্বিক সরকারের পরিকল্পণাকে দীর্ঘায়িত করছিলো। কিন্তু কম্যুনিজমের পতনের পর ( যদিও কম্যুনিজম ফ্রি-মেসন্সদের থেকেই উদ্ভুত একটি ব্যাবস্থা) ফ্রী-মেসন্সরা অবশেষে জাতি সংঘকে ব্যাবহার করে তাদের বৈশ্বিক সরকারের লক্ষ্যে উপণীত হতে পারে। সুতরাং সমগ্র বিশ্বকে তাদের হাতের মুঠোয় নেবে, যেখানে তাদের কোনো পথের কাঁটা থাকবেনা, এবং তারা চিন্তা করেছিলো, তাদের প্রভাবের কারণে শতাব্দী ব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া নৈরাজ্য, বিশৃংখলা আর অবিচারের জন্য পৃথিবীর মানুষ যেখানে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে, সেখানে তা শক্ত হাতে দমন করা হবে। পৃথিবী এখন দেখছে এক পুরনো যোদ্ধার পুণর্জাগরণ। এখন ফ্রী-মেসন্সদের আর একটি শত্রু আছে, সেই শত্রু, যাকে তারা ভেবেছিলো পরাস্ত করেছে, এ হলো সেই শত্রু, যারা তাদের শয়তানী পরিকল্পণার কাছে কখনোই নতি স্বীকার করবেনা। তাদের সেই শত্রু হলো ইসলাম, যাদের বিরূদ্ধে তারা যুদ্ধ ঘোষনা করেছে।

তবে মুসলিমদের এমন শত্রুর আগমণের ব্যাপারে অনেক আগেই সতর্ক করা হয়েছে। শেষ নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রোমান শহর কন্সটান্টিনিপল জয়ের পরে এক ব্যাক্তির আবির্ভাব হবে। সে প্রথমে একজন স্বৈরাচারী শাসক হবে, পরবর্তীতে নিজেকে একজন নবী হিসেবে দাবী করবে এবং অবশেষে নিজেকে সে ঈশ্বর ঘোষনা করবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, এই মিথ্যাবাদী সারা বিশ্ব জয় করতে শুরু করবে। দেশের পর দেশ, দুর্গের পর দুর্গ, অঞ্চলের পর অঞ্চল, শহরেরপর শহর এবং কোনো জায়গা বাকি থাকবেনা শুধু মাত্র পবিত্র শহর মক্কা ও মদীনা ব্যাতিত । সে এমন ক্ষমতার অধিকারী হবে যে, আকাশ কে আদেশ দেবে বৃষ্টি বর্ষনের জন্য, বৃষ্টি হবে, ভুমিকে আদেশ দেবে ফসল ফলানোর জন্য ফসল ফলবে। সে মানুষকে মিথ্যা ধর্মের দিকে আহবান করবে এবং এমন কিছু আনয়ন করবে যা জান্নাত ও জাহান্নামের মত দেখতে হবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে যা জান্নাতের মত দেখতে হবে, সেখানে পাওয়া যাবে জাহান্নামের শাস্তি, আর যা দেখতে জাহান্নামের মত, সেখানে পাওয়া যাবে স্বর্গীয় সুখ। সে হবে দাজ্জাল, যার অর্থ ভন্ড। সে একচোখ নিয়ে জন্মাবে কিন্তু আমাদের প্রভু আল্লাহ এক চোখা নন।

এটা সর্বজন বিদিত যে, দাজ্জালের আগমণের পুর্বে একদল মানুষ পুরো ব্যবস্থাকে উপযোগী করে তার আগমণের জন্য পথ প্রশস্ত করবে। অন্য কথায় দাজ্জালের এই পুরোগামী এবং তাদের তৈরী বিশ্ব ব্যবস্থা দাজ্জালের সকল বৈশিষ্ট্য বহন করবে। দাজ্জাল হবে এই বিমূর্ত অমানবিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত মানব প্রতিমুর্তি। দাজ্জালের পুরোগামীরা আর কেউ নন, তারা হলেন ফ্রি-মেসন্স। এক চোখের প্রতীক হলো দাজ্জালকে সনাক্তকারী একটি চিহ্ন, আর এই প্রতীকটি আর কিছু নয়, ফ্রি-মেসন্সদের সনাক্তকারী চিহ্ন। এটা তাদের বিশ্বাসের অঙ্গ, আর এটি গৃহীত হয়েছে , প্রাচীন মিশরীয় পৌরাণিক কাহিণী থেকে। তাদের আদর্শে এটা সুরবোচ্চ সত্ত্বাকে প্রকাশ করে, কখনো এই মহাবিশ্বের মহা স্থপতি কে নির্দেশ করে (নাউযবিল্লাহ)। দাজ্জালকে ও তার ব্যবস্থাকে সনাক্তকারী অন্য চিহ্ন গুলোর মধ্যে আছে সমাপ্ত বা অ-সমাপ্ত পিরামিড, উদীয়মান সুর্য, কাঁটা কম্পাস, পেন্সিল কম্পাস সাথে G ইত্যাদী। (চারিদিকে চোখ মেলে দেখুন কারা এই চিহ্ন গুলো বহন করে এবং তাদের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য গুলো পর্যালোচনা করুন, আপনি নিজেই বুঝে যাবেন তারা কারা। ঢাকে বুকেও ফ্রি-মেসনসদের উপাসনালয় আছে, কখনো জানতেও পারবেননা।)

১০ম পর্ব

বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় - ১ম পর্ব ( ছায়ার ভেতরে বসে)

বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়-২য় পর্ব ( রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অর্জন)

বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় -৩য় পর্ব ( মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ)

বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৪র্থ পর্ব ( সাহিত্য ও চলচ্চিত্র)

বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৫ম পর্ব ( মানবজাতির এলিয়েন তত্ত্ব)

বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় - ৬ষ্ঠ পর্ব (বৈশ্বিক নিরাপত্তা বাহিনী)

বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৭ম পর্ব ( সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ)

বিঃদ্রঃ লেখাটি আগে ভিন্ন নামে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু সিরিজটি সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। নতুন অনেক পাঠকের জন্য তাই পুনঃপ্রকাশ করা হলো।

RELATED READINGS:

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন- ইহুদী? ফ্রী-মেসন? - শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-৩)

বিষয়: বিবিধ

১৫২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File