দুই দলের কাউন্সিলঃএকটি পর্যালোচনা-মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ০১ নভেম্বর, ২০১৬, ০৮:২৫:৫৯ রাত

#এক-সাজ সাজ রবের মধ্য দিয়ে শেষ হল ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় কাউন্সিল।কাউন্সিল উপলক্ষ্যে সারাদেশে সাজ সাজ রব পড়েছিল।নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের তৃনমুল অনেক সাড়া জাগিয়েছে কাউন্সিল।সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও বর্তমান বিএনপি নেতা হাবিবের ভাষায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সাজ দেখে তার কাছে নাকি মনে হচ্ছিল 'ঢাকা শহরের বিয়ে' হচ্ছে।প্রায় মাস খানেক ধরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারি খরচে যেভাবে কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল তা যদিও উন্নত বিশ্ব বা আইনের দৃষ্টিতে উচিত নয় কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দলের কাছে তা আশা করা যায়।চারিদিকে আলোর ঝলকানী,বিশাল প্রচারনা,ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া,বিভিন্ন নেতা পাতি নেতার মাঠ পরিদর্শন আর ভার্চুয়াল জগতে নেতা বন্ধনা বা নেতাদের অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি সব মিলিয়ে বলা যায় সদ্য সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আসলে ই ছিল অতি সফল আর ঐতিহাসিক।দেশীরা ছাড়া ও বিভিন্ন দেশের প্রায় পনের জনের মত অতিথি বক্তৃতা করেছেন।রাঝপথের প্রধান বিরুধী দল এবং তাদের জোট ও সাংবিধানিক বিরুধী দলের শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতিতে কাউন্সিল সভায় বিদেশীদের আগমন কতটুকু ইতিবাচক তা অনুমেয়।যাইহোক,কাউন্সিল মানে স্বভাবত আমরা বুজি সেখানে নতুন কমিঠি হবে।নতুন নেতৃত্ব আসবে।তবে যেহেতু বড় দলগুলোতে (জামায়াত ছাড়া) এক নাম্বার পদবী অপরিবর্তনীয় তাই স্বাভাবাকিভাবে পরের পদ যেমন মহাসচিবের পদ আর নীতি নির্ধারনী ফোরামে কারা আসছে তা নিয়ে উচ্ছাস আর আগ্রহ থাকে বেশী।আওয়ামী লীগের কাউন্সিল বলেন আর বিএনপির।দুই দলে ই কর্মীদের চোখ থাকে এই পদগুলোর দিকে।দুই দল ই তাদের কাউন্সিলে দুই পদে নতুন মুখ নিয়ে এসেছে এবং দলের নির্বাহী কমিঠিতে ও অনেক নতুন মুখ নিয়ে এসেছে।সাংগঠনিক সিস্টেমে চলমান ধারবাহিকতায় তৃনমুল থেকে অনেকে উঠে আসবে আবার অনেকে হারিয়ে যাবে বা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপুর্ন পদে আসীন হবে তা নিয়ম।কিন্তু সদ্য ঘোষিত দুই দলের কমিঠিতে কিছু নেতৃত্বের আবির্ভাব হয়েছে যা নিয়ে আমাদের ভাবায়।দেশের রাজনীতির ভবিষ্যত কি তাহলে দেওলিয়া হওয়ার পথে?

#দুই-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন কমিঠির কর্তা ব্যাক্তিদের আমলনামা দেখলাম।আশার দিক হল এবারের কমিঠিতে নারীর পদায়ন প্রায় বিশ ভাগ করা হয়েছে।সাবেক বেশ কিছু ক্লিন ইমেজের ছাত্রনেতার পদোন্নতি হয়েছে।ওবায়দুল কাদেরের মত রুচীবান এবং চলায় ফেরায় ভদ্রলোককে সাধারন সম্পাদক হিসেবে মনোনিত করা হয়েছে।সবমিলিয়ে বলা যায় মন্দের ভালো এ কমিঠিতে জাত রাজনীতিবিদদের উপস্থিতি থাকলেও হতাশ করেছে বেশ কিছু দিক।যা এ দেশের গনতান্ত্রীক স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করবে বলে মনে করছি।

*উপদেষ্টা পরিষদ-আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে যাদের রাখা হয়েছে সেই হিসেব করলে বলতে হবে এই পরিষদটি অতি ওজনদার হয়ে গেছে।তোফায়েল আহমেদ,আমির হোসেন আমু,সুরঞ্জিত সেনের মত রাজনীতিতে পোড় খাওয়া নেতা যাদের ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস অপুর্ন থেকে যাবে তাদের স্থান নির্বাহী কমিঠিতে হয়নি।অন্য অনেক লোকের সাথে তাদের ও 'আমড়া কাঠের ঢেকি' হিসেবে উপদেষ্টা নামের শোকেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।আবার ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসি মাওলানা খন্দকার গোলাম মাওলা নক্সবন্দি আল মোজাদ্দেদীকে ও রাখা হয়েছে এখানে।হেভিওয়েট নেতাদের সাথে এ মাওলানার স্থান বা কিছু অখ্যাত নাম এসেছে এই তালিকায় যা দেখে মনে হয় ,নিছক কমিঠি করার জন্যে করা।রাজনীতিতে অভিজ্ঞ যাদের নির্বাহী থেকে সরিয়ে এখানে আনা হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগালে নিশ্চয় আরো কল্যান হত।

*প্রেসিডিয়াম-সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী এ ফোরামে এবার সাজেদা চৌধুরীর মত বয়সের ভারে নুহ্য নেত্রীকে রাখা যেমন হয়েছে তেমনি 'এক লাফে সাত তলায় গমন'র মত কিছু লোকের স্থান হয়েছে।এই তালিকায় স্থান পাওয়া কাউকে কাউকে দেখলে মনে হয়, আসলে ই কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।পিযুষ ভট্রাচার্য নামের এক লোক যশোর জেলা কমিঠির ৪/৫ নাম্বার সহ সভাপতি।তাকে করা হয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য।আমার বিশ্বাস এই ভদ্রলোক হয়ত ঘোষনায় তার নিজের নাম শোনার পর ভেবেছে হয়ত সিলেট বা অন্য কোন অঞ্চলের কেউ হতে পারে।এমন অখ্যাত ব্যাক্তিকে স্থান দিয়ে হয়ত দলনেতা এক ঢিলে কয়েক পাখি মেরেছেন।ঝানু দের বুজালেন দেখ চাইলে কি না পারি।দল আমার সুতরাং আমার মর্জিতে চলতে হবে।আবার তৃনমুলকে উজ্জীবিত রাখার ও কৌশল এটি।সবচেয়ে বড় কথা দুর্নীতির অভিযোগে যার বিরুদ্বে তদন্ত চলমান সাবেক প্রতিমন্ত্রী মান্নান খানের উথ্বান।যে কিনা কাউন্সিলের দিন পর্যন্ত অঘোষিত ওএসডি ছিলেন।তার বিরুদ্বে তদন্ত চলমান।এক তরফা নির্বাচনে যিনি হেরেছেন।এমন একজনকে সম্পাদকীয় থেকে ডাইরেক্ট প্রেসিডিয়ামে নিয়ে আসাতে আর যাই হোক গনতান্ত্রীক রাজনীতির জন্যে এক কালো অধ্যায় বলে মনে করি।

*যুগ্ম সম্পাদকে মাহবুব উল আলম হানিফের মত হাইব্রিড নেতাকে এক নাম্বারে রাখা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চট্রগ্রামের সাবেক মেয়রপুত্রের পদায়ন কোন যোগ্যতা বলে হয়েছে তা বোধগম্য নয়।পিতার অবদানের স্বীকৃতি পুত্র যদি পায় তাইলে জাতীয় নেতা সামাদ আজাদ পুত্র ডনকে কেন আনা হয়না।ভালো মন্দ মিলিয়ে করা কমিঠিতে কিছু কিছু নব্য নেতার উথ্বান আর দুর্নীতিবাজ বা অদক্ষদের পদায়নে অশুভ ইঙ্গিত পাচ্ছি বলে মনে করি।তাছাড়া দেশে গনতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার কোন নির্দিষ্ট ঘোষনা ও ছিলনা কাউন্সিলে।

#তিন-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিঠিতে এবার কলেবর অনেক বেড়েছে।নিন্দুকেরা যাই বলুক না কেন ১৬ কোটি মানুষের দেশে দেশের অন্যতম বৃহত্তম দলের কমিঠিতে এমন সংখ্যা থাকাটা দোষের কিছু মনে করিনা।কিন্তু কথা হল,কর্তা ব্যাক্তিদের পদায়নে অনেক যোগ্য আর পোড় খাওয়াদের পদাবনি বা সর্বোচ্চ ফোরামে না নিয়ে কম অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের অপেক্ষাকৃত বেশী অগ্রধীকার দেয়া হয়েছে।

*জাতীয় স্থায়ী কমিঠিতে সালাহ উদ্দীনের মত কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতার স্থান হলেও ছাত্রলীগের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও অভিজ্ঞ নেতা শাহ মোয়াজ্জেম,চট্রগ্রামের আব্দুল্লাহ আল নোমান বা মেজর হাফিজদের স্থান হয়নি।এদের অভিজ্ঞতা বর্তমান বিএনপির অনেক স্থায়ী কমিঠির সদস্যের চেয়ে বেশী বলে সর্বজন বিদিত।সর্বোচ্চ এ ফোরামে আগে বেগম সরোয়ারি রহমান সবেদন নীলমনি থাকলেও এবার তাকে বাদ দিয়ে নারী সদস্য আর কাউকে রাখা হয়নি।নারী প্রতিনিধিত্ব থাকাটা অতি জরুরি ছিল।এক্ষেত্রে বেগম সেলিমা রহমানের মত তৃনমুল থেকে আসা সংগঠককে নেয়া যেত।আবার ভাইস চেয়ারম্যানের তালিকা দেখা অনেক 'শক্তিশালি' আর মজবুত নেতৃত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে।কিন্তু উপদেষ্টা কাউন্সিলের তালিকা দেখে মনে হবে সবাইকে খুশি রাখার একটা সুক্ষ মানসিকতা কাজ করেছে হাই কমান্ডের।যাদেরকে সম্পাদকীয় পদে রেখে অপেক্ষাকৃত বেশী কাজ করানো যেত এমন অনেকের জায়গা হয়েছে সেখানে।অন্যদিকে এই তালিকায় দলে সদ্য যোগ দানকারী অনেকের ও নাম আছে।সিলেট বিভাগ থেকে পাচ জনের নাম এসেছে এ তালিকায় কিন্তু এর মাঝে তিন জন ই একেবারে নতুন রাজনীতিবিদ।একজনের বিরুদ্বে 'জামায়াতের সদস্য' এই অভিযোগ ও আছে।তাছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা আমান,হাবিবদের এখানে না রেখে বিভাগীয় সম্পাদক বা যুগ্ম মহাসচিব পদে রেখে এদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেত।আশার দিক এই যে, বিএনপিতে এবার এক নেতার এক পদ নীতি অনুসরন করা হয়েছে যা সাংগঠনিক শৃংখলা রক্ষায় ইতিবাচক ভুমিকা পালন করবে।তাছাড়া সাবেক ছাত্রদল নেতাদের নির্বাহী কমিঠির বিভিন্ন পদে আসীন বা সদস্যপদ লাভ দলের গনতন্ত্র পুনরোদ্বার আন্দোলনে ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে।শ্যামা ওবায়েদের মত তরুন নেত্রীর উথ্বান ও ইতিবাচক বলে মনে করি। তবে বিগত আন্দোলনে রাঝপথে থাকা নারী নেত্রী পাপিয়া,রানু বা শিরিন সুলতানাদের মুল্যায়ন করা হয়নি।যা হয়ত নেতিবাচক হিসেবে থাকবে অনেকের কাছে।

#চার-দুই দলের সম্মেলনে যদি মহাসচিব বা সাধারন সম্পাদকের পদে নির্বাচনে ব্যাবস্থা হত তাইলে ইতিবাচক হত দলীয় রাজনীতিতে গনতন্ত্র চর্চায়।কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক হলে ও সত্য যে এখানে কাউন্সিলরদের মতের প্রতিফলন হয়না।নেত্রীদের মনোনয়ন ই মুখ্য হিসেবে কাজ করে।যদি সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচনের ব্যাবস্থা হত তাইলে দেখা যেত সারাদেশের তৃনমুল নেতারা তাদের রাঝপথের আন্দোলন বা সাংগঠনিক সুখ দুখ শেয়ারের জায়গা বেছে নিত।এক্ষেত্রে কর্মী বান্ধব নেতাদের ই নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকত।

বিষয়: বিবিধ

১১১৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379348
০১ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ। নিজেদের পার্টিতেই যাদের গনতন্ত্র নেই তাদের কাছ থেকে সুশাসন আশা করাই ভুল।
379357
০১ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৩৬
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ /

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File