জেদ্দা ইংলিশ স্কুলের ক্ষমতালোভী চেয়ারম্যানের সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতি; অভিভাবকদের দ্বারা চরমভাবে অপদস্থ আর লাঞ্চিত হবার অন্তরালে......

লিখেছেন লিখেছেন কালের-কন্ঠ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৬:৫৬ সকাল

অডিট রিপোর্টে প্রাপ্ত দুনীতির টাকা যদি তুই ফেরত না দিস, তাহলে তোরে গাছের সাথে লটকাইয়া জুতা দিয়া পিটামু..। দেখি কোন বাপ তোরে বাচাতে আসে.,,।

বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একজন যখন এ কথাগুলো প্রবাসী বাংলাদেশী সন্তানদের খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠের দুনীতিবাজ চেয়ারম্যান কাজী বশীরকে মারমুখী হয়ে উচু কন্ঠে চীতকার দিয়ে বলছিল, তিনি নিশ্চুপ। দেখে মনে হয়েছে - মহামান্য আদালতের রায়ে দন্ডিত অপরাধের জন্যই কোন দাগী আসামী এসব কথাগুলো নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে। এ যেন একান্তই তার প্রাপ্য।

খুব কাছ থেকে দেখা একজন স্বাক্ষী হিসেবে আমি অবাক দৃস্টিতে চেয়ে আছি চেয়ারম্যানের দিকে। বিশ্বাস হচ্ছিলনা যে, জেদ্দা প্রবাসী বাংলাদেশীদের অহংকার ইংলিশ স্কুলের চেয়ারম্যানকে এ সব বিশ্রী কথাগুলো বলা হচ্ছিল।

বেহায়া আর লজ্জাহীন অসহায় চোরের মত এতগুলো অসহ্য কথা চেয়ারম্যান কাজী বশীরকে কেন হজম করতে হলো, তার এ নীরবতার পেছনে এমন কি চরম অপরাধ ঘটেছিল, সে সব না জানা কথাগুলো সম্মানিত অভিভাবকদের জানানোর জন্যই আমার এ লেখনি।

১৪ই সেপ্টেম্বর সোমবার। অডিট রিপোর্ট পেশ করার মহেন্দ্রখন। বিগত তিন মাস ধরে চলে আসা স্কুলের এ অডিট রিপোর্টে রয়েছে হাজারো অনিয়ম আর দুনীতির তথ্যপুর্ন ডকুমেন্টস। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যানের হাতে এটি হস্তান্তর করা হবে।

অডিট চলাকালীন সময়ে চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া, ইনভয়েসের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অনুপস্থিতি, হিসাববিহীন মিলিয়ন রিয়ালের ঘাপলা, বিশাল অংকের নথিপত্র গায়েব, লক্ষ লক্ষ রিয়ালের নিয়ম বহির্ভুত লেনদেন, এসব বিষয়গুলো জানতে চাওয়া প্রশ্নের উত্তরে হাজারো অসংগতি। সবকিছু মিলিয়ে চেয়ারম্যানের বুঝতে বাকী নেই যে, এ যাত্রায় পুলসেরাত পার হবার আর কোন সুযোগ নেই। তার নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া সব দৃনীতির এ আমল নামা অভিভাবকদের কাছে প্রকাশ হলে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটবে। .....।তাই অতীতের মত যে কোন উপায়ে এ অডিট রিপোর্ট প্রকাশকে রুদ্ধ করে দিতে হবে।

বাচার জন্য চিরাচরিত নিয়মের মতই সবার অগোচরে চেয়ারম্যান কাজী বশির সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছেন। আজ স্কুলের বাহীরের গেট বন্ধ। কেউ ঢুকার সুযোগ নেই। রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকে তাকে জিততেই হবে।

ভেতরে শুরু হয়েছে অডিট রিপোর্ট পেশ। তুমুল ঝগড়া। ভয়ভীতি। গলাবাজী। ...অবশেষে দস্তখতের পালা। কিন্তু কাজী বশির দস্তখত দিয়ে এ অডিট রিপোর্টকে স্বীকৃতি দিতে কিছুতেই রাজী নয়। এ যেন নিজের পায়ে কুড়াল মারা। তাই সে আরও সময় চায়। আর সময় ক্ষ্যাপন করেই এটিকে দামা চাপা দিয়ে মরিয়া।

তুমুল বাকবিতন্ডা, হুমকি ধমকির মধ্য দিয়ে অডিট রিপোর্ট পেশের পর্বটি শেষ না হতেই প্রাক্তন মেম্বার আমীর ফিরোজ ছুটে এসেছে এ রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে। কারণ এটি যেহেতু তার সময়ের অডিট রিপোর্ট, এতে তাকে ডাকার কথা থাকলেও ডাকা হয়নি। তাই সে কতিপয় অভিভাবক জাফর, মান্নান, আফজাল, জলিল সহ অনেককে নিয়ে এসে স্কুল গেটে হাজির। এসব অভিভাবকরা জানে স্বার্থের জন্য কাজী বশীর কোন না কোনভাবে অডিট রিপোর্টটি বাজেয়াপ্ত করে ফেলবে।

গেটে এসেই কাজী বশীরের খুব শ্রদ্ধাভাজন অভিভাবক জাফর ভেতরে ঢুকার জন্য বার বার অনুমতি চেয়েও ব্যার্থ হয়েছে। যার পদচুম্বনে কাজী বশীর সব সময় অস্থির থাকত, যাকে কেবলা বাবার দরগাহের মতই পুজা করত, আজ তাকে গেটের ভেতরে ঢুকতে না দেয়ার ফন্দিটা বুঝতে বেশী দেরী হয়নি।

ধুলিঝড়ের মাঝে দাড়িয়ে থাকা এসব অভিভাবক অবশেষে মৃদু অনুমতি পেয়ে স্কুলে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেল। মেম্বার ইয়াহিয়া খুব ভীত সন্ত্রস্ত্রভাবে বের হয়ে এসে বলত লাগল,

- জাফর ভাই। আমি এ স্কুলে মেম্বার হিসেবে আর থাকতে চাইনা। ওরা আমার বাসায় গিয়ে হামলা করার হুমকী দিচ্ছে। বলছে, আমাকে দেখে ছাড়বে। কারন একটাই। আামি কেন অডিট রিপোর্টটি তার কথামত দামাচাপা দিতে রাজী হয়নি।

,,আপনাকে কে মারবে আমি দেখবো। দেখি কোন শালায় মারে। এমন সময় কাজীর ভাগীনা মাসুদ আর কুমিল্লা সমিতির হুমায়ুন মারমুখী হয়ে এগিয়ে আসতেই অভিভাবক জাফর খুব ক্ষ্যাপে গেল। মুহুর্তেই সজোরে ২০ কেজী ওজনের একটি মুষ্ঠিবন্ধ ঠুসি বসিয়ে দিল হুমায়ুনের গালে। ঠুসির ভার বহন করতে না পেরে হুমায়ুন মাটিতে পড়ে গেল। ভেতর থেকে ছুটে এল মোজাম্মেলসহ কুমিল্লা সমিতির আরও কতিপয় লাঠিয়াল বাহীনি। জাফর অবাক। আমি একি দেখছি।

কাজীকে লক্ষ্য করে বলতে লাগল,

আমরা এতক্ষণ যাবত স্কুলে ঢুকতে পারিনাই। আর তুই কেন এসব লাঠিয়াল বাহীনিকে ভেতরে ঢুকিয়ে রেখেছিস। সামনে আয়। দেখি কোন শালা লাঠিয়াল হয়ে লড়তে চায়।

,,,কিছুক্ষণ আগে এরাই কাজীর পক্ষে ধমকিয়ে কথা বলে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল উপস্থিত অডিটর আর নতুন মেম্বারদের।

লক্ষ লক্ষ টাকা দুনীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কাজীকে উপস্থিত অভিভাবকরা একজন দাগী চোরের মতই ব্যবহার করেছে। অবশেষে জনৈক অভিভাবক কাজীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালী, ধমক দিলেও সে নিশ্চুপ। কোডিং করার মত তার মুখ থেকে কাজীকে ছুড়ে দেয়া ভাষাটা ছিল এমন

অডিট রিপোর্টে প্রাপ্ত দুনীতির টাকা যদি ফেরত না দিস, তাহলে তোরে গাছের সাথে লটকাইয়া জুতা দিয়া পিটামু..। দেখি কোন বাপ তোকে বাচাতে আসে.,,।

প্রশ্ন হল,

- এ ধরনের একটি খ্যাতনামা স্কুলের চেয়ারম্যানকে এতটুকু অপদস্থ আর অপমান করার পরও তিনি কেন নিশ্চুপ ছিলেন?

- তিনি যদি সত্যিই সত হয়ে থাকেন, তাহলে গাছের সাথে লটকিয়ে জুতা পেটা করার কথা বলার পর ও কেন অভিযুক্ত দাগী আসামীর মত থ হয়ে দাড়িয়ে শুনছিলেন?

- কেন অভিভাককের কাছে এ অপদস্তের বিচার চাননি?

- তিনি এমন কি করেছেন যে, সবার সামনে তাকে এতটুকু অপমানজনক কথা সহ্য করতে হয়েছে?

.,. এসব না জানা দুনীতির লোমহর্তষক তথ্য নিয়েই আগামী পর্বে আসছি। অপেক্ষায় থাকুন।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

342790
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


অপেক্ষায় রইলাম
342805
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভদ্রলোক শুনেছি আওয়ামি লিডার!!!!
342808
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩৪
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সাহসী পদক্ষেপ। অপেক্ষায় থাকব। অসংখ্য ধন্যবাদ।
342911
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:৫১
খালেদ সাইফুদ্দিন লিখেছেন : এবার যদি অভিবাবকদের সুধ বুদ্ধির উদয় হয়। পরবর্তি পর্বের অপেক্কায় আছি। লিখার জন্য ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File