ভালবাসার সালতামামি

লিখেছেন লিখেছেন নাজমুল আহসান ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ০১:১২:২৯ দুপুর



ভালবাসা একটি সহজ-সরল শব্দ । এটি মানুষকে সুন্দর করে । মহান করে । শব্দটিতে আবেগের ছড়াছড়ি । আবেগ ছাড়া যেমন ভালবাসা হয়না তেমনি অতি আবেগ কখনো এর আবেদনকে ক্ষুণ্ন করে । তবে ভালবাসা আবেগ দিয়েই বিচার্য , যুক্তি দিয়ে নয় ।



ভালবাসা সর্বজনীন বলে হৃদয়বান মানুষের পক্ষেই এর সকল শাখায় বিচরণ করা সম্ভব। হৃদয়হীন মানুষ ও এর কোন কোন শাখায় হযতো আংশিক আথবা বিপজ্জনকভাবে বিচরণ করে । সেটা নগণ্য বটে । তবে হদয়বান মানুষ মাত্রই এর সকল শাখায় বিচরণ করবেন তা নয় । এর জন্য মেধা এবং যোগ্যতার চেয়ে যে জিনিষটি বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে সাধনা । কথায় বলে ভালবাসাই আযোগ্য কে যোগ্য করে তোলে । তাই ভালবাসা এবং ভালবাসার মানুষকে হৃদয় দিয়েই উপলব্দি করতে হবে, মেধা বা যোগ্যতা দিয়ে নয় । কারো যদি এক্সট্রা অর্ডিনারি কোন যোগ্যতা থাকে সেটির সদব্যবহার ভালবাসাকে অলংকৃত করতে পারে বৈকি ।

ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন মৌনতা , বাকপটুতা নয় । আবেগের কারণে কখনও মৌনতার মাঝে ও বাকপটুতা আসতে পারে তবে ভালবাসাকে উপলব্দি করতে হবে মৌনতা দিয়েই ।

ভালবাসা শব্দটি সহজ হলেও এর চলার পথ সবসময় মসৃণ নয় । ভালবাসার জন্য একটি সভ্যতার পতন ঘটতে পারে । হতে পারে রক্তপাতও । ‘ভালবাসি’ একথা যেমন সহজে বলা যায়না তেমনি এর ভার বহন করা ও ঢের সহজ নয় ।

রবি ঠকুরের ভাষায় , ‘ সহজ কথা বলতে আমায় কহ যে

সহজ কথা বলা যায়না সহজে ।’

ভালবাসা কখনও নীতি এবং সংস্কারকে মান্যজ্ঞান করে, কখনওবা এসবের উর্ধ্বে উঠে ঠিকানাহীন গন্তব্যে যাত্রা করে । কবির ভাষায়-

‘ তুমি লিখোনা , লিখোনা আমায় বন্ধু !

সমাজ-সংস্কারের মাথা খেয়োনা

নেমো না কো মাঠে আদাজল খেয়ে

নিভৃতেই ফেলো নিঃশ্বাস

আমি ঘ্রাণ শুঁকে চিনে নিব

এ তোমারই দীর্ঘশ্বাস ! ’

ভালবাসা এখানে সংযমের ভূমিকায় - প্রেয়সিকে সংস্কারের খোলসমুক্ত হয়ে লোকালয়ে আসাকে নিষেধ করছে । অন্য দিকে-

‘ ভেঙ্গে দাও আজ সংযমের বাঁধ যত

আমি নিজের বুকেই বয়ে বেড়াব

নিজেরই নোংরামির ক্ষত ! ’

পরক্ষণেই ভালবাসা এখানে অপরিণামদর্শী গন্তব্যে প্রেয়সীকে আহ্বান করছে ।

ভালবাসা তার অপজিট পার্সনকে দূরে ঠেলার চেয়ে কাছেই টানে বেশি । এটিই ভালবাসার সহজাত ধর্ম । প্রিয় কে দূরে ঠেলে দিয়ে বিরহের সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে যারা নিজেকে সুখি বলে , তার মিথ্যে বলে । এতদসত্তে ও দূরে ঠেলে দেয়ার সংস্কৃতিতেই আমরা অভ্যস্থ । ক্ষত থেকে যা সৃষ্টি করা সম্ভব তার চেয়ে প্রিয়তমকে কাছে পাওয়ার আনন্দ থেকে মহত কিছু সৃষ্টি সম্ভব । আমাদের সংস্কৃতিতে মিডল পয়েন্ট ইমোশন কাজ করে বলেই অকারন দুঃখ-দুঃখ ভাব ।

রবি ঠাকুরের গান--

“ সখী, ভালোবাসা কারে কয় !

সে কি কেবলই যাতনাময় ।

সে কি কেবলই চোখের জল ?

সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?’

লোকে তবে করে কী সুখের তরে

এমন দুখের আশ ।”

কবির ভাষায়-

“ তুমি দুঃখ হয়ে এসোনা বন্ধু

সুখ হয়ে এসো সুখের ভেতরে

কবিতা হয়ে এসোকাব্যের ভিতরে ।”



পৃথিবীতে মায়ের ভালবাসার সাথে কোন কিছুই তুল্য নয় । পৃথিবীর কোন ভাষাই এ ভালাবাসাকে অলংকৃত করতে যথার্থ নয় ।

স্রষ্ট্রার সাথে যাদের প্রেমের সম্পর্ক স্রষ্ট্রার ইচ্ছোকে তারা নিজের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা করতে ব্রত থাকেন-

রবি ঠাকুরের ভাষায়-

‘ আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার

চরণধূলার তলে ।’ (গীতাঞ্জলী)

কবি এখানে কেবল স্রষ্ট্রার পায়ের নিচে নয় , পায়ের নিচে যে ধুলো থাকে সেখানে আশ্রয় চাচ্ছেন । এভাবে স্রষ্টার ইচ্ছের মাঝে কবি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন ।

কবি আরও বলছেন--

‘ তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ

আমার জীবন-মাঝে ।’ (গীতাঞ্জলী)

ভালবাসা কখনও তার চার পাশে প্রতিহিংসার আবহ তৈরি করে । একদিকে ভালবাসার আগুন দগ্ধ করে প্রেমিক যুগল কে করে মহান । অন্য দিকে হিংসার আগুনে জ্বলে ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠী জ্বালিয়ে দেয় সভ্যতা, করে অকারন রক্তপাত !



হেলেন ও পেরিসের প্রেমের জন্য গ্রিক সৈন্যরা ট্রয়নগরীতে আগুন ধরিয়ে দেয় । প্রেমের আগুনে নয় প্রতি হিংসার আগুন ভস্ম হলো রূপবতি ট্রয়নগরি ।

এছাড়া দেশকে ভালবেসে জীবন দেয়োর সংস্কৃতির ইতিহাস প্রাচীন । ৭১ এ লাখো শহীদের খুনে সোনার বাংলাদেশ অর্জনের অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে ।

আবুল হাসানের ভাষায়-

“ছোটো ভাইটিকে আমি

কোথাও দেখিনা,

নরোম নোলক পরা বোনটিকে

আজ আর কোথাও দেখিনা !

কেবল পতাকা দেখি,

কেল উৎসব দেখি ,

স্বাধীনতা দেখি,

তবে কি আমার ভাই আজ

ঐ স্বাধীন পাতাকা ?”

তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব ?”

অবুল হাসানের স্বাধীনতার এ করুন চিত্রে নোনাজল ধরে রাখা দায় হয়ে যায়-সে একান্ত ভালবাসার জন্যই ।



পৃতিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছি । এবিরল ভালবাসার গৌরবময় অভিজ্ঞান আমাদের ঝুলিতে এসেছে সেই ৫২ সালে ! এই বিরল অর্জনে এখনো বিশ্বের কোন জাতি ভাগ বসাতে পারে নি !

“ আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো

একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি !”



বিষয়: সাহিত্য

১১৩৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

301543
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৫ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:৩৩
244083
নাজমুল আহসান লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File