নাইটক্লাব ও গানবাদ্যের ভয়াবহ পরিণতি
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০২:৪৯:৪৩ রাত
#বাঁশির_ধ্বনি ও গান_বাদ্য
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " صَوْتَانِ مَلْعُونَانِ : صَوْتُ مِزْمَارٍ عِنْدَ نِعْمَةٍ ، وَصَوْتُ رَنَّةٍ عِنْدَ مُصِيبَةٍ "
বাংলা: আনাস বিন মালেক (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দুটি শব্দ-ধ্বনি অভিশপ্ত; সুখ ও খুশীর সময় বাঁশীর শব্দ এবং মসীবত, শোক ও কষ্টের সময় হা-হুতাশ ধ্বনি। (জিয়া আল মাকদিসীর "আহাদীসুল মুখতারাহ":১৯৯০) অপর বর্ণনায় এসেছে- (صَوْتَانِ مَلْعُونَانِ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ : صَوْتُ مِزْمَارٍ عِنْدَ النِّعْمَةِ ، وَصَوْتُ اللَّعْنِ عِنْدَ الْمُصِيبَةِ)
"দুনিয়া ও আখিরাতে দুটি ধ্বনি অভিশপ্ত; সুখ ও খুশীর সময় বাঁশীর শব্দ এবং মুসীবতের সময় হাহাকার ধ্বনি"। (জামিউস সগীর:৫০৩৩,আহাদীসুল মুখতারাহ:১৯৯১)
#আলোচনা: সুখের সময় বাঁশি বা বাদ্য-ধ্বনি আর শোকের সময় মাতমের ধ্বনি ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত। রবী ইবনে হাবীব বলেন-
( الْمُرِنَّةُ : النَّائِحَةُ . وَصَوْتُ الْمِزْمَارِ : صَوْتُ مُغَنِّيَةٍ) রন্না (رَنَّةٍ ) হলো মাতম বা বিলাপ করা, বাঁশির শব্দ মানে হলো গানের শব্দ। (দ্রষ্টব্য: মুসনাদে রবী ইবনে হাবীব:৬১৬)
#গান_বাদ্য_হারাম: ইসলামে যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র হারাম। বাদ্যহীন গানের কথা যদি ভালো হয় তাহলে তাহলে গান বৈধ। কেননা গানের লিপি কথার মতো। ঈদ বা বিয়ে এই জাতীয় খুশির দিনে ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের দফ বাজানোর বৈধতা হাদীসে পাওয়া গেলেও বড়রা কখনো গান-বাদ্য করতেন না, এমনকি দফও নয়।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- দফ (ঢোলক) হারাম, বাদ্যযন্ত্র হারাম, তবলা হারাম এবং বাঁশীও হারাম।(বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:২০৪০২, তাবারানীর মু'জামুল আওসাত:৭৩৮৮)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। “এমন কতক লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্ৰষ্ট করার লক্ষ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে” (সূরা লোকমানঃ ৬)। তা হচ্ছে "গান-বাজনা ও অনুরূপ বস্তুসমূহ"। (সহীহ আদাবুল মুফরাদ:৯৫৫)
#গানবাদ্য_নৃত্যানুষ্ঠান: আজকাল মুসলিম দেশগুলোতে বিধর্মীদের মতো নানা উৎসবে এবং নৈশপার্টি (Night party)তে অবৈধ পানীয়ের সাথে নাচ-গান চলে। রাসূলুল্লাহ সা. এ সম্পর্কে উম্মাতকে সতর্ক দিয়েছেন!
আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অবশ্যই আমার উম্মতের মাঝে (কিছু লোককে) মাটি ধসিয়ে, পাথর বর্ষণ করে এবং আকার বিকৃত করে (ধ্বংস করা) হবে। আর এ শাস্তি তখন আসবে, যখন তারা মদ পান করবে, নর্তকী রাখবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে। (সহীহুল জামে:৫৪৬৭) হাদীসটি ইমরান ইবনে হুসাইন রা. সূত্রেও বর্ণিত আছে। (তিরমিযী:২২১২)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। তেমনি এমন অনেক দল হবে, যারা পাহাড়ের ধারে বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের নিকট কোন অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা বলবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দেবেন, আর বাকী লোকদেরকে তিনি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন। (বুখারী:৫৫৯০) অপর বর্ণনায় এসেছে-
আমার উম্মাতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (ইবনে মাজাহ:৪০২০)
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মদপান করা, জুয়া খেলা এবং ঢোল বাজানো হারাম করেছেন এবং বলেছেনঃ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। (মিশকাত:৪৪২৯) সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, আমি আলী ইবনু বাযীমাকে ‘কুবাহ’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তা হলো তবলা বা ঢোল। (দ্রষ্টব্য: আবু দাউদ:৩৬৯৬, নাইলুল আওতার:৩৫৬১)
#ঘন্টা_ঘুঙুর:
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘণ্টা হলো শাইতানের বাঁশি। (মুসলিম:২১১৪)
#মাতম_করা: মৃত্যু বা যে কোনো শোকের সময় নারীদের উচ্চস্বরে বিলাপ করা, মাতম করা জাহেলী যুগের কর্মকান্ড এবং ইসলামে নিষিদ্ধ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ)
যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গালে চপেটাঘাত করে, বুকের জামা ছিন্ন করে এবং জাহিলী যুগের মত বিলাপ করে, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। (বুখারী:১২৯৪,১২৯৭, ১২৯৮, ৩৫১৯, মুসলিম: ১০৩) অপর বর্ণনায় এসেছে-
বিলাপকারী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে এভাবে উঠানো হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার (চাদর) খসখসে চামড়ার ওড়না থাকবে।(মুসলিম:৯৩৪)
পুনশ্চ: হাদীসটির ভিন্ন রূপ-
صَوْتَانِ مَلْعُونَانِ : صَوْتُ وَيْلٍ عِنْدَ مُصِيبَةٍ ، وَصَوْتُ مِزْمَارٍ عِنْدَ نَغَمَةٍ
#বর্ণনাকারী: আনাস ইবনে মালিক (রা.)
#মান: সহীহ
#গ্রন্থ: জিয়া আল মাকদিসীর "আহাদীসুল মুখতারাহ":১৯৯১, নুরুদ্দীন হাইসামীর "কাশফুল আসতার":৭৪৪,রিসালাতুল কুশাইরী:৮৬, মুসনাদে বাযযার:৭৫১৩, সহীহ আত তারগীব:৩৫২৭, দাইলামীর ফেরদাউস:৩৭৭৮, জামিউস সগীর: ৫০৩৩, সহীহুল জামে':৩৮০১. ফাইযুল কাদীর:৫০৫০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ:৪০১৭
#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
#দরসে_হাদীস
বিষয়: বিবিধ
৬৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন