লোকহাসানোর জন্য অনর্থক কথা নিষিদ্ধ

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ০১:৩৩:৩০ রাত

#মুখ_ফসকানো_পা_ফসকানোর_চেয়ে_ক্ষতিকর (লোকহাসানোর জন্য অনর্থক কথা নিষিদ্ধ)

عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ، وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ

#বাংলা: বাহয ইবনু হাকীম (রহ.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা তার পিতার সূত্রে আমাকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ ধ্বংস তার জন্য যে জনতাকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে, তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস। (আবু দাউদ:৪৯৯০)

ভিন্ন ভাষ্য: "‏ وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ بِالْحَدِيثِ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ فَيَكْذِبُ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ ‏" (তিরমিযী)

#আলোচনা: কাউকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বললে তার পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এই হাদীসে। মিথ্যা বলা সর্বাস্থায় নিষিদ্ধ, তা হাস্য রসিকতারচ্ছলে হলেও নিষিদ্ধ এবং পাপ। একজন মুসলমান সত্যবাদী হবেন, মিথ্যা বলবেন না এবং কথা ও কাজে সব সময় মন্দ বিষয়গুলো বর্জন করবেন।

আরবীতে (وَيْلٌ) শব্দের অর্থ হলো মহাধ্বংস। কারো মতে, জাহান্নামের গভীরে একটি গর্ত। কারো মতে, (وَيْلٌ) শব্দটি একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে তাকীদ হিসেবে অথবা প্রথমটি বারযাখ বা কবরের জীবনে, দ্বিতীয়টি হাশরে এবং তৃতীয়টি জাহান্নামে। (দ্রষ্টব্য: মিরকাতুল মাফাতীহ:৪৮৩৪)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, মিথ্যা বাস্তবিকপক্ষেও নয় এবং ঠাট্টাচ্ছলেও সংগত নয়। তোমাদের কেউ তার সন্তানকে কিছু দেয়ার ওয়াদা করে তা তাকে না দেয়ার বিষয়টিও সংগত নয়।(সহীহ আদাবুল মুফরাদ:২৯৯) আল্লাহর রাসূল (স.) মানুষের সাথে কৌতুক বা হাস্যরসের কথা বললেও তা ছিলো সত্য কথা। (দ্র. তিরমিযী:১৯৯০) তিনি বেশি হাস্যরস করতে নিষেধ করতেন, তিনি বলেন: বেশি হাস্যরস অন্তরকে মুর্দা বানিয়ে ফেলে। (দ্রষ্টব্য: সহীহাহ:৯৩০)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা একটি কথা বলে এই জন্য যে, সে এটা দ্বারা লোক হাসাবে। সে এ কথার দরুন জাহান্নামের মধ্যে এত দূরে নিক্ষিপ্ত হবে যা আকাশমণ্ডলী ও জমিনের দূরত্বের সমান। বান্দার পা পিছলানোর তুলনায় মুখ পিছলানো ভয়ানক ক্ষতিকর। (মিশকাত:৪৮৩৬) অর্থাৎ মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা অথবা অশ্লীল কিংবা অনর্থক (হারাম)কথা বলার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে এবং সে জাহান্নামের এতো গভীর পতিত হবে যে, তার গভীরতা আকাশ পাতালের দূরত্বের সমান হবে।

পুনশ্চ: ইদানিং ওয়াজমাহফিলে বক্তারা যে প্রকারে মানুষদের হাসানোর চেষ্টা করছেন কিংবা বিনোদন দিচ্ছেন তা কখনো বৈধ হতে পারে না। মানুষদের হাসানোর জন্য যারা মিথ্যা বলে কৌতুক করেন, বিদ্রুপ করেন, তামাশা করেন, খোঁচা মারেন, রঙ্গ করেন, দুষ্টামি (prank) করেন তাদের জন্য হাদীসটি ভাবনার বিষয়! আল্লাহ আমাদের যাবতীয় রঙ্গ-তামাশা থেকে দুরে রাখুন।

#বর্ণনাকারী: মুয়াবিয়া ইবনে হাইদা আল-কুশাইরি (রা)

#মান: হাসান

#গ্রন্থ: আবূ দাঊদ:৪৯৯০, তিরমিযী: ২৩১৫, হাকেমের আল মুসতাদরাক:১৪২/১৪৯, আহমাদ:১৯৫১৯,১৯৫৪২,১৯৫৬৯/২০০৪৬, সহীহুল জামি‘:৭১৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব:২৯৪৪, দারিমী: ২৭০২, শু‘আবুল ঈমান: ৪৮৩১, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা:২০২১৯/ ১১১২৬, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী:৯৫০-৫২/ ১৬৩১৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিন বায়হাক্বী: ২১৩৪৬, জামিউস সগীর:৯৬২৯।

বিষয়: বিবিধ

৫০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File