পাক-ভারত উত্তেজনা ও "গাযওয়াতুল হিন্দ": একটি পর্যালোচনা

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৩ মার্চ, ২০১৯, ০৬:৪২:২৭ সকাল

#পাক_ভারত_যুদ্ধ এবং #গাযওয়াতুল_হিন্দ

ইদানিং "গাযওয়াতুল হিন্দ" বা হিন্দুস্থানের যুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে অনলাইনে। বিশেষ করে পাক-ভারতের (কাশ্মীর ইস্যুতে) নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়াতে। কিছু লোক এটাকে হিন্দু তথা কাফিরদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ মনে করে হাদীসের গাযওয়াতুল হিন্দকে এখানে টেনে এনেছেন। যা অবশ্য অনেক আগে থেকেই একদল উগ্রবাদী লোক আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কৌশল ও প্রস্তুতি নেবার কথা বলে।

আমরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বাঙ্গালী। তাই রাজনৈতিক ইস্যুতেও আমরা হিন্দু-মুসলিম সংঘাত খুঁজে বেড়াই। তার পরিণতি কখনো কল্যাণকর হতে পারে না।



গাযওয়াতুল হিন্দ বিষয়ে একটি সহীহ বর্ণনা ও কিছু দূর্বল বর্ণনা এসেছে। আসুন দেখি হাদীসে কী বলা হয়েছে-

১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের দুটি দল আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পবিত্রাণ দান করবেন, একদল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদ করবে, আর একদল যারা ঈসা ইবন মারিয়াম (আঃ) এর সঙ্গে থাকবে। ( সুনানে নাসাঈ: ৩১৭৫, সুনানুল কুবরা: ১৮০৩২, মুসনাদে আহমাদ: ২১৮৯০)

হাদীসটি সহীহ। এখানে হিন্দুস্থানের যুদ্ধের ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। একদল বিদ্বানদের মতে এই ভবিষ্যদ্বাণী ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে যখন মুসলমানরা উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে মুহাম্মদ বিন কাসিম আল সাকাফির নেতৃত্বে সিন্ধু ও মুলতান জয় করেন এবং দ্বিতীয় উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এর শাসনামলে মাহমুদ গজনভি ভারত দখল করে। (দ্রষ্টব্য: আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ: ৬/২২৩, ৯/১১৩, ১১/৩৫৮, ১২/৮)

২. আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিন্দুস্থানের জিহাদের ওয়াদা দিয়েছিলেন। যদি আমি ঐ যুদ্ধের সুযোগ পাই, তা হলে আমি তাতে আমার জান-মাল ব্যয় করব। আর যদি আমি তাতে নিহত হই, তা হলে আমি শহীদের মধ্যে উত্তম সাব্যস্ত হব। আর যদি আমি ফিরে আসি, তা হলে আমি আবূ হুরায়রা হবাে আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত। ( সুনানে নাসাঈ: ১৩৭৩-৭৪, সুনানুল কুবরা: ১৮০৩১) এই হাদীসটির সকল সনদই দূর্বল।

৩. হযরত আরতাত রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ত ইয়ামানী খলীফার নেতৃত্বে কুস্তুনতুনিয়া (ইস্তাম্বুল) এবং রোমানদের এলাকা বিজয় হবে। তার যুগে দাজ্জালে আবির্ভাব হবে এবং হযরত ঈসা আঃ আগমন করবেন। তার আমলে ভারতের যুদ্ধ সংগঠিত হবে, যে যুদ্ধের কথা হযরত আবু হুরাইরা বলে থাকেন। (নুয়াইম বিন হাম্মাদ এর আল ফিতান: ১২১৭) এই হাদীসটি সহ আরো কিছু হাদীস বর্ননা করেছেন নুয়াইম বিন হাম্মাদ, যা সনদগতভাবে দূর্বল।

৪. হযরত সাফওয়ান ইবনে আমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, আমার উম্মতের একদল লোক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বিজয়ী করবেন। এক পর্যায়ে তারা ভারতের সম্রাটকে শিকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তাদের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং তারা শামের দিকে ফিরে যাবে। অতঃপর শাম দেশে হযরত ঈসা আঃ কে পেয়ে যাবে। (নুয়াইম বিন হাম্মাদ এর আল ফিতান: ১১৮২) সনদ দূর্বল

এসব দূর্বল হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যায় শেষ যমানায় আবারো হিন্দুস্থানের যুদ্ধ হবে যখন ঈসা আ. আবার পৃথিবীতে আগমণ করবেন। সুতরাং কেউ যেন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সংঘাত/যুদ্ধকে "গাযওয়াতুল হিন্দ" মনে না করে এবং বিভ্রান্ত হয়ে যেন কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনে জড়িয়ে না পড়ে। কেননা ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের সময়ে বা তার পরবর্তীতেই এই যুদ্ধ হবার কথা হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী।( আল্লাহই ভালো জানেন)। যদিও দূর্বল হাদীস দ্বারা কিছুই সাব্যস্ত করা যায় না। যদি সত্যই হয় তাহলে তা ঈসা আ. যামানায় এবং কোনো মুসলিম শাসকের অধীনেই হবে।

সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয় ইমাম মাহদী ও ঈসা আ.-এর সময়ে মুসলমানরা যুদ্ধ করবে ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে এবং তুর্কিদের বিরুদ্ধে।



পাক-ভারতের উত্তেজনা মূলত কাশ্মীরকে নিয়ে এবং এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাপার, যদিও কাশ্মীরের মুসলমানরা নির্যাতিত। এর কারণ মুসলিম শাসকদের রাজনৈতিক উচ্চাবিলাসিতা এবং উদাসীনতা। এটাকে কোনোভাবেই হিন্দু-মুসলিম সংঘাত ভাবা ঠিক নয়। যদি কখনো কোনো মুসলিম শাসক নির্যাতিত মুসলিম ভাইদের উদ্ধারে যুদ্ধ/জিহাদের ডাক দেন তাহলেই কেবল (তার আনুগত্যে সেই দেশের ও অনান্য মুসলমানরা) যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে।

কখনো অমুসলিমরা মুসলিমদের বিপক্ষে জয়ী হয়ে এই উম্মাতকে ধ্বংস করতে পারবে না:

আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এই উম্মাতের তরবারি ও এর শত্রুর তরবারি দু’টোকে আল্লাহ কখনো এ উম্মাতের উপর একত্র করবেন না। ( আবু দাউদ: ৪৩০১)
এর মানে হলো, কখনো মুসলমানরা নিজেরা পরস্পরে যুদ্ধ করবে, কখনো কাফিররা করবে,কিন্তু কখনো মুসলমান আর কাফিররা মিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লাগবে না।

পুনশ্চ:

দাজ্জালকে হত্যা করবেন ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. আর দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাবার জন্য সূরা কাহফ তেলাওয়াত করার কথা বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ( আবু দাউদ: ৪৩২১-২৩)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরার তৌফিক দিন এবং সন্দেহ, সংশয়, বিভ্রান্তিতে পড়ে কারো রাজনৈতিক হাতিযার যেন না হই। আমীন

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: বিবিধ

১১০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File