কাদের জন্য পৃথিবীতে কোনো ভয় নাই ও পরকালে চিন্তিত হবে না

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:২২:২৮ রাত

যাদের জন্য কোনো ভয় ও চিন্তা নাই:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সৎকর্মশীল বিশ্বাসীদের:



إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالصَّابِئُونَ وَالنَّصَارَىٰ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

“নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাসী, ইয়াহুদী, স্বাবেয়ী ও খ্রিষ্টান; তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করবে এবং সৎকাজ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।” ( সূরা মায়িদা, ৫: ৬৯) আরো দেখুন, সূরা বাকারা, ২: ৬২



পূর্ববতী ইয়াহুদী, নাসারা, সাবেয়ীদের মধ্য থেকে যারা বিশ্বাসী নেককর্মী ছিল এবং বর্তমানে যারা উম্মাতে মুহাম্মাদী হিসেবে নেককর্ম করবে তাদের জন্য কোনো ভয় নেই, দুশ্চিন্তা নেই। যেমন রাসূলুল্লাহ সা.বলেছেন,

‘‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে সেই আল্লাহর শপথ! এই উম্মতের যে কেউ আমার (রিসালাতের) কথা শুনবে, তাতে সে ইয়াহুদী হোক অথবা খ্রিষ্টান, তারপর সে যদি আমার উপর ঈমান না আনে, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান)

بَلَىٰ مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِنْدَ رَبِّهِ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

অবশ্যই যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধচিত্তে আত্মসমর্পণ করে, তার প্রতিদান তার প্রতিপালকের কাছে রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই ও তারা দুঃখিত হবে না। ( সূরা বাকারা, ২:১১২)



إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকার্য করে, নামায যথাযথভাবে আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখও পাবে না। (সূরা বাকারা, ২:২৭৭)



হেদায়েতের অনুসারীদের:



قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

আমি বললাম, ‘তোমরা সকলেই এ স্থান হতে নেমে যাও, পরে যখন আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। ( সূরা বাকারা, ২: ৩৮)



যারা ঈমানের উপর অটল থাকে:



إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

নিশ্চয় যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’ অতঃপর এই বিশ্বাসে অবিচলিত থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা আহকাফ, ৪৬:১৩)



আল্লাহর ওলীদের:



أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

মনে রেখো যে, আল্লাহর বন্ধুদের না কোনো আশংকা আছে আর না তারা বিষণ্ণ´ হবে। (সূরা ইউনুস, ১০:৬২)



মুত্তাকীদের:



يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي ۙ فَمَنِ اتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

হে মানবজাতি! যখন তোমাদের মধ্য হতে কোন রসূল তোমাদের নিকট এসে আমার নিদর্শনসমূহ বিবৃত করে, তখন যারা সাবধান হবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা আ’রাফ, ৭:৩৫)



বিশুদ্ধচিত্তের দানশীলদের:



الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

যে সকল লোক দিবারাত্রে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের ধন দান করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে। সুতরাং তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না। (সূরা বাকারা, ২:২৭৪)



নিজেদের যারা সংশোধন করে নেয়:



وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ ۖ فَمَنْ آمَنَ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

রসূলগণকে তো শুধু সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি। সুতরাং যে বিশ্বাস করবে ও নিজেকে সংশোধন করবে, তার কোন ভয় নেই এবং সে দুঃখিতও হবে না। ( সূরা আনআম, ৬:৪৮)



দানের কথা যে গোপন রাখে:



الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

যারা আল্লাহর পথে আপন ধন ব্যয় করে, অতঃপর যা ব্যয় করে, তার কথা বলে বেড়ায় না এবং (ঐ দানের বদলে কাউকে) কষ্টও দেয় না, তাদের পুরস্কার রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট, বস্তুতঃ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা বাকারা, ২: ২৬২)

নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলবেন না। তাদের মধ্যে একজন হল, (দান করে) অনুগ্রহ প্রকাশকারী ব্যক্তি।’’ (মুসলিম: ১০৬)

আল্লাহর পথে শহীদদের



فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِمْ مِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তারা আনন্দিত। এবং (যুদ্ধের সময়) তাদের পিছনের যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে; এ জন্য যে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা আলে-ইমরান, ৩: ১৭০)



পুনশ্চ: আল্লাহর পথে (বিশেষ করে আলোচ্য আয়াতে উহুদ যুদ্ধে) শহীদদের ব্যাপারে বলা হয়েছে তারা আলামে বারযাখ ও জান্নাতে আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত দেখে আনন্দিত হবে। (মুসনাদ আহমাদ ১/৩৬৫-৩৬৬, সুনানে আবূ দাউদ, জিহাদ অধ্যায়)

নিঃম্ব, অসহায়, গরীব মুমিনদের:



أَهَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ ۚ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ

(দেখ,) এদেরই সম্বন্ধে কি তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ এদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না? (এদেরকেই বলা হবে,) তোমরা বেহেশ্তে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না।’ ( সূরা আ’রাফ, ৭:৪৯)



এখানে এমন ঈমানদারদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা দুনিয়ায় নিঃস্ব-দরিদ্র এবং নিম্নশ্রেণীর লোক ছিল। উক্ত অহংকারীরা এদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করত ও বলত যে, ‘যদি এরা আল্লাহর প্রিয় হত, তাহলে দুনিয়াতে কি এদের এ অবস্থা হত?’ যখন আ’রাফবাসীরা জাহান্নামীদেরকে বলবে, ‘‘তোমাদের দলবল ও অহংকার তোমাদের কোন উপকারে আসল না।’’ তখন আল্লাহর পক্ষ হতে জান্নাতীদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হবে যে, ‘‘এরা হল তারাই, যাদের সম্পর্কে তোমরা কসম খেয়ে বলতে যে, এদের উপর আল্লাহর রহম-দয়া হবে না।’’ (তাফসীর ইবনে কাসীর)

আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের:



يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ

হে আমার দাসগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। ( সূরা যুখরুফ, ৪৩:৬৮)

এটা কিয়ামতের দিন সেই আল্লাহভীরুদেরকে বলা হবে, যাঁরা দুনিয়াতে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা রাখত। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

কাপাসিয়া, গাজীপুর-১৭৩০

বিষয়: সাহিত্য

৬৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File