পানাহারে ইসলামী শিষ্টাচার

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৭ মার্চ, ২০১৮, ০২:৫৯:৩১ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

পানাহারের ইসলামী শিষ্টাচার-

ডানহাতে পানাহার ও "বিসমিল্লাহ" বলে শুরু করা:



عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - قَالَ : كُنْتُ غُلَامًا فِي حِجْرِ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ . فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " سَمِّ اللَّهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ "

উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একজন বালক হিসেবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমার হাত খাওয়ার পাত্রের চতুর্দিকে পৌঁছত, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হতে খাও।

(সূত্র: সহীহ বুখারী: ৫০৬১, সহীহ মুসলিম: ২০২২, সুনানুল কুবরা: ১৪১৫৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩২৬৭, মালিক: ১৭৩৮, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক: ১৯৫৪৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্: ৩৩৬৮)



عَنْ حُذَيْفَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ "

হুযাইফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "শয়তান সে খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যদি না তাতে "বিসমিল্লাহ" বলা হয়।"

(সহীহ মুসলিম:২০১৭, সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৬৬, আহমাদ:২২৭৩৮, মিশকাত:৪১৬০)



عن عبد الله بن عمر قَالَ رَسُولُ اللَّهِ : - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ ، وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কিছু খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে তখন যেন ডান হাতে পান করে। (মুসলিম: ২০২০, মুওয়াত্তা ইমাম মালেক:১৭১২, তিরমিযী ১৮০০, আবূ দাঊদ: ৩৭৭৬, দারেমী:২০৩০, মুসনাদে আহমাদ:৪৫২৩,৪৮৭১, ৪৮৮৬, সহীহুল জামি‘:৩৮৪, ৩৮৫; মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক: ১৯৫৪১, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্:৩৩৬১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী:১৪১৫২)

বামহাতে পানাহার করা নিষেধ:



"عن عبد الله بن عمر أن النبي صلى الله عليه وسلم قال"‏ لاَ يَأْكُلْ أَحَدُكُمْ بِشِمَالِهِ وَلاَ يَشْرَبْ بِشِمَالِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ ‏"‏

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "তোমাদের কেউই যেন বাম হাতে না খায় এবং সে (বাম) হাতে পানও না করে। কেননা শয়তান তার বাম হাতে খায় এবং বাম হাতে পানও করে। (সহীহ মুসলিম:২০২০, সহীহ তিরমিযী:১৭৯৯)

সাধারণ দস্তরখানা বিছিয়ে রাসূলুল্লাহর আহার গ্রহণ:



عَنْ أَنَسٍ، قَالَ مَا أَكَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي خِوَانٍ وَلاَ فِي سُكُرُّجَةٍ وَلاَ خُبِزَ لَهُ مُرَقَّقٌ ‏.‏ قَالَ فَقُلْتُ لِقَتَادَةَ فَعَلَى مَا كَانُوا يَأْكُلُونَ قَالَ عَلَى هَذِهِ السُّفَرِ ‏.‏

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি [আনাস (রাঃ)] বলেনঃ "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো টেবিলে রেখে আহার করেননি এবং পিরিচেও খাবার খাননি। আর তাঁর জন্য কখনো চাপাতি রুটিও (পাতলারুটি) তৈরি করা হয়নি। কাতাদাকে জিজ্ঞেস হলো, তবে তাঁরা কিভাবে খেতেন? তিনি বললেনঃ সাধারণ দস্তরখান বিছিয়ে আহার করতেন। (সহীহ বুখারী: ৫০৭১, তিরমিযী: ১৭৮৮, সুনানুল কুবরা:১২৯৪৪,ইবনে মাজাহ:৩২৯২, আহমাদ:১১৯১৬, মিশকাত:৪১৬৯)

খাদ্যের দোষ না ধরা, রুচি না হলে খাবে না:



عن أبي هريرة قالقَالَ : " مَا عَابَ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - طَعَامًا قَطُّ ، إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ وَإِنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ "

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাদ্যের দোষ প্রকাশ করেন নি। অবশ্য মনে ধরলে খেয়েছেন। আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন। (সহীহ বুখারী: ৫০৯৩, মুসলিম:২০৬৪, আবূ দাঊদ ৩৭৬৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী:১৪১৬৪, তিরমিযী: ২০৩১, ইবনু মাজাহ: ৩২৫৯, আহমাদ:৯৭৯১)



মুমিন খায় এক অন্ত্রে আর কাফির খায় সাত অন্ত্রে:



عن أبي هريرةأَنَّ رَجُلًا كَانَ يَأْكُلُ أَكْلًا كَثِيرًا ، فَأَسْلَمَ ، فَكَانَ يَأْكُلُ قَلِيلًا ، فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَقَالَ : " إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ ، وَالْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ "

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি অধিক পরিমাণে খাবার খেতো, পরে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন সে অল্প খেতে লাগল। ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালে তিনি বললেনঃ মু’মিন খায় এক অন্ত্রে(আঁত) আর কাফির খায় সাত অন্ত্রে । (সহীহ বুখারী:৫০৮২) "মুমিন খায় এক অন্ত্রে আর কাফির খায় সাত অন্ত্রে" এই শব্দে আরো বর্ণিত আছে- সহীহ মুসলিম: ২০৬৩, ইবনে মাজাহ:৩২৫৬, তিরমিযী:১৮১৮, দারেমী:২০৪৩, মুওজামুল আওসাত: ৩৯০০, মুসনাদে আহমাদ, মুওয়াত্তা মালেক)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ضَافَهُ ضَيْفٌ كَافِرٌ فَأَمَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِشَاةٍ فَحُلِبَتْ فَشَرِبَ ثُمَّ أُخْرَى فَشَرِبَهُ ثُمَّ أُخْرَى فَشَرِبَهُ حَتَّى شَرِبَ حِلاَبَ سَبْعِ شِيَاهٍ ثُمَّ أَصْبَحَ مِنَ الْغَدِ فَأَسْلَمَ فَأَمَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِشَاةٍ فَحُلِبَتْ فَشَرِبَ حِلاَبَهَا ثُمَّ أَمَرَ لَهُ بِأُخْرَى فَلَمْ يَسْتَتِمَّهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الْمُؤْمِنُ يَشْرَبُ فِي مِعًى وَاحِدٍ وَالْكَافِرُ يَشْرَبُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ ‏"‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একবার একজন কাফির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাসায় মেহমান হন। তার জন্য একটি ছাগল দোহন করাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম করেন। ছাগল দোহনের পর সে সবটুকু দুধ পান করে। আরেকটি ছাগল দোহন করলে সে তার দুধও পান করে। তৃতীয় ছাগল দোহন করলে সে তার দুধও পান করে। এরকমভাবে সে একটানা সাতটি ছাগলের দুধ পান করে শেষ করে ফেলে।

পরের দিন সকালে সে ইসলাম কুবুল করে। তার জন্য একটি ছাগল দোহন করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম দেন। ছাগল দোহনের পর সে তা পান করে। তার জন্য তিনি আরো একটি ছাগলের দোহন করতে হুকুম দেন। কিন্তু সে তা পান করে আর শেষ করতে পারল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মু'মিন লোক একটি পাকস্থলী ভর্তি করে খাদ্য গ্রহণ করে, আর কাফির লোক সাতটি পাকস্থলী ভর্তি করে খাদ্য গ্রহণ করে। (সহীহ মুসলিম:২০৬৩, তিরমিযী:১৮১৯)



অল্প খাবার গ্রহণ:



عن جابر بن عبد الله قال : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقُولُ : طَعَامُ الْوَاحِدِ يَكْفِي الِاثْنَيْنِ ، وَطَعَامُ الِاثْنَيْنِ يَكْفِي الْأَرْبَعَةَ ، وَطَعَامُ الْأَرْبَعَةِ يَكْفِي الثَّمَانِيَةَ "

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট, দু’জনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট। (সহীহ মুসলিম: ২০৫৯, দারেমী:২০৪৪, ইবনে মাজাহ: ৩২৫৪, মু'জামুল আওসাত:৫৭৮৮)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে অপর বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।" (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত:৪১৭৭)



তিন আঙ্গুলি দিয়ে আহার গ্রহণ ও খাবার শেষে আঙ্গুল ও খাবারপাত্র চাটা:



عَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَأْكُلُ بِثَلَاثَةِ أَصَابِعَ ، وَيَلْعَقُ يَدَهُ قَبْلَ أَنْ يَمْسَحَهَا .

কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঙ্গুলে খাবার খেতেন এবং হাত মোছার পূর্বে তা চেটে নিতেন। ( সহীহ মুসলিম: ২০৩২, আবূ দাঊদ: ৩৮৪৮, সুনানুল কুবরা:১৪১৫৭, সুনানে দারেমী:২০৩৩, মু'জামুল কাবীর, আওসাত, মুসনাদে আহমাদ:২৬৬২৬)

অপর বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খাওয়ার শেষে) অঙ্গুলিসমূহ ও খাদ্যপাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেনঃ খাদ্যের কোন অংশটির মধ্যে বারাকাত রয়েছে নিশ্চয় তোমরা তা অবগত নও। (মুসলিম:২০৩৩, মিশকাত:৪১৬৫)



জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো প্রতিটি কাজের সময় শয়তান তার পাশে উপস্থিত হয়, এমনকি তার খাওয়ার সময়েও। অতএব যদি তোমাদের কারো লোকমা পড়ে যায়, সে যেন তা তুলে ময়লা পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়। আর খাওয়া শেষে যেন অঙ্গুলি চেটে নেয়। কেননা সে জানে না যে, তার খাদ্যের কোন্ অংশে বারাকাত রয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত:৪১৬৭)



সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

ক্রমশ....

বিষয়: সাহিত্য

৬৮১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385008
২৭ মার্চ ২০১৮ রাত ০৩:৪২
শেখের পোলা লিখেছেন : চলুক। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File