তাফসীর: সূরা ২৯ আনকাবুত: ৫২-৫৫ (জাহান্নাম কাফিরদের পরিবেষ্টন করে আছে)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:২৯:৫৩ রাত

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

قُلْ كَفَىٰ بِاللَّهِ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ شَهِيدًا ۖ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَالَّذِينَ آمَنُوا بِالْبَاطِلِ وَكَفَرُوا بِاللَّهِ أُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

৫২. (হে নবী)বলুন, আমার মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষীরূপে যথেষ্ট। তিনি জানেন যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে আছে। আর যারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে ও আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।



তাফসীর: মক্কার মুশরিকরা যারা নিদর্শন দেখানোর দাবি করছিল, তাদের বলুন, এই মর্মে যে, আমি আল্লাহর নবী এবং যে কিতাব আমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং তিনিই ভালো করে জানেন, তোমাদের আর আমার কর্মাবলী। নবুওয়্যুতের দাবি.. (আরো তাফসীর দেখুন. সূরা ৬৯ আল হাক্কাহ: ৪৪-৪৭)

তারাই মিথ্যায় বিশ্বাস করে যারা তাগুতে বিশ্বাসী তথা শিরক আর কুফরে লিপ্তরা।

এই সকল মানুষই বিকৃত জ্ঞান ও ভুল বুঝের শিকার। যার ফলে তারা যে ব্যবসা করেছে অর্থাৎ ঈমানের পরিবর্তে কুফর ও হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতাকে ক্রয় করেছে, তাতে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ ۚ وَلَوْلَا أَجَلٌ مُسَمًّى لَجَاءَهُمُ الْعَذَابُ وَلَيَأْتِيَنَّهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

৫৩. তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি আযাবের সময় নির্ধারিত না থাকত, তবে আযাব তাদের উপর এসে যেত। নিশ্চয়ই আকস্মিকভাবে তাদের কাছে আযাব এসে যাবে, তাদের খবরও থাকবে না।



তাফসীর: নবীর দাওয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে মুশরিকরা বলত, যদি তুমি সত্য নবী হও তাহলে আমাদের জন্য আযাব নিয়ে আসো। যেমন অন্যত্র এসেছে- আরও স্মরণ কর, যখন তারা বলেছিল, ‘হে আল্লাহ! যদি এ (কুরআন) তোমার পক্ষ হতে সত্য হয়, তাহলে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দাও।’(সূরা ৮ আনফাল:৩২)

ওদের কর্ম ও কথা অবশ্যই এর উপযুক্ত যে, তাদেরকে অবিলম্বে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হোক। কিন্তু আমার নিয়ম এই যে, আমি প্রত্যেক জাতিকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ঢিল দিয়ে থাকি। অতঃপর যখন সেই ঢিল দেওয়া সময় শেষ হয়ে যায়, তখন আমার আযাব এসে পড়ে।

যখন আযাবের নির্ধারিত সময় এসে যাবে তখন হঠাৎ এমনভাবে আযাব এসে যাবে যে, তারা বুঝতেও পারবে না। সেই নির্ধারিত সময় হল যা মক্কাবাসীদের জন্য লিখে রেখেছিলেন। অর্থাৎ বদরের যুদ্ধে বন্দী ও হত্যা হওয়া। অথবা কিয়ামত কায়েম হওয়া, যার পরে কাফেরদের জন্য থাকবে শাস্তি আর শাস্তি।

সূরা আনফালে এসেছে- আল্লাহ এরূপ নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকা অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এরূপ নন যে, তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা ৮ আনফাল:৩৩)

يَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ

৫৪. তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে; অথচ জাহান্নাম কাফেরদেরকে ঘেরাও করছে।



তাফসীর: এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, শাস্তির স্থান জাহান্নাম তাদেরকে আপন পরিবেষ্টনে রেখেছে। এর পরেও তারা শাস্তির জন্য তাড়াতাড়ি করছে? অথচ প্রতিটি জিনিস যা আসবে তা অতি নিকটবর্তীই হয়, তাকে তারা দূরে কেন ভাবছে? অথবা তা তাকীদের জন্য পুনরুক্ত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন-

"আমি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। (সূরা ১৮ কাহফ: ২৯)

يَوْمَ يَغْشَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ أَرْجُلِهِمْ وَيَقُولُ ذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

৫৫. যেদিন আযাব তাদেরকে ঘেরাও করবে মাথার উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে। আল্লাহ বললেন, তোমরা যা করতে, তার স্বাদ গ্রহণ কর।



তাফসীর: যখন সর্বদিক থেকে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে, তখন তাদেরকে বলা হবে- আস্বাদন করো (ধমক, ভীতিপ্রদর্শনের স্বরে)....যেমন আল্লাহ আরো বলেন-

তাদের শয্যা হবে দোযখের (আগুনের) এবং তাদের উপরের আচ্ছাদনও (হবে তারই)। এভাবে আমি অত্যাচারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।(সূরা ৭ আরাফ: ৪১)

তাদের ঊর্ধ্বদেশে অগ্নিস্তর থাকবে এবং নিম্নদেশেও অগ্নিস্তর থাকবে। (সূরা ৩৯ যুমার: ১৬)

সেদিন তাদেরকে ধাক্কা মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের আগুনের দিকে।এটাই সেই আগুন, যাকে তোমরা মিথ্যা মনে করতে। (সূরা ৫২ তুর: ১৩-১৪)

আল্লাহ আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। আমীন!!

বিষয়: সাহিত্য

৯৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File