“প্রতিপক্ষ”

লিখেছেন লিখেছেন বায়েজিদ আহমেদ ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:০৫:২২ রাত

সকাল ৮ টা ঘুমের মাঝে আছি, মোবাইলের রিং টোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । দেখি জামানের কল । রিছিভ করলাম,

-কিরে রাফি তুই কই ? আমি তোদের বাসার সামনে ।

-কেন ?

-আজ ৮.৩০ টায় গণিত পরিক্ষা । আর তুই এখনও ঘুমাইতেছিস !

মনে হল, আসলেই তো আজ ক্লাসে গণিত পরিক্ষা ! কয়েক দিন পর H.H.C ফাইনাল পরীক্ষা, তাই ক্লাস টেস্ট নিচ্ছেন । এই সব ক্লাস পরিক্ষায় কখনও সিন্সিয়ার ছাত্র ছিলাম না, কিন্তু এই পরিক্ষা টাতে যে ভাবেই হোক ফার্ষ্ট হতেই হবে । কারণ স্যার বলে দিয়েছে, দেখি এই বার কে ফার্ষ্ট হয় ছেলেরা নাকি মেয়েরা ? আর ছেলেদের মধ্য হতে সবার দৃষ্টি আমার দিকে, রাফি এবার তোকে ফার্ষ্ট হয়ে আমাদের মান সন্মান রক্ষা করাই লাগবে যে করে হোক । তাই সারা রাত জেগে সকালে কখন ঘুমেয়ে পরেছি বুজতেই পারি নি ।

যাক, পরে ফ্রেশ হয়ে জামান সহ কলেজে গিয়ে দেখি সবাই কে খাতা দিয়েছে প্রশ্ন এখনও দেয় নি । গিয়ে বসলাম আমার আসনে, প্রশ্ন পেয়ে মহা খুশি কারণ, যদিও অনেক কঠিন প্রশ্ন কিন্তু সব গুলি আমার জানা । তাই প্রথম দৃষ্টিটা তাকালাম মিলির দিকে যে কিনা সর্বদা ফার্ষ্ট হয়ে আসে ক্লাসে । দেখলাম তার মন টা খারাব, মনে মনে ভাবলাম যাক এইবার আমি ফার্ষ্ট হবোই । মনে মনে মিলিকে একটা গালি দিলাম, কারণ বাস্তবে টাকে গালি দেবার সাহস বিধাতা আমাকে দেয় নি ।

-শালি এবার দেখি তুই ক্যামনে ফার্ষ্ট হইস ! এবার আসে পাশে সবার দিকে তাকালাম দেখি প্রায় সবার মুখে কলম ।

পরীক্ষা শেষ, বন্ধুরা সহ মাঠে এসে আড্ডা দিচ্ছি, আমাদের বান্ধবীরা এসে স্যারের উপর ভীষন ক্ষেপা, এতো কঠিন কেউ প্রশ্ন করে ?

এক সময় মিলি আমাকে বলল, তোর পরীক্ষা কেমন হল রে ?

-হ্যাঁ, ভালো ।

-ম্যাক্লোরিনের অঙ্কটা দিছিস ?

-হ্যাঁ ।

-এটা কি ভাবে হবে ?

আমি তো বেশ ভাব নিয়ে বললাম, সেটা কি ভাবে করতে হবে । তখন সে বলল, যাক অঙ্ক টা ভুল হলেও স্যার কিছু বলবে না সুত্রটা ঠিক লিখছি । মনে মনে ভাবলাম এই বার তাহলে ফার্ষ্ট পুরষ্কারটা আমি নিচ্ছি ।

এর কয়েক দিনপর স্যার ক্লাসে রেজাল্ট দিলো, সেটা দেখে আমি হতবাক ! এবারো মিলি ফার্ষ্ট আর আমি সেকেন্ড । দেখলাম ফার্ষ্ট পুরষ্কারটা মিলি কে দিলো, পরে সে বক্স খুললো একটা অনেক সুন্দর পেপার ওয়েট । ভাবলাম সেটা আমার পেলে হয়তোবা মন্দ ছিল না, যাক তখন ভাগ্যকে দোষ দেওয়া ছাড়া আর কি বা করার আছে, সৃষ্টিকর্তা মনে হয় আমার জন্য সেকেন্ড স্থান টা সব সময় রেখে দেন ।

মন খারাব করে সেই দিন বাসায় আসলাম, তার কয়েক দিন পর আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান । সে দিন সাড়াটা দিন অনেক ব্যস্ত, সন্ধ্যার দিকে স্যারদের রুম থেকে আসার পথে দেখি মিলি একা দাড়িয়ে আছে । তাকে দেখে বললাম,

-ফার্ষ্ট গ্যাল, আল-বিদা ।

সে দেখে বলল, এই রাফি শুন তোর সাথে কিছু কথা আছে । গেলাম তার কাছে বললাম,

-সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, বাসা থেকে আম্মু ফোন দিচ্ছে । যা বলার তাড়াতাড়ি বল ।

- এখানে না চল দিঘির পাড়ে যাই । সেখান থেকে তোর বাসা কাছেই হবে ।

লিফটে দু’জন আসতেছি, হটাৎ তার দিকে চোখ পরলো কখনও তাকে এতো কাছ থেকে এই ভাবে দেখা নি । হাল্কা নীল রঙ্গের শাড়ি সাথে মেছিং করা চুরি ও টিপ, সে আনমনা হয়ে আছে অন্য দিকে । যাক পরে হাঁটতে হাঁটতে দিঘির পাড়ে এসে বসলাম । দেখলাম তার মন তা বেশ গম্ভীর। সে যেন অন্য এক নিশাতের সামনে আমি । সে বলল,

-রাফি, তোকে আজ কিছু সত্য কথা বলবো তুই এর পর আমার উপর আর রাগ করিস না,ও এর পর আর কোন দিনও আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না ।

-(আমি তো বিমূঢ়) কি এমন কথা রে ?

-দেখ, আমাকে কোন প্রশ্ন করবি না শুধু শুন । তুই কি জানিস আয়নাল স্যার(গণিত) আমার কাজিন ও বাসার স্যার (পদার্থ) আমার চাচা ?

-নাতো ! তো কি হয়েছে ?

-এই দুই বিষয়ে আমি তোর থেকে বরাবর কম পাই, তাই যদি কোন দিন এই বিষয়ে পরিক্ষা খারাব করি তখন তাদের বাসায় গিয়ে আমার খাতায় লিখে দিয়ে আসি আর আমি ফার্ষ্ট হই ।

আমি তো পুরাই থ ! কি বলছে এই সব, একমাত্র মেয়েদের দ্বারা মনে হয় এইসব সম্ভব !!! সে বলল,

-আজ প্রজন্ত এই দু’বছরে যত গুলা পুরষ্কার পাইছি, সব গুলা তাই তোর প্রাপ্য । তাই আমি কলেজের সব পুরষ্কার তোর জন্য নিয়ে এসেছি, এগুলি তুই রাখ ।

-যা হবার তা তো হয়েই গেছে, কি দরকার ছিল আমাকে এটা জানার ?

আর যেগুলি পাইছিস সেটা তোর কাছেই রাখ, আমার এই গুলির কোন দরকার নাই । তোর দরকার আছে, আর সে জন্য তুই এতো কষ্ট করে পরে খাতায় লিখে দিছিস, তাই ওসব তুই নিজের কাছে রাখ ।

মাগরিবের আজান দিচ্ছে সেই আবছা সন্ধ্যায় দেখলাম মিলি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ । বললো,

-তুই অনেক ভদ্র ছেলে রে, এই যুগে এতো ভদ্র হয়ে লাভ নাই । আর তোর ফিউচারটা অনেক ব্রাইড তাই সেটা নষ্ট করতে চাই না । তুই চোখ বন্ধ কর তোকে একটা গিফট দিব । আর আজকের পর থেকে সব কিছু ভুলে যাবি ।

-কি এমন গিফট, যা আবার চোখ বন্ধ করা লাগবে ?

-কর না বন্ধ !

করলাম, বুজতে পারলাম কিছু একটা এসে আমার কপাল স্পর্শ করছে । আমার সমস্ত পঞ্চইন্দ্রিয় প্রবল ঝাকুনি দিয়ে উঠলো, খানিক পর চোখ খুললাম দেখি মিলি চলে যাচ্ছে সামন দিয়ে । খুব ইচ্ছা হল তাকে একবার ডাক দেই, মুখ দিয়ে যেন কোন কথা বের হচ্ছে না । কিছু একটা আমার গলা যেন আটকে দিয়েছি....



বিষয়: বিবিধ

১০৮৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

362901
১৯ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:১৮
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! মাশ-আল্লাহ খুব ভালো লিখেছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File