ঈদে যা বর্জনীয় লেখক - আবদুল কাদের

লিখেছেন লিখেছেন নিঝুম অরন্ন ০২ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:৩৪:৫৭ রাত



ঈদে যা বর্জনীয়

লেখক - আবদুল কাদের

ঈদ মুসলমানদের আত্মার পরিশুদ্ধি, মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মার্জিত উৎসব। তবে দুঃখের ব্যাপার হল আমরা অনেকেই এ দিনটিকে যথার্থভাবে পালন করতে ব্যর্থ হই। নানাবিধ ইসলাম বহির্ভূত কাজে লিপ্ত হয়ে হারিয়ে ফেলি ঈদের মাহাত্ম্য, পাশ্চত্য সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে আনন্দ অনুভব করি। ঈদের মুল ভাব ও দর্শন থেকে আমরা চলে যাই দূরে, বহু দূরে। এ ধরনের আচরণ থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুসলমানেরই জরুরী। নিচে ঈদে অবশ্য বর্জনীয় কয়েকটি আচরণ তুলে ধরা হল।

বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন ঃ

মুসলিম সমাজে এ ব্যাধি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাক-পরিচ্ছেদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। এর মাধ্যমে একদিকে তারা সাংস্কৃতিক দৈন্যতার পরিচয় দিচ্ছে অপর দিকে নিজেদের তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি প্রকাশ করছে অবজ্ঞা-অনীহা। এ ধরনের আচরণ ইসলামে শরিয়তে নিষিদ্ধ। হাদিসে এসেছে-

আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ)

পুরুষ কর্তৃক নারীর বেশ ধারণ ও নারী কর্তৃক পুরুষের বেশ ধারণ ঃ

পোশাক-পরিচ্ছেদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের নারীর বেশ ধারণ ও নারীর পুরুষের বেশ ধারণ হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

হাদিসে এসেছে-

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে করিম (সাঃ) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। ( আবু দাউদ)

ঈদের দিনে কবর জিয়ারত ঃ

কবর জিয়ারত করা শরিয়ত সমর্থিত একটি নেক আমল। হাদিসে এসেছে- আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করিম (সাঃ)বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, হ্যাঁ এখন তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কারণ কবর জিয়ারত হৃদয়কে কোমল করে, নয়নকে অশ্রুসিক্ত করে ও পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে তোমরা শোক ও বেদনা প্রকাশ করতে সেখানে কিছু বলবে না। (সহিহুল জামে, হাদিস নং ৪৫৮৪)

কিন্তু ঈদের দিনে কবর জিয়ারতকে অভ্যাসে পরিণত করা বা একটা প্রথা বানিয়ে নেয়া শরিয়ত সম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,তোমরা আমার কবরে ঈদ উদযাপন করবে না বা ঈদের স্থান বানাবে না...। (আবু দাউদ)

যদি ঈদের দিন কবর জিয়ারত করা হয় তবে কবরে ঈদ উদযাপন হয়েছে বলে গণ্য হবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে ‘ঈদ’ মানে ‘যা বার বার আসে’। যদি বছরের কোন একটি দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা হয় আর তা প্রতি বছর করা হয় তা হলে এটার নামই হবে কবরকে ঈদের উৎসব-সামগ্রী হিসেবে সাব্যস্থ করা। আর সেটা যদি সত্যিকার ঈদের দিনে হয় তবে তা আরো মারাত্মক বলে ধরে নেয়া যায়। যখন আল্লাহর রাসূলের কবরে ঈদ পালন নিষিদ্ধ তখন অন্যের কবরে ঈদ উদযাপন করার হুকুম কতখানি নিষিদ্ধের পর্যায়ে পড়তে পারে তা ভেবে দেখা উচতি।

নারীদের খোলা-মেলা অবস্থায় রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া ঃ

মনে রাখা প্রয়োজন যে খোলামেলা ও অশালীন পোশাকে রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন মূর্খতার যুগের মত নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ সূরা আহযাব : ৩৩

হাদিসে এসেছে,

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : জাহান্নাম বাসী দু’ধরনের লোক যাদের আমি এখনও দেখতে পাইনি। একদল লোক যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে প্রহার করবে। আর এক দল এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহু দূর থেকে পাওয়া যায়। ( মুসলিম)

নারীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ঃ

দেখা যায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই গুনাহের কাজটা ঈদের দিনে বেশি করা হয়। নিকট আত্মীয়দের মাঝে যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ শরিয়ত অনুমোদিত নয়, তাদের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করা হয়। হাদিসে এসেছে,

উকবাহ ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করিম (সাঃ) বলেন , তোমরা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে। মদিনার আনসারদের মধ্য থেকে এক লোক প্রশ্ন করল হে আল্লাহর রাসূল ! দেবর-ভাসুর প্রমুখ আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি উত্তরে বললেন : এ ধরনের আত্মীয়-স্বজন তো মৃত্যু। ( মুসলিম)

এ হাদিসে আরবি ‘الحمو’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ এমন সকল আত্মীয় যারা স্বামীর সম্পর্কের দিক দিয়ে নিকটতম। যেমন স্বামীর ভাই, তার মামা, খালু প্রমুখ। তাদেরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করার কারণ হল এ সকল আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমেই বে-পর্দা জনিত বিপদ আপদ বেশি ঘটে থাকে। যেমনটি অপরিচিত পুরুষদের বেলায় কম ঘটে।

গান-বাজনা ঃ

ঈদের দিনে এ গুনাহের কাজটাও বেশি হতে দেখা যায়। গান ও বাদ্যযন্ত্র যে শরিয়তে নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর তা যদি হয় অশলীল গান তাহলে তো তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন ভিন্নমত নেই। হাদিসে এসেছে,

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে। (বোখারি)

এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় গান-বাদ্য নিষিদ্ধ। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে ‘তারা হালাল মনে করবে’।

বিষয়: বিবিধ

১১০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File