বরগুনার আমতলী উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে একটি ইটভাটা রয়েছে। ইট পোড়ানোর ধোঁয়ায় ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের চলাচলে সমস্যা এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। ভাটায় ইট পোড়ানোর কালো ধোঁয়া আর উড়ে আসা ধুলাবালি বিদ্যালয় ভবনে প্রবেশ করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। দিন দিন শিক্ষার্থীরা এতে মারাত্মক ঝুঁকি এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় সহকারি পরিচালক আবদুল হালিম যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। যদি কেউ নির্মাণ করে থাকেন তা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আমতলী এলাকায় তালতলী মহাসড়ক ঘেঁষে সাগর ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা রয়েছে। এই ইটভাটার অভ্যন্তরে চারটি শিক্ষপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ভাটার দক্ষিণ দিকে আরপাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরপাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উত্তর দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম আমতলী সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জানা যায়, এই ইটভাটাটি আমতলী উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল আহসান নান্নু মিয়ার।
এই ইটভাটাটিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের ছাড়পত্র রয়েছে।
সাগর ব্রিকস নামের এই ভাটাটি প্রতিষ্ঠার সময় এলাকার লোকজন ও স্কুলের পক্ষ থেকে ভাটার মালিক নাজমুল আহসান নান্নুকে অনেক বাধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি তার ক্ষমতাবলে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এমন অবস্থায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের পাঠদানে বিঘ্নিত হচ্ছে।
ইটভাটার ১০০ ফুটের মধ্যে বসবাস করা এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইট পোড়ানোর ধোঁয়ায় আমরা শ্বাসকষ্টে ভুগছি। আমাদের বাড়িতে কোনো গাছে ফল ধরে না। আমরা এখন ভাতের সঙ্গে ধুলা খাই। ইটের ধুলায় আমাদের বাড়ি নষ্ট হচ্ছে। আমরা ভাত খাই না ইটের লাল ধুলা খাই।
আরপাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল, লামিয়া, তানিয়াসহ অনেকই জানায়, এই ভাটার কালো ধোঁয়া এসে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পরিবেশ নষ্ট করছে। এতে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছি। স্কুলের কাছ থেকে এই ইটভাটাটির আমরা অপসারণ চাচ্ছি।
আরপাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুনাহার যুগান্তরকে বলেন, এই ইটভাটার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের খুবই ক্ষতি হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ইটের ভাটা লোকালয়ের বাইরে স্থাপনের নিয়ম থাকলেও এটি তৈরি করা হয়েছে স্কুলের আধা কিলোমিটাররের মধ্যে। ভাটার ধোঁয়ায় এবং ধুলাবালির কারণে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তা ছাড়া ভাটার কালো ধোঁয়া এবং পোড়ামাটির গন্ধে কোমলমতি শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল আহসান যুগান্তরকে বলেন, আমার ভাটার মতো বাংলাদেশে হাজারো ইটভাটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে গড়ে তোলা হয়েছে। আমার সব কাগজ (অনুমতি পত্র) রয়েছে।
আমতলীতে শুধু আমারটা না বরগুনা জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আগে তো এক মাইলের মধ্যে স্কুল গড়ে উঠত, এখন তো এক মাইলের মধ্যে দুটা-তিনটা স্কুল গড়ে উঠছে।
আমতলী উপজেলায় সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। সরকারি বিধানের আলোকে যদি এই ইটভাটাটির কোনো লাইসেন্স এবং পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকে, তা হলে খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন