দেশের নারী শিক্ষার জন্য দেড় শত বছর আগে তৈরি করা ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজকে কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি ফ্যাসিবাদের সহায়ক আওয়ামী পুলিশ। “উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ” ব্যানারে বৃহস্পতিবার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পুলিশের বাধায় হতে পারেনি। আয়োজকরা বলছেন, পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাঁরা কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। অপরদিকে পুলিশের বক্তব্য, অনুমতির জন্য আবেদন করলে তারা সেটা বিবেচনা করবে।
ইডেন কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তপনা থামানো ও ইডেন কলেজের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার দাবিতে এই সমাবেশ ডাকা হয়েছিল।
এদিকে এক ছাত্রীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী আদালত থেকে ইডেন কলেজের ঘটনা তদন্তের জন্য লালবাগ থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী পুলিশ এখন ফরমায়েশি নির্দোষ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে কি না সেটাই দেখার বিষয়। ভুক্তভোগী নিপীড়িত এই ছাত্রলীগ কর্মীর দায়ের করা মামলায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কা। কারণ, যাদের বিরুদ্ধে মামলা ইডেন কলেজের ছাত্র লীগের দুই নেত্রী বীরদর্পেই ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছেন। ক্যাম্পাসে তারা ফিরে আসায় সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছাত্রলীগের ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি ও সেক্রেটারির দাপটে পুরো কলেজ প্রশাসন কাবু থাকেন। অভিযোগ উত্থাপনকারী ছাত্রীরাই বরং ইডেন কলেজ ত্যাগ করতে হচ্ছে। এতে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায় বিচার নিয়ে সাধারণ ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
দেশের ঐতিহ্যবাহী ইডেন কলেজে একের পর এক কলঙ্কের জন্ম দিচ্ছে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী নেত্রীদের সীট বাণিজ্য, চাঁদাবাজির পাশাপাশি ছাত্রীদের জোর করে দেহ ব্যবসা ও নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহারের অভিযোগে উঠেছে প্রকাশ্যে। প্রকাশ্যেই নিপীড়িত ছাত্রীরা বিক্ষোভ করে এই অভিযোগ গুলো উত্থাপন করছেন। আর এই অভিযোগ হচ্ছে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা চক্রের বিরুদ্ধে।
ছাত্রলীগের নারী কর্মীদের যৌনদাসী বানানোসহ অনৈতিক অনেক অপকর্মের প্রতিবাদে ইডেন কলেজের সামনে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশ ডেকেছিলেন অভিভাবক ও নাগরিকদের একটি অংশ।
কোন প্রতিবাদ প্রোগ্রাম হবে না, এটাই ফাইনাল:
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক রাখাল রাহা ছিলেন এর মূল আয়োজক। তবে পুলিশের ধমকে শেষমেশ সমাবেশ করতে পারেননি তাঁরা।
পরে রাখাল রাহা গণমাধ্যমকে বলেন, কর্মসূচি ঘোষণার পর গতকাল বুধবার রাতে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমাকে ফোন করে বললেন যে কর্মসূচি করতে হলে তাঁদের অনুমতি নিতে হবে। তখন আমি পুলিশকে ফোনে বলি যে ইডেন কলেজে অন্যায়-অপকর্মের প্রতিবাদে সাধারণ অভিভাবক-নাগরিকেরা তো কথা বলবেনই। পুলিশের উচিত, এই কর্মসূচির নিরাপত্তা দেওয়ার। এর আধঘণ্টা পরই তিনি আবার ফোন করে খুব স্ট্রিক্টলি (শক্তভাবে) বললেন, প্রোগ্রাম হবে না, এটাই ফাইনাল। আপনারা এখানে প্রোগ্রাম করতে পারবেন না, এরপর আর কোনো কথা বলবেন না।
রাখাল রাহা আরও বলেন, পুলিশের নিষেধের পর আমরা নিজেরা আলাপ করে কর্মসূচিটা স্থগিত করলাম, কিছুটা বিরতি দিয়ে হলেও আমরা ইডেন কলেজের সামনেই কর্মসূচি করব, অনুমতির জন্য আমরা কোনো আবেদন করব না।
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মুর্শেদ গণমাধ্যমকে বলেন তাঁরা অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি করতে পারেন। অনুমতির জন্য তাঁরা আবেদন করলে লালবাগ জোনের উপকমিশনার তা বিবেচনা করবেন।
ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলে গত শনিবার রাত থেকে শুরু করে রোববার দিনভর উত্তপ্ত ছিল ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস। রোববার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ওরফে রীভা, সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় রোববার রাতে ইডেন কলেজ কমিটি স্থগিত ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধীপক্ষের ১২ নেত্রীসহ ১৬ নেতা-কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ইডেন কলেজে অস্থিরতা চলাকালে বহিষ্কৃত নেত্রী সামিয়া আক্তারসহ কয়েকজন অভিযোগ তোলেন, তামান্না ও রাজিয়া সাধারণ ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা গত মঙ্গলবার কলেজের ফটকে ‘অনৈতিক কাজে বাধ্য করার’ অভিযোগ তোলা ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করেন। যদিও মানববন্ধনকারীদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল এবং তাঁরা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন