নিজের কষ্টের জীবনে স্বপ্ন ছিল, ছেলেকে বিবিএস ক্যাডার বানানোর, আরেক বাবা চেয়েছিলেন তার ছেলে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাবাদের সেই স্বপ্নগুলো ভেঙে গেছে, ছাত্ররাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে ছেলেরা হয়েছে অপরাধী।
নারী নির্যাতনের মামলায় ছেলেরা এখন জেলহাজতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীর জীবনে এমন পরিণতিতে নীরবে কাঁদছেন জন্মদারা, তাদের কষ্টের যেন শেষ নেই।
তাদের একজনের বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মালির কাজ করেন, আরেকজনের বাবা প্রহরী, অন্যজনের বাবা গাড়ি চালক। নিজেদের কষ্টের চাকরির মধ্যে ছেলেদের নিয়ে স্বপ্ন বুনে ছিলেন, এখন নিজেদের চোখের সামনে সেই স্বপ্নের অপমৃত্যু দেখছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করে এক বাবা বলেন, ‘নিজের জীবনে অনেক কষ্ট করেছি, পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু আমি এখন ব্যর্থ। পুরো জীবনে নিজের জন্য কিছুই করিনি। যখন যা চেয়েছে সন্তানকে তাই দিয়েছি। নিজে কষ্ট করে সন্তানের সব চাওয়া পূরণ করেছি।’
ছেলের এমন পরিণতিতে বাঁচার ইচ্ছে হারিয়েছেন এই পিতা।
জেলহাজতে থাকা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র মো. আজিম, হাটহাজারী কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র মো. নুর হোসেন শাওন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ ২য় বর্ষের ছাত্র মো. নুরুল আবছার বাবু, হাটহাজারী কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাসুদ রানা ও সাইফুল ইসলাম। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আজিম হোসেন:
নিপীড়নের ঘটনার মূল হোতা আজিম হোসেন। তার বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী। বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন ইসলামিয়া কলোনিতে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই চুরি, ছিনতাই ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে ছিনতাই এর অপরাধে আজিম জেলও খাটে। আজিম নিজেকে এলাকার স্থানীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দিতো। বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় তার নেতৃত্বেই গড়ে ওঠেছে অপরাধী চক্র। আজিমকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম:
তাকে বখাটে সাইফুল নামেই চিনেন সবাই। বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েও পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারেনি সে। বাবার কাছে কলেজে ভর্তির কথা বলে কয়েক দফা টাকা নিয়ে সে বিভিন্ন অপরাধে সেই অর্থ ব্যবহার করেছে ।
নুরুল আবছার বাবু:
চবির নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ ২য় বর্ষের ছাত্র মো. নুরুল আবছার বাবু এই গ্রুপে যুক্ত হয়ে অপরাধ জগতে পা বাড়িয়েছে। তার বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগে চাকরি করেন। বাবার চেষ্টা ছিল সন্তানকে মানুষ করার। কিন্তু মেধাবী বাবু নেশাগ্রস্ত হয়ে ক্যাম্পাসে অপকর্ম জড়িয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের পাশে পাঁচ জন ছাত্রের হাতে শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এক ছাত্রী। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা বন্ধু বাধা দিলে তাকেসহ সেই ছাত্রীকে মারধর করে বখাটেরা। সে সময় তাদের কাছে থাকা মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় তারা। পরে ওই ছাত্রীকে সেই জায়গা থেকে একটু দূরে নিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ বখাটেরা।
সেদিনের ঘটনায় ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ এবং হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে ২২ জুলাই রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন