ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মঙ্গলবার (১২ই এপ্রিল) দুপুরে মেয়েদের জন্য নামাজের স্থান তৈরি করায় পুরো রুমটি তালা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ছেলেদের নামাজের জন্যও এখন কোন জায়গা থাকলো না। ছেলেদের নামাজের স্থানের সামনে পর্দা টানিয়ে মেয়েদের জন্য নামাজের স্থান তৈরি করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু, রাতের আঁধারে নামাজের জায়গাটা ছাত্র লীগের সন্ত্রাসীরা তছনছ ও লণ্ডভণ্ড করে দেয়। পরে ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের সহায়তায় সেখানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
নামাজের স্থানটি লণ্ডভণ্ড করে দেয়ার সময় সেখানকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে রাতের আঁধারে টিএসসিতে মেয়েদের জন্য করা নামাজের স্থানের সবকিছু খুলে পুরো নামাজের জায়গায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি পেছনের পার্টিশন, ডানপাশের পর্দা, সামনের পর্দা, কার্পেট, চটসহ সবকিছু নিয়ে গেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ই এপ্রিল) দুপুরে টিএসসিতে মেয়েদের জন্য নামাজের স্থান জায়নামাজ সহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থার সময় টিএসসির উপদেষ্টা ও পরিচালকসহ কর্মকর্তারা বাধা প্রদান করেন। এ সময় টিএসসির উপদেষ্টা ড. শিকদার মনোয়ার মুর্শেদ বলেন, এখানে নিয়মের বাইরে গিয়ে মেয়েদের নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে বসেছে। এক্ষেত্রে আমরা এখান থেকে চলে যাবো, তারা এরপর এখানে কে কী করবে তার দায়-দায়িত্ব আমরা নিতে পারবো না।
মনোয়ার মুর্শেদের এমন প্রচ্ছন্ন হুমকির পরই রাতের আঁধারে জঘন্য এই ইসলামবিদ্বেষী কাজ করলো প্রশাসন ও ছাত্রলীগ। বুধবার (১৩ই এপ্রিল) সেখানে গিয়ে দেখা যায় নামাজের স্থানে তালা ঝুলছে।
এ ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
সবুজ হাসান নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, “কী অবিশ্বাস্য দুঃসাহস! ঢাবির টিএসসিতে নামাজের জায়গায় তালা মেরে দিয়েছে কুরআন নাজিলের মাসে! তাওহিদপন্থীদের দেশে ব্রাহ্মণ্যবাদের দোসরদের সাহস কোথায় গিয়ে ঠেকেছে বুঝুন।”
সাদ রাহমান নামে একজন লেখেন, “এই ঢাবির প্রতিষ্ঠাতা দাড়ি-টুপিওয়ালা সেই মরহুম মুমিনরা যদি আজ থাকতেন তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হতো! বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের পেছনে রাষ্ট্র যে বিপুল টাকা ব্যয় করে তা কিন্তু নব্বইভাগ মুসলমানের টাকায়।”
মোহাম্মদ সেলিম মিয়া নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, “হিন্দুদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলেই সংসদ থেকে শুরু করে সেক্যুলার ধর্মের অনুসারী ও পৌত্তলিকেরা বাক স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে ব্যাপক হৈচৈ শুরু করেন। অথচ কুরআন নাজিলের মাসে অস্থায়ী নামাজের স্থানই ধ্বংস করে দিল আওয়ামী প্রশাসন ও ছাত্রলীগের ইসলামবিদ্বেষী সন্ত্রাসীরা। এটা কি হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে?”
উল্লেখ্য, টিএসসিতে মেয়েদের আলাদা নামাজের জায়গা বরাদ্দের দাবিতে গত মঙ্গলবার (৫ই এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নামাজের জায়গার সঙ্কট রয়েছে। একটি মসজিদে নারী শিক্ষার্থীদের নামাজ আদায় করার জায়গা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোর কমনরুম বিকেল ৫টায় বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ের পর ক্যাম্পাসে অবস্থানরত নারী শিক্ষার্থীদের নামাজ পড়ার কোনো জায়গা থাকে না। ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্র টিএসসিতে নারী শিক্ষার্থীদের নামাজের সুব্যবস্থা করে এই সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব।
টিএসসি তে নাচ-গান-বাজনার জন্য ব্যবস্থা থাকলেও, মুসলিম-বাংলাদেশে নারীদের জন্য সেখানে নামাজের জায়গা বরাদ্দ নিয়ে গড়িমসি শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্য স্মারকলিপি দেয়ার এক সপ্তাহ পর শিক্ষার্থীরা নিজেরাই পর্দা টেনে মেয়েদের আলাদা নামাজের জায়গা তৈরী করার চেষ্টা করে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, টিএসসিতে ছেলেদের জন্য নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকলেও মেয়েদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ বিভিন্ন কর্মসূচিসহ নানাবিধ কারণে নারী শিক্ষার্থীরাও টিএসসিতে অবস্থান করেন। এছাড়াও রমজান মাসে টিএসসি ভিত্তিক সংগঠনগুলো এবং বিভিন্ন জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি ইফতার কর্মসূচি দিয়ে থাকে। কিন্তু ইফতারের পরে নামাজের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক নারী শিক্ষার্থী এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন