অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া
দেশে করোনা সংক্রমণের চলমান উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে আগামী ৩১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা হবে না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, সবকিছুর আগে জীবন। তারপর ভর্তি পরীক্ষা এবং অন্যান্য কার্যক্রম। সুস্থ থাকলে সবকিছু করা যাবে। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেছেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান উর্ধ্বগতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার মতো অবস্থা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। ধরে নেয়া যায় যে, করোনার এই অবস্থা চলতে থাকলে ৩১ জুলাই থেকে ভর্তি পরীক্ষা হবে না।
শনিবার (১০ জুলাই) রাতে ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাপ্তি-প্রত্যাশা’ শীর্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের এক ফেসবুক লাইভে এসব কথা বলেন তারা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মহামারির একটি বাস্তবতা হলো অনিশ্চয়তা সব সময় কোন না কোনভাবেই বিরাজ করে। অনেকেই বলে থাকেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আসে। আমি বলবো, সেটা পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তিনি বলে, ভর্তি পরীক্ষার তারিখ আগে একটা ছিল, পরে সেটা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার এখন করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি। এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সেখানে তো আগে জীবন-জীবিকার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তখনতো বাস্তবতা মেনে নিয়ে বিষয়গুলোর (ভর্তি পরীক্ষা) রিভিও করতে হয়। এটি হল মূলত বাস্তবধামী উদ্যোগ।
গত ১০ জুলাই থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করার সময় ছিল। সেটিও স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, লকডাউনে আমিতো শিক্ষার্থীদের বলতে পারিনা যে, তোমরা এটি এখন ডাউনলোড করো। জনসাধারণের চলাচল খুবই সীমিত। তাই বাস্তবতা মেনে নিয়েই বলা হলো যে, এই কার্যক্রম স্থগিত। আগামীতে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে ডিনরা নতুনভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।
“আর যদি লকডাউনের এই মুহুর্তে প্রবেশপত্র ডাউনলোট শুরু করতে বলা হয়, তাহলে কার্যক্রমন রাখে কিভাবে? সেটি যুক্তিযুক্ত হবে না। সে কারণেই ভর্তি পরীক্ষার ইউনিট প্রধানরা কার্যক্রমটি স্থগিত করতে চাইলে আমি সেটির অনুমোদন দিই। সেই কার্যক্রমটি স্থগিত থাকলে পরীক্ষার ওপর প্রভাব পড়বে স্বাভাবিক। এই মাসের শেষ একটি পরীক্ষার তারিখ রয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় বিষয়গুলো দেখে সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে।
তথ্যমতে, আগামী ৩১ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘চ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ৩১ জুলাই, ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ৬ আগস্ট, ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ৭ আগস্ট, ১৩ আগস্ট ‘গ’ ইউনিট ও ১৪ আগস্ট ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থগিত হলে পরীক্ষা কবে হতে পারে, এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, একটু অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ডিনবৃন্দ পরিস্থিতি পর্যালোচনা পূর্বক তাদের সিদ্ধান্ত নেবেন।
“পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা মূলয়ান করে বিজ্ঞান সম্মত ওপায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সেটি নিঃসন্দেহে তারা যথাসময়ে করবেন। সে কারণে বিষয়টি পর্যালোচানায় আছে এবং তারা বিষয়গুলো দেখছেন। তারপর কোথাও কোন এ্যডজাস্টমেন্ট প্রয়োজন হয় এবং সিদ্ধান্ত রিভিও করতে হয়; সেটি তারা করবেন। কিন্তু জীবন সর্বাগ্রে। সেটি হলো আগে। তারপর পরীক্ষা এবং অন্যান্য কার্যক্রম। সুস্থ থাকলে সবকিছু করা যাবে। যদিও সময় চলে যাবে। তবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেছেন, আমাদের বায়োলোজিস্টরা সব সময় বলে থাকেন যে, করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে আর কোন সমস্যা থাকে না। ইতোমধ্যে আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকরা টিকা নিয়েছেন। আর যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে সেখানকার অধিকাংশ শিক্ষকও টিকা নিয়েছেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা টিকা নেননি। এজন্য আরও কিছুদিন দেখে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে ডিনস কমিটি আছে, ভিসি স্যার আছেন। উনারা বিষয়গুলো দেখবেন।
তিনি আরও বলে, বাস্তবতা মেনে আমরা একবার পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছি। এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না ভর্তি পরীক্ষা কবে হবে। আজও সংক্রমণ ৩০ শতাংশের ওপরে। লকডাউন রয়েছে। তাই সংক্রমণের ওপর নির্ভর করছে পরীক্ষা।
পরীক্ষার তারিখ পেছানো নিয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই মুহুতের্ তো এই অবস্থা নেই। এখান সংক্রমণ ৩০ শতাংশের ওপরে। তাই রিস্থিতি অনুকূলে আসলে ডিনস কমিটি সিদ্ধান্ত দেবে। ধরে নেয়া যায় যে, করোনা এই অবস্থা চলতে থাকলে নির্ধারিত সময় ভর্তি পরীক্ষা হবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন