শিশু-কিশোরদের নৈতিকতা ও ইসলাম শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে নূতন উদ্যোগ নিয়েছে ইসলাম বিদ্বেষী ফ্যাসিবাদি সরকার। মাধ্যমিক পলীক্ষায় এবার ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষায় একশ’ নম্বরের ইসলামিয়াত ও নৈতিকতা শিক্ষায় পরীক্ষা বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই ছিল বাধ্যতামূলক। বর্তমান ভারতপন্থি সরকার এই বিষয়টিকে মাধ্যমিক পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেছে ।
ভাস্কর্যের নামে মূর্তি নির্মান এবং দশম শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠা জনমতকে দমন করতে নূতন বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নূতন করে ফরমান জারি করেছে। এতে সভা, সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বুধবার (২ ডিসেম্বর) ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগে অনুমতি না নিলে রাজধানীতে কোন ধরণের সভা-সমাবেশ করা যাবে না। যে কোনো ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়েছে, পূর্বানুমতি ছাড়া কেউ এমন কার্যকলাপে জড়িত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি না নিয়েই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন সভা, সমাবেশ, গণ জমায়েত এর কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে। তাদের কর্মসূচি পালন করতে রাস্তায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় যান ও জন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার অজুহাতে মূলত: সরকারের জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠা মানুষের প্রতিবাদকে দমনের অপচেষ্টা করা হচ্ছে এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে।
একদিকে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি নির্মানের মাধ্যমে মুসলিম ধর্মীয় সংস্কৃতি বিরোধী নানা কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শুরু হয়েছে। অপরদিকে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছে নানা কৌশলে। ২০২২ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা যারা দেবেন তাদের জন্য থাকছে না ধর্ম শিক্ষার বিষয়ে কোন পরীক্ষা। ২০২২ সাল থেকে শুধুমাত্র বাংলা, ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান এই ৫টি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে এসএসসিতে। মাধ্যমিক স্তরে নূতন পরীক্ষা নীতির আওতায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম ধর্মীয় ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বাদ দেয়ার এই প্রক্রিয়া নূতন নয়। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা নীতির নামে ইসলামী সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে ইসলাম শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছিল। ঢাকা কবি নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ইসলাম শব্দটি বাদ দিয়ে কবি নজরুল কলেজ করা হয়। এরকম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তখন ইসলাম শব্দ বাদ দেয়া হয়েছিল। একই পথ অনুসরণ করছেন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফ্যাসিবাদি শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ঝেটে ফেলার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলাম বিদ্বেষী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানাভাবে ধর্মীয় সংস্কৃতির উপর আঘাত আসা শুরু হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্ককে ইসলামী সংস্কৃতি ধারণ করে লেখা গল্প এবং কবিতাকে বাদ দেয়া হয়েছে আরো আগেই। এবার সরাসরি ইসলাম ধর্ম শিক্ষা নামক বিষয়টি উঠিয়ে দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে দশম শ্রেনীর পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম ধর্ম বাদ দেওয়ায় কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে ইসলামী চেতনাবোধ মুছে ফেলা ও নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণার প্রসার ঘটনোর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই এসএসসি পরীক্ষায় ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে এমন হঠকারি সিদ্ধান্ত জাতি কখনো মেনে নিবে না।
বিবৃতিতে নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, শিক্ষার লক্ষ্য তো শুধু রুটি-রুজির জন্য জ্ঞান আহরণ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা নয়। বরং শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য থাকে, নীতি-নৈতিকতা, বিনয়, মানবদরদ, ইনসাফপূর্ণ দেশ ও সমাজ গঠন এবং সৎভাবে জীবন পরিচালনার প্রেরণা লাভ ও জ্ঞান অর্জন করা। আর এসব অর্জন করতে হলে অবশ্যই ধর্মীয় শিক্ষা ও তার অনুশীলনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
আল্লামা কাসেমী বলেন, এসএসসির মত গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষা না থাকলে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের কাছে ওই বিষয়ের আর গুরুত্ব থাকে না। তখন সঙ্গতভাবেই ধর্মীয় শিক্ষা গুরুত্ব হারাবে। এতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম ইসলাম থেকে দূরে সরে নাস্তিক্য ধ্যান-ধারণার প্রসার ঘটবে। দেশে খুন-খারাবি, অপরাধ প্রবণতা, ধর্ষণ ও নারী-নিপীড়ন বাড়বে। পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। ধর্মীয় অনুশীলন ও নীতি-নৈতিকতা থেকে দূরে সরে পড়ে আত্মকেন্দ্রিকতা ও ভোগবাদের প্রতি ভবিষ্যতপ্রজন্ম আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে। পুঁজিবাদের বাজার সম্প্রসারিত হয়ে শোষণ ও লুটপাট আরো গভীর হবে।
তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে জন চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা। জনসমর্থনহীনতার দুর্বলতা কাটাতে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদি চক্রের নীলনকশা এবং পুঁজিবাদের বাজার তৈরির প্রেসক্রিপশন মেনে ইসলাম খেদাও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে দেবে না দেশের জনগণ।
তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বাদ দেওয়ার সুপারিশ অবিলম্বে প্রত্যাহার না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঈমান-আক্বিদা ও নীতি-আদর্শ হুমকিমুক্ত রাখার স্বার্থে প্রয়োজনে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এ ধরনের অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন