অধ্যাপক ডা. মো. সেতাবুর রহমান
পাকস্থলী বা স্টমাক ক্যানসারের হার বেড়েই চলেছে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে প্রকাশ খুব কম পায় বা প্রকাশের ভঙ্গি অনেকটা গ্যাস্ট্রিক বা সাধারণ সমস্যার মতো হয়। ফলে রোগটি শনাক্ত হতে দেরি হয়ে যায়। এ বিষয়ে সবার সচেতনতা দরকার। তবেই রোগটি শুরুতেই দমন করা সম্ভব।
পাকস্থলী কী : পাকস্থলী খাদ্য হজম করে। এরপর পাচনতন্ত্রের অন্যান্য অঙ্গ, যেমনÑ ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রে পাঠায়। যখন পাকস্থলীর মধ্যকার বা দেয়ালের স্বাস্থ্যকর কোষগুলো নিজেদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এবং ক্যানসারে পরিণত হয়, তখন টিউমার তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ধীরে ধীরে ঘটে।
পাকস্থলীর ক্যানসার বহু বছর ধরে বাড়ে। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব মানুষকে এ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। নারীর তুলনায় পুরুষ পাকস্থলী ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করা হলে পাকস্থলী বা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পাশের অঙ্গগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ছড়ায় যকৃতে ও পেটের অভ্যন্তরে।
ধরন : পাকস্থলী ক্যানসারের বেশ কয়েকটি ধরন রয়েছে। যেমন- অ্যাডেনোকার্সিনোমা, লিম্ফোমা, কার্সিনয়েড টিউমার। পাকস্থলীতে ক্যানসার কোষের বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, পাচনতন্ত্রের অন্যান্য অংশে টিউমার, পাকস্থলীর পলিপস, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জেনেটিক সিনড্রোম, যেমনÑ লিঞ্চ সিনড্রোম ও লি-ফ্রোমেনি সিনড্রোম। এছাড়া তামাক গ্রহণ বা ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন, খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এবং ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়া।
লক্ষণ : প্রাথমিক লক্ষণ হলোÑ দীর্ঘদিন ধরে বদহজম ও পেটের অস্বস্তি হওয়া। খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়ার অনুভূতি। হালকা বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, পেটে জ্বালাপোড়া ভাব। গুরুতর লক্ষণ হলোÑ মলের সঙ্গে রক্তপাত ও রক্তবমি। কোনো কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস। পেটব্যথা। চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া। খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া।
চিকিৎসা : অবস্থা বুঝে অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। টিউমার বৃদ্ধি ও আকারের ওপর নির্ভর করে পাকস্থলীর একটি অংশ বা পুরোটা সার্জারির মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরিয়ে ফেলার দরকার হতে পারে। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন সাধারণত সার্জারির পাশাপাশি চলতে থাকে।
প্রতিরোধ : জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে ফেলা যায়। নিজেকে ফিট রাখতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত। প্রতিদিনের খাবারে বেশি করে ফল ও শাকসবজি রাখা ভালো। অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার ও ভাজাপোড়া না খাওয়াই ভালো। ধূমপান ও অ্যালকোহল বাদ দিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও রান্না করে খেতে হবে। নিজে নিজে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। শুরুতে ধরলে পড়া ক্যানসার রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। আর বাংলাদেশেই এখন ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। এ নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক ক্যানসার হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটসহ আধুনিক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। চিকিৎসাও আন্তর্জাতিক মানের। তবে সঠিক নিয়ম ও সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো থাকা সম্ভব।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন