চিকিৎসক শূণ্য হয়ে পড়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। চারজন এমবিবিএস চিকিৎসকের তিনজনই পারিবারিক সমস্যা ও অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটিতে রয়েছেন। একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছাড়া তিন দিন ধরে কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। দুজন উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসক দেখছেন রোগী। এ অবস্থায় পার্শ্ববর্তী মোরেলগঞ্জ উপজেলা থেকে আজ (বুধবার) ধার করে আনা হয়েছে একজন চিকিৎসক। বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডা. নাদিয়া নওরিন পারিবারিক সমস্যার কারণে গত শনিবার (৯ অক্টোবর) থেকে ছুটিতে রয়েছেন। ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাসের বাবা গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিনি রবিবার (১০ অক্টোবর) ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন। এছাড়া, আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এস এম ফয়সাল আহমেদ সোমবার (১১ অক্টোবর) থেকে জ্বর ও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতায় বাসায় অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনো ডাক্তার নেই হাসপাতালটিতে।
এদিকে, ৩ সেপ্টেম্বর শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চলমান চিকিৎসক সংকট নিয়ে কালের কণ্ঠে 'একজনের কাঁধে ৩০ হাজার মানুষ' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ (ইউএইচএফপিও) হাসপাতালে পাঁচ জন চিকিৎসক ছিলেন। এই সংবাদ প্রকাশের ১২দিনের মাথায় ডা. আরিফুল ইসলাম উপর মহলে তদবির করে খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে বদলি হয়ে যান। এতে স্থানীয়রা উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চরম হতাশায় পড়েন।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিন শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যবেক্ষ করে দেখা যায়, জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে অসংখ্য রোগীর চাপ। মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আসা ডা. রাফসান হোসাইন নতুন ভবনের ২৬ নম্বর কক্ষে রোগী দেখছেন। পাশের ২৭নম্বর কক্ষে রোগী দেখছেন উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসক মল্লিক আরাফাত। দুই কক্ষের সামনে রোগীর দীর্ঘ লাইন।
জরুরি বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসক বিশ্বজিত মজুমদার। মারামারি, দুর্ঘটনায় আহত ও অন্যান্য মিলিয়ে সেখানে রোগীতে ঠাসা। একা এতো রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন বলে জানান জরুরি বিভাগের এই চিকিৎসক।
এ সময় কথা হয় গোলবুনিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি সকাল ১০টায় হাসপাতালে এসেছেন রক্তচাপ পরীক্ষা করাতে। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও তার প্রেসার পরীক্ষা করাতে না পেয়ে চলে যান। উপজেলা দক্ষিণ রাজাপুর গ্রাম থেকে মো. মনির হোসেন সকাল ৯টায় এসেছেন তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনের (১১) টনসিলের সমস্যা নিয়ে। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর শেষপর্যন্ত চিকিৎসককে দেখানোর সুযোগ পান। এভাবে অসংখ্য নারী-পুরুষ, শিশু রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে, শরণখোলা উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবুল দাস বলেন, শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সব সময়ই চিকিৎসক বৈষম্যের শিকার। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তো থাকেই না। এমবিবিএস চিকিৎসকও থাকেন হাতে গোনা দু-চারজন। কোনো মানুষ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বিভিন্ন সমস্যায় তিনজন ডাক্তার ছুটিতে রয়েছেন। রোগীর প্রচন্ড চাপ। এ অবস্থায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ফাঁকে আমি নিজে গিয়েও আউট ডোরে রোগী দেখছি। বিষয়টি সিভিল সার্জন স্যারকে জানানোর পর আপাতত মোরেলগঞ্জ থেকে একজন ডাক্তার পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া, রামপাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গোলাম মোকদারি খান নামে একজন ডাক্তার ডেপুটেশনে এখানে পাঠানোর কথা।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন বলেন, শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার বিষয়টি আমি জানি। ইতোমধ্যে একজন চিকিৎসক সেখানে পদায়ন করা হয়েছে। যারা ছুটিতে রয়েছেন তাদেরকে দ্রুত ফিরে আসার জন্য বলা হয়েছে। চলমান এই সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন