দুই-তিনদিন আগেও মিটিংয়ে বসেছিলেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। ইস্যু ছিলো র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সমাধান খোঁজে বের করা। মিটিংয়ে শেষে সরকারের কর্তারা বললেন- সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ‘পিআর এজেন্সি’ কাজ করছে। সংসদীয় কমিটি সরকারকে লবিস্ট নিয়োগে তাগাদা দেয়। অথচ ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদেরকে ভালো প্রমাণ করতে লবিস্টের পেছনে বিপুল অংকের দেশের টাকা নষ্ট করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। লবিস্ট নিয়োগের এই চুক্তি এখনো বহাল রয়েছে। ২০১৪ সালের একতরফা আর প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে এই লবিস্ট নিয়োগে তৎপর হয় ক্ষমতা বৈধ করার সার্টিফিকেট নিতে তৎপর শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক লবিং ফার্ম 'বিজিআর গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স' এর তিন মাস অন্তর প্রকাশ করা নথি ঘেঁটে এই তথ্য জানা গেছে। বছরের পর বছর জনগণের পকেটের টাকায় সরকারের ডলার অপচয়ের এই নথির তথ্য অনেকটাই উন্মুক্ত ।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তি যদি বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে তদবির করে, তাহলে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর এ সংক্রান্ত আর্থিক ও অন্যান্য তথ্য বিবরণী প্রকাশ করতে হবে।
'বিজিআর গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স' এর নথি ঘেঁটে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ দেশটির সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবিরের করতে এই লবিং ফার্মকে ৮ বছরে ২.৩ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২০ কোটি টাকা
দিয়েছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার।শুধু তাই নয় এই লবিং ফার্ম ছাড়াও আরও দুটি লবিং ফার্মের পেছনে টাকা ঢালছে সরকার।
বিজিআর ফার্মের দেয়া তথ্য অনুসারে ২০১৪ সাল থেকে বিগত আট বছরে লবিং ফার্মটি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট, প্রতিনিধি পরিষদ, বাণিজ্য প্রতিনিধি ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাজ করে যেতে এবং সমর্থন দিয়ে আসতে তদবির করেছে।সুর্নিদিষ্ট কোন কোন ইস্যুতে এই তদবির করা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।
বিজিআর-এর তিনজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সরকারের হয়ে তদবির করেছেন। এরা হলেন ওয়াকার রবার্টস, মায়া সিডেন — এরা দুজনই প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক চর্চা বিষয় সহ-প্রধান — এবং মার্ক টাবলারাইডস।
প্রকাশ করা নথি থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ সবগুলো বিরোধী দলের বর্জন করা ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস পর, ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারের পক্ষে বিজিআর লবিং শুরু করে। ওই বছর সরকার ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার ব্যয় করে।
২০১৫ সাল থেকে বিজিআর লবিং ফার্মকে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার দিয়েছে সরকার। ২০২১ সালে ৭৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে আরও দুইটি লবিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। গত বছর তাই যুক্তরাষ্ট্রে তদবিরের পেছনে সরকার ৩ লাখ ৯৫ হাজার ডলার খরচ করে।
লবিং ফার্ম সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে গত বছরের ২০ অক্টোবর। তবে এতে দেখা যায়, সরকার ও বিজিআর-এর চুক্তি চলবে অন্তত ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটিকে ২৫ হাজার ডলার দেয়ার শর্তে গত বছর ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম নতুন চুক্তি সই করেন। চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশ সরকারকে কৌশলগত জনসংযোগ ও সরকার সম্পর্কিত পরামর্শ দেবে বিজিআর।”
বাংলাদেশ সরকার সঙ্গে চুক্তি করা নতুন দুটি লবিং ফার্ম হল: ফ্রিডল্যান্ডার কনসাল্টিং গ্রূপ এবং কোনওয়াগো কনসাল্টিং।
ফ্রিডল্যান্ডার কনসাল্টিং গ্রূপের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর। এ লবিং গ্রুপের কাজ হল যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক আয়োজন করা।এজন্য সরকারকে গুণতে হয় ৪০ হাজার ডলার।
কোনওয়াগো কনসাল্টিংয়ের সঙ্গে সরকার চুক্তি করে ২০২১ সালের ২৬ জুলাই। ফার্মটির প্রকাশিত তথ্য অনুসারে তাদের বৈদেশিক গ্রাহক হলো বাংলাদেশ সরকার, তবে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট (বিইআই)-এর মাধ্যমে এই চুক্তিতে উপনীত হয় দুই পক্ষ। ৩৫ হাজার ডলারের এই চুক্তিতে বিইআই-এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান চুক্তিতে সই করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন