ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় খালাস পেয়েছেন দেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ—এমন একটি খবর গত দু’দিন যাবত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান তিনি। কিন্তু ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। এখন পর্যন্ত আপিল শুনানি শুরুই করেনি আদালত। সুতরাং খালাস পাওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে তথ্য ছড়িয়েছে তা সঠিক নয়। মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, এ খবর সঠিক নয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বেলা তিনটার দিকে সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন—২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের একটি আদালত এরকম একটি রায় দিয়েছিল। পরে সেই রায়ের বিরুদ্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আপিল করেছে। সেই আপিলের শুনানি এখনও হয়নি। সুতরাং আমার খালাস পাওয়ার বিষয়ে যে খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, তা সঠিক নয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের মামলা পরিচালনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেন তখনই আপিল শুনানি শুরু করবে আদালত।
১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহউদ্দিন। এরপর প্রশাসনের চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে আসেন। ২০০১ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মেঘালয়ে যখন আটক হন তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতের জেলে থাকাকালে বিএনপি তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য করে।
রাজধানীর উত্তরা থেকে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর পরের দিন তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার দেখায় মেঘালয় থানা পুলিশ।
তিনি শিলং পুলিশকে জানান, গোয়েন্দা পরিচয়ে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ তাকে তার উত্তরার বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়। একটি প্রাইভেট কারে তাকে শিলং নেওয়া হয়। কিন্তু গাড়িটি কোথা থেকে ছেড়েছিল বা গাড়িতে আর কে বা কারা ছিলেন তা তিনি বলতে পারেননি।
এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিলংয়ের নেগ্রিমস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সে বছরে ২৭ মে সালাহউদ্দিনকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান। পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ২৯ মে তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হলেও ইন্টারপোলের ঢাকা অফিসের রেড নোটিশ থাকায় তাকে জামিন দেননি ভারতের শিলংয়ের একটি আদালত।
এর আগে ভারতের শিলং সিভিল হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন সালাহউদ্দিন আহমেদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে চিকিৎসার জন্য ‘তৃতীয় কোনো দেশে’ নিয়ে যেতে চান তার স্ত্রী। কিন্তু অবৈধ অনুপ্রবেশ মামলার আসামি হওয়ায় ভারতীয় পুলিশ তখন সে সুযোগ দেয়নি।
২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ পত্রে বলা হয়, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের শিলংয়ে আকস্মিক উপস্থিতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিচার এড়াতে তিনি ভারতে এসেছেন।
এই মামলায় আদালত সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য রেকর্ড করেন এবং তাকে শিলংয়ে পাওয়ার পর যে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেই হাসপাতালের দুই চিকিৎসকসহ ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ২৫ জুন উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত ১৩ আগস্ট রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। এরপর তিন দফা রায়ের তারিখ পেছানো হয়েছিল। সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর শিলংয়ের আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিলেও কেন্দ্রীয় সরকারের আপিলের কারণে তিনি এখনও শিলংয়ে অবস্থান করছেন।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন