আমরা যখনি দেখি যে সাম্প্রদায়িক, বিশেষ করে আমাদের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন উৎসব কোন কর্মসূচি আসে ঠিক সেই মুহূর্তেই একটা না একটা উস্কানি মূলক ঘটনা ঘটে। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, তাদের হত্যা করা, তাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করার মত ঘটনা ঘটে। যারা এই ধরণের ঘটনার উস্কানিদাতা তাদের যদি আমরা তথ্য নেই তবে দেখতে পাবো যে এই মানুষগুলো হয়ত ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে কিংবা উগ্র ধর্মান্ধ। তারাই কিন্তু এই ধরণের ঘটনার যুক্ত এবং এই ধরণের লোকগুলোর আশ্রয়, প্রশ্রয়, উস্কানিদাতা হল বর্তমান আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াত। সাধারণত এই ধরণেই ঘটনার সময় যে ধরণের ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয় কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে যখন পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়ে যায় তখন তারা আইনের ফাঁক গলে বাহিরে চলে আসে। সেই কারণেই এই ধরণের ঘটনার সাথে যারা যুক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত শাস্তির ব্যবস্থা করা সরকার বা বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা দরকার।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, প্রশাসনের দুর্বলতা ও আওয়ামী লীগের ভিতর অনুপ্রবেশকারী সহ নানা দিক নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
প্রশাসন কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যর্থতার বিষয়ে মির্জা আজম বলেন, আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে সমস্ত জায়গায় এই ঘটনা গুলো ঘটছে সেসব জায়গায় প্রধান কারণ একটাই, প্রশাসনে যারা আছেন তারা অযোগ্য, অদক্ষ কর্মকর্তা। আমি নিজে দেখলাম একটি মন্দির ভাঙ্গার দৃশ্য যেটি পাশের কোন বাড়ি থেকে করা হয়েছে সেখানে দুষ্কৃতিকারীরা নিশ্চিন্ত মনে মন্দিরের গেট, কাঠামো ভাংচুর চালালো কিন্তু সেখানে কোন পুলিশ ছিলো না। কিন্তু আমরা আগে দেখেছি যখনি কোন অন্য ধর্মের অনুষ্ঠান হয় সেখানে সরকারী নিরাপত্তা কর্মী নিযুক্ত থাকে। এবার যেসব জায়গায় এই ধরণের অন্যায় মূলক কাজগুলো ঘটেছে সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনুপস্থিতি চোখে পরার মত, অতএব যারা ঐ সমস্ত জায়গায় অযোগ্য ও দায়িত্ব অবহেলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, গোয়েন্দা ব্যর্থতা তো আছেই। আর আমাদের দেশে যে সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থা আছে তারা ‘আপ টু দ্যা মার্ক না’ সেটা আমরা জানি। আমাদের পুলিশের এক একটা উপজেলায় মাত্র এক দুইজন করে ওয়াচার আছেন, তারা ওই সব জায়গায় গোয়েন্দাগিরি করেন। সরকারী যে সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থা আছে তাদের লোকবল এত কম যে তাদের কাছে সাধারণ মানুষ তথ্য দিয়ে আসলে তারা পায়, তারা যে কোন তথ্য উদঘাটন করবে তারা সেটা পারেনা। এরপরও সরকারের বিশেষ বিশেষ জায়গায় সরকারে টার্গেট থাকে সেসব জায়গায় তারা সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে কিন্তু সব কিছুতেই গোয়েন্দা রিপোর্টের মাঝে দুর্বলতা থাকতে পারে।
আওয়ামী লীগের মাঝে অনুপ্রবেশকারীদের অপকর্মর বিষয়ে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে কঠোর ভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা কিংবা জেলা থেকে যারা তথ্য গোপন করে নাম প্রস্তাব কিংবা সুপারিশ পাঠাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা এইসব নাম প্রস্তাব করেন তারা অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঢুকতে সাহায্য করছেন, ওইসকল ব্যক্তিরা তথ্য গোপন করে নাম কেন্দ্রে পাঠান যার কারণে কিছু সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী দলের ভিতর ঢুঁকে পরতে পারছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে এই সংখ্যাটি কিন্তু বেশি না। এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের মত নমিনেশন ডিক্লেয়ার করা হয়েছে সেখানে বিতর্কিত নাম উত্থাপিত হয়েছে পাঁচ-সাতটি আর পাঁচ-সাতটি বিতর্কিত নাম নিয়েই আমাদের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। যেখানে ৫ হাজার নমিনেশন দেওয়া হচ্ছে যেখানে ৫০টি নমিনেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতেই পারে, এটা বড় কিছু আমি মনে করি না।
আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের প্রবেশের বিষয়ে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ অনেক দুঃসময় অতিক্রান্ত করেছে। এই ৫০ বছরের বাংলাদেশে ২৯ বছর জিয়া-এরশাদ-খালেদা কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। যখন আমরা বিরোধী দলে ছিলাম সেই সময় যখন আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের খর্ব, স্টিমরোলার চলছে সেই সময় যদি কোন যুদ্ধাপরাধীর ফ্যামিলির ছেলে আবার বিরোধী দলে থেকে আমাদের সঙ্গে অত্যাচারিত হয়ে থাকে, নির্যাতিত হয়ে থাকে এবং তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দেখেছি কোথাও কোনো লেশ পায় নাই। কিন্তু আজকে দেখা যায় ৩০ বছর যাবত আওয়ামী লীগ করে এসে ছাত্রলীগ, যুবলীগের দায়িত্ব পালন করে এসে এখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বে যখন আসছে তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতেছে তার বাবা, তার চাচা হয়তো যুদ্ধাপরাধী ছিল, হয়তো রাজাকার ছিল। কিন্তু এই মানুষগুলো যখন আমরা বিরোধী দলে ছিলাম তারাও কিন্তু দল করছে। তখন কিন্তু তারে বাধা দেয়া হয় নাই, তুমি যুদ্ধাপরাধীর ছেলে বা ওই ফ্যামিলির ছেলে তুমি কেনো আওয়ামী লীগ করবা। তখন আমরা বিপদে ছিলাম। বিপদের মধ্যে তারা এসে আমাদের সঙ্গে তারাও কিন্তু অত্যাচারিত হয়েছে। এই ধরনের যারা আছে এগুলোর ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি যে দুঃসময়ে যারা পরীক্ষিত এখন তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ কিন্তু অনেকেই নিয়ে আসছে। এইটা কোন দৃষ্টিতে দেখবে এটা পার্টি ফোরামে আলোচনা হইলে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন